Monday, April 27, 2020

“ঘরে বসে চেষ্টা করি, হাতের লেখা সুন্দর করি।” পর্ব-২


।। হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী।। 

ঘরে বসে চেষ্টা করি, হাতের লেখা সুন্দর করি।পর্ব-২

লেখা পড়া বিদ্যার্জনের হাতিয়ার। লেখা পড়া ছাড়া যেমন বিদ্যার্জনের চিন্তা করা যায় না, তেমনি পড়া ছাড়াও বিদ্যার্জনের কল্পনা করা যায় না। তাই শব্দ যুগল একটি অপরটির পরিপূরক। অন্য কথায় বলা যায়লেখা ও পড়া শব্দ দু'টি একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।

মানুষের জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার লেখার মাধ্যমে। লেখার মাধ্যমে বুঝা যায় ব্যক্তির বিদ্যা ও জ্ঞানার্জনের পরিধি কতটুকু। বাহ্যিক চোখে মানুষের শিক্ষার গভীরতা আঁচ করা অনেক সময়ই সম্ভব  হয় না। লেখা দেখে সাধারণত ব্যক্তির প্রতি মানুষের সু-ধারণা অথাব কু-ধারণা সৃষ্টি হয়ে থাকে। যদিও এ ধারণা অনেক সময় সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, এমনও অনেক লোক আছেন যাদের সম্বন্ধে অন্য পরিচয় জানা না থাকলে শুধু লেখা দেখে বিশ্বাস করা যায় না যে, তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত লোক।

পক্ষান্তরে, সুন্দর লেখার অধিকারী স্বল্প শিক্ষিত এমন অনেক লোক আছেন, যাদের লেখা দেখে একথা বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যে, তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন নি। লেখার উপর পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই শিক্ষা জগতে সুন্দর হাতের লেখার গুরুত্ব অপরিসীম।

লেখা সুন্দর হোক, এটা সবাই চায়। তাই স্বভাবতই জানার আকাঙ্ক্ষা জাগে যে, কীভাবে লেখা সুন্দর করা যায়। বিষয়টি আসলে অনুশীলনের ব্যাপার। কাজেই নিছক পরামর্শের দ্বারা এ গুণ অর্জন সম্ভব নয়, তবে কতিপয় দিকের প্রতি খেয়াল রাখলে বিষয়টি অনেকটা সহজ হবে সন্দেহ নেই।

বিষয়টি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই আমি কয়েকটি পর্বে এ বিষয়ে কিছু প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদানে সচেষ্ট হবো। আশা করা যায় একজন ব্যক্তি যে হাতের লেখা আসলেই সুন্দর করতে চায় তার জন্য এ নির্দেশনাগুলো খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

লেখা সুন্দর করার জন্য বিবেচ্য বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর ----------------

আট- ভালো কগজ-কলম
লেখা সুন্দর করার জন্য যেমনি ভালো কাগজ কলমের দরকার, তেমনি ভালো কালিও প্রয়োজন। গাঢ় কালো কিংবা মানানসই অন্য কোনো রংয়ের কালি ব্যবহার করতে হবে। হালাকা বর্ণের কালির লেখা তেমন সুন্দর দেখায় না।

নয়- কলম ধরার কৌশল:
সুন্দর ও দ্রুত লেখার জন্য কলম ধরার কৌশল আয়ত্ত্ব করতে হবে। নিভ থেকে আধা ইঞ্চি পরিমাণ উপর মধ্যমা, তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগ দিয়ে চেপে ধরতে হবে এবং কলমের মধ্যভাগ তর্জনি গোড়ার বাইরের দিকে লাগিয়ে রাখতে হবে।

দশ- হাত সুবিধা জনক স্থানে রাখা:
হাত কাগজের সমান্তরাল সুবিধাজনক স্থানে রাখতে হবে। এতে ব্যতিক্রম হলে লেখার সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে এবং কিছু লেখার পরই হাতে ব্যথা আসতে পারে।

এগারো- লেখার সময় ভর না দেওয়া:
লেখার সময় হাতের উপর শরীরের ভর দেয়া ঠিক নয়। কারণ এটা লেখার শ্রী বৃদ্ধির অন্তরায়।

বারো-ডান হাত দিয়ে লেখা:
ডান হাতে লেখার অভ্যাস করতে হবে। কেননা, বাম হাতে লেখা আদবের খেলাফ। অবশ্য ডান হাতে তেমন কোনো অসুবিধা থাকলে বাম হাত দিয়ে লেখা যেতে পারে।

তেরো-ভুল হলে এক টানে কাটা:
কোথাও ভুল হলে এক টান দিয়ে কেটে ফেলতে হয়। একাধিক টান দিলে লেখার শোভা কমে যায়। এটা মর্যাদা হানিকরও বটে।

চৌদ্দ-অভার রাইটিং না করা:
লেখার সময় “অভার রাইটিং” সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। তেমন কোনো প্রয়োজন হলে এমনভাবে তা করতে হবে, যাতে সহজে চোখে ধরা না পড়ে।
পনেরো-লেখা মানে আসার পর দ্রুত লেখা:
লেখা একটা মানে আসার আগ পর্যন্ত দ্রুত গতিতে লেখার চেষ্টা করা ঠিক নয়। অবশ্য লেখা একটি মানে আসার পর দ্রুত গতিতে লেখার চেষ্টা করতে হবে। এজন্যে ঘড়ির টাইম ধরে প্রথমে স্বাভাবিক গতিতে একটা নির্ধারিত  অংশ লেখে পরে এর চেয়ে দু’এক মিনিট কম সময়ে ঐ পরিমাণ অংশটুকুই পুনরায় লেখার চেষ্টা করতে হবে। এ পদ্ধিতে পুন: পুন: প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এভাবে কয়েকদিন চেষ্টা অব্যাহত রাখলে লেখার গতি বৃদ্ধি পাবে সন্দেহ নেই। তবে মনে রাখতে হবে দ্রুত লেখতে গিয়ে যেনো লেখার মান ক্ষুণ্ন না হয়।

ষোলো-অঙ্গবিন্যাস ঠিক করা : 
সোজা হয়ে বসতে হবে এবং অনভ্যস্ত হাতটিকে (যেমন ডানহাতিদের ক্ষেত্রে বাঁ হাত) কাগজ বা খাতাটিকে ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করতে হবে। হুপার বলেন, ‘লেখার সময় আমি আমার অনভ্যস্ত হাতটিকে সামঞ্জস্য রক্ষার্থে ব্যবহার করি। এটা আমাকে স্থির থাকতে এবং ডান হাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায্য করে।তবে এজন্য অবশ্যই চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করা উত্তম।

সতেরো-তুলনামূলক ধীরগতি অবলম্বন করা : 
বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে যত দ্রুত পারা যায় লেখা শেষ করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। হুপার বলেন, “লেখা কোনো দৌড় প্রতিযোগিতা নয়। কত দ্রুত তা শেষ করবেন এটাকে গুরুত্ব না দিয়ে, প্রতিটি অক্ষর কীভাবে সুন্দর করবেন সেটাকে গুরুত্ব দিন। একটু ধীরে লিখুন এবং অক্ষরকে তার শ্রেষ্ঠ চেহারায় রূপ দিন।”

অক্ষরকে সুন্দরভাবে রূপ দিতে প্রথমে বড় বড় করে লেখার অভ্যাস করতে হবে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক লেখার স্টাইল ছোট আকারে হ্রাস করতে হবে।


আঠারো-দাগ টেনে লেখা
লেখা যদি সোজা না যায় তাহলে আগে কাঠ পেন্সিল দিয়ে দাগ টেনে নেয়া যেতে পারে। তবে এটা সব সময় করা যাবে না। যাতে লেখা সোজা যায় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।

ঊনিশ- জেলপেন ব্যবহার না করা:
একই ধরনের কলম দিয়ে লেখার চেষ্টা করতে হবে। জেল পেন (জেল কলম) পরিহার করে বলপয়েন্ট কলম ব্যবহার করতে হবে। বাজারে এখন পাঁচ টাকা মূল্যের অনেক ভালো কলম পাওয়া যায়। হাতের লেখা সুন্দর না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ধৈর্য্য হারালে চলবে না।


বিশ: অনুশীলন, অনুশীলন এবং অনুশীলনঃ

হাতের লেখা ভালো করার জন্য অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে যত বেশি অনুশীলন করা হবে ততই দক্ষতা বাড়বে।


উপরোক্ত দিকগুলো সামনে রেখে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে লেখার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং আকর্ষণীয় লেখার অধিকারী হওয়া যাবে বলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

উল্লেখ্য যে, এ পর্যন্ত লেখার বাহ্যিক দিকের আলোচনা করা হলো । লেখার আরেকটি দিক আছে অভ্যন্তরীণ, অর্থ ও ভাষাগত। লেখা সার্থক কতে হলে সেদিকেও অবশ্যই খেয়াল করা দরকার।

সম্পাদিত

লেখাটি আমার লেখা প্রগতির ডাক বই দ্রষ্টব্য।


লেখকঃ
হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী,  
(জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)
সরকারি এস. সি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সুনামগঞ্জ।
মোবাইলঃ 01715 142715
ইমেইল: 
mashhudchowdhury@gmail.com
ইউটিউব চ্যানেল:
https://www.youtube.com/channel/UC8ZSiWdwj6NkC67WPd5I1sQ?view_as=subscriber 
শুভেচ্ছা টিভি - Shuveccha TV 
Facebook: 
Hafiz Md Mashhud Chowdhury
Facebook Page: 
হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী
Somewhereinblog.net: 
হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী  



শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here