Sunday, March 29, 2020

চলছে লকড ডাউন, গরীবের পেটে হাহাকার, দিন মজুর মানুষের কান্না: আমরা কোন পথে


।। মো. লুৎফুর রহমান হুমায়দী ।।


চলছে  লকড  ডাউন। 
গরীবের পেটে হাহাকার।
দিন মজুর মানুষের কান্না।
অভাব, দারিদ্র, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অসহায় নয়নের নোনা জল সবকিছু মিলেমিশে একাকার। একটা দশ টাকার মাস্ক পরিয়ে দেয় এবং দশ-বিশ জন মিলে তার দিকে তাকিয়ে জম্পেশ ফটো সেশন করে। যেন সবাই মিলে ঘিরে ধরে চিড়িয়াখানার কোন এক বিরল প্রাণীকে। 
এ মুহূর্তে  সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন গরীব অসহায় মানুষের পাশে  দাঁড়ানো। তাদের দু'বেলা খাবারের খোঁজ খবর নেয়া। কিন্তু আমরা তো তাদের আত্মমর্যাদা বিনষ্ট করার অধিকার রাখি না। 

খাবারের পুটলী হাতে ধরিয়ে দিয়ে একজন গরীব মানুষকে  লাইনে দাঁড় করিয়ে আমরা তার ছবি তুলি। সেটাকে আবার পাবলিকলি আপলোড করি। সাহায্য হাতে মুচকি হাসির আড়ালে কত বেদনা, কত হাহাকার বা কত অপমানের বিষাক্ত তীরের আঘাতে তার হৃদয়টা যে ফালি ফালি হয়ে যায়, সেটা কি আমরা কোন সময় চিন্তা করে দেখেছি।
অন্যরা যাতে উৎসাহিত হয়, সেজন্য প্রকাশ্যে দান করতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনি প্রকাশ্যে দানের ঘোষণা দিন। দান সামগ্রীর স্তুপ প্রদর্শন করুন। দান সামগ্রীর ছবি আপলোড করুন। কোনো আপত্তি নেই। বরং এগুলোর দরকার আছে। কিন্তু যাকে দান করছেন তারও তো একটা আত্মমর্যাদা আছে, আছে তার পরিবার, সমাজ। তাকে কি আমরা কস্ট দেয়ার বা সমাজের কাছে  ছোট করার অধিকার রাখি। সে তো অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়ায়। মনে তো ঠিকই কস্ট পায়। আর দান গ্রহণকারী কস্ট পেলে দান কি কবুল হবে?

তাছাড়া অনেক তো এমন আছে, যারা শত অভাবে পিষ্ট হলেও কারো কাছে হাত পাতবে না বা লাইনেও এসে দাঁড়াবে না। ইসলামী শরীয়ত তো এদেরকে খোঁজে বের করে দান করার জন্য তাগিদ দিয়েছে।
দান-সাদাক্বা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাকের অসংখ্য দিক-নির্দেশনা আছে।  বিশেষ করে সূরা বাকারায়। যেমন এক জায়গায় আল্লাহ জাল্লা শানুহূ বলেন -

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا لَا يَقْدِرُونَ عَلَى شَيْءٍ مِمَّا كَسَبُوا وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
অর্থাৎ, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না। সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোনো সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।” (আল-কুরআন, সূরা আল-বাক্বারা-২৬৪) 

তাই আসুন,  আমরা প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থতির  এ কঠিন দুর্যোগের সময় আমাদের গরীব- নিকটাত্মীয়, হত দরিদ্র  প্রতিবেশী এবং নিঃস্ব, অসহায়জনের পাশে দাঁড়াই  হৃদ্যতা এবং ভালোবাসার সওদা নিয়ে। কোনো কস্ট না দিয়ে তাদের গায়ে পরিয়ে দেই আত্মসম্মানের চাদর।

আল্লাহর সাহায্য আসবে। তাঁর রহমতের সুশীতল বাতাস প্রবাহিত হবে। ভাঙ্গবে নীরবতা। দূর হবে সকল ভয় ও হতাশা। বিদায় নেবে এ  ভুতুড়ে নিস্তব্ধ পরিবেশ। গাছে গাছে শোভা পাবে নতুন পত্র-পল্লব। শাখে শাখে ফুল পাখীরা মধুর কণ্ঠে আবারো গেয়ে উঠবে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের গান।
إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
অর্থাৎ, “নিশ্চয়ই দুর্যোগ ও দুঃখের সাথে রয়েছে সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্য।” আল-কুরআন, সূরা আল-ইনশেরাহ)

আল্লাহ আমাদেরকে এ কঠিন মহামারি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
      
লেখকঃ 
অধ্যক্ষ, 
শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল (এম. এ) মাদরাসা, পাঠানটুলা, 
সিলেট।


শেয়ার করুন

Author:

1 comment:

You can comment here