।। মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার।।
অন্যান্য দেশে করোনা ভাইরাসের বিস্তারের খবর শুনে আল্লাহর
কুদরাত ও সুন্নাত নিয়ে মনের সাথে একটু বুঝাপড়া করেছিলাম। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার
সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। মধ্যপ্রাচ্যের আলেমগণ করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ইসলামী
মূলনীতির আলোকে সুস্পষ্ট দ্বীনি দলীলের ভিত্তিতে মসজিদে সাধারণের জামায়াত আদায়ে
নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফতোয়া দেন। সে দিন থেকেই ছেলে, ভাতিজা,
ভাগনাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসায় জামায়াত আদায় করে আসছি।
দুই জুমার পরিবর্তে জুহর আদায় করেছি। কিন্তু বিষয়টি অনেকেই
মেনে নিতে পারেননি। তবে আমি অনড় ছিলাম। এ ব্যাপারে নেতৃস্থানীয় উলামায়ে কেরামের
ভূমিকা শুরু থেকেই মেনে নিতে পারিনি। উনারা জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে
ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। আজ
সরকার মসজিদে জামায়াতে মুসল্লী সংখ্যা ৫ জনে এবং জুমায় মুসল্লী সংখ্যা ১০ জনে
সীমিত করে পরিপত্র জারি করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।
তবে অনেক দেরী হয়ে গেল। আরো আগে এ সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার
ছিল। অনেকে সস্তা আবেগের বশবর্তী হয়ে মসজিদে জামায়াতে উপস্থিত হচ্ছেন তাকদীরের
দোহাই দিয়ে। কিছু মুফতি তাদের অজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এই বলে যে, নামাজী মুমিনকে করোনা
আক্রমণ করবেনা। করলে নাকি কুরআন মিথ্যে হয়ে যাবে, নাউযুবিল্লাহ।
অথচ এ ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভংগী নিম্নরূপ;
এক: আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে আযাব-গজব আসলে তা শুধু
জালেমদেরকেই ধরেনা। জালেম-মজলুম যে কারো উপর তা আপতিত হতে পারে। পবিত্র কুরআনে বলা
হয়েছে,
﴿وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا
مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
“আর তোমরা এমন ফাসাদ থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষতঃ শুধু তাদের উপর পতিত হবে না যারা তোমাদের মধ্যে জালেম এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর।" (সূরা আনফাল, আয়াত: ২৫)
দুই: আল্লাহ অলৌকিক উপায়ে বান্দাকে রক্ষা করতে সক্ষম। এটা তার কুদরাত বা
ক্ষমতা। তিনি সর্বশক্তিমান, কুন ফাইয়াকুন এর মালিক।
কিন্তু তার সুন্নাত বা নীতি হচ্ছে আপনি অসচেতন বা
অসতর্ক হলে তিনি আপনাকে রক্ষা করবেননা। আল্লাহ কখনো কখনো তার কুদরাতের প্রকাশ
ঘটালেও সাধারণত তার সুন্নাতের উপরই চলেন। ওহুদ, হুনাইনসহ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা তার সাক্ষী। আপনি বিষ পান করলে আল্লাহ আপনাকে
বাঁচাতে ক্ষমতা রাখেন; কিন্তু এটা তার সুন্নাত বা নীতি নয়।
তার সুন্নাত বলে যে, এতে আপনার প্রাণহানি ঘটবে।
তিন: বৈষয়িক উপায়-উপকরণের ব্যাবহার আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতার
পরিপন্থী তো নয়ই; বরং
আল্লাহর নির্দেশ। যুদ্ধের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,
﴿وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ﴾
"আর
তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের চুড়ান্ত সাধ্যমতো প্রস্তুতি গ্রহণ করো।" (সূরা
আনফাল, আয়াত:৬০)
আর উপায়-উপকরণ ব্যবহার তাওয়াক্কুলেরই অংশ। এর প্রমাণ নিম্নের হাদীস থেকে পাই। যেমন-
এ হাদীসে আমরা কী দেখলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলছেন, আগে
তোমার উটটাকে বাঁধ, অত;পর আল্লাহর উপর
তাওয়াক্কুল কর।
﴿عن أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ قَالَ
رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ أَوْ أُطْلِقُهَا
وَأَتَوَكَّلُ قَالَ اعْقِلْهَا وَتَوَكَّلْ﴾
“আল্লাহর
উপর ভরসা সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আমি কি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করব, না
বন্ধনমুক্ত রেখে? তিনি বললেন, উট বেঁধে নাও, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৪৪১)
চার: দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্যে সম্ভাব্য সকল উপায়-উপকরণ
ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি
ও সচেতনতা অবলম্বন এবং যাবতীয় চেষ্টা-সাধনার পরই কেবল আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে,
তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
পাচ: বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেকটা ঘর হবে একেকটা
মসজিদ, প্রত্যেক
পরিবার হবে একেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি গৃহ হবে
একেকটি আত্নশুদ্ধি কেন্দ্র, প্রত্যেকটা ফ্যামিলি হবে একেকটি
সংশোধনাগার এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
ছয়: সংগনিরোধ, আইসলেশন ও লকডাউন নীতি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। জমায়েত এড়িয়ে চলতে হবে।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে যা করা হলো তা রীতিমতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবশ্যই সকল
ধরণের জমায়েত কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে কারফিউ জারি করতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা ঘনবসতির দেশ।
সাত: দেশে দুর্যোগকালীন খাদ্য নিরাপত্তা ও সরবরাহ ব্যাবস্থা গড়ে
তুলতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে তার রহমতের চাদর দিয়ে আবৃত করে
নিন। আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।
লেখকঃ
ভাইস প্রিন্সিপাল,
শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা,
পাঠানটুলা, সিলেট।
ভাইস প্রিন্সিপাল,
শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা,
পাঠানটুলা, সিলেট।
0 coment rios:
You can comment here