।। হাফেজ মুফতি
মোস্তফা সোহেল হিলালী।।
তাকদীর
ঈমানের ছয় ভিত্তির অন্যতম ভিত্তি। একজন মানুষ মুমিন হতে হলে তাকে তাকদীরের উপর
বিশ্বাস রাখতে হয়। তাকদীর ঈমানের রুকন হলেও বিষয়টি খুবই জটিল। তাকদীরের মাসআলায়
এসে অনেক মানুষ ভ্রান্তির শিকার হয়েছে। কেউ তাকদীর অবিশ্বাস করে ভ্রান্ত হয়েছে।
কেউ তাকদীরের উপর সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আর যারা তাকদীর ও
কর্মের সমন্বয়ের বিশ্বাসে এগিয়ে গেছে, তারাই সঠিক
পথে রয়েছে।
এই জটিল
বিষয়টি বোঝাতে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। সহজ কথায়, তাকদীর আল্লাহ তা‘আলার
নির্ধারণকৃত অদৃশ্য বিষয়। আমরা এর উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহ তা‘আলার
হুকুমের উপর কর্ম করে চলতে হবে। আমার কর্মের পর উদ্দেশ্য সাধিত হলে বোঝতে হবে
তাকদীরে হওয়ার ছিলো। আমার কর্মের পরও লক্ষ্য অর্জিত না হলে বোঝতে হবে তাকদীরে ছিলো
না। আর এই বিশ্বাসের ফলে মানুষ কাজ করে সফল না হলেও হতাশ হবে না, অস্থির হবে
না। সে এই বলে মনকে প্রবোধ দিতে পারবে।
মানুষ যেন
আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের অধীনে কর্মযোগ্য করে চলে, তাই আল্লাহ
তা‘আলা তাকদীরকে অত্যন্ত গোপন রেখেছেন। মানুষ দূরের কথা, নিকটবর্তী
ফেরেশতাও আমার আপনার তাকদীর জানে না। একটু চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ তা‘আলা যদি
তাকদীর প্রকাশ করে দিতেন, তবে আমরা কি পৃথিবীতে চলতে
পারতাম?
অমুক দিন অমুক সময়ে আমার মৃত্যু লিখা রয়েছে জানা থাকলে কিভাবে আমার জীবন কাটতো? আমি লেখা পড়ে করেও বড় কিছু হতে পারবো না, পূর্ব থেকে জানা থাকলে আমি কী করতাম? অতএব মানুষের জীবনকে এক অশান্ত ও কর্মহীনতায় ফেলে না রাখার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাকদীরকে অদৃশ্য রেখেছেন।
অমুক দিন অমুক সময়ে আমার মৃত্যু লিখা রয়েছে জানা থাকলে কিভাবে আমার জীবন কাটতো? আমি লেখা পড়ে করেও বড় কিছু হতে পারবো না, পূর্ব থেকে জানা থাকলে আমি কী করতাম? অতএব মানুষের জীবনকে এক অশান্ত ও কর্মহীনতায় ফেলে না রাখার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাকদীরকে অদৃশ্য রেখেছেন।
তাকদীরের
মতোই মানুষের শরীরে গোপনীয় অনেক ভাইরাস রয়েছে। তাকদীর যেমন এক সময় প্রকাশ পায়, ভাইরাসও রোগ
আকারে বা গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ভাইরাস প্রকাশ পাওয়ার পর আমাদের করণীয় এবং
ভাইরাস প্রকাশ পাওয়ার আগে আমাদের করণীয় এক হলে আমরা পৃথিবীতে বসবাস করতে পারবো না।
মনে করুন, আমি গাড়িতে উঠছি। আমি কি জানি আমার তাকদীরে এ্যাকসিডেন্ট লেখা নেই? এই সম্ভাবনায় আমি গাড়িতে উঠা বাদ দিবো? না। বরং এ্যাকসিডেন্ট হলেই বোঝতে পারবো আমার তাকদীরে এটা লিখা ছিলো। এভাবে আমরা প্রতিটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারি।
মনে করুন, আমি গাড়িতে উঠছি। আমি কি জানি আমার তাকদীরে এ্যাকসিডেন্ট লেখা নেই? এই সম্ভাবনায় আমি গাড়িতে উঠা বাদ দিবো? না। বরং এ্যাকসিডেন্ট হলেই বোঝতে পারবো আমার তাকদীরে এটা লিখা ছিলো। এভাবে আমরা প্রতিটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারি।
এভাবে একজন
মানুষের শরীরে ছোঁয়াচে রোগ আছে নিশ্চিত হলে এবং তা প্রকাশ পেলে আমি তার থেকে দূরে
থাকতে পারি, এটা আমার জন্য বৈধ। যদিও ভয়ে
দূরে না গিয়ে ধৈর্য্য ধরে থেকে মারা গেলে শাহাদাতের সাওয়াব রয়েছে, তারপরও সবার
ঈমান সমান নয় দেখে দূরে থাকা অনুমোদিত। কিন্তু ভাইরাস সন্দেহে যদি আমি মানুষের
সাথে না ভিড়ি তবে আমার জীবন কার সাথে কীভাবে চলবে কতদিন?
বর্তমান
সময়ে করোনা ভাইরাসের বেলায় আমরা যেভাবে এগুচ্ছি, এভাবে কতদিন
থাকতে পারবো? কতদিন অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ বন্ধ
রাখতে পারবো? সর্বোপরি আমার পরিবারের সদস্যদের
থেকে আমরা কে কতদিন কিভাবে পৃথক থাকবো? কতদিনে এই
ভাইরাস পৃথিবী থেকে একেবারে বিলীন হয়ে যাবে? এই ভাইরাস
চলে গেলে আর কোনো ভাইরাস কি আমাদেরকে আক্রান্ত করবে না? আর কি কোনো
ভাইরাস মানুষের শরীরে নেই, যা অন্যত্র ছড়ায়?
তাই আসুন, সবকিছুতেই
আল্লাহ তা‘আলার হুকুমকে অগ্রাধিকার দিই, নতুবা
আমাদের চলার উপায় নেই? এভাবে গবেষণা করে ভাইরাস
উদঘাটন করে ভাইরাসের আগেই ভাইরাসের ভয়ে পালালে কথায় পালাবো? পৃথিবীর
বাহিরে আরেক পৃথিবী খোঁজতে হবে। সে পৃথিবীও যে ভাইরাস মুক্ত হবে সেটার প্রমাণ কি? আমরা সবাই
মঙ্গল গ্রহে চলে গেলে সেখানেও যে আমাকে কোনো ভাইরাস পাবে না তার প্রমাণ কী?
দেখুন ও চিন্তা করুন, আজ কী
অমানবিকতা শুরু হয়েছে! ভাইরাস আক্রান্ত রোগির সাথেও ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে না;
যেখানে শাহাদাতের মর্যাদা রেখেছিলো, সেখানে আজ
আক্রান্ত নয়, কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে
আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে আমাদের আচরণ, ব্যবহার
খারাপ হয়ে গেছে। মানুষ মানুষকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। মৃত্যুর পরও থাকছে ঘৃণার
রেশ।
মৃত্যুর পর
যেখানে সবাই সব কিছু ভুলে গিয়ে একজন মানুষের সাথে ভালো আচরণ করে, আজ সে
মৃত্যু ভাইয়ের সাথে আমানবিক আচরণ চলছে। মৃত্যুর পর মৃতদেহ দাহ করার ভয়ানক দৃশ্য
দেখে অনেক হিন্দু মুসলমান হওয়ার নযীর আছে, কিন্তু আজ
মুসলমানের লাশ দাহের কথা উঠা কথা অমানবিক দৃশ্য ভেবে দেখেছেন কি?
বিদেশ থেকে
আসা লোকটি মিষ্টির দোকানে ঢুকলে কতো তোষামোদ করা হতো, কিন্তু আজ
তারই সাথে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে। এই লোক ঢুকলেই কি আমি আক্রান্ত হবো? সে না
ঢুকলেই কি আমার আক্রান্ত না হওয়া নিশ্চিত? তবে দেখুন, আমাদের ঈমান
কি প্রকৃতই আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের উপর রয়েছে? নাকি মুখে
আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের কথা বললেও কাজে কর্মে আমরা বস্তুবাদিতে
পরিণত হচ্ছি। তাই আসুন, আমরা তাকদীর ও কর্মের সমন্বয়ের বিশ্বাসে আমরা সামনে এগিয়ে
যাই। প্রভুর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তার দেখানো পথে চলার চেষ্টা করি।
আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখকঃ
পরিচালক ও প্রধান মুফতি, ইমাম আবু হানিফা রাহ. ফতোয়া ও
গবেষণা ইনিস্টিটিউট, সিলেট।
পরিচালক ও প্রধান মুফতি, ইমাম আবু হানিফা রাহ. ফতোয়া ও
গবেষণা ইনিস্টিটিউট, সিলেট।
0 coment rios:
You can comment here