।। মোয়াজ্জেম হুসাইন সায়েম।।
অবাক হবার কিছু নেই। একটি মহামারী আসলে সামাল দিতে প্রস্তুতির জন্য একটু সময়ের দরকার হয়। পৃথিবীর সব দেশই একটু সময় নিয়েছে। যেমন যুক্তরাজ্য। তারা এতোদিন তেমনটা কাউন্ট করেনি। গতকাল থেকেই শুরু করলো। হয়তো কিছুটা প্রস্তুত তারা। যুক্তরাষ্ট্রও একই। এই ৫-৬ দিন থেকে করোনা শনাক্ত করছে একটু বেশী। আমাদের ক্ষেত্রেও এমনটিই ঘটছে।
হেল্পলাইনে কল দিয়ে কেউ সিম্পটমের কথা বললে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা হয়েছে, হচ্ছে। এইরকম কলগুলোর সব পেশেন্টকে যদি বাড়ি থেকে নিয়ে আসে, তবে কোথায় জায়গা দেবে সরকার? প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তুতি এগুনোর পরই আস্তে আস্তে জানবেন প্রকৃত অবস্থা। পরিচিত এক ভাই যুক্তরাজ্যে ৯৯৯ এ জব করেন। তিনি জানালেন তাদের বলা হয়েছিলো, কেউ করোনার সিম্পটম জানালে তাকে ফোনেই পরামর্শ দিতে। আইসোলেটেড থাকুন, এটা খান, ওভাবে চলুন ইত্যাদি। এরপর হেলথ প্রফেশনালরা ফোনে আপডেট নিতো রেগুলার।
যদি দেখা যায় ১৪ দিনে সারেনি, পরে হসপিটালাইজ করা হয়েছে। এছাড়া যাদের অবস্থা বেশী গুরুতর, তাদের ইমার্জেন্সিতে আসতে বলা হয়। গতকাল থেকে তারা নির্দেশনায় একটু পরিবর্তন এনেছে। কল সেন্টার এসিস্টেন্টদের বলেছে কেউ সিম্পটম বললে হসপিটালের এপয়েনমেন্ট নিয়ে টেস্টে পাঠাতে। এভাবেই চলে আসছে।
যেখানে আমেরিকা, বৃটেন, জার্মানীর মতো বাঘা বাঘা রাষ্ট্র হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের প্রস্তুতিতে একটু সময় লাগাটা অস্বাভাবিক না। ধরুন, এই মুহুর্তে গণহারে টেস্ট করে ১০ হাজার পজেটিভ আসলো। এদের কি চিকিৎসা দিতে হবেনা? পর্যাপ্ত আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি কি আমাদের আছে? নেই। এর মধ্যে যদি দু-চারশো মারা যায়, তবে দেশের অবস্থা কি হবে ভেবে দেখেছেন? ভয়াবহ হবে। ভাইরাসের জন্য নয়, অবুঝ জনতার উশৃংখলতায়! শুরু হবে ব্লেইম গেইম।
সবার এটা মাথায় রাখতে হবে যে, কোনো একটা সাডেন সিচুয়েশন হুট করেই সবকিছুকে বদলে দিতে পারেনা। জনগনকে চিকিৎসা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু এই আপনিই লাস্ট কবে সরকারী হাসপাতালে গিয়েছেন? কোনো সমস্যা হলেই শ্রেণী অনুযায়ী প্রাইভেট হাসপাতালে দৌড় দিয়েছেন। জনগনের মাঝে এই শ্রেণীবিভেদ আপনি, আমি, আমরাই সৃষ্টি করেছি। আপনি নিয়মিত গেলে পরিবেশটা সুন্দর হতে বাধ্য ছিল। এখন আবার সেই আপনিই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সরকারী সেবা চান! হুট করেই এতো প্রেশাস সামাল দেয়া কি সরকারের পক্ষে সম্ভব?
হয়তো সম্ভব হবে, তবে সেজন্য প্রস্তুতিতে সময় লাগবে। আর প্রস্তুতি ছাড়া গণহারে কাউন্টিং শুরু করলে চিকিৎসার দাবীতে এই আপনি, আমিই হুলস্থুল বাধিয়ে দেবো। সো, অপেক্ষা করুন, দেখুন, নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে রাখুন, আর অবশ্যই দোয়া অব্যাহত রাখুন।
লেখকঃ কবি, শিল্পী ও সাংবাদিক
0 coment rios:
You can comment here