Friday, April 3, 2020

চিন থেকে প্লেগ ও করোনাভাইরাসঃ ব্যবধান সাড়ে তিনশ বছর


।। সাঈদ চৌধুরী।।

ঐতিহাসিক ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে ওল্ডগেইট এখন আলোকিত। পূর্ব দিকে বহু জাতির মিলন কেন্দ্র  ব্রিক লেন  এবং পশ্চিমে সিটি তথা বৃটেনর রাজধানী লন্ডন মহানগর। একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশ্রণে সমৃদ্ধ জনপদ। স্পিটলফিল্ডস মার্কেটের চারপাশে এবং লিভারপুল স্ট্রিট থেকে কিছুটা দূরেই প্রচুর অভিজাত দোকান, বার এবং রেস্তোঁরা রয়েছে। 
আমি যে জায়গাটায় দাড়িয়েছি, আজ থেকে ৩৫৫ বছর আগে এটা ছিল একটি গণকবর। প্লেগ রুগে (Plague Pits) আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষকে এখানে বর্তমান অল্ডগেট আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনের নীচে ফেলে দেয়া হয়েছিল। 

গত কয়েক দিনে বৃটেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের কবর নিয়ে দুশ্চিন্তার আলোচনা থেকে ইতিহাসের পুরনো ঘটনাটি আজ মনে পড়েছে। একটি কারণে বিষয়টি আলোচনায় আনতে চাই। প্লেগ থেকে করোনাভাইরাস, সাড়ে তিন শত বছরের ব্যবধান হলেও উৎসমূল নাকি একই জায়গায়? করোনাভাইরাস যেমন চিন দেশ থেকে প্রাদুর্ভাব হয়েছে, তখনকার প্লেগও নাকি সেই চিন থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল! এটি অবশ্যই গবেষণার বিষয়। 
১৬৬৫ সালের বসন্ত এবং গ্রীষ্মে বুবোনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাব হয়। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক মহামারীগুলোর মধ্যে একটি। লন্ডনের পাড়ায় মহল্লায়, প্যারিশ থেকে প্যারিশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। মৃতদেহে বিশাল বিশাল গর্ত পূর্ণ ছিল। কোন কোন স্থানে কবর দেয়ার মতো আর কেউ ছিলনা, পুরো জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এবং মৃতদেহ রাস্তায় রাস্তায় ফাঁকা পড়েছিল। লন্ডন এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। 
তখনখার সময়ে এই অঞ্চলটি লন্ডনের গরীব জনবসতির উপচে পড়া ভিড় ছিল। মৃত দেহের সংখ্যা বাড়ার ফলে সাধারণের পক্ষে কবরস্থানের জন্য অতিরিক্ত খরচ সংকুলান সম্ভব ছিলনা। ফলে রাস্তার আশেপাশে গর্ত তৈরি করা হয়েছিল। পিটার এক্রয়েডের লন্ডন: দ্য বায়োগ্রাফি, ড্যানিয়েল ডিফো'র অ্যা জার্নাল অফ প্লেগ ইয়ার (Peter Ackroyd's London: The Biography, Daniel Defoe's A Journal of the Plague Year, Basil Holmes' The London Burial Grounds) সুত্রে জানা যায়, এটি বুবোনিক প্লেগ ব্ল্যাক ডেথ হিসাবে পরিচিত ছিল এবং কয়েক শতাব্দী ধরে ইংল্যান্ডে আলোচিত ছিল। এটি ছিল এক ভয়াবহ রোগ। 

আক্রান্তের ত্বক প্যাচগুলিতে কালো দাগ, কালো রঙের ফোলা ফোলা গ্রন্থি, কুঁচকিতে অর্থাৎ শরীরের সামনের দিকে, উরুর উপরের অংশ ও তলপেটের সংযোগস্থলে গ্রন্থি ও ঘা হয়ে পড়েছিল। সাথে ছিল প্রচন্ড বমি, ফোলা জিহ্বা এবং ভীষণ মাথা ব্যথা। সব মিলিয়ে একটি ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে মৃত্যু। সেই মহামারীটিও সম্ভবত চীন থেকে শুরু হয়ে দ্রুত ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। 

লন্ডনে সেন্ট জিলস-ইন-দ্য ফিল্ডের দরিদ্র, উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে প্রথম শুরু হয়েছিল। প্রথমে ধীরে ধীরে শুরু হয়ে ১৬৬৫ সালের মে মাসের মধ্যে ৪৩ জন মারা গিয়েছিলেন। জুন মাসে ৬১৩৭ জন, জুলাইয়ে ১৭০৩৬ জন এবং আগস্টে ৩১১৫৯ জন মানুষ মারা যান। সব মিলিয়ে, গ্রীষ্মের মধ্যে জনসংখ্যার ১৫% ধ্বংস হয়ে যায়। প্রায় দুই বছর এই ভয়াবহ অবস্থা অব্যাহত ছিল।

দ্য কিং, দ্বিতীয় চার্লস (The king, Charles 11) তার কোর্ট সহ লন্ডন ছেড়ে অক্সফোর্ডে পালিয়ে যান। স্যামুয়েল পেপিস তাঁর ডায়েরিতে লন্ডনের শূন্য রাস্তাগুলোর একটি স্পষ্ট বিবরণ দিয়েছেন। যারা মহামারী থেকে পালানোর প্রয়াসে দ্রুত ছুটছিলেন। এবিষয়ে বেকওয়েল থেকে মাইল উত্তরে ডায়রিশায়ারের একটি ছোট্ট গ্রামে আইয়াম নামে একটি ট্র্যাজেডির গল্প রয়েছে।

লেখকঃ লন্ডন প্রবাসী  বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট। 
সম্পাদক, Shomoy24



শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here