মাজহারুল ইসলাম জয়নাল।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি কর্তা। পৃথিবীর কোনো কিছুই এমনে এমনিই তৈরি হয় নি। আসমান, জমিন, নক্ষত্ররাজি, আলো-বাতাস, গাছপালা, পশু-পাখি, ফেরেশতা, মানুষ, সবকিছুরই শ্রষ্টা একজন। তিনি কে? তিনি হচ্ছেন আমাদের রব, আমাদের খালিক, আমাদের মালিক আল্লাহ তায়ালা।
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সবকিছুই তৈরি করেছেন একমাত্র মানবজাতির জন্যেই। আর পাশাপাশি দুনিয়াতে মানুষের জীবন পরিচালনার দিক নির্দেশনার জন্য দিয়েছেন আসমানি কিতাবসমূহ এবং নবি-রাসুল। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যে”। (আল কুরআন) সেই মানুষ যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধান অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করে না; বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখনই আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে বিভিন্ন আজাব বা মহামারি দেন, যাতে মানুষ সতর্ক হয়।
অতিতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে তার অবাধ্যতার পরিণাম হিসেবে দুনিয়াতে বহু জাতিকে মহামারি বা কঠিন রোগ দিয়ে ধ্বংস করেছেন।
মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর আজাব বা শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ ফেরআউনকে আল্লাহ তায়ালা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: "হে মুসা! তুমি ফেরআউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে।" (সুরা ত্বাহা:২৪) নমরুদকে আল্লাহ তায়ালা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে।
অনুরুপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বণি ইসরাইলরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতকে অস্বীকার, উত্তম জিনিস তথা মান্না ও সালওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিস তথা ভূমির উৎপন্ন জিনিস চাওয়া, আমালেকা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করেও অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে চির লাঞ্চনা ও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে। আগের নবিদের এসব কাহিনী পবিত্র কুরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তায়ালা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন, যদি উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)ও তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের পরিণতিও অনুরুপ হবে এবং একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন সরকারি মালকে নিজের মাল মনে করা হয়, আমানতের মালকে নিজের মালের মতো ব্যবহার করা হয়, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হয়, ইসলামী আকিদা বর্জিত বিদ্যা শিক্ষা করা হয়, পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়, মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, বন্ধুদের আপন মনে করা হয়, বাবাকে পর ভাবা হয়, মসজিদে শোরগোল করা হয়, পাপী লোক গোত্রের নেতা হয়, অসৎ ও নিকৃষ্ঠ লোক জাতির চালক হয়, ক্ষতির ভয়ে কোনো লোককে সম্মান করা হয়, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন অধিক হয়, মদ্য পানের আধিক্য ঘটে, পরবর্তী সময় লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের বদনাম করে-তখন যেন তারা অপেক্ষা করে লু হাওয়া (গরম বাতাস), ভূমিকম্প, ভূমিধস, মানব আকৃতি বিকৃতি, শিলাবৃষ্টি, রক্তবৃষ্টি ইত্যাদি কঠিন আজাবের, যা একটার পর আরেকটা আসতে থাকবে, যেমন হারের সুতা ছিড়ে গেলে মুক্তার দানাগুলো একটার পর একটা পড়তে থাকে। (তিরমিজি)
উপরের হাদীসটিতে উল্লেখিত সকল কাজই আজ সমাজের সর্বত্র চলতেছে। আমরা যেনো এগুলোকে পাপের কাজই মনে করি না।
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাঁধা দেওয়া ফরজ। মুমিন এ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না। হজরত হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবি (সা.) বলেছেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ নিবন্ধ তাঁর শপথ! তোমরা অবশ্যই ন্যায় কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর আজাব পাঠাবেন। অত:পর তোমাদের পরিত্যাগ করা হবে এবং তোমাদের দোয়াও কবুল করা হবে না। (তিরমিজি)
রাসুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন-ইয়া রাসুলুল্লাহ! বিষয়গুলো কী কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন:
১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা।
২. জাদুটোনা করা।
৩. যথাযথ কারণ বাদে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন।
৪. সুদ খাওয়া।
৫. এতিমের সম্পদ গ্রাস করা।
৬। রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা ।
৭. মুসলিম সরলা নির্দোষ মহিলাদের নামে ব্যভিচারের দুর্নাম রটনা করা। ( সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর: ২৭৬৬)
রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন কোনো জাতি বা সম্প্রদায় অশ্লীল ও ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয় তখন তাদের মধ্যে এমন এক ভয়ংকর মহামারি দেখা দেয়, যা তারা অতীতে কখনো দেখেনি।” (ইবনে মাজাহ)
উপরের হাদীসসমূহ কয়েকবার পড়ুন আর ভাবুন, প্রিয়নবি (সা.) এর ১৪০০ বছর আগের শাশ্বত ভবিষ্যৎ বাণীসমূহ আজ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে। বর্তমানে পাপের এমন কোনো রাস্তা নেই যা দুনিয়াতে চলতেছে না। আমাদের হাতে কামানো পাপের ফসল কিনা করোনা ভাইরাস? গজব বা মহামারি যখন আসে তখন এর থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পথে নিজেদের জীবনকে পরিচালনা করা।
আসুন, করোনা ভাইরাসের মহামারি হতে হেফাজতের জন্য সতর্কতার পাশাপাশি, নিজেদের গুণাহের উপর অনুতপ্ত হয়ে বেশি বেশি করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ মান্য করার পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত, নফল ইবাদত বন্দেগী ও সুন্নাহ সম্মত জিকির-আযকার করি। করোনা ভাইরাসকে ভয় না করে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করি ও তাঁর উপর ভরসা রাখি। ইনশাআল্লাহ করোনা ভাইরাস আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
নবিজি (সা.) মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোয়া পড়তে বলেছেন, "আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়ামিন সাইয়িইল আসক্কাম"।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। এবং তাঁর কুদরত দিয়ে করোনা ভাইরাসের মহামারি হতে হেফাজত করুন। আমিন।
0 coment rios:
You can comment here