সাজ্জাদুজ্জামান চৌধুরী
মা, মাতৃভুমি ও মাতৃভাষা আমাদের সবার কাছে প্রিয়। কিন্তু 'মা'কে মা বলে ডাকার জন্য, মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য, দেশকে রক্ষার জন্য বারবার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের মাটি। বাঙালিরা অধিকার আদায়ের জন্য কখনো মাথা নত করেনি।
"একবার মরে ভুলে গেছে আজ মৃত্যুর ভয় তারা"।
একুশ আমাদের জাতীয়তাবোধের প্রথম মাইল ফলক। একুশ হচ্ছে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুতিকাগার। একুশ আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রথম গৌরবদীপ্ত ঘোষণা। আজ আমরা আমাদের যে প্রাণপ্রিয় ভূখন্ডে বাস করছি তা আমাদের স্বপ্নের প্রিয় বাংলাদেশ।
বিভিন্ন সময় এ ভূখন্ডটি ভোগ দখল করছে বিভিন্ন বিদেশী গোষ্ঠী। জাতীয় চেতনায় আঘাত লাগায় বাঙালীরা গর্জে উঠেছিল। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে পেরেছিল বলেই আজ বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
একুশের পথ ধরেই ৬৯ এর গণভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তবে মাতৃভাষার জন্য রক্ত দেয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে ছিল না। ছিল না ভাষার জন্য অকাতরে জীবন দেয়ার ইতিহাস।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে তেমন এক দূর্লভ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে সালাম, রফিক, বরকত, শফিকসহ এদশের বাঙালীরা। আর সেজন্যই ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
জাতি সংঘের ১৮৮টি দেশের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আত্মদান বিশ্ব মর্যাদা পায়, তেমনি পৃথিবীর ছোট বড় প্রত্যেকটি জাতির মাতৃভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শিত হলো।
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কী ভুলিতে পারি?"
আমরা কখনেই শহীদের অবদান আত্মদান ভুলতে পারিনি, পারবোও না। একুশের চেতনাকে আমরা বুকে লালন করি, আর বুকে ধারণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বর্তমান প্রজন্মকে দেশ গড়ায় উজ্জীবিত হতে হবে।
শিক্ষা, অর্থনীতি, সাহিত্য সংস্কৃতি, নৈতিকতা, সামজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি তথা সর্বক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে যেন বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতি আরও মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারে। বর্তমান প্রজন্মের সকলকেই ভাষার শুদ্ধরূপ ব্যবহারে সচেষ্ট হতে হবে। কারণ বিকৃত উচ্চারণ ভাষার শুদ্ধতার পরিপন্থিী।
আমাদের সকলকেই ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখার ভুমিকা রাখতে হবে। ভাষার প্রশ্নে বলতে হয়, আমাদের জীবন চলবে মাতৃভাষার মাধ্যমে তবে, আর্ন্তজতিক যোগাযোগের জন্য শিখতে হবে সাধ্যমত অন্য ভাষাও। একুশের চেতনা মানে মাথা নত না করা, দুহাত প্রসারিত করে মুক্ত আকাশে তাকানো। একুশ দেয়েছে মুক্তির স্বপ্ন, এনে দিয়েছে স্বাধীনতা, একুশ আমাদের চেতনায়, একুশ আমাদের বিশ্বাসে- নি:শ্বাসে, ধ্যাণ- ধারণায়, একুশ দেশ গড়ার ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তি। একুশ আমাদের কাছে মা, মাতৃভুমি ও মাতৃভাষা দিয়ে জড়ানো বিমূর্ত চিন্তা চেতনায় চিরদিন দিয়ে যাবে আমাদের স্বপ্নের ঠিকানা। একুশ আমাদের মা-কে মা ডাকার অধিকার দিয়েছে; কণ্ঠে দিয়েছে ভাষা, চেতনায় দিয়েছে দৃঢ়তা।
আমরা সেই ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের গঠিত নবীন প্রজন্ম। ভাষা শহীদের অপরিশোধযোগ্য ঋণের অর্ঘ্য দিয়েই আমরা হব মহিয়ান। কাজের মাধ্যমেই আমরা প্রতিয়নত স্মরণ করব প্রাণ উৎর্গিত এ দেশের বীর সন্তানদের।
পরিশেষে বলতে চাই-
"রক্ত শপথে আমরা আজিকে
তোমাকে স্মরণ করি,
একুশে ফেব্রুয়ারি।
দৃঢ় দুই হাতে রক্ত পতাকা
উর্ধ্বে তুলিয়া ধরি,
একুশে ফেব্রুয়ারি।
তোমাকে স্মরণ করি।
লেখকঃ সাজ্জাদুজ্জামান চৌধুরী, প্রভাষক (অর্থনীতি), জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, জালালাবাদ সেনানিবাস, সিলেট। মোবাইলঃ ০১৭৩৫৫৫০২৬২
0 coment rios:
You can comment here