।। মামুন সুলতান।।
শহরের পাড়ায়
মহল্লায় যে উৎসব চলছে তাতে মনে হয় আমরা ঈদের ছুটিতে আছি। সারা পৃথিবীতে চলছে
মরণোৎসব আর আমাদের চলছে আনন্দোৎসব। একটা কথা মনে রাখা দরকার আমাদের দেশ খুব ছোট।
তাতে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি। বলা যায় আমরা পিঠে পিঠে বসবাস করছি। এখানে যদি এক
পরিবারে করোনা দেখা দেয় তাহলে রেললাইনের মত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে এক ঘর থেকে আরেক
ঘরে। এটা এতই ভয়ানক যে মসজিদ পর্যন্ত সীমিত করা হয়েছে।
দেখা যায় যারা মসজিদে যেতো
না তারাও এখন মসজিদের কাতারে শামিল মাশাল্লাহ। এতে আমাদের
দুর্ভোগ বাড়ছে না কমছে? যান মসজিদে যান নিরাপদে
নামাজটা পড়ে আসুন কিন্তু আপনাকে কে বলেছে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দিতে? ঘরে আসুন নফল নামাজ পড়ুন, কোরআন তেলাওয়াত করুন তাতে সোয়াবও হবে নিরাপত্তাও আসবে।
আমরা
প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলনে মীরজাদির যে বক্তব্য শুনছি তাতে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। গত দুদিন
কেউ সংক্রমিত হয়নি। একথা কতটুকু বিশ্বাস যোগ্য। সতেরো কোটি মানুষের মাঝে মাত্র এক
দেড়শ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে সারাদেশের খবর বলে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করা যায়
কিন্তু সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন।
এমন হয়তো আক্রান্ত লোক ভয়ে মুখ খুলছে না। সামাজিকভাবে যে বয়কট করার মানসিকতা আমরা লালন করছি এতে লোক ধুকে ধুকে মারা যাবে কিন্তু
মুখ খুলবে না। আমাদের আরও আন্তরিক হওয়া দরকার। সারাদেশে যেখানে প্রতিটি হাসপাতালে
পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকার কথা সেখানে তা নেই। ঢাকা চট্টগ্রাম এরপর কোথায় পরীক্ষাগার
স্থাপন করা হয়েছে?
করোনা
আক্রান্ত মানুষের প্রতি আমরা যে ব্যবহার করছি দু একটা লাশের প্রতি দেশের সচেতন
জনগণের যে আচরণ লক্ষ্য করা গেছে তা দ্বিধাহীনভাবেই বলা যায় তা মোটেও কাম্য নয়।
সবাই সচেতন। ভাইরাস কে আমরা ভয় পাচ্ছি। কিন্তু পাড়ায় পাড়ায় যে নমুনা দেখা যাচ্ছে
তাতে একবার যদি ভাইরাসাক্রান্ত কেউ হয় তাতে কেউ রেহায় পাবে না। আর কেউ আক্রান্ত
হলে এ রোগের যে ভয়াবহতা তা মহামারীর আকার ধারণ করতে সময়ের ব্যাপারমাত্র।
আমাদের দেশে
কিট এসেছে। ভালো সংবাদ। কিন্তু কিট ব্যবহারের অভিজ্ঞ সেই মানুষ কই? রোগ
নির্ণয়ের সেই ডাক্তার কই? এ ভাইরাস একটি নতুন সংস্করণ
মাত্র। ইতোপূর্বে এ বিষয়ে দেশের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অনভিজ্ঞ এই সময়ে আমরা নিজেরাই
নিজেদের রক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
মাঠে পুলিশ
আছে র্যাব আছে। সেনাবাহিনী মাঠে আছে। সরকারি ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছেন। আপনারা একবার পাড়ায় পাড়ায় টহল দিতে আসুন। দেখুন কী ভয়াবহ জনসমাগম হচ্ছে প্রতিটি
পাড়ায়। এদের ঘরে থাকতে বলুন। পাড়ার দোকান পাঠে জনসমাগম বন্ধ করুন। আপনাদের টহল
দেখলে হয়তো এই বঙ্গবাসী ঘরে প্রবেশ করবে। ঘর যে একটা
নিরাপদ আশ্রয় এটা তারা ভুলে গেছে।
মটর সাইকেল
নিয়ে তরুণ বাইকাররা দুই তিনজন একসাথে স্তবির শহর দেখতে ঘুরতে বের হয়। এদের মোটরসাইকেল
জব্ধ করা দরকার। এসব উৎসুক অসচেতন তারুণ্য এই মুহূর্তে আমাদের জন্য ভয়ানক
পরিস্থিতি নিয়ে আসতে পারে এদের
অভিভাবক মোটেও সচেতন নয়। প্রয়োজনে এদেরকে আটকে দেওয়া দরকার।
মানুষ
প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেন। স্বল্প সময়ে ভাইরাসকালীন সময়ে যে নির্দেশিকা আছে তা মেনে
ঘর থেকে বের হবেন। অতি জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বের হবেন না।
আবার আমাদের
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার কথা বলি। এই মুহূর্তে রাষ্ট্র কে রক্ষা করা জরুরি। আপনার
জন্য রাষ্ট্র কোটি লোকের সর্বনাশ করতে পারবে না। সাধ্যানুসারে রাষ্ট্র আমাদের
দুর্যোগে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যে ত্রাণের ঘোষণা এসেছে। ঢাকা সহ সারাদেশে ত্রাণের
প্যাকেট প্রস্তুত হয়েছে। বস্তাবন্দী ত্রাণ দেখা গেছে। তা যতই অপর্যাপ্ত হোক অসহায়
মানুষের হাতে যেন পৌঁছে তার ব্যবস্থা করবেন। লোক দেখানো পর্যায়ে যেন না থাকে। যারা
সামর্থবান আছেন আপনার এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। দেশের দুর্যোগ নয়
আমাদের দুর্যোগ এই বিশ্বাস মনে রাখুন। আমরা যার যার অবস্থান থেকে নিজে সংরক্ষিত
হয়ে সবাইকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করি।
আল্লাহ
আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
লেখকঃ প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, সিলেট।
বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যক, লেখক ও প্রকাশক।
মোবাইলঃ ০১৭১২৬৮৩২০৩
Al hamdulillah
ReplyDelete