Wednesday, April 1, 2020

প্রসঙ্গ এপ্রিল ফুল: আমরা কোন পথে


।। ইমদাদুল হক যুবায়ের।।

উল্লাস করোনা এপ্রিল ফুলে,
মুসলিম ক্রন্দন আছে এর মূলে/
নির্মম ইতিহাস ঘটেছিল এ দিন,
শত শত মুসলিম মারা হয় সেদিন।

ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,  মুসলমানদের জন্য পহেলা এপ্রিল একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এপ্রিল ফুল পালন করা মুসলমানদের জন্য এক চরম কলঙ্ক বৈ কিছুই নয়। বছর ঘোরে প্রতিবারই আসে এপ্রিল মাস। এপ্রিল মাসে আমাদের দেশে দুটি দিবস পালন করা হয়ে থাকে। পহেলা এপ্রিল এবং পহেলা বৈশাখ বা ১৪ই এপ্রিল। আলোচ্য নিবন্ধে পহেলা এপ্রিল সম্পর্কেই আলোকপাত।  

পহেলা এপ্রিল বাংলায় এপ্রিল ফুলনামে পরিচিত। এখানে ফুল অর্থ ইংরেজী ফুল অর্থাৎ বোকা, হাবা বা নির্বোধ। ইংরেজিতে বলা হয়: April Fools’ Day or All Fools' Day  এদিনে প্র্যাকটিক্যাল জোকবা বাস্তব বা ব্যবহারিক তামাশার নামে একে অপরকে মিথ্যা বলে ঠকানো হয়ে থাকে। এ উপলক্ষ্যে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে নানা রকম উৎসবের ব্যবস্থা করা হয়। এপ্রিল ফুলের রহস্য বুঝতে আমাদের মানব ইতিহাসের কয়েকটি তথ্য জানতে হবে।
আদম (আ)-এর মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে মানব জাতির পথ চলা শুরু। তাঁর সন্তানেরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পরবর্তী প্রথম রাসূল ছিলেন নূহ (আ)। নূহ (আ)-এর প্লাবনের পর তাঁর সন্তানেরা ক্রমান্বয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাঁর তিন ছেলের নাম হাম”, “সামইয়াফিস। হামের বংশধরগণ ক্রমান্বয়ে আফ্রিকায় চলে যান। সামের বংশধরগণ মূলত মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করেন এবং কেউ কেউ পার্শবতী দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েন। ভারতের দ্রাবিড়গণও তাদেরই বংশধর বলে বুঝা যায়। ইয়াফেসের বংশধরগণ অনেকে ইরানে বসবাস করেন। আরেক দল আর্যনামে ভারতে আসেন এবং আরেক দল ইউরোপে চলে যান। এজন্য ইউরোপ, ভারতের আর্য ও প্রাচীন ইরানের ভাষা, কৃষ্টি ও ধর্মের মধ্যে অনেক অনেক মিল পাওয়া যায়। তার একটি দিক হলো পহেলা এপ্রিল।

বসন্তের শেষে ভারতে হিন্দুরা হোলি উৎসর পালন করেন। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে ভগবান বিষ্ণুর অবতার বা মানবরূপ শ্রীকৃষ্ণের সাথে গোপিনীদের লীলাখেলার স্মৃতিপালন ও উদযাপনে তারা এ উৎসব করেন। এ হোলি উৎসবেরই প্রাচীন ইউরোপীয় রূপ ছিল প্রাচীন রোমান ধর্মের হিলারিয়া উৎসব। এ উপলক্ষ্যে নানারকম অশ্লীল, অশালীন আনন্দ উৎসব প্রচলিত ছিল ইউরোপে।

ইউরোপে খৃস্টধর্ম আগমনের পরে ভিন্নমতেরকারণে লক্ষলক্ষ খৃস্টান, ইহূদী ও মুসলিমকে হত্যা ও আগুনে পোড়ানো হলেও, খৃস্টান পোপ-পাদরিগণ ধর্মকে সহজ করার নামে সকল প্রকার পাপাচার প্রশ্রয় দিয়েছেন। এ কারণে খৃস্টান ইউরোপে এপ্রিল ফুল দিবস নামে হিলারিয়া বা হোলি উৎসবের বিভিন্ন প্রকারের পাপাচার, মিথ্যাচার ও অশ্লীলতা প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এমন একটি মহাপাপ, মিথ্যাচার ও বর্বরতা ছিল স্পেনের মুসলিমদের সাথে খৃস্টানগণের এপ্রিল ফুল

স্পেনের অত্যাচারিত মানুষদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলিম বাহিনী ৯২ হিজরী মুতাবেক ৭১১ খৃস্টাব্দে স্পেনে প্রবেশ করে। মুসলিমগণই ইউরোপের মানুষদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেন। মুসলিম স্পেনের গ্রানাডা, কর্ডোভা ও অন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত। প্রায় আট শত বৎসর মুসলিমগণ স্পেন শাসন করেন। শেষ দিকে তাদের মধ্যে আভ্যন্তরীন কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে। ফলে খৃস্টানগণ ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অঞ্চল মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। ৮৯৮ হিজরী মুতাবেক ১৪৯৩ খৃস্টাব্দে রাজা ফার্দিনান্দ ও রানী ইযাবেলার যৌথ খৃস্টান বাহিনী মুসলিমদের শেষ রাজধানী গ্রানাডা দখল করতে সক্ষম হয়। তারা এ সময়ে এপ্রিল ফুলনামে মুসলিমদের প্রতারণা করে তাদের মধ্যে গণহত্যা চালাতে সক্ষম হয়।

৮০০ বৎসরের শাসনামলে মুসলিমগণ কখনোই খৃস্টানদেরকে ধর্মান্তরিত করতে চেষ্টা করেন নি বা দেশ থেকে বের করে দেন নি। ইহূদী-খৃস্টানগণ মুসলিম শাসনামলে সর্বোচ্চ নাগরিক অধীকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেছেন। কিন্তু মুসলিমদের পরাজিত করার পরে পাদরীগণের নেতৃত্বে খৃস্টানগণ মুসলিমদের উপর যে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছেন তার কোনো নযির বিশ্বের ইতিহাসে পাবেন না। লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে মসজিদে আটকে আগুনে পুড়িয়ে, পাহাড় থেকে ফেলে, সমূদ্রের মধ্যে জাহাজ ডুবিয়ে ও গণজবাই অনুষ্ঠানে জবাই করে হত্যা করা হয়। অনেককে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়। এরপরও প্রায় একশত বৎসর পরে ১৬০৯ খৃস্টাব্দের ৪ আগস্ট প্রায় ৫০ লক্ষ মুসলিমকে স্পেন থেকে বিতাড়িত করা হয়। কার্ডিনাল বা খৃস্টান ধর্মগুরুর আদেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল সূত্র লক্ষ লক্ষ আরবী পুস্তক পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
শুধু মুসলিমগণ নয়, ইহূদীদের উপরও খৃস্টানগণ একইরূপ অত্যাচার করে। অনেককে জোরকরে খৃস্টান বানায়। অধিকাংশকে স্পেন থেকে বিতাড়িত করে। বিতাড়িত ইহূদীরা ইউরোপের কোনো দেশে ঠাই না পেয়ে মুসলিম তুরস্কে এসে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।

এ হলো খৃস্টানদের এপ্রিল ফুলের ইতিহাস। যদি ইসলামে প্র্যাকটিক্যাল জোক নামে বা আনন্দ উল্লাসের নামে মিথ্যা বলার অনুমতি থাকত তাহলেও এ দিনে কোনো মুসলিম আনন্দ করতে পারতেন না। কারণ প্রথমত, তা প্যগান বা মুর্তিপূজকদের ধর্মীয় উৎসবের অংশ ও অনুকরণ। দ্বিতীয়ত, এ দিবসটি মুসলিমদের জন্য শোকের ও প্রতিবাদের দিন, আনন্দের নয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, হাসি-মস্করার নামে মিথ্যা বলা ইসলামে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম।
পরিশেষে বলতে পারি যে, মুসলিমদের ইতিহাসের চরম এই দিনে মুসলিম অনেক সন্তান ইহুদিদের চক্রান্তের শিকার হযে অনেক ক্ষেত্রে না বুঝে এপ্রিল ফুল পালন করে মানুষ চরম ধোঁকা দিয়ে আনন্দ উৎসব পালন করে । এ থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। এ দিনে মজা করে মানুষকে বোকা বানানো, ধোঁকা দেওয়া বা এ দিনটিতে মিথ্যে বলে কষ্ট দিয়ে কিংবা প্রতারণা করে হাস্যরস সৃষ্টি করার মতো জঘন্য পাপ কাজ করা থেকে আমাদের সকলকে বিরত থাকতে হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে এপ্রিল ফুল এর ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও গবেষক, শিক্ষক, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট। মোবাইল: ০১৭১২৩৭৪৬৫০, ইমেইল: zubairjcpsc@gmail.com


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here