Saturday, March 28, 2020

সায়েন্স ফিকশন : ব্ল্যাক-পেন


।। মিদহাদ আহমদ।। 

লাস্ট বার্থডেতে আব্বু এই কলমটা গিফট করেছিলেন আমাকে। এতোদিন কলমটা আমার ফাইলের ভেতরেই রাখা ছিলো। কখনো খুলে দেখিনি কলমটা। স্রেফ একটা নরমাল কলম দেখে মনে হয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এইটা কোনো নরমাল কলম নয়।
নরমাল কলম নয়?
জিজ্ঞেস করল জিসান।
হ্যাঁ। নরমাল নয়।
বললো, আরিফ।
আচ্ছা তোর কেনো মনে হচ্ছে এইটা কোন নরমাল কলম না?
আচ্ছা শোন, বলছি তোকে। কলমটা আমার জন্মদিনের দিন, মানে ৬ অক্টোবর আব্বু আমাকে গিফট করেছিলেন কলমটা। আব্বুর কাছে আগে থেকেই বার্থডে গিফট হিসেবে নোট প্যাড চেয়ে রেখেছিলাম। আর আমি জানি, আব্বু আমাকে নোট প্যাড দিবেন ই। কারণ, লাস্ট ইয়ারে মানে ক্লাস সেভেনে আব্বুর কথামতো আমি ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করেছিলাম।
ইশ! ভালো রেজাল্ট কই করলিরে আরিফ?
জিহান অনেকটা ব্যাঙ্গের সুরে কথাটা বললো আরিফকে।
আরিফ বললো, কেনো? আমি ক্লাসে সেকেন্ড হইনি?
হ্যাঁ। তা হয়েছিস কিন্তু আমি তো ক্লাসের ফার্স্ট বয়।
আহা!ফার্স্ট বয়। আচ্ছা শোন, তোকে যে কাহিনীটা বলতে চাচ্ছি সেইটা আগে শোন ভালো করে।
হ্যাঁ বল। তোর মাথায় যে সমস্যা হয়েছে সেইটা আমি ঠিক ই বুঝতে পারছি।
বার্থডে ছিলো ৬ তারিখ। আব্বু ৪ তারিখ রাতেই আমাকে এপেল কোম্পানির একটা নোট প্যাড ফিগট করেন। এইটা আব্বু জার্মানি থেকে আনিয়েছেন। নোট প্যাড হাতে দিয়ে আব্বু বললেন, তোমার বার্থডের দিন মানে, ৬ তারিখ এই নোট প্যাড থেকে আরোও ভালো কিছু একটা গিফট দিবো তোমাকে। দেখি তোমার বুদ্ধি কতটুকু।
আমি তো মহাখুশি। আব্বু আমাকে নোট প্যাড থেকেও দামি গিফট দিবেন। ৬ তারিখ রাতে আব্বু অফিস থেকে এসে এই কলমটা আমাকে দিলেন।
দেখি দেখি কলমটা দেখি। জিসান বললো।
আরিফ তার ফাইল থেকে বের করলো কলমটা।
আকৃতিতে নরমাল কলমের মতোই। জিসান কলমটা হাতে নিলো। হাতে নিলে বুঝা যায় এইটা নরমাল কোনো কলম না। কারণ হলো, প্রথমত কলমটার ওয়েট। একদম ওজনশূন্য মনে হয়। তবে একটা ওজন আছে কলমটার। অপেক্ষাকৃত কম এই আরকি!
কিরে জিসান?কী মনে হয়?
হুম ভাবছি কলমটাকে নিয়ে।
কী ভাবছিস?
যা ভাবছি তা পরে বলবো। আগে বল, কলমটাকে কেনো তোর অস্বাভাবিক মনে হয়?
কলমটা আব্বু দেয়ার পর আমাকে বলেছিলেন, এইটা এক বিশেষ কলম। আমি তখন কথাটাকাকে খুব একটা গুরুত্ব দেই নাই।
তো? এখন কেনো মনে হচ্ছে এইটা একটা বিশেষ কলম?
আরেহ জিসান তুই আগে কাহিনীটা শোন তারপর বলিস।
আচ্ছা আচ্ছা কাহিনীটা বল তাড়াতাড়ি। আমার আবার বাসায় চলে যেতে হবে। আজকে ছোট খালামনি এসেছেন বাসায়।
তুই ই তো বলতে দিচ্ছিস না আমাকে। আমি ঠিকই বলতে চাচ্ছি তুই শুনছিস না।
বল বল বল। আমি এখন নির্বাক হয়ে শুনবো।
লাস্ট কিছুদিন আগে কলমটা আমি ইউজ করা স্টার্ট করি। প্রথম প্রথম সবকিছুই নরমাল ছিলো। কলমটা দিয়ে লেখার টাইমে অদ্ভুত রকমভাবে আমার এই কলমটা কিছু কিছু জায়গায় স্কিপ করে নিতো।
স্কিপ করতো মানে?
জিসান জিজ্ঞেস করলো।
আচ্ছা দেখাচ্ছি তোকে।
আরিফ এই বলে একটা খাতা এনে এর মধ্যে "বাংলাদেশ" লেখলো। অদ্ভুত কোনো লেখাই উঠলো না। জিসান কলমটা হাতে নিলো। হাতে নিয়ে জিসান লেখলো, "বাংলাদেশ"
এখনও অদ্ভুত। জিসানের টাইমে ঠিক ই লেখা উঠলো তবে আরিফের বেলায় উঠলো না কেনো?
আরিফ শুরু করলো,
তার লেখা বানান অশুদ্ধ ছিলো। আর এই কলমটা শুদ্ধ অশুদ্ধ বানান বুঝে।
দাঁড়া আরিফ!তোর প্যাড টা নিয়ে আয় তো।
আরিফ তার নোট প্যাডটা নিয়ে আসলো। জিসান কলমের গায়ের কোডটা স্ক্যান করলো। সাথে সাথেই কলমটার ম্যানুফেকচারসহ সবকিছু মোবাইলের স্কিনে ভেসে উঠলো। সেখানে লেখা আছে, কলমটা এক প্রকার রোবট। ম্যানুয়ালি একটা ডিকশনারি সেটাপ দেয়া আছে এর মধ্যে। চার্জিং সিস্টেম আছে। আমেরিকার ব্লু-টার্ণ কোম্পানি এই রোবট প্যান বানিয়েছে। দাম বাংলাদেশী টাকায় প্রায় একুশ হাজার।
একুশ হাজার? আরিফ জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাঁ। একুশ হাজার।
আর এইটা সত্যিই রোবট?
হ্যাঁ রে বুদ্ধুরাম এইটা সত্যি রোবট।
আরিফের মাথায় হাত! তার মানে তার বার্থডেতে তার আব্বু তাকে এই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন রোবট গিফট করেছিলেন যাতে আরিফ ভুল শুদ্ধ বানান নিজ থেকেই যাচাই করতে পারে।
আচ্ছা আরিফ আমি গেলাম। আর কলমটা আমাকে এক দিনের জন্য ধার দিস। কেমন? জিসান বললো।
না না। দেয়া যাবে না। এইটা রোবট কলম আগে জানা ছিলো না। এই কলমটা আমার খুব কাজের। ব্ল্যাক প্যান। 

লেখকঃ শিক্ষার্থী, জেসিপিএসসি, সিলেট।

ইমেইলঃ midhadkhan11@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭৬২০৯৫৭২৯ 


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here