।। মাহফুজ আল মাদানী।।
পৃথিবী
আজ থমকে গেছে। সুনসান নিরবতা। যে পৃথিবীকে গ্লোবাল ভিলেজ বলা হত তা আজ বিচ্ছিন্ন।
এক দেশ থেকে আরেক দেশের ফ্লাইট বন্ধ। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি
বন্ধ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বন্ধ মসজিদ, উপাসনালয়। বন্ধ সভা-সমাবেশ, সেমিনার।
দেশে দেশে লকডাউন আর কারফিউ জারি হয়ে গেছে। থেমে গেছে আজ তথাকথিত কাছে আসার গল্প।
সবাই দুরত্বে অবস্থান করছে। থেমে গেছে জনজীবন। ক্রিকেট খেলার স্কোরের মত লাশের
স্কোর দেখা হচ্ছে। দেশে দেশে লাশের মিছিল। বিশ্বের মোড়ল দেশসমূহ আর বড় বড়
হর্তাকর্তা নেতারা অসহায়। অসহায় তার জনগণ। সবাই বলছে, ঘরে
অবস্থান করুন। বের হবেন না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের কাছে নিরুপায় সকল
প্রযুক্তি। কারো কোনো ক্ষমতা, দাপট আর নেতৃত্ব কাজে আসছে না।
কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক সকলের উদ্দেশ্যে বলবেন-
কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক সকলের উদ্দেশ্যে বলবেন-
لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
‘আজ
রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর’ -(সুরা
গাফির: ১৬)।
কিয়ামত আসার আগেই তার নমুনা আজ বিশ্ববাসী হারে হারে টের পাচ্ছে। এটা
আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ক সংকেত। বিশ্ববাসীর চোখে অঙ্গুলী
প্রদর্শন করে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে, জুলুম বন্ধ করার জন্য, অনাচার
আর ব্যভিচার বিদূরিত করার জন্য। অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ না করার জন্য, পাপাচারে
লিপ্ত না হওয়ার জন্য। শোষণ না করার জন্য। সকল ধরণের অপকর্ম ত্যাগ করার জন্য সংকেত, মহা
সংকেত।
তারপরও
কি আমরা আল্লাহর দিকে ফিরবো না? তাঁকে স্মরণ করবো না? তাঁর
ইবাদতে লিপ্ত হবো না? তার আদেশ নিষেধ মানবো না? আল্লাহ
পাক তাঁর দিকে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন-
فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ
‘অতএব আল্লাহর দিকে ধাবিত হও’ -(সুরা
আয যারিয়াত : ৫০)।
এতদসত্বে কি আমাদের ঘুম ভাঙবে না?
আমাদের
জন্য আজ মসজিদের দরজা বন্ধ, বন্ধ তাঁর বাড়ি কা’বার
পানে ছুটে চলার পথ, বন্ধ তাঁর হাবীবের যিয়ারত।
চাইলেই যেতে পারছি না, পারবো না। কবে খুলবে তার কোনো সহজ উত্তর আপাতত মিলছে না। সত্যিই কি আমাদের রব আমাদের প্রতি রাগান্বিত হয়ে আছেন? আমরা
দিন দিন তাঁর অবাধ্যতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছি। আমাদের জন্য আর কোনো পথ খোলা নেই।
আল্লাহর রহমতের দরজা ছাড়া। এখনো আল্লাহ তাআলার রহমতের দরজা খোলা রয়েছে। আমরা যদি
তাঁকে ডাকতে পারি। এখনো আমাদের রব ডেকে বলছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا
عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ
‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তাআলার
কাছে তাওবা করো- আন্তরিক তাওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের
মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন’ -(সুরা আত তাহরীম : ০৮)।
আমরা কি
তাঁর ডাকে সাড়া দেবো না? আমাদের
উচিৎ আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। তাঁকে খুশি করা, সন্তুষ্ট করা। তাঁর দিকে
প্রত্যাবর্তন ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ
‘আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই’ -(সুরা আত তাওবা :১১৮)।
আল্লাহ
পাক আমাদের জন্য এখনো পথ খোলা রেখেছেন। মসজিদ বন্ধ করে দিলেও তাঁর রহমতের দরজা
একেবারে বন্ধ করে দেননি। আমাদেরকে আল্লাহ পাক আহবান করতেছেন-
أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى اللَّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُ وَاللَّهُ غَفُورٌ
رَحِيمٌ
‘তারা
আল্লাহর কাছে তাওবা করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন? আল্লাহ
যে ক্ষমাশীল, দয়ালু -(সুরা আল মায়িদা :৭৪)।
এরপরও কি আমরা তাঁর সমীপে বিনয়ী হবো না? গভীর রাতে তাঁর কাছে নির্জনে
দুফোটা অশ্রু জমা রাখবো না? তাওবাহ করবো না? আমরা
যতক্ষণ না তাঁর দিকে ফিরে যাবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জন্য বালা-মুসিবত কঠিন থেকে
কঠিনতর হবে। আসুন আমরা আল্লাহ তাআলার দিকে প্রত্যাবর্তন করি। তাঁর কাছে পাপ কাজের
ক্ষমা চাই, তাঁকে সন্তুষ্ট করি, রাজি
করি। পবিত্র কোরআনে আমাদেরকে বলা হচ্ছে-
وَاسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٌ
وَدُودٌ
‘আর তোমাদের পালনকর্তার কাছে
মার্জনা চাও এবং তাঁরই পানে ফিরে এসো। নিশ্চয়ই আমার রব খুবই মেহেরবান, অতি
স্নেহময়’ -(সুরা হুদ :৯০)।
আসুন
আমরা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে খুবই মেহেরবান, অতি স্নেহময় আল্লাহর দিকে রুজু
করি। ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে তাঁর আযাব থেকে মুক্তি কামনা করি। তাঁর বাণী-
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ
مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
‘তারা
যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের আযাব দেবেন না’ -(সুরা
আল আনফাল: ৩৩)।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রহমতের চাদর দ্বারা ঢেকে রাখুন। বিপদ আপদ মুসিবত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। সবাইকে সচেতন হয়ে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে কাজ করার তাওফীক দান করুন।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও গবেষক, সাবেক ছাত্র, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা। সৌদি আরব।
0 coment rios:
You can comment here