Sunday, April 19, 2020

মাহে রমজান ও কুরআন: আমাদের করণীয়

।। প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ মাকসুদুর রহমান।।

রমযান ও কুরআন: আমাদের করণীয়

রমাযানের যেসব ফযীলত কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে ঘোষিত হয়েছে তাতে যেমন তাকভীনী বিষয় আছে তেমনি আছে তাশরীয়ী বিষয়। তাকভীনী বিষয়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা এই মাসকে নির্ধারিত করেছেন তাঁর মহিমান্বিত কালাম নাযিলের জন্য, যা  জগৎবাসির জন্য হেদায়েত এবং হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী। আর এ মোবারক মাসে একটি রজনীকে এমন মর্যাদা ও মহিমা দান করেছেন যে, তা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ দুই বৈশিষ্ট্য কুরআন মাজীদে পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত হয়েছে। আর হাদীস শরীফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাআইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
﴿إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة وغلقت ابواب جهنم وصفدت الشياطين﴾
অর্থাৎ, “যখন মাহে রমাযানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯)

এই হাদীস সকলকেই সংবাদ দান করে যে, এ মাসে উর্ধ্ব জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সকল নিয়ামতের স্থান জান্নাতের দরজাসমূহ আল্লাহর আদেশে খুলে দেওয়া হয়। আর চির অশান্তির স্থান জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। এ যেন আল্লাহ তায়ালার আহবান -কে আছ, জান্নাতে যেতে চাও, আমি তাকে জান্নাতে দাখিল করব। কে আছ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চাও, আমি তাকে মুক্তি দান করব। অতএব বান্দার কর্তব্য গুনাহ ও পাপাচার থেকে পবিত্র হয়ে চিরমুক্তির পরওয়ানা হাসিল করা। বিতাড়িত শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে অন্যায় অনাচারের এক বড় সূত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মোটকথা, গোটা মাসজুড়ে রহমত ও মাগফিরাতের ফল্গূধারা প্রবাহিত হয় এবং মুক্তির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে। এগুলো হচ্ছে এই মোবারক মাসের তাকভীনী বৈশিষ্ট্য যা তাশরীয়ী বিধানসমূহ পালনে সহায়ক হয়।

রমজান মাসের তাশরীয়ী বৈশিষ্ট্য কী?

এ মাসের তাশরীয়ী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সাওম ও তারাবী এ মাসে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। সূরা বাক্বারার যে আয়াতে মাহে রমযানের ফযীলত ঘোষিত হয়েছে তার আগের দুটি আয়াতই হচ্ছে,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে রোযা, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা আত্মরক্ষা করতে পার। (গুনাহ থেকে এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে) সূরা বাকারা:  ১৮৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
﴿فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ﴾

অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যে এ মাসে উপস্থিত হয় সে যেন মাসভর রোযা রাখে। (সূরা বাক্বারা :১৮৫)

অসুস্থ ও মুসাফির ছাড়া প্রত্যেক বালিগ মুসলিমের উপর সারা মাস রোযা রাখা ফরয। এ শুধু মাহে রমাযানেরই বৈশিষ্ট্য। এ বিধান অন্য কোনো মাসে নেই। সূরা বাকারার যে আয়াতগুলিতে রোযা ফরয হওয়ার বিধান এসেছে তাতে চিন্তা করলে দেখা যায়, একদিকে আল্লাহ রোযাকে ফরয করেছেন, অন্যদিকে অপারগতার ক্ষেত্রে অবকাশ দিয়ে এ বিধানকে সহজ করেছেন। উপরন্তু  দয়াময় মালিক এ বিষয়ে এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে, বান্দার জন্য তা আর কঠিন থাকেনি, মধুময় হয়ে উঠেছে।

মাহে রমাযানের দ্বিতীয় বিশেষ ইবাদত তারাবী। বলাবাহুল্য, এ-ও আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতেই প্রদত্ত। তবে আল্লাহ তাআলা তা দান করেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ এর মাধ্যমে এবং রোযার মতো একে ফরয করেননি। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এক রমাযানে দুই বা তিন রাত সাহাবীগণ তারাবীর নামাযে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ইকতেদা করেছেন। অর্থাৎ তারাবীর নামায জামাতে পড়া হয়েছে। কিন্তু পরের রাতগুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা থেকে বের হননি। এর কারণ দর্শিয়ে তিনি বলেছেন, তোমাদের অপেক্ষা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম, কিন্তু আমার আশঙ্কা হয়েছে (এভাবে জামাতে তারাবী চলতে থাকলে) তা ফরয করে দেওয়া হতে পারে।

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবী নামাযকে আমাদের জন্য অপরিহার্য করেননি তবে তিনি উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমযানের রাতে (নামাযে) দাঁড়ায় তার পূর্বকৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।(সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০৯)
ঈমান ও ইহতিসাবের সাথেকথাটির মূল অর্থ, বিশ্বাসের সাথে, পুণ্যের আশায়। তো এ দুটি ইবাদত অর্থাৎ রোযা ও তারাবী হচ্ছে মাহে রমযানের বিশেষ ইবাদত। রমযান ছাড়া অন্য কোনো মাসের রোযাকে আল্লাহ তাআলা ফরয করেননি। তেমনি অন্য কোনো মাসে তারাবী পড়ারও সুযোগ নেই।

তৃতীয় বিষয়টি সাধারণ। তা হচ্ছে গোনাহ ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা। অন্য মাসেও তা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মাহে রমযানে এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। তেমনি সাধারণ ইবাদত-বন্দেগী ও আমলে ছালিহ সব সময়ই প্রশংসনীয়। কিন্তু মাহে রমাযানে এর ফযীলত অনেক বেড়ে যায়। অতএব সাধারণ ইবাদত-বন্দেগীর বিষয়ে আরো বেশি যত্নবান হওয়া এবং গুনাহ ও পাপাচার থেকে আরো গুরুত্বের সাথে বেঁচে থাকা এ মাসের করণীয়ের মাধ্যে শামিল।

১. রমাযান মাসেই আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কুরআন অবতরণের সূচনা রমযান মাসেই হয়েছে, তখন সূরা আলাকের প্রথম কয়েকটি আয়াত কারীমাহ অবতীর্ণ হয়।

৩. জিবরাঈল আ. রমাযানের প্রতি রাতে এসে রাসূলুল্লাহ সা.-কে কুরআন শিখাতেন আর তিনিও তাকে পূর্ণ কুরআন শুনিয়ে দিতেন। এ ব্যাপারটি রমযান  মাসে কুরআন খতমের বৈধতাকে প্রমাণ করে। তাছাড়া কুরআন খতম সারা বছরেই গুরুত্বপূর্ণ মোস্তাহাব। তবে, রমাযানে এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়।

প্রথমত : কুরআনের মর্যাদা, ফযিলত ও বৈশিষ্ট্য
কুরআনুল কারীমের মর্যাদা, ফযিলত, অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনেই অনেক আয়াত বর্ণিত হয়েছে, যেমনি এ প্রসঙ্গে বহু হাদিস রয়েছে। কতক এখানে তুলে ধরা হল:

১. কুরআন আল কারীম বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার কালাম। তিনি তা স্বীয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর রূহুল আমীন তথা জিবরাইল আ.-এর মাধ্যমে অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ْ أَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلَامَ اللَّهِ
অর্থাৎ, মুশরিকদের কেউ যদি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, আপনি তাকে আশ্রয় দিয়ে দিন, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়। (আত -তাওবাহ :৬)

২. কুরআন মানবতার জন্য দিক-নির্দেশনা ও আলোকবর্তিকা। তাদেরকে প্রতিটি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল পথ প্রদর্শন করে, আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿إن هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُا﴾
অর্থাৎ, নিশ্চয় এ কোরআন এমন পথ-প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক। (আল - ইসরা,আয়াত : ৯)

কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতি যত সমস্যার সম্মুখীন হবে, তাদের যা যা প্রয়োজন হবে সকল বিষয়ের সমাধান করার বর্ণনা রয়েছে এ কুরআন কারীমে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِ﴿بْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ﴾
অর্থাৎ, এবং আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা। হেদায়াত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ। (সূরা নাহল : ৮৯)

৩. মহান আল্লাহ তাআলা এর নাম দিয়েছেন  আল-ফুরকান, (পার্থক্যকারী) যা হালাল-হারাম, হেদায়াত-গোমরাহি এবং হক ও বাতেলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করে।

৪. কুরআনুল কারীম আমাদের পূর্ববর্তীদের ঘটনাবলী, পরবর্তীদের সংবাদ, মোমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ এবং কফেরদের জন্য জাহান্নামের দু:সংবাদের বর্ণনায় পরিপূর্ণ। বর্ণিত সকল বিষয়ের বর্ণনায় এটি ততোধিক সত্য বক্তব্য প্রদানকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا. (الأنعام
অর্থাৎ, আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। (সূরা আনআম, আয়াত:

৫. আল কুরআন বিশ্ববাসী সকলের জন্য রহমত। সে গাফেল হৃদয়কে জাগ্রত ও সক্রিয় করে, অন্তরকে শিরক-নিফাক এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ করে তোলে। যেমন এ কথা সূরা ফাতেহা ও সূরা নাস, ফালাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ.
অর্থাৎ, হে মানবকুল ! তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়াত ও রহমত মোমিনদের জন্য। (সূরা ইউনুস:৫৭)

তাই দেখা যায় কোরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে অন্তর প্রশান্ত হয়। দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,
﴿الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ﴾
অর্থাৎ, যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সূরা রাদ: ২৮)
কুরআনুল কারীম খুবই বরকতময়। তার উপকারিতা সু-বিশাল, মানবকুল কুরআনের মাধ্যমে দুনিয়া আখেরাত-উভয় জগতের কল্যাণ ও উন্নতি লাভ করতে পারে, আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى ﴿123﴾ وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى﴾ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا﴾ قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آَيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى﴾
অর্থাৎ, “এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়াত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না। এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ করে উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার পালন-কর্তা ! আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমিতো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বললেন-এমনিভাবে তোমার কাছ আমার আয়াত সমূহ এসেছিল। অত:পর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনি করে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল।” (সূরা ত্বহা: ১২৩-১২৬)

৭. আল কোরআনুল এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কিতাব যা আল্লাহ তাআলার সংরক্ষণে সংরক্ষিত। আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ﴾
অর্থাৎ, নিশ্চয় আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তা সংরক্ষণ করব। (হিজর, আয়াত: ৯)

৮. কুরআনে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল, যে ব্যক্তি এটি বুঝার ও অনুধাবন করার চেষ্টা করে, সে তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে, হৃদয়ে নাড়া দেয়। অন্তরকে মার্জিত ও পরিশীলিত করে। আত্মাকে করে সংশোধিত। মানুষকে নেক আমলের প্রতি উৎসাহী করে তোলে। তার প্রভাব ও আছর শুধু মানবকুল পর্যন্তই সীমিত নয় ; বরং একে যদি খুব মজবুত ও শক্ত পাহাড়ে অবতীর্ণ করানো হত তাহলে অবশ্যই সেটি কেঁপে উঠত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿َوْأَنْزَلْنَا هَذَا الْقُرْآَنَ عَلَى جَبَلٍ لَرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُتَصَدِّعًا مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থাৎ, যদি আমি এ কুরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে আপনি দেখতে পেতেন যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তাআলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে, আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা হাশর : ২১)

৯. কুরআন এ উম্মতের জন্য উপদেশ ও সম্মানের বস্তু। এরশাদ হচ্ছে
﴿وَإِنَّهُ لَذِكْرٌ لَكَ وَلِقَوْمِكَ وَسَوْفَ تُسْأَلُونَ. ﴾
অর্থাৎ, কুরআন তো আপনার ও আপনার জাতির জন্য সম্মানের বস্তু। অবশ্যই এ বিষয়ে সত্ত্বর জিজ্ঞাসিত হবেন। (সূরা যুখরুফ: ৪৪)

১০. সালাতের মত গুরুত্বপূর্ণ আমল কোরআনের সূরা ফাতেহা পড়া ব্যতীত সহীহ-শুদ্ধ হয় না। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
لاصلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب. (متفق عليه(
هذا الحديث من أصح الأحاديث عن النبي ﷺ رواه البخاري ومسلم في الصحيحين وغيرهما، يقول ﷺ: لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب، وفي اللفظ الآخر: بأم القرآن، وفي الباب أحاديث أخرى ولهذا احتج العلماء بهذا الحديث على أنها ركن في الصلاة لا بد منها، في حق الإمام والمنفرد عند أكثر أهل العلم، لا بد من قراءة الفاتحة في حق الإمام والمنفرد لهذا الحديث الصحيح وما جاء في معناه.
واختلف العلماء في حق المأموم: هل تجب عليه أم تكفيه قراءة الإمام؟ ذهب الأكثرون إلى أنها تكفي قراءة الإمام واحتجوا بما يروى عنه ﷺ أنه قال: من كان له إمام فقراءته له قراءة، وقالوا: إنه يسمع قراءة الإمام والإمام ضامن للصلاة يكفيه قراءة الإمام، وهكذا في السرية.
وقال بعض أهل العلم: إنما هذا في الجهرية؛ لأنه يسمع قراءته أما في السرية فلا بد أن يقرأ، لأنه لا يسمع قراءة إمامه.
وذهب آخرون من أهل العلم إلى أنه لا بد أن يقرأ ولو في الجهرية؛ لأنه ورد لعموم هذا الحديث، ولأنه ورد عنه ﷺ أنه قال: لعلكم تقرءون خلف إمامكم؟ قلنا: نعم، قال: لا تفعلوا إلا بفاتحة الكتاب، فإنه لا صلاة لمن لم يقرأ بها، هذا الحديث صحيح رواه أحمد وجماعة من أهل السنن، وهو فاصل في المسألة واضح يبين أن المأموم يقرأ الفاتحة فقط، إلا أن يعجز بأن يكون ما أمكنه القيام، جاء والإمام راكع تسقط عنه، لما روى البخاري في الصحيح عن أبي بكرة  -الثقفي - أنه جاء والإمام راكع فركع ولم يأمره النبي ﷺ بقضاء، وهكذا لو نسي المأموم القراءة أو تركها جاهلاً بالحكم الشرعي تجزئه الركعة تجزئه الصلاة للجهل، وهذا مخصص من قوله: لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب، لحديث أبي بكرة وما جاء في معناه.
أما حديث: من كان له إمام فقراءته له قراءة، فهو حديث ضعيف.
فالصواب أن المأموم يقرأ في الجهرية والسرية الفاتحة فقط، ويزيد في السرية ما تيسر منه بعد الفاتحة في الركعة الأولى والثانية من الظهر والعصر والمغرب والعشاء وفي الفجر أيضاً، لكن الفجر جهرية يقرأ الفاتحة فقط.
فالمقصود أنه في السرية الظهر والعصر في الأولى والثانية يقرأ بزيادة على الفاتحة مستحب، والفاتحة يقرؤها لا بد من ذلك حتى في الجهرية، يقرأ ثم ينصت يقرؤها في الجهرية ثم ينصت لإمامه، هذا هو الصواب، لكن لو تركها جاهلاً أو ناسياً أو جاء والإمام راكع لم يستطع قراءتها لأنه فاته القيام أجزأه ذلك عند عامة أهل العلم عند أكثر أهل العلم، والحمد لله. نعم.
المقدم: جزاكم الله خيراً.
 الفاتحة والقراءة في الصلاة
 أضف للمفضلة
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ে না তার সালাতই হয় না। (বোখারি ও মুসলিম)

(১১) যারা হেদায়াত প্রত্যাশা করে এবং এর জন্য চেষ্টা করে, মহান আল্লাহ তাআলা তাদের উদ্দেশ্যে কোরআনের তিলাওয়াত, বুঝা, হিফয করা, এর বিষয় বস্তু গভীরভাবে চিন্তা করে হৃদয়ংগম করা ও তার নির্দেশ অনুযায়ী আমল করা খুব সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآَنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ ﴾
অর্থাৎ, এবং আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝা ও উপদেশ গ্রহণের জন্য। কোন চিন্তাশীল উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? (সূরা কমর : ১৭)

সুতরাং, কুরআন আল্লাহ তাআলার একটি বিশাল নিয়ামত ও বিশেষ অনুগ্রহ। তাই আমাদের সকলের এ কুরআন পেয়ে আনন্দিত হওয়া এবং সদা আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
﴿قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ ﴾
অর্থাৎ, বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের আনন্দিত ও সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। তারা যা সঞ্চয় করছে তা অপেক্ষা এটিই অতি উত্তম। (সূরা ইউনুস : ৫৮)
দ্বিতীয়ত: কুরআন  কারীমের মূল্যায়ন ও গুরুত্ব প্রদান :

পৃথিবীতে অনেক মুসলমান আছেন, যারা তার পক্ষে যতটুকু সহজ ততটুকু শুধুমাত্র তিলাওয়াতকেই কুরআন যথাযথ হক আদায় ও মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তাদের সম্পর্কে ইমাম হাসান বসরী রহ. চমৎকার বলেছেন -
﴿نزل القرآن ليعمل به فاتخذوا تلاوته عملا.
কুরআন-তদনুযায়ী-আমল করার জন্য অবতীর্ণ হল আর লোকেরা শুধু তিলাওয়াতকেই আমল বানিয়ে বসে আছে।

সুতরাং, শুধু তিলাওয়াতই কুরআনের হক আদায়ের জন্য যথেষ্ট নয়; বরং যথাযথ মূল্যায়নের জন্য তিলাওয়াতের পাশাপাশি একে বুঝতে হবে-বুঝার চেষ্টা করতে হবে, হিফয করতে হবে, বর্ণিত বিষয়াদিতে চিন্তা গবেষণা করতে হবে, তদনুযায়ী আমল করতে হবে, শাসন, বিচার ও বিরোধ-মীমাংসার জন্য তার শরণাপন্ন হতে হবে। কিন্তু, দু:খজনক ব্যাপার হল লোকেরা এর তিলাওয়াতকেই যথাযথ মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট মনে করছে। এর চেয়েও দু:খজনক হচ্ছে-যারা তিলাওয়াতকে যথেষ্ট মনে করছে তাদের অধিকাংশ এ তিলাওয়াতের ব্যাপারে অবহেলা-উপেক্ষা করছে-
﴿و لا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم﴾.
বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে যায় অথচ পূর্ণ বৎসরে একবারও কোরআন খতম করতে পারে না। একটিমাত্র সূরাও মুখস্থ করে না। রমজান মাস, যখন সকল মুসলমান পূর্ণোদ্দমে কোরআন অধ্যয়নসহ সকল ইসলামি কর্মকাণ্ড সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে সম্পাদন করে, তখনও কিছু মুসলমানকে আপনি দেখতে পাবেন, যারা এর তিলাওয়াত থেকে দূরে, এ বরকতময় মাসেও এর খতম পূর্ণ করার জন্য চেষ্টা করে না।

কুরআনুল কারীমের মূল্যায়নের দিকসমূহ

১. তিলাওয়াত করা

তিলাওয়াতের ফযিলত :

(১) কোরআনুল কারীমের যথাযথ তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা। আল্লাহ তাআলা বলেন -
﴿َ إن الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ 29﴾ لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ ﴾
অর্থাৎ, যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে, যাতে কখনও লোকসান হবে না। পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল মূল্যায়নকারী। (সুরা-ফাতির-২৯-৩০)

(২) কুরআন তিলাওয়াতকারী প্রত্যেক অক্ষরের পরিবর্তে একটি করে নেকি লাভ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন -
﴿من قرأ حرفا من كتاب الله فله حسنة، والحسنة بعشر أمثالها، لا أقول : (الم) حرف، ولكن ألف حرف، ولام حرف، وميم حرف. ﴾  
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ থেকে একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে তাকে একটি নেকি দেয়া হবে। উক্ত এক নেকি হবে দশ নেকির সমতুল্য। আমি একথা বলি না যে الم একটি অক্ষর বরং الف একটি অক্ষর لام একটি অক্ষর ميم একটি অক্ষর। (الم তিলাওয়াত করলে ন্যূনতম ত্রিশটি নেকি প্রাপ্ত হবে) (তিরমিজি)।

(৩) কুরআন তিলাওয়াতকারী ভিতর বাহির উভয় দিক থেকে উত্তম-উৎকৃষ্ট। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন -
مثل المؤمن الذي يقرأ القرآن مثل الأترجة: ريحها طيب، وطعمها طيب، ومثل المؤمن الذي لا يقرأ القرآن كمثل التمرة: لا ريح لها وطعمها حلو، ومثل المنافق الذي يقرأ القرآن كمثل الريحانة: ريحها طيب وطعمها مر، ومثل المنافق الذي لا يقرأ القرآن كمثل الحنظلة: ليس لها ريح، وطعمها مر.(متفق عليه(

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مثل المؤمن الذي يقرأ القرآن كمثل الأترجة ريحها طيب وطعمها طيب ومثل المؤمن الذي لا يقرأ القرآن كمثل التمرة لا ريح لها وطعمها حلو ومثل المنافق الذي يقرأ القرآن مثل الريحانة ريحها طيب وطعمها مر ومثل المنافق الذي لا يقرأ القرآن كمثل الحنظلة ليس لها ريح وطعمها مر.

نبات الريحان، الريحان هو أحد النباتات العطرية الورقيّة التابعة لعائلة النعناع، وهي نبتة تؤكل ويمكن إستخدامها أيضاً كنوع من التوابل، ويمكن زراعة هذه النبتة في حديقة المنزلوصف نبات الريحان الريحان نبات رائحة طيبة،  يتم استخدامه كدواء للكثير من الامراض، وله مسميات مختلفة منها العشبة الملكية، والريحان الملكي، و ست أو شامو، والحبق، ونبتة القديس يوسف.

نبات الريحان – ياردس زون
كما أنه نبات عطري عشبي حولي، وهو شجيرة يتراوح طولها حوالي 100 سم حتى 150 سم، وأوراقه كثيفة ومشابها أوراق النعناعأزهاره بيضاء وبنفسجية، هو نبات يتحمل ملوحة التربة بشكل كبير، وتزرع على مدار السنة، وتحتاج إلي التسميد شهرياً، والري المنتظميفضل عند الحصاد أن يكون بشكل فردي ( ورقة ورقة ) وليس قطع الأوراق معاً مرة واحدة لأن ذلك يضر بالنبتة ويضعف نموها، يفضل أن يتم الحصاد مرة إسبوعياً، لأن الحصاد المتكرر يؤدي إلى تشجيع النبات علي النمو﴾

অর্থাৎ, যে মোমিন কোরআন তিলাওয়াত করে সে জামীর সদৃশ যার সুগন্ধি বড় চমৎকার এবং স্বাদও সুমিষ্ট। আর যে মোমিন কোরআন তিলাওয়াত করে না সে খেজুর সমতুল্য। যার গন্ধ নেই, কিন্তু স্বাদ বড় মিষ্ট। আর যে মুনাফেক কোরআন পাঠ করে সে রাইহান ফলের মত যার সুগন্ধি চমৎকার কিন্তু স্বাদ বড়ই তিক্ত। আর যে মুনাফেক কোরআন পড়ে না সে হানযালা বা কেদাঁ ফলের সমতুল্য যার কোন ঘ্রাণ নেই এবং স্বাদও তিক্ত। (বুখারি মুসলিম)

৪. কুরআন পাঠে সাকীনা (বিশেষ রহমত) অবতীর্ণ হয়।
﴿عن البراء بن عازب رضي الله عنه قال: كان رجل يقرأ سورة الكهف وعنده فرس مربوط بشطنين (بحبلين) فتغشته سحابة، فجعلت تدنو، وجعل فرسه ينفر منها، فلما أصبح أتى النبي صلى الله عليه وسلم فذكر ذلك له، فقال: (تلك السكينة تنـزلت للقرآن). (متفق علي)
অর্থাৎ, সাহাবি বারা ইবনে আযেব রা. বর্ণনা করেছেন-জনৈক সাহাবি সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করছিলেন। তার নিকট রশি দিয়ে বাঁধা একটি ঘোড়া ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই একটি জলধর তাকে ঢেকে নিল এবং ক্রমেই সেটি কাছে আসছিল আর ঘোড়া ছোটাছুটি করছিল। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে পূর্ণ ঘটনা খুলে বললেন। শুনে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন সেটি সাকীনা (এক প্রকার বিশেষ রহমত যা দ্বারা অন্তরের প্রশান্তি লাভ হয়) কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)

(৫) কোরআনের একটি আয়াত (পাঠ করা বা শিক্ষা দেয়া) উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা উত্তম।

﴿قال صلى الله عليه وسلم: أفلا يغدو أحدكم إلى المسجد فيعلم أو يقرأ آيتين من كتاب الله عز وجل خير له من ناقتين، وثلاث خير له من ثلاث، وأربع خير له من أربع، ومن أعدادهن من الإبل). (رواه مسلم (

رقم الحديث 1342
)حديث مرفوع) وحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ ، حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ دُكَيْنٍ ، عَنْ مُوسَى بْنِ عُلَيّ ، قَالَ : سَمِعْتُ أَبِي يُحَدِّثُ ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ ، قَالَ : خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ ، فَقَالَ : أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ ، أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ ، فِي غَيْرِ إِثْمٍ ، وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ ؟ فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، نُحِبُّ ذَلِكَ ، قَالَ : " أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ ، أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ ، وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ ، وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ ، وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الإِبِلِ ؟ " .
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন :-তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কোরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না ? তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম)
৬. কুরআনুল কারীম নিয়মিত তিলাওয়াতকারী ও তদনুযায়ী আমলকারীর পক্ষে কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।
﴿قال صلى الله عليه وسلم : إقرؤوا القرآن، فإنه يأتي يوم القيامة شفيعا لأصحابه﴾
অর্থাৎ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর, কেননা, কোরআন কিয়ামতের দিবসে তিলাওয়াত ও আমলকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে। (মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
﴿يؤتى يوم القيمة بالقرآن وأهله الذين كانوا يعملون به في الدنيا، تقدمه سورة البقرة وآل عمران تحاجان عن صاحبهما﴾
অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন কোরআন এবং পৃথিবীতে কোরআনের মর্মানুযায়ী আমলকারীদেরকে এমতাবস্থায় উপস্থিত করা হবে সূরা বাকারাহ ও সূরা আলে ইমরান আগে আগে চলবে এবং এদের তিলাওয়াত ও আমলকারীদের জন্য সুপারিশ করতে থাকবে। (মুসলিম)

৭. কুরআনের পাঠক ও আমলকারী দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে-
﴿قال صلى الله عليه وسلم: خيركم من تعلم القرآن وعلمه. (رواه البخاري(

باب خيركم من تعلم القرآن وعلمه

4739 حدثنا حجاج بن منهال حدثنا شعبة قال أخبرني علقمة بن مرثد سمعت سعد بن عبيدة عن أبي عبد الرحمن السلمي عن عثمان رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال خيركم من تعلم القرآن وعلمه قال وأقرأ أبو عبد الرحمن في إمرة عثمان حتى كان الحجاج قال وذاك الذي أقعدني مقعدي هذا﴾

অর্থাৎ, যে কুরআন শিখে ও শিক্ষা দেয় সে তোমাদের শ্রেষ্ঠতর। (বুখারী)

কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি সাহাবাদের আগ্রহ ছিল ঈর্ষণীয়। তিলাওয়াতের মর্যাদা জানার পর তাদের কেউ কেউ সব সময়ের জন্য সারারাত না ঘুমিয়ে কোরআন তিলাওয়াতে কাটিয়ে দেয়ার সংকল্প করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত সংকল্প সম্পর্কে জেনে এরূপ না করার পরামর্শ দিয়ে বললেন বরং প্রতি সাত দিনে একবার করে খতম করতে পার। তাইতো দেখা যায়, তাদের অধিকাংশই প্রতি সাত দিনে একবার করে খতম করতেন।

তিলাওয়াতের প্রতি তাদের এরূপ যত্নশীল হওয়া সত্ত্বেও যদি কখনো কেউ অন্য কাজে ব্যস্ততা হেতু বা ঘুমের কারণে রাতে পড়তে না পারতেন তাহলে পরদিন সে অংশটুকু অবশ্যই পড়ে নিতেন।
﴿قال صلى الله عليه وسلم : من نام عن حزبه أو عن شيء منه ، فقرأه فيما بين صلاة الفجر وصلاة الظهر كتب له كأنما قرأه من الليل﴾
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি স্বীয় নির্ধারিত অংশ বা তার অংশ বিশেষ রাতে না পড়েই ঘুমিয়ে যায় অত:পর পরদিন ফজর ও জোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়। তাহলে রাতে পড়া হয়েছে ধরেই আল্লাহর নিকট নির্বাচিত হবে। )মুসলিম(

আবার তাদের কেউ কেউ প্রতি দিনে একবার করে খতম করতেন। রমজান মাস আসলে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি তাদের চেষ্টা ও পরিশ্রম আরো বেড়ে যেত। রমজানে সালাতের মধ্যে এবং অন্য সময় তিলাওয়াতের জন্য তারা কঠোর পরিশ্রম করতেন। ইমাম বুখারি রহ. বলতেন,
إذا دخل رمضان فإنما هو تلاوة القرآن وإطعام الطعامفإن مما اشتهر في هذه الأعصار أن السلف كانوا يتركون مجالس العلم في شهر رمضان ويتفرغون لقراءة القرآن  والحق أن ذلك قد ورد عن ثلاثة من علماء السلف وهم الزهري وهو تابعي وعن الثوري ومالك وهما من أتباع التابعين ، ولم يرد شيءٌ عن الصحابة في ذلك .

قال ابن رجب في لطائف المعارف (1/183(:
كان الزهري إذا دخل رمضان يقول : إنما هو قراءة القرآن و إطعام الطعام .
قال ابن الحكم : كان مالك إذا دخل رمضان يفر من قراءة الحديث و مجالسة أهل العلمقال عبد الرزاق : كان سفيان الثوري إذا دخل رمضان ترك جميع العبادة و أقبل على قراءة القرآن .اهـ
وهذه الآثار الثلاثة لم أجد لها أسانيد بعد البحث الطويل ، ولم أجد أحداً ذكرها قبل الحافظ ابن رجب ، وقد استعنت ببعض البرامج البحثية .

ثم وجدت سنداً لأثر الزهري :
قال ابن عبد البر في التمهيد (6/111( :
 حدثنا خلف بن أحمد , حدثنا أحمد بن سعيد قال : سمعت عبدالله ابن جعفر أبا القاسم القزويني يقول : سمعت طاهر بن خالد بن نزار يقول سمعت أبي يقول سمعت القاسم بن مبرور يقول :  سمعت يونس بن يزيد يقول كان ابن شهاب إذا دخل رمضان فإنما هو تلاوة القرآن وإطعام الطعام وكان ابن شهاب أكرم الناس وأخباره في الجود كثيرة جدا نذكر منها لمحة دالة.اهـ

أقول : وهذا سندٌ لا يصح فعبد الله بن محمد بن جعفر أبو القاسم القزويني
قال ابن عساكر في ترجمته من تاريخ دمشق (32/ 169) :  قال ابن المقرئ هكذا حدثنا هذا الشيخ ورأيت اصحابنا ضعفوه بعد كتابنا عنه والله اعلم وأنكروا عليه أشياء.اهـ

وقال أيضاً (32/ 1 )
 أخبرنا أبو محمد بن الأكفاني شفاها نا عبد العزيز بن احمد نا تمام بن محمد اجازة أنا أبو عبد الله بن مروان قال وكان خليفته يعني محمد بن العباس الجمحي على دمشق عبد الله بن محمد القزويني كتب إلي أبو زكريا يحيى بن عبد الوهاب بن مندة وحدثني أبو بكر اللفتواني عنه أخبرنا  عمي عن أبيه ح قال اللفتواني وأنا أبو عمرو بن مندة اجازة عن أبيه أبي عبد الله قال قال أنا أبو سعيد بن يونس :
عبد الله بن محمد بن جعفر القزويني يكنى أبا القاسم كان فقيها على مذهب الشافعي وكانت له حلقة بمصر .
وكان قد تولى قضاء الرملة وكان محمودا فيما يتولى وكان يظهر عبادة وورعا وكان قد ثقل سمعه شديدا وكان يفهم الحديث ويحفظ .
وكان له مجلس إملاء في داره وكان يجتمع إليه حفاظ الحديث وذوو الأسنان منهموكان مجلسه وقيرا ويجتمع فيه جمع كثير فخلط في آخر عمره ووضع أحاديث على متون محفوظة معروفة وزاد في نسخ معروفة مشهورة فافتضح وحرقت الكتب في وجهه وسقط عند الناس وترك مجلسه فلم يكن يجئ إليه أحد توفي بعد ذلك بيسير.اهـ
যখন রমাযান আসবে তখন সেটি হবে একমাত্র কুরআন তিলাওয়াত ও অপরকে খাওয়ানোর মাস।

ইমাম মালেক রহ. রমাযান আসলে হাদিসের অধ্যয়ন, ইলম শিক্ষার আসরসহ যাবতীয় কাজ ছেড়ে দিয়ে (রাতদিন শুধু) মাসহাফ থেকে কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি বেশি মনোযোগী হতেন। এর অর্থ এই নয় যে, শুধু চিন্তা ও গবেষণার দিক ও তিলাওয়াতের হক প্রদানকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু তিলাওয়াতের প্রতিই গুরুত্ব দেয়া হবে। বরং অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায় বা অক্ষর অস্পষ্ট থাকে এমন করে খুব দ্রুত বেগে তিলাওয়াত করার অনুমতি নেই। কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াতের অনেক আদব আছে তিলাওয়াতকালে সেগুলোর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরি।
লেখকঃ
প্রফেসর,
আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ।


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here