।। মামুন সুলতান।।
আজ কতদিন
যাবৎ ঘরযাপনে আছি। নিরালায় জীবনে এসে হয়তো ভেবেছিলাম এই কদিন পরিবারের সাথে হাসি খুশি
দিন কাটাবো। অনায়াসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই পড়ে শেষ করব। প্রথমদিন শুরুও করেছিলাম।
কিন্তু দিন যত যাচ্ছে মনের ভেতরে বিষণ্ণতা ততই ছেপে ধরছে। কর্মহীন জীবন কত বিষাদের
এই কদিনে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
হাতের কাছে
যে কাজগুলো আছে তাতে মোটেও মনযোগ দিতে পারছি না। কম্পিউটারে একটা বইয়ের কাজ ঝুলে
আছে। ভেবেছিলাম এই কাজটা করে নেব। কয়েকবার কম্পিউটার অন করেও কোনো কাজ করতে পারছি
না। কয়েকটা বইয়ের রিভিউ করব ভেবেছিলাম তাও করতে পারছি না। পড়ায় মনযোগ
আসছে না। নতুন কোনো কিছু ভাবতে পারছি না।
এদিকে শরীরে
কেমন নিস্তব্ধতা এসে গেছে। শরীরের অর্গানগুলো কেমন যেন অবশ হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি
না কী হবে। কতদিন এভাবে বন্দি জীবন কাটানো লাগবে হিসেব মিলাতে পারছি না। মনে মনে
সাহিত্যের সেই প্রিয় মানুষদের খুব মিস করছি। ওদের সাথে
কিছু সময় কাটাতে পারলে হয়তো মন ভালো হয়ে যেতো।
ওয়ান
এলিভেনের সময় দেশে যখন আইলা হয়েছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এক ধরণের মানবিক দুরাবস্থার
সৃষ্টি হয়েছিল একটা দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি দেখা দিয়েছিল তখন তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের উপদেষ্টা আইলাদুর্গত মানুষদের সাহায্যের জন্য ত্রাণতহবিল খুলেছিলেন তখন
দেখা গিয়েছিল দেশের বড় বড় ব্যবসায়িরা বিরাট বিরাট তহবিল নিয়ে উপদেষ্টার পাশে
দাঁড়িয়েছিল। সেটা ভয়ে হোক আর দায়িত্ববোধ থেকেই হোক তারা সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
তখন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ন্যাশনাল আইডি কার্ড তৈরির সহযোগিতায় লক্ষ লক্ষ
লেপটপ নিয়ে তারা দেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। উপচে পড়া সেই ত্রাণ তহবিল দিয়ে দুর্গতদের
বাড়িঘর নির্মাণ আর্থিক সহযোগিতা আর খাদ্য সহযোগিতায় দেশের সেই ক্রান্তিকালে অসহায়
মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের সকল মানুষের এন আই ডি
কর্মযজ্ঞ সুসম্পন্ন হয়েছে।
আজও আমাদের
দেশে সেই ধনাঢ্য দানশীল ব্যবসায়িরা আছেন আমার
বিশ্বাস দেশের যে কোনো দুর্যোগে দেশ তাদের সহযোগিতা পাবে। হতাশার কোনো কারণ নেই। আল্লাহর
গজব থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মসজিদের পরিচালনায় প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে
প্রতিটি ঘরে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। মসজিদের ইমাম, ওয়ার্ড
কাউন্সিলর, সামাজিক সংগঠন ইত্যাদির
মাধ্যমে এ কর্মসূচি চলতে পারে। তাতে মানুষের কিছু ভালো সময় কাটবে। প্রতিটি ঘর থেকে
কোরআনের ধ্বনি প্রতিধ্বনি হলে হয়তো আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন।
কর্মক্ষেত্র
বন্ধ। মন টা একদম অফ হয়ে গেছে। বাচ্চাগুলো ঘরে থাকতে থাকতে কেমন যেন যাচ্ছে। কিছু
বললেই রাগ করে। তারাও পড়ালেখায় মন দিতে পারছে না। বড় মেয়েটা কী বুঝে আজ কয়েকদিন
ধরে একাকী রোজা রাখছে। কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। তাদের সাথে কিছু সময় কাটাবো তাও
ভালো লাগছে না। ভালো লাগার জন্য একসময় টিভিতে সিনেমা দেখা ভালো অনুষঙ্গ ছিলো তাও
ভালো লাগছে না। মানুষের মৃত্য সংবাদ শুনতে শুনতে নিজের মনটাও একটা মৃত্যপুরী হয়ে
গেছে।
এই
মৃত্যপুরী থেকে কোনদিন রেহাই পাবো আল্লাহ? আর কতদিন
আমাদের পাপে মানবজাতিকে দগ্ধ করবে। হায় আল্লাহ! আমাদের উদ্ধার করো। এই বিপদকালীন
সময়ে আমাদের উপর রহম করো। আমাদের ধৈর্য ধরার তৌফিক দাও। আল্লাহ নিথর অবস্থা থেকে
আমাদের রক্ষা করো। তোমার বান্দাদের হেফাজত করো। করোনার হাত থেকে বাঁচাও। বিপদ থেকে
বাঁচাও।
লেখকঃ প্রাক্তন
সহকারী অধ্যাপক,
বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি কলেজ, সিলেট।
বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যক, লেখক ও
গবেষক।
মোবাইলঃ
০১৭১২৬৮৩২০৩
0 coment rios:
You can comment here