Wednesday, April 29, 2020

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার: প্রেক্ষিত মহামারী করোনা


।। ইমদাদুল হক যুবায়ের।।

“সারাদিন কাজ করে
ঝরে মাথার ঘাম
শ্রমিকরা এই সমাজে
পায় না তবু দাম।”

যেকোনো কাজ করাকেই শ্রম বলা হয়। সাধারণ অর্থে শ্রম বলতে মানুষের কায়িক পরিশ্রমকে বুঝায়। কিন্তু শ্রম শব্দটির বিশেষ ও ব্যাপক অর্থ রয়েছে। উৎপাদন কাজে নিয়োজিত সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক কাজ ও সেবাকর্ম এবং যার বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাওয়া যায় তাকে শ্রম বলে। যে ব্যক্তি তার যোগ্যতায় ও কাজের উপযোগী হয়ে কোনো অর্থ উপার্জনের কাজে নিয়োজিত থাকেন তাকে শ্রমিক বলা হয়। শ্রমিককে ইংরেজিতে Labor লেবারআর আরবিতে বলা হয় আমেল। যারা কাজ করে, সমাজে বা রাষ্ট্রে যারা অন্যের অধীনে অর্থের বিনিময়ে পরিশ্রম করে তাদেরকে শ্রমিক বলা হয়ে থাকে।

শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বের মানুষ ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসপালন করেন। ১৮৮৬ সালের ৪ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকদের বিক্ষোভে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে ১৮৮৯ সালে প্যারিসের সোশালিস্ট পার্টি ১ মে -কে  আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ক্রমান্বয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের ধারা সূচিত হয়।

ইসলামে শ্রম ও কর্মকে যেমন সর্বোচ্চ মর্যাদা এবং ইবাদত হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে, তেমনি শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইসলামী শরীয়াতে হালাল বস্তু আহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হারাম বা অবৈধ উপার্জন বর্জন করা এবং বৈধ উপার্জনের উপর নির্ভর করা মুমিনের জীবনের অন্যতম ফরয ইবাদত।
ইসলামে বৈধ উপার্জনের সাথে শ্রমকে অবিচ্ছেদ্যভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। শ্রম ছাড়া পরের দানের বা ভাতার উপরে নির্ভরতার বিষয়ে আপত্তি করা হয়েছে। বস্তুত উপার্জিত অর্থই শ্রম। বৈধ উপার্জনের পথ মূলত দুটি-
এক: বৈধ ব্যবসা এবং
দুই: বৈধ শ্রম বা কর্ম, তা কায়িক, শারীরিক, মেধার বা মানসিক কর্ম হতে পারে বা ছোট বা বড় কোনো চাকুরী হতে পারে। সর্বোৎকৃষ্ট উপার্জন হলো পূণ্যময় সৎ বাণিজ্য এবং মানুষের নিজের হাতের কর্ম।

ব্যবসার সাথেও শ্রম জড়িত। কুরআন ও হাদীসে মুমিনদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমের মাধ্যমে হালাল উপার্জন করতে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন:
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থাৎ,যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যেন তোমরা সফলকাম হও।)সূরা জুমুআ, আয়াত:১০)

আমরা শ্রমের মর্যাদা ভালোভাবে অনুভব করতে পারি যখন দেখি যে, সকল নবী-রাসূলই শ্রম ও শ্রমভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। বৈধ উপার্জনের জন্য শ্রম ও কর্ম করা নবী-রাসূলগণ এবং সাহাবীগণের সুন্নাত বা রীতি। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
﴿حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْمَكِّيُّ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ يَحْيَى عَنْ جَدِّهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا بَعَثَ اللَّهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الْغَنَمَ فَقَالَ أَصْحَابُهُ وَأَنْتَ فَقَالَ نَعَمْ كُنْتُ أَرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ
 অর্থাৎ,আল্লাহ যত নবীই প্রেরণ করেছেন সকলেই মেষ চরিয়েছেন। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি? তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমিও। আমি নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের মেষ চরাতাম।(বুখারী, আস-সহীহ, খণ্ড-২, পৃ. ৭৮৯) শ্রমিক হওয়া সাহাবীগণেরও সুন্নাত। আয়েশা (রা.) বলেন,

حَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ حَدَّثَنَا سَعِيدٌ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو الْأَسْوَدِ عَنْ عُرْوَةَ قَالَ قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُمَّالَ أَنْفُسِهِمْ
অর্থাৎ,রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাহাবীগণ স্ব-শ্রমিক ছিলেন।(বুখারী, আস-সহীহ, খণ্ড- ২, পৃ. ৭৩০) অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
﴿حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ عَنْ ثَوْرٍ عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ عَنْ الْمِقْدَامِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ وَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَام كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ
অর্থাৎ,স্বশ্রমে নিজের হাতে মানুষ যে উপার্জন করে তার চেয়ে উত্তম বা পবিত্রতর উপার্জন আর কিছুই হতে পারে না। আর আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) স্বশ্রমে নিজের হাতে উপার্জন করে খেতেন।(বুখারী, আস-সহীহ, খণ্ড- ২, পৃ. ৭৩০; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান, খণ্ড- ২, পৃ. ৭২৩)

নিজে পরিশ্রম করে যে বৈধ উপার্জন মানুষ ভক্ষণ করে তাই হলো আল্লাহর প্রিয়তম খাদ্য এবং তা আল্লাহর নবী রাসূলগণ ও অন্যান্য প্রিয় বান্দাদের সুন্নাত ও রীতি। কিন্তু ঈমানের দাবীদার হলেও আমরা বাংলাদেশের মুসলিমগণ ভারতীয় আর্যচিন্তায় প্রভাবিত হয়ে কায়িক শ্রম ও কর্মকে ঘৃণা করি। আমাদের মধ্যে জেলে, তাতী, কামার, কুমার, মুচি, মেথর, শ্রমিক, কুলি, মুজুর, রিকশাচালক ও অন্যান্য অগণিত পেশায় নিয়োজিত পবিত্রতম খাদ্য ভক্ষণকারীদেরকে আমরা আক্ষরিক অর্থে ঘৃণা করি এবং নীচু শ্রেণীবলে বিশ্বাস করি। পক্ষান্তরে অবৈধ-হারাম উপার্জনে লিপ্ত অপবিত্র নোংরা খাদ্যভক্ষণকারীদেরকে আন্তরিকভাবে সম্মান করি। আর এই কঠিন অপরাধের জন্য আমাদের মনে সামান্যতম অনুভুতিও নেই।

এই কঠিন পাপ ও ইসলাম-বিরোধী মানসিকতার ফলে আমরা জাগতিক জীবনেও ক্ষতিগ্রস্থ। আমাদের সমাজের পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণ সন্তানদেরকে শিক্ষিতকরতে এবং শিক্ষিতের চাকুরীদেওয়ার জন্য অনেক অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে সদা আগ্রহী। কিন্তু সন্তানদেরকে কারিগরী শিক্ষা, শ্রম ও কর্মমুখী শিক্ষা দিতে আমরা মোটেও রাজি নই। কারণ এতে নাকি সম্মান, মর্যাদা ও বংশ গৌরব নষ্ট হয়।
আমাদের দেশের ছেলেদেরকে মেথরের, শ্রমিকের বা কুলির কাজ করার জন্য লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশ যেতে হয়। কারণ এই কাজগুলো দেশে করলে নাকি মর্যাদা নষ্ট হয়। কী দুর্ভাগ্য আমাদের! যেখানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল শ্রম ও কর্মকে মর্যাদার মাপকাঠি করলেন, সেখানে আমরা হিন্দু চিন্তায় উদ্বু্ধ হয়ে শ্রম ও কর্মকে মর্যাদাহীনতার উৎস মনে করলাম। আর এ পাপের ফল হলো আমরা জাতিকে ও বিশ্বকে দক্ষ শ্রমিক উপহার দিতে পারি না। আমাদের দেশের ছেলেরা বিদেশে গিয়ে শুধুমাত্র অদক্ষ শ্রমিকের কাজ করে। পক্ষান্তরে বিভিন্ন দেশের যুবকরা বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা নিয়ে প্রবাসের মাটিতে পা রাখেন। তাদের সমাজ ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থা এভাবে কর্ম ও শ্রমমুখি হয়ে গড়ে উঠেছে। পক্ষান্তরে আমরা শ্রমবিমুখ।

আমরা ব্যক্তিগতভাবে এবং জাতিগতভাবে ঋণ, সাহায্য, ত্রাণ, শ্রমহীন কর্ম ইত্যাদিকে ভালোবাসি। অথচ আমাদের একমাত্র আদর্শ রাসূলুল্লাহ (সা.) শ্রমবিমুখতা ঘৃণা করেছেন। বেকার থাকা, পরনির্ভর থাকা, অন্যের সাহায্যের আশায় থাকা ইত্যাদি বর্জন করে শ্রমের মাধ্যমে নিজে স্বাবলম্বী হতে উম্মাতকে বারবার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিন বলেন,
﴿حَدَّثَنَا مُوسَى حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ أَبِيهِ عَنْ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَأْتِيَ بِحُزْمَةِ الْحَطَبِ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ
অর্থাৎ, “তোমাদের কারো জন্য উত্তম হলো যে, সে নিজের দড়িটি নিয়ে বের হয়ে, খড়ি কুড়িয়ে নিজের পিঠে খড়ির বোঝা বহন করে তা বাজারে বিক্রয় করবে, এভাবে আল্লাহ তার সম্মান রক্ষা করবেন। এভাবে করা তার জন্য উত্তম মানুষের কাছে চাওয়া বা ভিক্ষা করার চেয়ে, মানুষ দিতেও পারে নাও দিতে পারে।” (বুখারী, আস-সহীহ, খণ্ড- ২, পৃ. ৫৩৫, ৫৩৮)

আনাস (রা.) বলেন, “একজন আনসারী ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আগমন করে সাহায্য প্রার্থনা করে। তিনি বলেন, তোমার বাড়িতে কি কিছুই নেই। লোকটি বলে, একটি কাঁথা আছে যার কিছুটা আমরা বিছিয়ে দিই এবং কিছুটা গায়ে দিই এবং একটি পেয়ালা আছে যাতে আমরা পানি পান করি। তিনি বলেন, দুইটিই আমার কাছে নিয়ে এস। তখন লোকটি সেগুলো এনে তাঁকে দেয়। তিনি তা নিয়ে বলেন, কে এই দ্রব্যদুইটি ক্রয় করবে। এক ব্যক্তি বলেন, আমি এক দিরহামে (রৌপ্যমুদ্রা) উভয়কে কিনতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন দুই বা তিনবার বলেন, এক দিরহামের বেশি কে দিবে? তখন এক ব্যক্তি বলেন, আমি দুই দিরহামে দ্রবদুইটি ক্রয় করব। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন দ্রব্য দুইটি তাকে প্রদান করেন এবং দিরহামদ্বয় আনসারীকে দিয়ে বলেন, এক দিরহাম দিয়ে তুমি খাদ্য ক্রয় করে তোমার স্ত্রীর নিকট রেখে আস এবং অন্য দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার নিকট নিয়ে এস। লোকটি কুঠার নিয়ে আসলে, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে তার আছাড়ি লাগিয়ে বলেন, তুমি কাঠ কাটবে এবং তা বিক্রয় করবে। ১৫ দিন যেন আমি তোমাকে না দেখি। লোকটি নির্দেশ মত কাজ করে। এই ১৫ দিনে সে দশ দিরহাম উপার্জন করে। কয়েক দিরহাম দিয়ে সে কাপড় চোপড় ও খাদ্য ক্রয় করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, তুমি অন্যের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলে তা কেয়ামতের দিন তোমার চেহারায় ক্ষত হিসাবে প্রতিভাত হতো। তার চেয়ে এভাবে পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হওয়াই তোমার জন্য উত্তম। (তিরমিযী, আস-সুনান, খণ্ড- ৩, পৃ. ৫২২; আবূ দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড- ২, পৃ. ১২০; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান, খণ্ড- ২, পৃ. ৭৪০। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।)
কুরআনে বারবার অধীনস্থদের প্রতি উত্তম আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অধীনস্থ, শ্রমিক বা কর্মচারীদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এত বেশি চিন্তা করতেন যে, তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে তাঁর সর্বশেষ নির্দেশের মধ্যে তাদের অধিকার রক্ষার কথা তিনি বলেন। ইন্তেকালের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অধিকাংশ ওসীয়ত ছিল। হাদীসে এসেছে-
﴿ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ صَالِحٍ أَبِي الْخَلِيلِ عَنْ سَفِينَةَ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ فِي مَرَضِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ الصَّلَاةَ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ
অর্থাৎ,সতর্ক সাবধান থাকবে নামায এবং তোমাদের অধীনস্থগণের বিষয়ে।(ইবনু মাজাহ, আস-সুনান, খণ্ড- ১, পৃ. ৫১৯; আলবানী, সহীহুত তারগীব, খণ্ড- ২, পৃ. ২৭৯। হাদীসটি সহীহ)
অধীনস্থ বা শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকারের বিষয়ে ইসলামের মূলনীতি কী? এ বিষয়ে তাবেঈ মারূর ইবনু সুওয়াইদ বলেন:  

আমরা রাবযা নামক স্থানে আবূ যার গিফারীর বাড়ির পার্শ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমরা দেখলাম তার দেহে যে পোশাক তার চাকরের দেহেও সেরূপ একই পোশাক। আমরা বললাম, আবূ যার, আপনি যদি চাকরকে এরূপ কাপড় না দিয়ে তার কাপড়টি আপনার কাপড়ের সাথে সংযুক্ত করে আপনি ব্যবহার করতেন তাহলে একটি সুন্দর সেট হতো। আর তাকে অন্য কাপড় দিতেন। তখন তিনি বলেন, আমার ও আমার এক শ্রমিক ভাইয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। তার মা ছিল অনারব। আমি তাকে তার মা তুলে গালি দিই। সে ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট অভিযোগ করেন। এরপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম তখন তিনি বলেন, আবূ যার, তুমি কি তাকে মা তুলে গালি দিয়েছে? তোমার মধ্যে এখনো জাহিলিয়্যাত রয়েছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), মানুষ কাউকে গালি দিলে তো তার মা-বাবা তুলবেই! তিনি বলেন, আবূ যার, তোমার মধ্যে জাহিলিয়্যাত বিরাজমান! তারা- তোমাদের চাকরবাকর-শ্রমিক বা দাস শ্রেণী তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ ও দায়িত্বাধীন করেছেন। কাজেই তোমরা যা খাও তা থেকে তাদেরকে খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরিধান কর তা থেকে তাদেরকে পরিধান করাবে। তাদের পক্ষে কষ্টকর বা অসাধ্য কোনো দায়িত্ব তাদের উপর চাপাবে না। যদি কোনো কষ্টসাধ্য দায়িত্ব তাদের উপর ন্যস্ত কর তবে তোমরা তা পালনে তাদেরকে সাহায্য করবে।” (মুসলিম, আস-সহীহ, খণ্ড- ৩, পৃ. ১২৮২-১২৮৩)

হাদীস থেকে আমরা তিনটি বিষয়ের শিক্ষা পাই যেমন-
এক: ভ্রাতৃত্ব। শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে মূল সম্পর্ক মানবিক ভ্রাতৃত্ব। অর্থনৈতিক বা সামাজিক বৈষম্য যেন এ মৌলিক ভ্রাতৃত্ববোধ দুর্বল না করে।

দুই: শ্রমিকের জন্য সম্মানজনক পানাহার ও পোশাক পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ তাদের কর্মের ও যোগ্যতার সাথে সঙ্গতি রেখে এমন বেতন ও সুবিধা তাদের প্রদান করতে হবে, যেন তারা স্বাভাবিক মানবীয় মর্যাদার সাথে জীবনধারণ করতে পারেন এবং তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারেন।

তিন: দায়িত্বের সামঞ্জস্যতা। তাদের কর্ম-সময় ও কর্মের প্রকৃতি এমন হবে যেন তা সাধ্যাতীত না হয়।

বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে সাহাবীগণের জীবনে আমরা এ সকল মূলনীতির প্রকৃত বাস্তবায়ন দেখতে পাই। তাঁরা শ্রমিক, ক্রীতদাস ও অধীনস্থ কর্মচারীদের সাথে একত্রে খাওয়া দাওয়া করতেন, সকল সামাজিক কর্মে ও অনুষ্ঠানে একই পরিবারের সদস্যের মত যোগদান করতেন, শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে এ সকল বিষয়ে কোনো ব্যবধান করাকে তাঁরা প্রচণ্ড ঘৃণা করতেন। তাঁরা তাঁদের নিজেদের সমমানের খাদ্য ও পোশাক শ্রমিকদেরকে প্রদান করতেন। এবং কর্ম প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের সাধ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন যথাসময়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
﴿ حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ الْوَلِيدِ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ عَطِيَّةَ السَّلَمِيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطُوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ
অর্থাৎ,শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তাকে তার পারিশ্রমিক প্রদান করবে।(ইবনু মাজাহ, আস-সুনান, খণ্ড- ২, পৃ. ৮১৭; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ, খণ্ড-৪, পৃ. ৯৮; আলবানী, সহীহুত তারগীব, খণ্ড-২, পৃ. ১৮৩। হাদীসটি সহীহ) শ্রমিক, কর্মচারী ও সকল অধীনস্থের প্রতি কর্মকর্তা বা মালিকের দায়িত্বের অন্যতম হলো ক্ষমা করা। শাস্তির শক্তি থাকা সত্ত্বেও ক্রোধ সম্বরণ করা ও ক্ষমা করার বিশেষ নির্দেশনা ও বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে কুরআন কারীমে বিভিন্ন আয়াতে। শুধু তাই নয়, হাদীস শরীফে এরূপ ক্ষমার বিশেষ পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, চাকর-কর্মচারী বা অধীনস্থকে কতবার ক্ষমা করতে হবে। তিনি বলেন:
﴿حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَمْدَانِيُّ وَأَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ السَّرْحِ وَهَذَا حَدِيثُ الْهَمْدَانِيِّ وَهُوَ أَتَمُّ قَالَا حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو هَانِئٍ الْخَوْلَانِيُّ عَنْ الْعَبَّاسِ بْنِ جُلَيْدٍ الْحَجْرِيِّ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يَقُولُ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَمْ نَعْفُو عَنْ الْخَادِمِ فَصَمَتَ ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ الْكَلَامَ فَصَمَتَ فَلَمَّا كَانَ فِي الثَّالِثَةِ قَالَ اعْفُوا عَنْهُ فِي كُلِّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً﴾
 অর্থাৎ,প্রতিদিন ৭০ বার তার অপরাধ ক্ষমা করবে।(আবূ দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড-৪, পৃ. ৩৪১; আলবানী, সহীহ ও যায়ীফ আবী দাউদ, খণ্ড-১১, পৃ. ১৬৪। হাদীসটি সহীহ)
মহান আল্লাহ অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে সর্বদা সমন্বয় করেছেন। সকল শ্রমিক ও কর্মীর উপর অর্পিত দায়িত্ব আমানতদারীর সাথে আদায় করা তার উপার্জন বৈধ হওয়ার ও আখিরাতের নাজাত পাওয়ার অন্যতম শর্ত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
﴿حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ حَدَّثَنِي مَالِكٌ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَلَا كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالْإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ أَلَا فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
অর্থাৎ,তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব বা দয়িত্বাধীনদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। .... কর্মচারী বা শ্রমিক তার মালিকের সম্পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।(বুখারী, আস-সহীহ, খণ্ড-১, পৃ. ৩০৪, ৪৩১,; মুসলিম, আস-সহীহ, খণ্ড-৩, পৃ. ১৪৫৯)  

সরকারী, বেসরকারী, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির অধীনে কর্মরত সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার ক্ষেত্রেই এ আমানতদারী দায়িত্ব একইরূপে প্রযোজ্য। কর্মদাতার সাথে চুক্তি মোতাবেক পরিপূর্ণ সময় ধরে যথাসাধ্য কর্ম করার মাধ্যমেই এ আমানত আদায় হবে। নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হলে বা নিজের বিশেষ লাভ হলে যতটুকু পরিশ্রম ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করি, সরকারী, বেসরকারী বা ব্যক্তির অধীনে চাকুরীতেও ততটুকু পরিশ্রম ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করলেই আমানত আদায় হবে।

অজ্ঞতা বা বিভ্রান্তির কারণে আমরা অনেক সময় চাকুরী বা কর্মকে দুনিয়াবী কাজবলে মনে করি এবং কর্মে অবহেলা করে ধর্মপালন করি। কিন্তু ইসলামের মূলনীতি অনুসারে সকল চাকুরীজীবি, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক বা কর্মীর জন্য ফরয আইন দায়িত্ব হলো তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পরিপূর্ণ আমানতদারির সাথে আদায় করা। অনেক টাকা ঘুষ, পুরস্কার বা প্রমোশনের লোভে যেরূপ নিষ্ঠার সাথে ও দ্রুত কাজ করা হয়, কোনোরূপ ঘুষ, পুরস্কার বা প্রমোশনের লোভ ছাড়াই ঠিক তদ্রুপ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা ফরয আইন ইবাদত। ডাক্তার, অফিসার, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক প্রত্যেকেই এরূপ কর্মের কারণে তার উপার্জনের বৈধতা অর্জন ছাড়াও ফরয ইবাদত পালনের সাওয়াব অর্জন করবেন। আর এরূপ ইবাদতে অবহেলা করে যদি কেউ নফল নামায, যিকর, কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল বা অনুরূপ কোনো কর্মে লিপ্ত হন তা কঠিন গোনাহের কাজ এবং বকধার্মিকতা মাত্র।

উপরোক্ত আলোচনার পর আমরা জানতে পারলাম যে,
এক: সর্বোৎকৃষ্ট উপার্জন হলো পূণ্যময়-সৎ ব্যবসা বাণিজ্য।
দুই: ব্যবসার সাথেও শ্রম জড়িত।
তিন: শ্রমিক হওয়া সাহাবীগণেরও সুন্নাত।
চার: অধীনস্থ, শ্রমিক বা কর্মচারীদের প্রতি উত্তম আচরণ করতে হবে।
পাঁচ: নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পরিপূর্ণ আমানতদারির সাথে আদায় করাও ইবাদত।
ছয়: কর্মচারী বা শ্রমিক তার মালিক সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে।
সাত: শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন যথাসময়ে দিয়ে দিতে হবে।
আট: শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজে কোনো ভুল করলে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে হবে।
নয়: শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে মূল সম্পর্ক হবে মানবিক ভ্রাতৃত্ববোধের সম্পর্ক।
দশ: স্বশ্রমে নিজের হাতে মানুষ যে উপার্জন করে তার চেয়ে উত্তম বা পবিত্রতর উপার্জন আর কিছুই হতে পারে না।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে আজ শ্রমিকরা বড়ই অসহায়। কাজ নাই, ব্যাংক ব্যালেন্স নাই, তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন একটা যুদ্ধ। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের নিয়ে দেশের কর্তা ব্যক্তিসহ জ্ঞানী-গুণীদেরকে ভাবতে হবে। তাই তাদের জন্য যা করণীয় সবই করতে হবে। তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন-

এক: মহামারী করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা যাবে না। তাদেরও জীবন আছে। আছে সাজানো সংসার সেটা সবাইকে ভাবতে হবে।
দুই: বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদেরকে কাজে নিতে হলে অবশ্যই কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের জীবন সুরক্ষার বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করেই কাজে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই শিল্প পুলিশ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
তিন: সকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন (যদি থাকে) পরিশোধ করতে হবে। এবং তাদের সকল পাওনা সময় মতো বুঝিয়ে দিতে হবে।
চার: কারখানার কোনো শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক সহায়তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পাঁচ: কারখানা বন্ধ বা খোলা রাখার বিষয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে সময়পযোগী যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ছয়: মালিক পক্ষের স্বার্থ যেভাবে চিন্তা করা হবে শ্রমিকদের স্বার্থের বিষয়টিও সেভাবে মূল্যায়ন  করতে হবে।
সাত: শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করা বা না করা বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বাস্তবতার আলোকে শ্রমিক বান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
আট: বিভিন্ন ইস্যুতে বার বার শ্রমিকদের আন্দোলন হয়। কৃর্তপক্ষকে দ্রুত ইস্যুগুলোর যৌক্তিক সমাধান করতে হবে।
আমাদের করণীয়
এক: শ্রমিকদের জন্য সম্মানজনক পানাহারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের কর্মের ও যোগ্যতার সাথে সঙ্গতি রেখে বেতনভাতা ও সুবিধা প্রদান করতে হবে, যেন তারা স্বাভাবিক মানবীয় মর্যাদার সাথে জীবন যাপন করতে পারেন।
দুই: শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে।
তিন: শ্রমিকদের দায়িত্বের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে হবে এবং কর্ম-সময় ও কর্মের প্রকৃতি যেন সাধ্যাতীত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
চার: এছাড়া শ্রমিক ও অধীনস্থ কর্মচারীদের সাথে একত্রে খাওয়া দাওয়া করা, সকল সামাজিক কর্ম ও অনুষ্ঠানে তাদের পরিবারের সদস্যগণের যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে যেন পারস্পরিক হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়।
পাঁচ: শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে সকল বিষয়ে বৈষম্য দূর করার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ছয়: মালিকগণ নিজেদের সমমানের খাদ্য ও পোশাক শ্রমিকদেরকে প্রদান করলে এবং কর্ম প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের সাধ্যের দিকে লক্ষ্য রাখলেই আশা করা যায় পরস্পরের ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হবে।

পাদটীকায় ছড়ার তালে বলতে পারি যে,

“শ্রমিক ওরা মজুর ওরা
ওরা মোদের ভাই,
মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও
পায় না কোথাও ঠাই ।

শ্রমিক হলো কর্মজীবী
এই দেশেরই লোক,
সব সময় দেখতে চাই
ওদের হাসি মুখ।”

মহান আল্লাহ আমাদেরকে মর্যাদা বুঝে তাদের সঠিক অধিকার প্রদানে সচেষ্ট হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
 
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও গবেষক
শিক্ষক
জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজসিলেট।
মোবাইল: 01712374650
ইমেইল: zubairjcpsc@gmail.com
facebook: Imdadul Haque Zubair
Facebook Page:  ইমদাদুল হক যুবায়ের




শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here