।। ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান।।
প্রতি বছরই আমাদের মাঝে হাজির হয় রমজানুল মোবারক।
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের এই মাসের অন্যতম নেয়ামত হচ্ছে ইফতারি। সারাদিন
রোজা রেখে উপবাস থাকার পর সন্ধ্যায় বাহারী রকমের খাদ্যদ্রব্য মুখের সামনে সাজিয়ে রেখেও
শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় কেউ তা মুখে দেন না। আর এ ধৈর্যের পুরস্কার হিসেবে
আল্লাহ রোজাদারদের জীবনের গোনাহ মাফ করার পাশাপাশি অশেষ নেয়ামতও দান করেন। রোজাদারকে
ইফতার করানো সুন্নত। হোক সেটা এক গ্লাস পানি কিংবা একটি খেজুর। হাদিসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا
أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ وَوَكِيعٌ عَنْ
الْأَعْمَشِ ح و حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ عَنْ
الْأَعْمَشِ ح و حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الْأَشَجُّ وَاللَّفْظُ لَهُ حَدَّثَنَا
وَكِيعٌ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى
سَبْعمِائَة ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي
وَأَنَا أَجْزِي بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ
وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ
اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ ﴾
অর্থাৎ, "হযরত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- রোজা পালনকারীর
জন্য দুটি আনন্দ আছে। একটি তার ইফত্বারের সময় এবং অপরটি তার প্রতিপালক আল্লাহর সাথে
সাক্ষাতের সময়"। (সহীহ মুসলিম, খণ্ড-৭, পৃ. ৩৯৯ হাদীস নং ১৯৪৫)
আমাদের সমাজে কিছু লোক কুসংস্কারে জড়িয়ে আছেন, যারা অন্যের
ইফতার সামগ্রী দিয়ে ইফতার করেন না। তাঁদের বদ্ধমূল ধারণা এতে তাঁর সওয়াব থেকে কিছু
সওয়াব কেটে ইফতার করানোওয়ালাকে দেয়া হয়। যদিও কথাটি আদৌ সত্য বা শরীয়ত সম্মত নয়। রামাদ্বান
মাসে রোজাদারকে ইফত্বার করানো অনেক সাওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا
هَنَّادٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحِيمِ عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي
سُلَيْمَانَ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ
فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لَا يَنْقُصُ مِنْ
أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
صَحِيحٌ﴾
অর্থাৎ, "হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন - যে ব্যক্তি
কোনো রোজাদারকে ইফত্বার করাবে, সে রোজাদারের সমান নেকীর অধিকারী
হবে। আর তাতে রোজাদারের নেকীর কিছুই কমবে না"। সুনানু ইবনে মাজা, খণ্ড-৩, পৃ. ৩০১, হাদীস নং ৭৩৫)
কেউ যদি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে এর
সওয়াব আল্লাহ তাঁর ভান্ডার থেকে দিয়ে দিবেন। কারণ, মহান আল্লাহর
সওয়াবের ভান্ডার অফুরন্ত। যিনি ইফতার করলেন আল্লাহ পাক তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সওয়াবই দেন।
আর যিনি রোজাদারকে ইফতার করালেন, ন্যায় বিচারক আল্লাহ তাঁকে অতিরিক্ত সওয়াব দিয়ে থাকেন।
রোজাদারকে ইফতার করালে পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও
ভ্রাতৃত্যবোধ বৃদ্ধি পায়। এতে করে সমাজে হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ
দুর হয়। এটাই ইফতারির মাহাত্ব। তবে যে ইফতারি আমাদের সমাজকে ভালোর দিকে নিয়ে যাবার
কথা, সেই ইফতারিকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজব্যবস্থা কলুষতার দিকে
ধাবিত হচ্ছে। ইফতারিকে নিয়ে সমাজে রয়েছে কিছু মারাত্মক ধরণের কু প্রথা। যার অনুমোদন
শরীয়াতে নেই।
সুতরাং —
শ্বশুর বাড়ির ইফতারি কে না
বলুন।
কারণ, এটা এক ধরনের যৌতুক। এক ধরণের অত্যাচার।
হাদীসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا
أَحْمَدُ بْنُ حَفْصٍ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ
طَهْمَانَ عَنْ الْحَجَّاجِ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ
عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ أَنَّهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ أَوْحَى إِلَيَّ
أَنْ تَوَاضَعُوا حَتَّى لَا يَبْغِيَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ وَلَا يَفْخَرَ أَحَدٌ
عَلَى أَحَدٍ ﴾
অর্থাৎ, “হযরত ইয়ায ইবনে হিমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মহান আল্লাহ আমাকে
প্রত্যাদেশ করেছেন যে, তোমরা পরস্পরের প্রতি নম্রতা ও বিনয় ভাব
প্রদর্শন কর। যাতে কেউ যেন অন্যের প্রতি অত্যাচার না করতে পারে এবং কেউ কারো সামনে
গর্ব প্রকাশ না করে"। (সুনানু আবি দাউদ, খণ্ড-১৩, পৃ. ৪৫, হাদীস নং ৪২৪৫)
উপরের আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয়, শশুর বাড়ী
থেকে ইফতারী প্রথা এটা শরয়ীত সম্মত কোনো পদ্ধতি নয়। বিশেষ করে সমাজের সীমিত আয়ের মানুষের
জন্য এ প্রথা এক ধরনের বাড়তি চাপ। মনে রাখবেন আজ আপনার একজন থেকে শুরু হলে এই ভুল প্রথা
ধীরে ধীরে একদিন ভেঙে যাবে ...
তাহলে হয়তো কোনো গরীব বাবা তার মেয়েকে কিছু না
দিতে পারার লজ্জায় পড়তে হবে না !
হ্যাঁ আমি জানি, আমরা হয়তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো
আছি কিন্তু এমনও তো অনেক বোনেরা আছেন যাদের বাবাদের অনেকের সামর্থ্য নেই। যাদের
সামর্থ নেই তাদের কথা একটু চিন্তা করে দেখুন?? কী অসহায় তারা এ ইফতারিকে নিয়ে! কত
চিন্তিত হয় মেয়ের বাড়ীর লোকেরা রমজান আসলে এ ইফতারি দেওয়া বিষয়ে!!!
আমাদের এই ইফতার ইফতার হৈ-হুল্লোড় যখন অসহায় বোনটির
বাবার কানে পৌঁছায় তথা শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের কানে পৌঁছায় তখন তাকে অনেক লজ্জায় পড়তে হয় এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির
স্বীকার হতে হয়।
আল্লাহ আমাদেরকে এ প্রথার কুফল বুঝার এবং এ
থেকে বেরিয়ে আসার তাওফিক দিন। আমীন।
লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা
সেক্রেটারি:
শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে-
ইমাম ও খাতিব:
মাসজিদুল উম্মাহ লুটন, ইউ.কে
সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:
নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে
প্রিন্সিপাল:
আর রাহমান একাডেমি ইউ কে
পরিচালক:
আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে
📞07476136772 📞 07476
961067
nrahmansky@googlemail.com
Arrahmaneducationtust@gmail.com
https://www.facebook.com/Imam.Nurur
https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/
https://www.youtube.com/user/nurur9
0 coment rios:
You can comment here