।। যুবাইর আহমদ মাবরুর।।
সমস্ত পৃথিবী এক কঠিন সময় পার করছে। পৃথিবী
নামক ছোট্ট গ্রহটাই যেন অসুস্থ। এমনভাবে পুরো পৃথিবীব্যাপী কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল
কিনা জানা নেই। সময়ে সময়ে অনেক মহামারী পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করেছিল তবে তা সীমিত কিছু
এলাকায়। এই প্রথম দুনিয়ার সব প্রায় সবদেশে একই রোগ ছড়িয়ে পড়ল একই সাথে। প্রতিদিনই
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে সাথে ভারী হচ্ছে লাশের মিছিল। ছেলে তার মাকে রেখে পিতা-মাতা
তাদের সন্তান থেকে পালাচ্ছে, সবাই বাচঁতে চায়। মানুষ মানুষের থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়। দুনিয়াতে
এ যেন কেয়ামতেরই নমুনা।
ভাবনার পালে হাওয়া লাগিয়ে একটু চিন্তা করার সময় হয়েছে। তাবৎ
পৃথিবীর সকল কিছুই আজ অচল হয়ে পড়ছে। মহাব্যস্ত মানুষগুলো আজ স্বেচ্ছায় বন্দি হয়ে অলস
সময় কাটাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম মনে হয় সমস্ত পৃথিবী থমকে গেছে, আটকে গেছে সকল
ঘুর্ণায়মান চাকা। বিশ্বযুদ্ধের পরে সকল দেশই নিজেদের ঘুছিয়ে নিতে শুরু করেছিল এবং এগিয়ে
চলছিল দুরন্ত গতিতে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ সাধন চলছিল। সবকিছুতেই দম্ভের ছাপ
পড়তে শুরু করেছিল। আমরা পৃথিবী জয় করেছি, পৌঁছে গিয়েছি চাঁদে এবং অচিরেই
জয় করব মঙ্গলগ্রহ। এই যখন অবস্থা আমাদের তখন অদৃশ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক জীবাণু আমাদের
তটস্থ করে রেখেছে। আমরা ভয়ে জুবুতুব হয়ে নিজ ঘরে আটকে আছি। বিশ্বায়নের এই সময়ে আমরা
নিজেদের ঘুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি ঘরের কোনে। যা সত্যিই হাস্য রসের উদ্রেক করে! এত অহংকার
আমাদের, আজ সব ধূলিস্মাৎ!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এক ভাইরাস
দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে, আমি তোমাদের ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু লাগাম আমার হাতেই। আমাদের উপর
এতটাই রাগান্বিত হয়েছেন যে, আমাদের জন্য মসজিদ সমূহের দরজাও বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের থেকে
আর তিনি উপাসনাও আর চান না। জানি না কীভাবে দয়াময়ের ক্রোধ কমবে।
সমস্ত বিশ্ব যখন থমকে গেছে তখন সবচেয়ে
অসহায় হয়ে পড়েছে দিনমজুর মানুষরা। যারা দিন এনে দিন খায় তাদের অবস্থা চিন্তা করা আমাদের
অতিব প্রয়োজন। এ দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে তাদের দিকে দানের হাত প্রসারিত করা সবচেয়ে জরুরি
বিষয়। একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য আমরা যদি এই অসহায় মানুষদের দিকে আমাদের হাত
সম্প্রসারিত করি তবে অবশ্যই আল্লাহ পাকের দয়ার নজর পতিত হওয়া সম্ভব।
বিভিন্ন ধরনের নফল ইবাদাতের মধ্যে ইসলামে
দুঃস্থ, অসহায় মানুষদের সাহায্যের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে।
দান সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যধিক বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামে দানশীল ব্যক্তিকে অপরিসীম
মর্যাদার অধিকারী করা হয়েছে। বিশেষকরে বিভিন্ন দুর্যোগে বা বিপদে দান আল্লাহর সাহায্য
লাভে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই মহা দুর্যোগে দান সদকা আমাদের মুক্তি লাভের অন্যতম
মাধ্যম হতে পারে।
রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৌহিত্র ইমাম
হুসাইন রাদিআল্লাহুর ছেলে ইমাম জয়নুল আবেদীন রাদিআল্লাহু আনহু, রাতের অন্ধকারে
খাবার পৌঁছে দিতেন অনেক অনাহারীর ঘরে এবং তিনি বলতেন, রাতের অন্ধকারের
দান আল্লাহর ক্রোধ কমাতে সাহায্য করে। (তাহজিবুল কামাল, তারিখে দামেশক) অসহায় মানুষকে
দান করার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করা যাবে কিন্তু বিষয় আরেকটা তাই সেদিকে
আর আগালাম না।
বর্তমানে অনেকেই অসহায় মানুষের দিকে তাদের
সুনজর দিতে শুরু করেছেন এবং সহযোগিতা করছেনও অনেকে। আমাদের দানগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
ব্যার্থতায় পরিগনিত হবে বলে আমার মনে হয়। আমরা যতটা না দান করছি তার চেয়ে অনেক বেশি
লোক দেখানো শুরু করেছি। 'মানুষ দেখুক, জানুক আমি কত বড় দানশীল' এটা হয়ে গেছে
আমাদের দানের মূলনীতি। একমুটো দানে তাক করা থাকে ডজন খানেক ক্যামেরা। ক্যামেরার ফ্লাশের
ঝলকানিতে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সাহায্য নিতে আসা মানুষগুলো, যারা অভ্যস্ত
নয় এমন আলোর ঝলকে।
অনেকের তো আবার ছবি না তুললে ত্রাণ বিতরণ সফল হয় না। একটা ক্ষুদ্র সংগঠন থেকে শুরু করে সরকারি এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে যারাই দান করছেন তাদের নগন্য একটি অংশ ছাড়া সবাই-ই নিজেদের শো-অফ করতে ব্যস্ত। এখনো অনেকেই আছেন যারা নিরবে করে যাচ্ছেন খেদমাতে খালক্ব, তাদের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এই যে লোক দেখানো দান তা কখনোই আল্লাহর দরবারে পৌঁছাবে না। তিনি এ সকল দান ছুড়ে ফেলে দেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যাদের দান কবুল করেন তাদের সম্পর্কে বলেন,
অনেকের তো আবার ছবি না তুললে ত্রাণ বিতরণ সফল হয় না। একটা ক্ষুদ্র সংগঠন থেকে শুরু করে সরকারি এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে যারাই দান করছেন তাদের নগন্য একটি অংশ ছাড়া সবাই-ই নিজেদের শো-অফ করতে ব্যস্ত। এখনো অনেকেই আছেন যারা নিরবে করে যাচ্ছেন খেদমাতে খালক্ব, তাদের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এই যে লোক দেখানো দান তা কখনোই আল্লাহর দরবারে পৌঁছাবে না। তিনি এ সকল দান ছুড়ে ফেলে দেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যাদের দান কবুল করেন তাদের সম্পর্কে বলেন,
﴿إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا
نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا﴾
"তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের দান করি, তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান
চাই না এবং কোন কৃতজ্ঞতাও না"। (সুরা ইনসান: ৯)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সমস্ত মানব
জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তারই ইবাদাত করার জন্য। আল্লাহ পাক ব্যাতিত যে কোনো উপসনার
উপাস্য আর কেউ হতে পারে না। সব ইবাদাতের উদ্দীষ্ট হবেন আল্লাহ; জনপ্রিয় হওয়ার
লোভ কিংবা দানবীর খ্যাতি পাওয়া নয়। লোক দেখানো ইবাদাত খুবই বড় ধরনের গুনাহ। এমন
কি হাদিস শরিফে রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের ইবাদাত কে 'ছোট শিরক' বলেছেন এবং
আমাদের জন্য ভয়ও করেছেন যে আমরা এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়ে যাব। (ইবনে মাজাহ)। সত্যি সত্যিই আমরা আজ খুব গভীর ভাবেই
এ কাজে ডুবে গেছি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
লৌকিকতাহীন ইবাদাত ছাড়া বাকী সবকিছুই পরিত্যাজ্য। ইখলাসের স্বরূপ বিষয়ে ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ'র কথা আমার
সবচেয়ে সহজবোধ্য এবং তাৎপর্যবহ মনে হয়েছে। তিনি বলেছেন, "ইখলাস হলো
ইবাদাতের দ্বারা একমাত্র এক আল্লাহর উদ্দেশ্য নেয়া"। (মাদারেজুস সালেকীন)
আল্লাহ পাক আমাদের তাঁর বান্দেগী করার তাওফিক দিন রিয়ামুক্ত
ভাবে, একনিষ্ঠ হৃদয়ে; যার মধ্যে থাকবে না কোন লৌকিকতার
ছাপ। মানুষের মুখের হাসি আনন্দের খোড়াক হোক আমাদের সবার মনের।
লেখক:
লেখক:
শিক্ষার্থী,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়,
সিলেট।
ইমেইল:
jubairahmedmabrur@gmail.com
jubairahmedmabrur@gmail.com
0 coment rios:
You can comment here