।। মাজহারুল ইসলাম জয়নাল।।
মাহে রমযানের প্রস্তুতি যেমন হওয়া চাই
কবির পংক্তিমালা-
রমযানু ইয়া রমযাই
ইয়া শাহরাল কুরআন,
ইয়া শাহরাল কুরআন,
আক্ববালতা বিল বুশরা
খায়রা ওয়াল গুফরান।
“রমযান, হে রমযান! হে কুরআনের মাস, তুমি আগমন করেছে ক্ষমা আর কল্যাণের
সুসংবাদ নিয়ে।” আরবী বারো মাসের মধ্যে গুরুত্ব ও ফজিলতের দিক দিয়ে রমযান মাসের মর্যাদা
সবচেয়ে বেশি। তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠতম মাস হচ্ছে রমযান। এ মাসেই আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির
মহাসংবিধান আল-কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ করেছেন। এ মাসেই রয়েছে এমন একটি রজনী, যে রজনী হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। গুরুত্বপূর্ণ
কোনো কিছু পেতে হলে অনেক পূর্ব থেকে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিতে হয়, এটাই দুনিয়ার নিয়ম। ঠিক তদ্রুপ ফজিলতের মাস রমযানের
পূর্ণ রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাত পেতে হলে পূর্ব থেকেই আমাদেরকে পরিকল্পনা গ্রহণ
করতে হবে। আসুন আমরা জেনে নেই, কিভাবে রমযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
মাহে রমযানে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই
এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত বেশি যে, স্বয়ং রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে
কিরামকে রমযান আসার পূর্ব হতেই সুসংবাদ দিতেন রমযানের আগমনী বার্তার। এবং সাহাবায়ে
কেরামকে রমযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করতেন।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের
সিয়াম পালনের দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য শাবান মাসে অধিক হারে সিয়াম পালন করতেন।
আয়শা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, ‘তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো এমনভাবে
সিয়াম পালন করতেন যে, আমাদের মনে হত তিনি সাওম ত্যাগ করবেন না। আর কখনো
এতো দীর্ঘ সময় সাওম ত্যাগ করতেন যে, আমাদের মনে হত তিনি আর সাওম
পালন করবেন না। রমযান মাস ব্যতীত পূর্ণ কোন মাস তাকে আমি সাওম পালন করতে দেখিনি। এবং
শাবানের তুলনায় ভিন্ন কোন মাসে এত সাওম পালন করতেও দেখিনি। [সহিহ বুখারী
১৯৬৯]
সহিহ মুসলিমে এসেছে, শাবানের তুলনায় অন্য কোন মাসে আমি তাঁকে এত অধিক
হারে সাওম পালন করতে দেখিনি। তিনি শাবানের প্রায় পুরোটাই সাওম এ অতিবাহিত করতেন। কিছু
অংশ ব্যতীত তিনি পুরো শাবান মাস সাওম পালন করতেন। [সহিহ মুসলিম ১১৫৬] উক্ত হাদিসের প্রতি লক্ষ রেখে আমাদের ও উচিত শাবান মাসে অধিক
হারে নফল সাওম পালন করা। বলা যায়, শাবান মাসের সাওম হচ্ছে রমযান মাসের ভূমিকাতুল্য। অথাৎ তা যেন
রমযানের পূর্বে পালিত প্রস্তুতিমূলক সাওম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব
এর চাঁদ দেখার পর তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন এভাবে :
اللَّهُمَّ
بَارِكْ لَنَا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان
‘হে আল্লাহ! রজব এবং শা’বান কে আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ কর এবং আমাদেরকে রমযান পর্যন্ত
পৌঁছার তাওফিক দাও’ [তাবরানী ও আহমদ] আমাদের উচিৎ রমযান পর্যন্ত হায়াত লাভের জন্য বেশি
বেশি দোয়া করা মহান আল্লাহর নিকট।
মহিমান্বিত রমযান মাসেই কুরআনুল কারিম নাজিল হয়েছে।
হাদীসে এসেছে রমযান মাসে প্রতিদিন জিব্রাইল (আ:) প্রিয়নবীকে কুরআন তিলাওয়াত করে শুনাতেন, আবার কখনো রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জিব্রাইল (আ:) কে তিলাওয়াত করে শুনাতেন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এবং সাহাবায়ে কেরাম এ মাসে অন্য মাসের তুলনায় বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তাই
আমাদের উচিত এ মাসে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওত করা।
বিশেষ করে আমরা যারা বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত
করতে জানি না, আমাদের উচিত হলো এ মাসে বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষা লাভের
জন্য অভিজ্ঞ কারীসাহেবের নিকট থেকে তিলাওত সহিহ-শুদ্ধ করে নেয়া।
নামাজ শুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে সহিহ তিলাওয়াত, সহিহ তিলাওয়াত ছাড়া আমাদের সালাত আল্লাহর নিকট কবুল
হওয়ার দাবী রাখে না। আপনি চাইলেই যে শুদ্ধ করে কুরআন পড়তে জানে তার কাছ থেকে আপনার অশুদ্ধ তিলাওয়াতকে শুদ্ধ করে নিতে পারেন। এটা শুধু একটা উদ্যেগ গ্রহণের বিষয়। এটা এমন এক গ্রন্থ আপনি ইচ্ছা পোষণ করলেই শুদ্ধ তেলাওয়াত জানে এমন ব্যক্তি আপনাকে আগ্রহ ভরে কুরআন শিখাতে সে কুণ্ঠাবোধ করবেনা।
তাই রমযান আসার পূর্বেই এই নিয়ত করুন, এবারের রমযানে আমি আর দেরি না করে নিজের তিলাওয়াতকে
শুদ্ধ করে নিবো ইনশাআল্লাহ। জীবনে দিনের পর দিন কত উপন্যাস, গল্পের বই পড়ে সময় কাটালেন, অথচ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল কুরআন এর
অর্থ জানলেন না তা কি হয়?
তাই এবারের রমযানে তিলাওয়াতের পাশাপাশি আল কুরআনের
মর্মবাণী উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। রুটিন করে প্রতিদিন কিছু হলে ও তিলাওয়াতকৃত অংশের
বাংলা অনুবাদ পড়ুন। তার পাশাপাশি হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করা।
কোন কিছু সঠিকভাবে পালন করার জন্য প্রয়োজন তার নিয়মকানুন
জানা, রমযানের পূর্ণ ফজিলত আর বরকত লাভের জন্য আমাদেরকে
সাওমের মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখতে হবে। আমরা অনেকেই সাওমের মাসয়ালা-মাসায়েল
জানি না, তাই না জেনে অনেক ভুল করে থাকি। আসুন, রমযানের আগেই সাওমের মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কিত
বই ক্রয় করি এবং অধ্যয়ন করি। বিশেষ করে নামাজের মাসায়েল সম্পর্কিত বই অধ্যয়ন করা খুবই
জরুরী।
দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ :
মাহে রমযানের কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য আগ থেকেই
দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা ব্যাঞ্চনীয়। দৈহিকভাবে কোন অসুস্থতা উপলব্ধি হলে
আগ থেকেই অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা। মানসিক ভাবে প্রস্তুতি
গ্রহণ করা বলতে বুঝায়, রমযানের সাওম, তারাবীহ, তিলাওয়াত, জিকির-আযকার, জাকাত ইত্যাদি কর্ম সম্পাদনের জন্য পূর্ব থেকেই রুটিন তৈরি করে
নেয়া।
রমযান আসার আগেই শাবান মাস হতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ সমাপ্ত করে যাকাত
আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রমযানের সকল আমল যথাযথ পালনের জন্য সময় বাহির করে নিতেন
এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য রুটিন তৈরি করে নিতেন, যাতে ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে কোন ধরণের
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। তাই আমাদের ও উচিৎ রমযান আসার পূর্বেই যথাযতভাবে সাওম পালনের
জন্য দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
তাকওয়াপূর্ণ জীবনের শপথ :
রমযান মাসের সাওম বা রোজা পালনের মূল অর্থই হচ্ছে, তাকওয়ার্পূণ জীবন গঠনের নির্দেশনা। অশ্লীল, পাপাচার, ও যাবতীয় মন্দ কাজ যথা হিংসা-বিদ্ধেষ হতে নিজেকে মুক্ত রাখার
শপথ নেওয়া। রমযানের আগেই মানসিকভাবে এই প্রস্তুতি নেওয়া, আমি জীবনে আর কখনো আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের আইনের বিরুদ্ধে আমার জীবনকে পরিচালনা করবো না। সর্বক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর
আলোকে নিজের জীবনকে পরিচালিত করবো।
পরিশেষে বলা যায়, একজন সচেতন মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে রমযান আসার পূর্ব
থেকেই অর্থাৎ শাবান মাস হতেই রমযান কেন্দ্রিক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। মহান আল্লাহ
তায়ালা আমাদের সকলকে আসন্ন রমযানের সকল ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
মোবাইলঃ 01748237131
assalamualikum sir
ReplyDeleteWalaikum assalam
Delete