।। মুন্সি আব্দুল কাদির।।
আল কোরআনে ১৯ সংখ্যা ও কোভিড-১৯: একটি পর্যালোচনা
সারা পৃথিবী আজ করোনায় আক্রান্ত। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না, এই করোনা নিয়ে সামান্য হলেও চিন্তা করছে না। পৃথিবীর যত রথী মহারথী তাবত দুনিয়ার সবার মুখ চুপসে গেছে। সবাই বলছে আমাদের শক্তি সব শেষ। আসমানের দিকে সবাই চেয়ে আছে। মহান প্রভুর সাহায্য ছাড়া বাঁচার কোনো উপায় নেই। আজ সকলে একত্ববাদী হয়ে গেছে। সব আল্লাহর ইবাদাত কারী বান্দা। আজ আর কেউ অন্য কোনো প্রভু বা অলি আবদালকে ডাকে না। সবাই আল্লাহর পানে দুটো হাত উঠিয়ে ডাকছে। মানুষ যখন চরম বিপদে পরে যায় তখন সে কেবলমাত্র লা শারীক আল্লাহকে ডাকে। তখন তার মনে ধ্যানে অন্য কারো কোন চিন্তা থাকে না।
করোনা একটি ভাইরাস জনিত রোগের নাম। যার আঘাতে পুরো পৃথিবী আজ লন্ড বন্ড। জল স্থল আকাশ সব পথ বন্ধ। মানুষ এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যায় না। যেন সারা পৃথিবী একটি জেলখানা। এই বিষাদময় দিন ইমানদারদের জন্য মাওলাকে ডাকার জন্য এক বিরাট নেয়ামত। দুনিয়ামুখী মানুষদের দিন যেন কাটতে চায় না। তার কাছে সত্যিই ঘরকে জেলখানা বানিয়ে দিয়েছে। অন্য দিকে আল্লাহ প্রেমী মানুষদের জন্য ইতেকাফের মত। সে মাওলাকে ডাকতে পারে, কোরআন নিয়ে চিন্তা করতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ভাইরাস জনিত রোগের নাম দেওয়া হয়েছে কোভিড-১৯। অবশ্য সবাই বলবে ২০১৯ সালে প্রথম চীন দেশে এই ভাইরাস জনিত রোগ দেখা দেয় তার জন্য ১৯ দেওয়া হয়েছে। আমার চিন্তা এখানেই। এই রোগ ২০১৮ সালেও আসতে পারত, ২০২০ সালেও আসতে পারত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ২০১৯ সালে এই ভাইরাস দিলেন আর কোরআনকেও ১৯ দ্বারা বেষ্টন করে দিয়েছেন।
এই ভাইরাস জনিত রোগের নাম দেওয়া হয়েছে কোভিড-১৯। অবশ্য সবাই বলবে ২০১৯ সালে প্রথম চীন দেশে এই ভাইরাস জনিত রোগ দেখা দেয় তার জন্য ১৯ দেওয়া হয়েছে। আমার চিন্তা এখানেই। এই রোগ ২০১৮ সালেও আসতে পারত, ২০২০ সালেও আসতে পারত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ২০১৯ সালে এই ভাইরাস দিলেন আর কোরআনকেও ১৯ দ্বারা বেষ্টন করে দিয়েছেন।
আমার চিন্তায় বলে এই ১৯ এর মধ্যে এই রোগের মুক্তিও রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনকে সব রোগের নিরাময় হিসাবেও পাঠিয়েছেন। কোরআনকে শিফাও বলা হয়। আশ্চর্যের বিষয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোরআনুল কারীমের যে আয়াতে মানুষের মর্যাদার কথা তুলে ধরেছেন। আয়াতটি হল সুরা বনী ইসরাইলের ৭০তম আয়াত। এই আয়াতেও প্রথম অব্যয় ওয়াও বাদ দিলে এখানে অক্ষর সংখ্যা হয় ৭৬ যা উনিশ দ্বারা বিভাজ্য।
﴿وَلَقَدْ كَرَّمْنَا
بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَهُم مِّنَ
الطَّيِّبَتِ وَفَضَّلْنَهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا﴾
৩+৫+৩+৩+৭+২+৪+৬+৭+২+৬+৭+৩+৪+৩+৫+৬=৭৬ টি অক্ষর
অর্থাৎ,
“আমি অবশ্যই মানব সন্তানদেরকে মর্যাদা দান করেছি, আমরা তাদেরকে স্থলে এবং জলে বহন করি এবং উৎকৃষ্ট বস্তু দিয়ে তাদেরকে রিজিক দান করি। আর আমরা যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপরে আমরা তাদের প্রাধান্য দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।” (সুরা ইসরা, আয়াত: ৭০)
এরপর আল্লাহ তায়ালা যেই আয়াতে কারীমার মাধ্যমে মানব জাতিকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, আমি যে কোরআন তোমাদের নিকট প্রেরণ করেছি। তোমাদের জীবন বিধান, গাইড লাইন সাথে সাথে এই কোরআন অনুস্মরণ করলে তোমাদের যেমন আত্মিক রোগ থেকে বেঁচে যাবে । তেমনি তোমরা মুত্তাকী হয়ে যাবে আর তোমাদের শারীরিক সব রোগ বালাইও কোরআনের মাধ্যমে চলে যাবে। যেখানে পৃথিবীর সব ডাক্তার কবিরাজ ব্যর্থ হয়ে যাবে। সেখানে তুমি খালেছভাবে আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দাও। কোরআনের দ্বারস্ত হও। তোমার রোগ ভালো হয়ে যাবে। বিপদ কেটে যাবে। তাইতো আল্লাহ তায়ালা সুরা বনী ইসরাইলের ৮২ তম আয়াতে বলেন,
﴿وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ
لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا﴾
৫+২+৬+২+২+৪+৫+৮+৩+৪+৮+৩+৫=৫৭
টি অক্ষর
অর্থাৎ, “আর আমি কুরআনরে মধ্যে অবর্তীণ করেছি, যা হচ্ছে বিশ্বাসীদের
জন্য উপশম এবং করুণা, আর এটি অন্যায়কারীদরে
ক্ষতিসাধন ছাড়া আর কছিু বাড়ায় না। (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৮২)
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, উপরোক্ত দুটি আয়াত ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। যে আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের সম্মানিত করার কথা বললেন। সাথে সাথে মানুষ বেঁচে থাকলে অসুখ বিসুখে সম্মুখীন হবে। শারীরিক অসুস্থ হবে। মানুষ কোরআনের কাছে আসলে অসুখ বিসুখও বিদায় নিবে। এর দ্বারা অর্থ এটা নয় যে অসুস্থ হলে কোনো চিকিৎসা করবে না। বরং চিকিৎসা করবে, সাথে সাথে কোরআনের আমলও করবে। অপর দিকে যখন হেরে যাবে কোনো কুল পাবে না তখন চেষ্টার সাথে সাথে কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহর আশ্রয় চাইবে। কেননা কোরআনের মধ্যে বিশ্বাসীদের রোগের শিফা রয়েছে।
আরো কিছু আশ্চর্য কোরআনুল কারীমের প্রথমেই আল্লাহ তায়ালা রেখে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাজিলকৃত কোরআনুল কারীমের সর্ব প্রথম পূর্ণাঙ্গ সুরা সুলাতুল ফাতিহা তথা সুরাতুশ শিফার মধ্যে আল্লাহ তায়ালার নিকট কাকুতি মিনতি করার জন্য রয়েছে প্রথম দুটি আয়াত। যে দুটি আয়াত পড়লে আমাদের মধ্যে আবেগ উথলে উঠতে চায়। চোখ ছলছল করতে থাকে। হৃদয় বিগলিত হয়।
আল্লাহ তাআলার বাণী-
আল্লাহ তাআলার বাণী-
﴿إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ﴾
অর্থাৎ,
“আমরা কেবল তোমারি এবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য র্প্রাথনা করি।” (সূরা ফাতেহা, আয়াত: ৫)
৪+৪+৫+৬=১৯ টি অক্ষর। একই
ভাবে
﴿اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ﴾
“আমাদেরকে তুমি সহজ-সঠিক পথে পরচিালতি কর।” (সূরা ফাতেহা, আয়াত: ৬)
৫+৬+৮=১৯ টি অক্ষর,
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এই আবেগঘন মাওলার কাছে নিবেদন পেশ করার দুটো আয়াতও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
আমরা দেখি তিরমিজি শরীফে আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) এর হাদিস; যেখানে তিনি সুরা ফাতেহার মাধ্যমে এক আরব গোত্র প্রধানকে ঝাড়ফুঁক করার মাধ্যমে সাপে কাটা বিষ থেকে সারিয়ে তুলে ছিলেন।
এখন ভাবনার বিষয় হল, কোরআনুল কারীমের কোন সেই আয়াত; যার মাধ্যমে আমরা শিফা পেতে পারি এই মহামারী করোনা থেকে যার এখনো কোনো ঔষধ পাওয়া যায় না?
যার জন্য পুরো পৃথিবী থমকে গেছে। আমার চিন্তায় বার বার উকি দেয়। এই আয়াকে কারীমা হবে
﴿ بِسْمِ
اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
৩+৪+৬+৬= ১৯
এটি এমন এক আয়াত যা ছাড়া কোনো ভালো কাজ শুরু করা শুভনীয় নয়। যার দ্বারা কোনো খারাপ কাজ করা যায় না। কোনো খারাপ কাজ করার আগে এই আয়াতে কারীমা পড়তে চাইলেও মুখ লজ্জায় ঢেকে যায়। এই আয়াতের সাথে কোনো কাজ শুরু করা হলে রহমত পাশে পাশেই চলতে থাকে। এই আয়াতে কোরআনুল কারীমের প্রতি সুরার প্রথমেই রয়েছে। কোরআনুল কারীমে এই আয়াত ১১৪ বার রয়েছে যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। أعوذ بالله
من الشيطان الرجيم (আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম হল শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার হাতিয়ার। আর بِسْمِ اللَّهِ
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ হলো সকল কল্যাণ লাভের মহা কৌশল।
بِسْمِ اللَّهِ
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ মর্যাদা সম্পর্কে অনেকগুলো বর্ণনা রয়েছে তম্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
এক: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, بِسْمِ اللَّهِ
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ নাযিলের পর মেঘ পূর্বদিকে সরে গেল, বায়ু প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেল, সমুদ্র তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল, চতুস্পদ প্রাণীগুলো উৎকর্ণ হয়ে উঠল, অগ্নিগোলক নিক্ষিপ্ত হয়ে আকাশ শয়তান মুক্ত হল, আল্লাহ তায়ালা তাঁর মর্যাদা ও পরাক্রমের শপথ করে বললেন, তাঁর এই নাম যাহাতে উৎকীর্ণ হবে তাতে তিনি বরকত দিবেন। (তাফসীরে ইবনে কাছির)
দুই: একদিন হযরত উসমান (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, উহা আল্লাহ তায়ালার একটি নাম। চোখের পুতুল (মণি) ও উহার সাদা অংশে যেমন পরস্পর সন্নিহিত ও ঘনিষ্ঠ, আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠতম নাম ও বিসমিল্লাহ সেরূপ সন্নিহিত ও ঘনিষ্ঠ। (তাফসীরে ইবনে কাছির)
তিন: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার প্রতি এমন একটি আয়াত নাযিল করা হয়েছে যা সুলাইমান (আঃ) ও আমি ছাড়া আর কারো উপর নাযিল করা হয়নি, ইহা হচ্ছে, بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ (তাফসীরে ইবনে কাছির) بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ পড়লে শয়তান চুপসে যায়, রহমত উথলে উঠে, কাজে বরকত হয়।
আসুন, আমরা কোরআন নিয়ে চিন্তা করি। পরকালের জন্য আমাদের আমলের
অবস্থা খুবই খারাপ। আজকাল আমলের অনুপ্রেরণা পাওয়ার জায়গাও খুব কম। আজ কোথাও বসলে দুনিয়ার ফিকির ছাড়া অন্য কোনো আলোচনা খুব একটা হয় না।
আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও যারা গ্রামের মসজিদের ইমাম ছিলেন, তাদের আমল অনেক সুন্দর দেখেছি। তাদের কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া খুব বেশী ছিল না।
বর্তমানে আমাদের আলহামদু লিল্লাহ অনেক জ্ঞানী-গুণী আলেম রয়েছেন। ইলম অর্জনের সাথে সাথে আমালী জিন্দেগী সুন্দর করতে পারলে দুনিয়ার কল্যাণ আর পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত। চিন্তাশীল রাহবারগণ, চিন্তা করে জানালে জাতি উপকৃত হবে। আমরাও উপকৃত হব। আল্লাহ তায়ালা কঠিন এ করোনা মহামারি থেকে সকলকে হিফাজত করুন। আমীন।।
সিনিয়র
অফিসার,
ইসলামী
ব্যাংক, বাংলাদেশ লিমিটেড
লালদিঘিরপার শাখা।
লালদিঘিরপার শাখা।
0 coment rios:
You can comment here