।। মুফতি নাসির বিন নূর।।
সালাতুত তারাবীহ; রাকাত সংখ্যা আট বা নফল হিসেবে নির্দিষ্ট কোন রাকাত
সংখ্যা নেই'' দাবী কি মারাত্মক ভুল ??
আমি শুরুতেই ক্লিয়ার করে নেওয়া জরুরী মনে করছি। আমি নিজে বিশ
রাকাত আদায় করি এবং এটি প্রমাণিত সত্য বলেই জানি। এনিয়ে আমার এশকাল নেই, সন্দেহও নেই।
তবুও কেনো বিপরীত মত নিয়ে আলোচনা করছি, এর একটি কারণ
তো অবশ্যই আছে। কিছুদিন আগে হুট করেই রেজওয়ান রফিকী ভাই মাওলানা আহমদুল্লাহ সাহেবকে
নিয়ে স্ট্যাটাস দিলেন।
কিছুক্ষণ পরই আরেকটি স্ট্যাটাস! তারাবী নিয়ে মাওলানা আহমদুল্লাহর
বক্তব্য। তিনি বলেছেন, তারাবী আট রাকাতও
সুন্নাত, আট রাকাত পড়া যায়। আবার বিশ রাকাতও আদায় করা যায়।
ব্যাস, আর যায় কই। তিনি কেনো বললেন আট রাকাতও সুন্নাত। আট রাকাতও পড়া
যায়! পরেরদিন ভিডিও পোস্ট করলেন। খন্ডন সহ। নামকে ওয়াস্তে খন্ডন, আদতে একটি ওয়াজ!
এরো আগে বাংলাদেশের বিখ্যাত আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী
কোনো এক ফেসবুক লাইভে এসে বলেছিলেন, তারাবীহের রাকাত নিয়ে বাড়াবাড়ি
না করে আমাদের উচিত গুণগত মান উন্নতির চিন্তা করা। এইতো,ব্যস। তার বিরুদ্ধেও
তোফান শুরু হয়েছে।
আমি কেবল এই দুটি পয়েন্ট নিয়েই সংক্ষেপে আলোচনা করবো। যেহেতু
আমি শুরুতেই বলেছি, বিশ রাকাত তারাবীহ আমি পড়ি, সন্দেহাতীতভাবেই
আমল করছি। এর দলীলও পর্যাপ্ত রয়েছে। সুতরাং পৃথকভাবে বিশ রাকাত প্রমাণ করার প্রয়েজন
নেই। যে দুটি পয়েন্ট নিয়ে সমালোচনা, কেবল সে দুটি পয়েন্টের উপরই
সংক্ষেপে আলোকপাত করবো।
আমার আলোচনার মূল মাকসাদ কেবল এটুকুই প্রমাণ করা যে, বিশ রাকাতের
মত যেকরম সঠিক ও শুদ্ধ তদ্রুপ উল্লিখিত দুটি মতও ভূল নয় বরং সঠিক ও শুদ্ধ। এবং এই মত
দুটি মাওলানা আহমদুল্লাহ ও আজহারী সাহেব ব্যক্তিগত নয় বরং পরস্পরায় সাহাবা যুগ থেকেই
এসব মতামত চলে আসছে।
সুতরাং শুরুতেই বিষয়টি স্পষ্ট করার পর আশা করি কারো জন্য আর
এমন ধারণা করার সুযোগ নেই যে, হয়তো লেখক আট রাকাত বা রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়' এমন মতের পক্ষে।
১) হযর জাবের (রা) থেকে বর্ণিত
أنه صلى الله عليه وسلم صلى بهم ثماني
ركعات والوتر )صحیح ابن حبان وابن خزیمة، هذاالحدیث
صحیح عندهما(
নবী (স) সাহাবাদের নিয়ে আট রাকাত (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করেছেন।
২) অনুরূপ জাবির (রা) এর হাদীস
)روى أبو يعلى، والطبراني بسند حسن)
جاء أُبَي بن كعب إلى رسول اللّه صلى الله عليه وسلم، فقال: يا رسول اللّه، إنه كان
مني الليلة شيء، يعني في رمضان، قال: "وما ذاك يا أبي"؟. قال: نسوة في داري،
قلن: إنا لا نقرأ القرآنَ، فنصلي بصلاتك ؟ فصليت بهن ثماني ركعات وأوترت، فكانت سنة
الرضا، ولم يقل شيئاً (قال الهیثمی: فی "مجمع الزواٸد: اسناده حسن وقال الذهبی: فی "میزان الاعتدال:
اسناده وسط(
উবাই বিন কা‘ব (রা) রসূলুল্লাহ (স) এর নিকট
এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! রমাযানের রাত্রিতে আমার একটি ব্যাপার ঘটে গেছে।
রসূলুল্লাহ (স) বললেন, তা কী হে উবাই! তিনি বললেন, আমার ঘরের নারীরা
বলে যে, আমরা কুরআন পাঠ করবো না বরং আপনার সঙ্গে নামায পড়বো? তিনি বললেন, আমি তাদের নিয়ে
আট রাক‘আত নামায পড়লাম এবং বিতর পড়লাম।
৩) অন্য বর্ণনায় এসেছে
عن أبي بن كعب أنه صلى في رمضان بنسوة
في داره ثمان ركعة
উবাই বিন কা‘ব (রা) বলেন, তিনি রমাযান
মাসে তার ঘরে মহিলাদের নিয়ে আট রাক‘আত (তারাবীহ) সলাত আদায় করতেন।
৪) মুআত্তা মালেকে বর্ণিত
أن عمر أمر أبي بن كعب وتميماً الداري
أن يقوما للناس بإحدى عشرة ركعة )مالك في الموطأ(
উমার (রা) দু’জন সাহাবী (১) উবাই বিন কা‘ব (২) তামীমদারীকে
(রমাযান মাসে) ১১ রাক‘আত নামায পড়ানোর নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। (এর মধ্যে তিন রাকাত
বিতর)
৫) সুনানে বাইহাকারী বর্ণনা
عن الساٸب ابن یزید : کنا نقوم فی
زمان عمر ابن الخطاب باحدی عشرة رکعة (قال الامام السیوطی: فی”المصابیح فی صلوة التراویح“ اسناده فی غایة الصحة(
হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযিদ (রা) বলেন, আমরা হযরত উমরের
(রা) যামানায় আট রাকাত তারাবীহ পড়তাম।
৬) বাইহাকীর অন্য বর্ণনায় এসেছে
کنا نصلی فی زمن عمر فی رمضان ثلاث عشر رکعة
আমরা হযরত উমরের যামানায়
আট রাকাত তারাবীহ পড়তাম
৭) বুখারীর প্রশিদ্ধ হাদীস- আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রাহমান
(র) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহকে (রা) জিজ্ঞেস করেন যে, রমযানে আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কিরূপ ছিল?তিনি বললেন,
(عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ
الرَّحْمٰنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ فِي رَمَضَانَ)
فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ
رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي
أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ
রমাযান মাসে ও রমাযানে
ব্যতীত অন্য সময়ে/মাসে (রাতে) তিনি এগার রাকাত হতে বৃদ্ধি করতেন না। তিনি চার রাকাত
সালাত আদায় করতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর
তিনি চার রাক‘আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো
না।
সাহাবী আম্মাজান আয়েশাকে (রা) প্রশ্ন করলেন, নবীজির রমজানে
রাতের নামাজ নিয়ে। আম্মাজান আয়েশা (রা) বললেন, তিনি রমজান ও রমজান ছাড়া অন্য
মাসেও আট রাকাতই পড়তেন।
সাহাবী রমজানের আমলের কথা বলার মাহাত্ম কি? অবশ্যই সাহাবীর
বিশ্বাস ছিল নবীজি রমজানে বেশি আমল করেন। এজন্য জানতে চেয়েছেন। সাহাবীর উদ্দেশ্য তাহাজ্জুদ
নয়। তাহাজ্জুদ হলে তো রমজান মাসের কথা উল্লেখ করার দরকার ছিলনা। কারণ তাহাজ্জুদ যে
রমজান ছাড়া অন্য মাসেও হয়-তা তো সাহাবীদের জানা বিষয়। রমজান উল্লেখ করার মানেই হোল, সাহাবীর উদ্দেশ্য
ছিল তাহাজ্জুদ অন্য কোনো নামাজ।
কিন্তু আম্মাজান তার
বিশ্বাস খন্ডন করলেন। বললেন, আটের কথা। যদি আটের বেশিই হত
তাহলে অবশ্যই আম্মাজান তার বিশ্বাসটা এভাবে খন্ডন করতেন না। বরং তিনি সুস্পষ্ট বলেই
দিতেন যে, তারাবী আলাদা। সেটি বিশ রাকাত।
মুহাদ্দিসীন এই হাদীসটি ''কিয়ামুল লাইল
ফি রমজান তথা তারাবীহ''
অধ্যায়ে এনেছেন। শারিহীন বা হাদীসের ব্যাখ্যাকারগণও এহাদীস থেকে
কেবল তাহাজ্জুদ নয় বরং রমজানের তারাবীহের নামাজ বুঝেছেন। তারা এ বুঝ থেকেই বিশদ আলোচনাও
করেছেন।
ইমাম মালেক (র) বলেন-
الذی جمع علیه الناس عمر ابن الخطاب
احب الی وهو احدی عشرة رکعة وهو صلاة رسول الله صلی الله علیه وسلم -قیل له: احد عشر
رکعة بالوتر؟ قال نعم )المصابیح فی صلاة التراویح للسیوطی رح(
তিন রাকাত বিতরসহ মোট এগারো রাকাত ছিলো রাসূল (স) এর তারাবীহের
নামাজ।
ইমাম ইবনে ইসহাক (র) বলেন-(তিনি হযরত সায়েব
বিন ইয়াযিদ থেকে বর্ণনাকৃত আট রাকাত তারাবীহের হাদীসটি (৫ নং) উল্লেখ করে বলেন)
هذا اثبت ما سمعت فی ذلک وهو موافق
لحدیث عاٸشة فی صلوة النبی صلی الله علیه وسلم (فتح الباری(
হযরত সায়েবের হাদীস সবচেয়ে মজবুত। এজন্য যে, তাঁর বর্ণনা
মিলে যায় আম্মাজান আয়েশা (রা) এর সাথে।
ইমাম বাইহাকী বলেন,
فانه صح عنه انه صلی بهم ثمانی رکعات
والوتر (مرقات المفاتیح)
হযরত জাবের (রা) থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত যে, রাসূল (স) সাহাবাদের
নিয়ে আট রাকাত তারাবীহ পড়েছেন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র) বলেন,
اعلم انه لم یوقت رسول الله فی التراویح
عددا معینا بل لایزید فی رمضان ولا فی غیره علی ثلاث رکعة (مرقات المفاتیح)
রাসূল (স) থেকে (পৃথকভাবে) নির্দিষ্ট করে তারাবীহের জন্য আলাদা
সালাত প্রমাণিত নয়। বরং তিনি রমজানে এবং অন্য মাসে-সব মাসে আট রাকাতই পড়তেন।
ইমাম আহমদ ইবনে আলি ইবনে হাজার আসকালানী (র) বলেন- (তিনি আট, বিশ ও এরচে
বেশি নিয়ে আলোচনার পর বলেন)
والعدد الاول موافق لحدیث عاٸشة المذکور
بعد هذا الحدیث فی الباب (فتح الباری(
প্রথম মতটি (আট রাকাত, বিতরসহ এগারো) আম্মাজান আয়েশার
বর্ণনার মুওয়াফিক।
কামাল ইবনে হুমাম (র) বলেন, (তিনি ফতহুল
কাদীরে আট রাকাত সংক্রান্তত আম্মাজানের হাদীস এবং বিশ রাকাতের নসগুলো উল্লেখ করে সবশেষে
বলেন)
فتحصل من هذا کله ان قیام رمضان سنة
احدی عشر رکعة بالوتر فی جماعة فعله صلی الله علیه وسلم ثم ترکه لعذر افاد انه لولا
خشیة ذلک لواظبت بکم ولا شک فی تحقق الامن من ذلک بوفاته فیکون سنة وکونها عشرین سنة
الخلفاء الراشدین ...ولایستلزم کون ذلک سنته اذ سنته بمواظبته بنفسه....فتکون العشرون
مستحبا وذالک القدر منها هو السنة کالاربع بعد العشاء مستحبة ورکعتان منها هی السنة )فتح القدیر:جلد-١ ، صفحة- ٤٨٦(
রাসূল (স.) থেকে আট রাকাতই প্রমাণিত। সুতরাং আটই সুন্নতে নবী (স.)।
বিশ রাকাত খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে প্রমাণিত। তাই বিশ রাকাত মুস্তাহাব। এই 'বিশ' থেকে কেবল 'আট' হলো সুন্নাত।
(ফতওয়ায়ে শামী
ও বাহরুর রায়েকে ইবনে হুমামের (র) পুরো বক্তব্যকে সংক্ষেপে এভাবে এনেছেন-
ان مقتضی الدلیل کون المسنون منها
ثمان والباقی مستحب
দলীলের আলোকে বুঝা যায়, আট রাকাত সুন্নাত আর বাকি রাকাত
মুস্তাহাব)
আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মেরী রহ. বিস্তর আলোচনার পর বলেন-
’لاَ مَنَاصَ مِنْ تَسْلِیْمِ اَنَّ تَرَاوِیْحَۃً عَلَیْہِ السَّلاَمُ
کَانَتْ ثَمَانِیَۃَ رَکْعَاتٍ وَّ لَمْ یَثْبُتْ فِیْ رِوَایَۃٍ مِنَ الرِّوَایَاتِ
اَنَّہ‘ عَلَیْہِ السَّلاَمُ صَلَّی التَّرَاوِیْحَ وَالتَّہَجُّدَ عَلٰی حِدَۃٍ فِیْ
رَمَضَانَ بَلْ طَوَّلَ التَّرَاوِیْحَ وَ بَیْنَ التَّرَاوِیْحِ وَالتَّھَجُّدِ فِیْ
عَھْدِہٖ عَلَیْہِ السَّلاَمُ لَمْ یَکُنْ فَرْقٌ فِی الرَّکَعَاتِ بَلْ فِی الْوَقْتِ
وَالصِّفَۃِ (عرف الشذی(
ইমাম আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহ) স্পষ্ট বলেছেন, রাসূল স. তারাবী
ছিল আট রাকাতই। এমন কোনো বর্ণনা প্রমাণিত নয় যে, রাসূল স. রমজানে
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পৃথকভাবে পড়েছেন। বরং তিনি তারাবীহকে রমজানে লম্বা করে পড়তেন।
এবং তারাবীহ ও তাহাজ্জুদে কোনো ফরক ছিলনা, উভয়টি একই। পার্থক্য কেবল সময়
ও বৈশিষ্টে।
দেখুন, রাসূল (স) যে তিন দিন প্রকাশ্যে মাসজিদে সালাত আদায় করেছেন, ঐ তিন দিন দুবার
রাতে সালাত আদায় করেছেন, ঐ তিন দিন তারাবীহ আদায় করে পূণরায় আবার আট রাকাত পড়েছেন- এমন
বর্ণনা একটিও পাওয়া যায়না। যদি এমনটা প্রমাণিত হতো যে, ঐতিন দিন প্রথমে
একবার বিশ রাকআত, পরে উঠে আবার আট রাকাত পড়েছেন, তবে দুটো পৃথক
সালাত হতো৷
এমনকি সাহাবাগণ থেকেও এরকম কোনো প্রমাণ সহিহ সরিহ সনদে বর্ণিত
নেই। বরং বুখারীতে বর্ণিত হযরত উমরা (রা) এর একটি কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, সাহাবাগণ তারাবীহ
ও তাহাজ্জুদ পৃথক করে দু বার পড়তেন না বরং তারা একবারই কিয়ামুল লাইল করতেন।
বর্ণনাটি
দেখুন-
আবদুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল-ক্বারী (র) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রমাযানের
এক রাতে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর সাথে মসজিদে নাবাবীতে গিয়ে দেখি
যে, লোকেরা এলোমেলোভাবে জামা‘আতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত
আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে।
‘উমার (রা) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি
আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে জমা করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি
‘উবাই ইবনু ‘কাব (রা)-এর পিছনে সকলকে জমা
করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর (‘উমার (রা) সাথে বের হই। তখন
লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। তখন উমার (রা) বললেন,
نِعْمَ الْبِدْعَةُ هَذِهِ وَالَّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنْ
الَّتِي يَقُومُونَ يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ
কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে
থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি
শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত।
অর্থাৎ হযরত উমর বুঝালেন যে, যারা শেষ রাতে
উঠে নামায পড়বেন তারা, এখন যারা নামায পড়ছেন তাদের চেয়ে ভালো৷
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ যদি পৃথক নামাজ হয়ে থাকে এবং সাহাবাগণ উভয়টির
উপর আমল করে থাকতেন তাহলে এখন (রাতের শুরু ভাগে) যারা পড়ছেন, তারা যদি আবার
ঘুম থেকে উঠে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়েন, তবে তো এগ্রুপটিই অধিক ভালো
হওয়ার কথা৷ যারা এখন ঘুমিয়ে আছেন, তারা এদের চেয়ে কম সালাত পড়ে তারা অধিক ভাল হওয়ার কথা নয়৷
তার মানে পরিস্কার যে, সাহাবাগণ কিয়ামুল লাইল কেউ
প্রথম রাতে আর কেউ শেষ রাতে করতেন। এক রাতে দুই ধরণের পৃথক নামাজ তারা পড়তেন না। তবে
যারা শেষ রাতে করেন, তারা উত্তম৷ এটিই বুঝা যায় হযরত উমরের (রা) কথায়।
তাঁদের এই মতটি মেনে নিলে বিতর সংক্রান্ত সহিহ বর্ণনার সাথেও
তাআরুজ বা বৈপরিত্ব থাকেনা। রাসূল (স)বলেন,
اجعلوا اخر صلوتکم وترا
তোমরা বিতরকে রাতের শেষ নামাজ বানাও।
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একি নামাজ ধরে নিলে রমজানেও সবশেষ নামাজ
বিতরই হয়। অন্যথায় ভিন্ন ধরলে রমজানে রাতের শেষ নামাজ তাহাজ্জুদ হয়, বিতর হয়না।
আবার অনেক ফকীহ ও মুহাদ্দীস সকল বর্ণনায় সমন্বয় দিতে গিয়ে বলেছেন, যদিও রাসূল
(স) আট রাকাতই পড়েছেন। তবে তারাবীহের সালাতে
রাকাত মুখ্য নয়। গুণগত মান হলো মূল বিষয়। রাকাতে কমবেশ হলে সমস্যা নেই। নফলে রাকাত
কমবেশ হতে পারে।
আল্লামা ইবনে হিব্বান,যারক্বানী (রহ) বলেন,
أن التراويح كانت أولاً إحدى عشرة
ركعة، وكانوا يطيلون القراءة، فثقل عليهم، فخففوا القراءة، وزادوا في عدد الركعات،
فكانوا يصلون عشرين ركعة، غير الشفع والوتر بقراءة متوسطة، ثم خففوا القراءة، وجعلوا
الركعات ستّاً وثلاثين، غير الشفع والوتر، ومضى الأمر على ذلك (فقه السنة(
তারাবী প্রথমে (বিতরসহ) এগারো রাকাতই ছিল। তারা লম্বা কেরাতে
পড়তেন। কিন্তু তা (কেরাত চলাকালীন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকাটা) মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য
ছিলো। ফলে কেরাত (কিয়াম) কমিয়ে তারা রাকাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এরপর তারা বিশ রাকাতই পড়েছেন।
কেউ কেউ কেরাত আরো কমিয়ে রাকাত বাড়িয়ে ৩৬ এ নিয়েছেন।
এমনটাই বলেছেন ইবনে হাজার আসকালনী (র) (তিনি সব ধরণের বর্ণনা
ও মততামত উল্লেখ করে বলেন)
والجمع بین هذه الروایات ممکن باختلاف
الاحوال ، ویحتمل ان ذلک الاختلاف بحسب تطویل القراءة وتخفیفها فحیث یطیل القراءة تقل
الرکعات وبالعکس (فتح الباری(
হয়তো একেক সময় একেকভাবে পড়া হয়েছে। কেরাত (কিয়াম) লম্বা করলে
(রাকাত বেশি পড়লে) রাকাত কমানো হয়েছে (৮ রাকাত)। আর রাকাত বাড়ালে (২০ হোক বা এরচে বেশি)
কেরাত ছোটো করেছেন।
ইমাম শাফেয়ী (র) বলেন,
ان اطالوا القیام واقلوا السجود فحسن
وان اکثروا السجود واخفوا القراءة فحسن والاول احب الی (فتح الباری(
কিয়াম লম্বা করে সেজদা কমিয়ে দিলেও (অর্থাৎ রাকাত কমালে) চলে
আবার সেজদা বৃদ্ধি করে কেরাত সংক্ষেপ-ছোটো-করলে (অর্থাৎ রাকাত বৃদ্ধি করলেও চলে। তবে
আমার কাছে প্রথম সুরত অধিক পছন্দের। (রাকাত কমিয়ে কেরাত/কিয়াম লম্বা করা)।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (র) এরও এই মত (ইমাম ইবনে তাইমিয়া
(র) তার বরাতে উল্লেখ করেছেন)
والتراويح إن صلاها كمذهب أبي حنيفة
، والشافعي ، وأحمد : عشرين ركعة أو : كمذهب مالك ستا وثلاثين ، أو ثلاث عشرة ، أو
إحدى عشرة فقد أحسن ، كما نص عليه الإمام أحمد لعدم التوقيف فيكون تكثير الركعات وتقليلها
بحسب طول القيام وقصره (الاختيارات: 64 )
আট রাকাত (বিতরসহ এগারো এবং বিতরের সাথে দুরাকাত সুন্নাতসহ তেরো), বিশ বা ৩৬ রাকাত-সবটি
চলে। যে কোনো একটির উপর আমল করলেই হবে। কিয়াম যদি লম্বা করে তাহলে রাকাত কমাবে, কিয়াম সংক্ষেপ
করলে রাকাত বাড়িয়ে দিবে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন,
اعلم انه لم یوقت رسول الله فی التراویح
عددا معینا بل لایزید فی رمضان ولا فی غیره علی ثلاث رکعة لکن کان یطیل الرکعات فلما
جمعهم عمر علی ابی کان یصلی بهم عشرین رکعة ثم یوتر بثلاث وکان یخفف القراءة بقدر مازاد
من الرکعات لان ذلک اخف علی المامومین من یطویل الرکعة الواحدة ثم کان طاٸفة من السلف
یقومون باربعین رکعة واخرون بست و ثلاثین وهذا کله حسن ساٸغ (مرقات المفاتیح(
রাসূল স. থেকে আট নির্দিষ্ট করে তারাবীহের জন্য আলাদা রাকাত
প্রমাণিত নয়। বরং তিনি রমজানে এবং অন্য মাসে-সব মাসেই আট রাকাত পড়তেন। হযরত উমর রা.
মানুষের কষ্টের কথা ভেবে কেরাত/কিয়াম কমিয়ে সে অনুযায়ী রাকাত বাড়িয়ে বিশ করে দিয়েছেন।
এছাড়া কেউ কেউ ৪০ আবার কেউ ৩৬ রাকাতও পড়েছেন।সবটিই ঠিক আছে।
ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী (র) বলেন-
الذي وردت به الأحاديث الصحيحة والحسان
الأمر بقيام رمضان والترغيب فيه من غير تخصيص بعدد ، ولم يثبت أن النبي صلى الله عليه
وسلم صلى التراويح عشرين ركعة ، وإنما صلى ليالي صلاة لم يذكر عددها ، ثم تأخر في الليلة
الرابعة خشية أن تفرض عليهم فيعجزوا عنها (الموسوعة الفقهية: 27 / 144 ، المصابیح فی صلاة التراویح للسیوطی(
রমজানে রাত্রিজাগরণ/কিয়ামুল লাইলে উদ্বুধ করণ সংক্রান্ত যত সহিহ
হাদীসে আছে, সেগুলোতে রাকাতের উল্লেখ নেই। রাসূল (স) বিশ রাকাত পড়েছেন মর্মে
কোনো প্রমাণও নেই।
শায়খ ইবনে উসামিন (র) বলেন-
: لا ينبغي لنا أن نغلو أو نفرط ، فبعض
الناس يغلو من حيث التزام السنة في العدد، فيقول : لا تجوز الزيادة على العدد الذي
جاءت به السنَّة ، وينكر أشدَّ النكير على من زاد على ذلك ، ويقول : إنه آثم عاصٍ
.......وهذا لا شك أنه خطأ ، والطرف الثاني : عكس هؤلاء ، أنكروا
على من اقتصر على إحدى عشرة ركعة إنكاراً عظيماً، وقالوا : خرجتَ عن الإجماع......وهذا
أيضاً خطأ . وعلى كلٍّ ينبغي للإنسان أن لا يشدد على الناس في أمر واسع ، (الشرح الممتع : 4 / 73- 75 (
এই নামাজ নিয়ে দুটি পক্ষ খুব বাড়াবাড়ি করে। একদল এগারো (বিতর
বাদে আট) এর বেশি বেদআত বলে। যা স্পষ্ট ভুল। আবার অন্য দল বিশে অটল। এর কম দাবি করলে
মারাত্মক তিরস্কার করে। এটাও ভুল। প্রশস্ত বিষয়ে এভাবে বাড়াবাড়ি উচিত নয়।
শায়খ ইবনে বায (রহ) বলেন-
فقد ثبت عن النبي عليه الصلاة والسلام
ما يدل على التوسعة في صلاة الليل وعدم تحديد ركعات معينة، وأن السنة أن يُصلي المؤمن
-وهكذا المؤمنة- مثنى مثنى، يُسلم من كل اثنتين، ومن ذلك ما ثبت في الصحيحين من حديث
ابن عمر رضي الله عنهما أن النبي ﷺ قال: صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا خشي أحدُكم الصبحَ
صلى ركعةً واحدةً تُوتر له ما قد صلى. فقوله
ﷺ: صلاة الليل مثنى مثنى خبر معناه الأمر، يعني: "صلُّوا في الليل مثنى مثنى"،
ومعنى مثنى مثنى: يُسلِّم من كل اثنتين، ثم يختم بواحدةٍ، وهي الوتر، وهكذا كان يفعل
عليه الصلاة والسلام فإنه كان يصلي من الليل مثنى مثنى، ثم يوتر بواحدةٍ عليه الصلاة
والسلام كما روت ذلك عائشة رضي الله عنها وابن عباس وجماعة.
قالت عائشة رضي الله عنها: كان رسول
الله ﷺ يصلي من الليل عشر ركعات، يُسلِّم من كل اثنتين، ثم يوتر بواحدةٍ وقالت رضي
الله عنها: ما كان رسول الله ﷺ يزيد فيي رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة، يُصلي
أربعًا، فلا تسأل عن حسنهنََّ وطولهنَّ، ثم يصلي أربعًا، فلا تسأل عن حسنهنَّ وطولهنَّ،
ثم يصلي ثلاثًا متفق عليه.
وفي قولها رضي الله عنها: "ما
كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة" ما يدل على أن الأفضل في صلاة
الليل في رمضان وفي غيره إحدى عشرة، يُسلِّم من كل اثنتين، ويُوتر بواحدةٍ، وثبت عنها
رضي الله عنها وعن غيرها أيضًا أنه ربما صلَّى ثلاث عشرة ركعة عليه الصلاة والسلام.
فهذا أفضل ما ورد، وأصح ما ورد عنه
عليه الصلاة والسلام الإيتار بثلاث عشرة أو إحدى عشرة ركعة، والأفضل إحدى عشرة، فإن
أوتر بثلاث عشرة فهو أيضًا سنة وحسن، وهذا العدد أرفق بالناس، وأعون للإمام على الخشوع
في ركوعه وسجوده وفي قراءته، وفي ترتيل القراءة وتدبرها، وعدم العجلة في كل شيء.
وإن أوتر بثلاثٍ وعشرين كما فعل ذلك
عمر والصحابة في بعض الليالي من رمضان فلا بأس؛ فالأمر واسع، وثبت عن عمر والصحابة أنهم
أوتروا بإحدى عشرة كما في حديث عائشة. فقد
ثبت عن عمر هذا وهذا، ثبت عنه أنه أمر مَن عيَّن من الصحابة أن
يُصلي إحدى عشرة، وثبت عنهم أنهم صلّوا بأمره ثلاثًا وعشرين. وهذا يدل على التوسعة
في ذلك، وأن الأمر عند الصحابة واسع، كما دلَّ عليه قوله عليه الصلاة والسلام: صلاة
الليل مثنى مثنى.
ولكن الأفضل من حيث فعله ﷺ إحدى عشرة
أو ثلاث عشرة، وسبق ما يدل على أن إحدى عشرة أفضل لقول عائشة رضي الله عنها:
"ما كان يزيد ﷺ في رمضان ولا في غيره عن إحدى عشرة ركعة"، يعني: غالبًا. ولهذا
ثبت عنها رضي الله عنها أنه صلى ثلاث عشرة، وثبت عن غيرها، فدل ذلك على أن مرادها الأغلب . وإذا
نوَّع فصلى في بعض الليالي إحدى عشرة، وفي بعضها ثلاث عشرة فلا حرج فيه، فكله سنة
সারমর্ম: রাকাত নির্দিষ্ট করার সুযোগ
নেই। রাসূল (স) থেকে সালাতুল লাইলের ব্যাপারে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। একেক সময় একেক
সংখ্যক রাকাত পড়েছেন। বেশিরভাগ সময় এগারো, কখনো তেরো। তদ্রুপ সাহাবাদের
থেকেও। কোনো বর্ণনায় এসেছে হযরত উমর (রা) আট রাকাতে জন্য সাহাবীকে আদেশ করেছেন। আবার
অন্য বর্ণনায় বিশের কথা এসেছে। এসব দ্বারা
বুঝা যায় রাতের নামাজের ব্যাপারে প্রশস্ততা রয়েছে। যেমনটি ''সালাতুল লাইল
মাছনা মাছনা' হাদীস দ্বারা বুঝা যায়। সাহাবাদের মাঝেও বিষয়টি প্রশস্তই ছিলো।
তবে উত্তম রাসূল (স) যা করেছেন, তা-ই করা। এগারো
বা তেরো রাকাত। কোনো রাতে এগারো আবার কোনো রাতে তেরো পড়লেও সুন্নাত হবে। কোনো সমস্য
নেই।
আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যা'তে দীর্ঘ আলোচনার পর উল্লেখ
করা হয়-
والحاصل : أن من صلى إحدى عشرة ركعة
على الصفة الواردة عن الني صلى الله عليه وسلم فقد أحسن وأصاب السنة ، ومن خفف القراءة
وزاد عدد الركعات فقد أحسن ، ولا إنكار على من فعل أحد الأمرين (الموسوعة الفقهية :27 /145 )
আট রাকাত পড়লে সুন্নাহ আদায় হবে আবার বিশ রাকাত পড়লেও হয়ে যাবে।
কোনোটিকেই তিরস্কার বা অস্বীকার করা যাবেনা। এই তাতবীক বা সম্বয়ের ব্যাপারে কিছু আলোকপাত
করলে সহজেই বুঝতে পারবেন যে, আসলেই তাদের সমন্বয়টিও খুব চমৎকার। তারাবীহ বলেন আর কিয়ামুল
লাইল ফি রামাজান বলেন-এটা কিন্তু সালাতুল লাইলই বা রাতের নামাজ।
হযরত ইবনে উমর বলেন-এক সাহাবী রাসূল (স) কে রাতের নামাজ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূল স. উত্তরে বলেলে,
صلاة الليل مثنى مثنى فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما
قد صلَّى
রাতের নামাজ দু রাকাত দু রাকাত করে (যত পারো পড়ো। রাকাত নির্দিষ্ট
নয়)। সর্বশেষে সুবহে সাদিকের সময়ের পূর্বে এক রাকাত বিতর পড়ে নিও। অর্থাৎ রাতের নামাজের
নির্দিষ্ট সংখ্যার সাথে যুক্ত না করে দু রাকাত করে যতবেশি সম্ভব পড়ার পরামর্শটাই রাসূল
(স) দিয়েছেন।
এজন্যই রাসূল (স) থেকে রাতের নামাজের সংখ্যার ব্যাপারে একাধিক
বর্ণনা পাওয়া যায়। বিশেষ করে এগারো এবং তেরো। (উপরে উল্লিখিত শায়খ ইবনে বায (রহ) এর
এর কথার মধ্যেও বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে)
আম্মাজান আয়েশার (রা) হাদীসেও বিষয়টা ক্লিয়ার করা হয়েছে। আবূ
সালামাহ যখন হযরত আয়িশাহকে (রা) জিজ্ঞেস করেন যে, রমাযানে আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কিরূপ ছিল?তিনি বললেন,
مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ
رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ
রমাযান মাসে ও রমাযানে ব্যতীত অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাক‘আত হতে বৃদ্ধি
করতেন না। তিনি চার রাক‘আত আদায় করতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না।
এই হাদীসের শেষ অংশ (তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করো না) মূল পয়েন্ট। তিনি সাহাবীকে বুঝাতে চাইলেন, রাতের নামাজের
ক্ষেত্রে রাকাত সংখ্যার তূলনায় গুণগত মানটাই মূল।
انه کان یصلی بهم بالبصرة اربعا وثلاثین
ویوتر
হযরত যারারাহ বসরায় সেখানকার লোকদের নিয়ে ৩৪ রাকাত পড়তেন।
وعن سعید ابن زبیر اربعا وعشرین
হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর পরতেন ২৪ রাকাত পড়তেন।
عن داد ابن قیس ادرکت الناس فی امارة
ابان ابن عثمان وعمر ابن عبد العزیز یعنی بالمدینة یقومون بست و ثلاثین رکعة ویوترون
بثلاث
হযরত দাউদ বিন কায়েস বলেন, হযরত আবান বিন
উসমান ও উমর ইবনে আবদুল আজীজের যুগে মদিনায় লোকদেরকে ৩৬ রাকাত পড়তে দেখেছি। এবং বিতর
তিন রাকাত পড়তেন।
عن الشافعی رایت الناس یقومون بالمدینة
بتسع وثلاثین وبمکة بثلاث وعشرین
হযরত শাফেয়ী রহ বলেন, মদীনায় লেকদেরকে ৩৯ রাকাত
(তিন রাকাত বিতরসহ) এবং মক্কায় ২৩ রাকাত (তিন রাকাত বিতরসহ) পড়তে দেখেছি। (ফতহুল বারী)
এসব বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, সকলি বা সব
জায়গায় সমান সংখ্যক রাকাত তারাবী পড়া হয়নি। একেক জায়গায় একেক সংখ্যায় আদায় হয়েছে। তারাবীতে
ওয়াসাআত না প্রশস্ততা আছে বলেই এরকমটা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ মজবুত করুন।
আমিন।
লেখকঃ
শিক্ষক,
মাদরাসা রওজাতুল উলূম, হাজারীবাগ, ঢাকা।
ইমাম ও খতিব,
গজমহল, বড় জামে মসজিদ, হাজারীবাগ, ঢাকা।
0 coment rios:
You can comment here