।। হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী।।
জালিম ও মজলুম উভয়কে সাহায্য করো----------
বিস্তারিত নিচের লেখায় ----------
দুনিয়ার মানুষ দুইভাগে বিভক্ত। একদল জালিম অপরদল মজলুম।
জালিম অর্থ অত্যাচারী, আর মজলুম
অর্থ অত্যাচারিত। জুলুম থেকে জালিম ও মজলুম শব্দ দু’টোর উৎপত্তি।
জুলুম শব্দের অর্থ হলো—কোনো কিছুকে যথাস্থানে না রেখে অন্য
কোথাও রাখা। জুলুম শব্দ দ্বারা অত্যাচার করা, বাড়াবাড়ি করা,
সীমালঙ্ঘন করা, উৎপীড়ন করা, জবরদস্তি করা, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করা, অবিচার করা, ন্যায়-ইনসাফ বহির্ভূত কোনো কাজ করা,
অন্যায়-অনিয়ম করা, অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ
করা ইত্যাদি বোঝায়। যে ব্যক্তি এসব কাজের কোনো কিছু করে, সে
হলো জালিম। আর যার উপর জুলুম করা হয়, সে হলো মজলুম। জালিম
অন্যের অধিকার হরণকারি, আর মজলুম নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত।
সকল ধর্ম মতেই জুলুম করা অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জালিম
অপরাধী, আর মজলুম
অনুগ্রহ পাওয়ার অধিকারী। পবিত্র কুরআনের বিপুল সংখ্যক স্থানে মহান আল্লাহ
জালিমদেরকে পছন্দ করেন না বলে ঘোষণা করেছেন।
তবে অনেক সময় একজন মানুষ বা একটি দল একই সাথে জালিম ও মজলুম
উভয়ই হতে পারে। যেমন একজন ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা কর্তৃক
জুলুমের স্বীকার হয়ে সে মজলুম। অথচ ঐ একই ব্যক্তি স্বীয় পরিবারে স্ত্রী বা স্বামীর
প্রতি জুলুম করে সে জালিম হয়ে আছে। এভাবে অনেক সময় একই ব্যক্তি জালিম ও মজলুম উভয়ই
হতে পারে।
জালিমরা জুলুম করার সময় প্রবল, শক্তিশালী, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান হয়ে থাকে। আর মজলুমরা হয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল।
মজলুমরা উপস্থিত সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের ক্ষতি যে কেউ চাইলে বোঝতে পারে বা আন্দাজ
করতে পারে। কিন্তু সুদূর প্রসারী চিন্তা করলে বা পরকালীন দৃষ্টিতে দেখলে তারা আসলে
লাভবান বলে গণ্য হবে।
অন্যদিকে জালিমরা উপস্থিত সময়ে লাভবান হয়ে থাকে। কিন্তু
সুদূর প্রসারী পরিণতির দিক চিন্তা করলে এবং পরকালীন দৃষ্টিতে দেখলে তারা আরো অনেক
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিষয়টি সবাই বোঝতে পারে না।
দূরদর্শী চিন্তার অধিকারী লোকেরা তা বোঝতে পারে। এদিক বিবেচনা করলে জালিম ও মজলুম
উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত, অসুবিধাগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত। আর
সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসলে আল্লাহও ঐ সাহায্যকারী লোকের সাহায্য
করে থাকেন বলে আমরা কুরআন-হাদিস থেকে জানতে পারি। তাইতো মহানবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম জালিম ও মজলুম উভয়কে সাহায্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী,
কিতাবুল ইকরাহ, হাদিস নম্বর: ৬৪৩৮)
মজলুমকে সাহায্য করার বিষয়টি সবাই বোঝে। কিন্তু জালিমকে
সাহায্য করার বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার, যাতে জালিম ব্যক্তি বা দল
জুলুম করার সুযোগ না পায়। এতে করে জালিমের জুলুমের পরিমাণ কমে আসবে। ফলে দুনিয়া ও
আখিরাতে তার পরিণতিও সহজ হবে। আর এটাই হলো তাকে সাহায্য করা।
সঙ্গত কারণেই জালিম ও মজলুমকে সাহায্য করতে হলে
সাহায্যকারীকে--------
i. জালিম ও মজলুম উভয়েরই প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী
ও নির্ভেজাল কল্যাণকামী হতে হবে।
ii. উভয় দলের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে উভয়ের
কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।
iii. কোনো পক্ষের প্রতি বিন্দুমাত্র ঝোঁক
প্রবণতা না দেখিয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে ইনসাফভিত্তিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
iv. নিজের ইচ্ছামতো কাজ না করে সম্পূর্ণ
আল্লাহর ইচ্ছা ও মর্জি মতে কাজ করতে হবে।
v. এ কাজের জন্য মনের মধ্যে পেরেশানি থাকতে
হবে।
vi. এ কাজের বিনিময়ে পার্থিব কোনো স্বার্থ
হাসিলের চিন্তা না করে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে হবে।
vii. সব কাজের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হবে
শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।
উপরোক্ত বিষয়গুলোকে সামনে রেখে এগিয়ে গেলে জালিম ও মজলুম
উভয় শ্রেণির লোকদের আস্থা অর্জন করে উভয়কে সংশোধনের মাধ্যমে একটি জুলুমমুক্ত সমাজ
কায়েম করা সম্ভব হবে।
(এ লেখাটি ২৭/০৯/২০১৬ তারিখে ফেইসবুকে
প্রচারিত এবং প্রগতির ডাক বইয়ের ৪৯ ও ৫০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখিত।)
লেখকঃ হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী,
(জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)
(জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)
প্রধান শিক্ষক
(ভারপ্রাপ্ত)
সরকারি এস. সি
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ।
মোবাইলঃ 01715
142715
Facebook Page:
হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী
Somewhereinblog.net:
হাফিজ মোঃ
মাশহুদ চৌধুরী
0 coment rios:
You can comment here