সাঈদ
চৌধুরী
সিলেটের
বরেণ্য ব্যক্তিত্ব বোরহান উদ্দিন খান ছিলেন একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক ও লড়াকু
কলামিস্ট। সিলেট প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সিলেটের সাংবাদিক সমাজের
সত্যিকারের অভিভাবক। আমাদের সাংবাদিকতার অক্লান্ত সেনাপতি। নীতি-আদর্শের দিক থেকে
এমন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ সারা দেশেই বিরল। এই প্রজন্মের জন্য সাংবাদিকতাকে
পেশা হিসেবে তিলে তিলে গড়ে তুলতে প্রাণপাত করেছেন। তাঁর সঙ্গে যারা কাজ করেছেন, তারা কাছে থেকে দেখেছেন সরকারি
নিষেধাজ্ঞা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার উঁচু দেয়াল ডিঙিয়ে কীভাবে সত্য তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। তিনি ছিলেন
স্বভাবজাত লেখক। জাতীয় অনেক বিষয়ে লিখতেন অবলীলায়, নিসংকোচে ও নির্ভয়ে। তাঁর সাহসী কলাম ‘হিং টিং ছট’ সর্বাধিক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। আজো অসংখ্য পাঠকের ঘরে ঘরে পত্রিকার এই
পাতাগুলি সংরক্ষিত আছে।
বরেণ্য
সাংবাদিক ও কলামিস্ট বোরহান উদ্দিন খান সিলেটের সাংবাদিকতাকে আমূল বদলে দিয়ে
ছিলেন। গণমাধ্যমের এথিক্স বা নৈতিকতার ব্যাপারে ছিলেন সোচ্চার। সংবাদ কর্মিদের
মধ্যে নৈতিকতা বিকাশে সক্রিয় ছিলেন। এথিক্স মেনে চলতেই হবে, আপোসহীন ভাবে। এমন দৃঢ়তা নিয়ে
কাজ করতেন প্রবাদ প্রতিম এই সাংবাদিক। তবে সাংবাদিক সমাজকে বিচ্চিন্ন প্রজাতি
হিসেবে কিংবা গণমানুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর প্রয়াস অপছন্দ করতেন। আর ‘মাথামোটা’ সাংবাদিকতার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন
তিনি। সিলেটে ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেন এমন একজন সাংবাদিকের ব্যাপারে প্রসঙ্গক্রমে
আলাপকালে একদিন বলেছিলেন, সততা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও 'আমি কী হনু রে’ মানসিকতার জন্য এরা সমাজকে বেশিকিছু দিতে পারেনা। সময়ের ব্যবধানে তাঁর কথাটি
যথার্থ বলেই প্রমাণিত হয়েছে।
বোরহান
উদ্দিন খান সিলেটের সাংবাদিকদের ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। এতে তার বিশাল
অর্জনটা হচ্ছে ‘সাহস’। সিলেটের সাহসী
সাংবাদিকতার ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার জন্য আমরণ সাধনা করে গেছেন। গত চল্লিশ বছর
সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা সকলেই বোরহান উদ্দিন খানকে সমীহ করেছেন। তারা জানতেন খান সাহেব জীবন
বাজী রেখে অসীম সাহসীকতার সাথে সাংবাদিকতা করেন। দলমত নির্বিশেষে মানুষের কল্যাণে
কাজ করতেন। ব্যক্তিগত আবদার নিয়ে কখনো প্রশাসনের কাছে যাননি। আর্থিক সুবিধা বলে
কোন জিনিস তার ডিকশনারিতে ছিলনা। তিনি ছিলেন সৎ সাংবাদিকতার প্রতিকৃত।
বোরহান
উদ্দিন খান গণমুখী সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করতেন। তিনি মনে করতেন, দেশের মানুষের চেতনা বিশ্বাস ও
ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে গণমাধ্যমের নৈতিকতা নির্ভরশীল। তিনি সর্বদাই গণতান্ত্রিক
মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার পক্ষে ছিলেন। আর কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে
ছিলেন সোচ্চার।
আশির
দশকে যখন জাতীয় দৈনিকে কাজ শুরু করি, তখন আমি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় ক্লাস নাইনের ছাত্র। একজন তরুণ ও
উদ্যমী সংবাদকর্মী হিসেবে তিনি আমাকে অনেক প্রেরণা সঞ্চার করেছেন। আমাকে
প্রেসক্লাবে যুক্ত করেছেন। নির্বাহী কমিটিতে নির্বাচিত করেছেন। প্রায় প্রতিদিন
একবার আমরা একত্রে মিলিত হতাম। তিনি খুব বন্ধুবৎসল ছিলেন। আমি তাকে যথাযথ সম্মান
করতাম। তবে তাঁর স্নেহের মাঝে কখনো গুরু শিষ্যের আচরণ পরিলক্ষিত হয়নি। তাঁর সঙ্গে
আমার সম্পর্ক শুরু হয় সেনাপতি ও সৈনিকের এবং সময়ের ব্যবধানে ফ্যামেলি মেম্বার।
তিনি প্রকৃত অর্থেই আমার পারিবারিক আপনজন ছিলেন।
তরুণ
সংবাদ কর্মিদের প্রেস রিলিজ নির্ভর সাংবাদিকতা ও মুরগি চুরির খবর ছাপতে নিরুৎসাহিত
করতেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য আমাদেরে উৎসাহ দিতেন। তাঁর মাঝে সব সময় জানতে
চাওয়ার প্রবণতা ছিল। আমাদের প্রতিটি সংবাদ বিশেষ করে সরেজমিন প্রতিবেদন সমূহ জানতে
আগ্রহী ছিলেন। তাঁর ভালবাসা আমাদের মত তরুণদের প্রাণিত ও আপ্লুত করেছে। আমার আলিম
পরীক্ষার সময় এক সপ্তাহ দেখা করা হয়নি। একদিন সকালে তিনি খবর পাঠালে আমি দ্রুত চলে
যাই কুমার পাড়ায় তাঁর মাটির কুটিরে। আমাকে বুকে নিয়ে অনেক্ষণ ধরে রেখেছিলেন। এরপর
থেকে আমি আর তাঁকে ভুলিনি।
নির্ভীক
সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন খান নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ
ঘটনা প্রবাহ আমাদের বলতেন। প্রখর মেধা ও স্মরণ শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। ঘটনা
প্রবাহ বর্ণনার মধ্যে তাঁর একটা আর্ট ছিল। সন-কাল এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো
নির্ভুলভাবে উল্লেখ করেন। মনে হত আজকে সংঘটিত একটা বিষয় উপস্থাপন করছেন, যেখানে তিনি মধ্যমনি ছিলেন।
ঘটনার পরস্পরা কিছুটা বিশ্লেষন মূলক এবং নিখুত ভাবে উপস্থাপন করতেন। মন্ত্রমুগ্ধের
মতো আমরা তার কথা শুনেছি। কখনো বিরক্তির কারণ হয়নি।
বোরহান
উদ্দিন খান আলোকিত জীবনের অনুপ্রেরনা জাগাতেন। তিনি বলতেন সাংবাদিকতা অনেক কঠিন
এবং সম্মানের কাজ। তবে পদে পদে জীবনের ঝুঁকি আছে। সাংবাদিকতা ও নিজের জীবন- এই
দুটিকে সূক্ষ্ম সুতোর ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হয়্। একজন সাংবাদিককে প্রাপ্ত
তথ্যাবলির সত্যতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে হয়। কী সমর্থন করবেন, কী বিরোধিতা করবেন তা যেন
সম্পর্ক কিংবা স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বোরহান
উদ্দিন খান সৎ সাংবাদিকতার জন্য সংবাদ কর্মিকে আমলাদের স্নেহভাজন না হবার পরামর্শ
দিতেন। প্রশাসনের দালালি থেকে দূরে থাকার জন্য এটা ছিল খুবই সহায়ক। তিনি সব সময়
বলতেন, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণ
নৈতিকতা বর্জিত আচরণ করলে সাংবাদিক হিসেবে তা উন্মোচন করতে হবে। যদি সংবাদপত্র তা
উন্মোচন না করে, তাহলে এই অনৈতিক আচরণই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তখন সংবাদপত্র হবে এই
অনৈতিকতার সহযোগী। অনৈতিক কাজ বোঝার মতো শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সাংবাদিকের থাকতে হবে।
তবে
তিনি সতর্ক করে বলতেন, ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায় বিশেষ সম্পর্কে তাদের বর্ণ, গোত্র, জাতীয়তা, ধর্ম অথবা আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে
অবজ্ঞা বা মর্যাদা হানিকর বিষয় প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন ব্যক্তি, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, কোন জনগোষ্ঠী বা বিশেষ শ্রেণির
মানুষ সম্পর্কে তাদের স্বার্থ ও সুনামের ক্ষতিকর কোনো কিছু প্রকাশ করে থাকলে পক্ষপাতহীনতা ও
সততার সাথে সাংবাদিকের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত সঠিক এবং সংগত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার সুযোগ প্রদান এবং তা
গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করতে হবে। এভাবে নবীনদের সাংবাদিকতার এথিক্স মানতে উৎসাহিত
করতেন। একেবারে আপন করে নিয়ে তাদের জানতে চাওয়ার তৃষ্ণা তিনি অকাতরে মিটিয়েছেন।
একবার
সিলেটের সংবাদপত্র হকার সমিতির সেক্রেটারি ইসহাক কাজলকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। ইসহাক
কাজল তখনো লেখক হিসেবে খুব পরিচিত নন। মাঝে মাঝে চা শ্রমিকদের নিয়ে চিটিপত্র কলামে
লিখতেন। বোরহান উদ্দিন খান তার জন্য থানায় ছুটে গেলেন, এরপর ডিসি অফিসে। তিনি সেদিন জেলা প্রশাসককে বলেছিলেন, বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত
তথ্য কোনোরূপ শাস্তির ঝুঁকি ছাড়াই জনস্বার্থে প্রকাশ করা যেতে পারে। এ ধরনের সংবাদ
যদি সৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে থাকে এবং প্রাপ্ত তথ্য যদি যৌক্তিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য
বিবেচিত হয়, তবে প্রতিকূল পরিণতি থেকে
সাংবাদিককে রেহাই দিতে হবে। তার কথায় সেদিন জেলা প্রশাসক ইসহাক কাজলকে মুক্তি দিতে
বাধ্য হয়েছিলেন।
বোরহান
উদ্দিন খান চার দশক ধরে সিলেটের সাংবাদিকতা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের
মাঝে ক্যাম্পেইন জার্নালিজম এবং একটিভিস্ট জার্নালিজম প্রবর্তন করেছিলেন তিনি। গণমানুষের
আশা-আকাঙ্খা এবং হতাশা-বেদনাকে সহজ-সরল অথচ বলিষ্ঠ ভাষায় তুলে ধরার যাদুকরী
ক্ষমতা ছিল তার মধ্যে।
ষাটের
দশক থেকে বৃহত্তর সিলেটের সাংবাদিকতার জগতে যে কজন মহৎ প্রাণ মানুষের সন্ধান
পাওয়া যায় এরমধ্যে বোরহান উদ্দিন খান অন্যতম। অকুতোভয় সম্পাদক আমিনুর রশীদ
চৌধুরীর মত তিনিও কারো তোষামোদি আর কারো প্রতি বিরাগ ভাজন হয়ে লেখেননি। তাঁর কলম
চলেছে অবিরাম সত্য সুন্দরের পক্ষে আর অন্যায় ও অবিচারের বিপক্ষে। এতে কারো মনে
আনন্দ এসেছে আবার কারো বিরাগ ভাজন হয়েছেন। কিন্তু এতে তাঁর ভাবনার কিছুই ছিলনা ।
তিনি শুধু জাতির কল্যাণ আর মানবতার অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করেছেন।
ক্ষুরধার
লেখক বোরহান উদ্দিন খানের ৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ব্যুরো অব ন্যাশনাল
রিকন্ট্রাকশন অব পাকিস্থান কর্তৃক প্রকাশিত 'নেপথ্যে’, ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ’ইসলামী সংস্কৃতির কথা’, নিজস্ব উদ্যোগে প্রকাশিত ’কা-তব কান্তা’, কিংশুক মুদ্রায়ণ সিলেট কর্তৃক ’নিত্য দিনের প্যাচালী’ এবং লন্ডনের সংবাদ সংস্থা মিডিয়া মহল কর্তৃক ’স্বগত সংলাপ'। এ ছাড়াও একাধিক বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
বোরহান
উদ্দিন খান ১৯৩০ সালের ১৬ই নভেম্বর বালাগঞ্জ উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের মাধবপুর
গ্রামে মাতুতালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস সিলেট সদর উপজেলার সিলাম
ইউনিয়নের চর মোহাম্মদপুর গ্রামে! তিনি ঝিঙ্গাবাড়ী হাই মাদ্রাসা থেকে মেট্রিক ও
ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ১৯৬২ সালে মৌলভীবাজার পাবলিক
লাইব্রেরির কার্যনির্বাহী সম্পাদক কাম লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কর্ম জীবনের সূচনা হয়।
বোরহান
উদ্দিন খান দৈনিক আজাদ ও পিপিআই’র মৌলভীবাজার প্রতিনিধি হিসাবে ১৯৫৮ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি ছিলেন
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি
মৌলভীবাজার শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৬৯ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রামের সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসাবে
যুক্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক আজাদের
সিলেট জেলা প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং দৈনিকটির প্রকাশনা বন্ধ
হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে দৈনিক
জালালাবাদের উপদেষ্টা সম্পাদক, সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদের প্রধান সম্পাদক, দৈনিক সিলেট বানীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক ভিন্ন ধারার সম্পাদক ও সাপ্তাহিক চিন্তাধারার প্রধান সম্পাদক হিসাবে
দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭৭
সালে সিলেট প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভুমি সংগ্রহ ও গৃহ নির্মানে তাঁর ভূমিকা
অবিস্মরণীয়। তখন তিনি প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন।এছাড়াও তিনি প্রায় ১২ বছর প্রেস ক্লাবের সভাপতি
হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।দীর্ঘদিন তিনি বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি সিলেট শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি উপমহাদেশের
প্রাচীনতম গ্রন্থাগার কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি ও দেশের
শীর্ষস্থানীয় সাহিত্য সংগঠন ‘সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
খাজাঞ্চীবাড়ী ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বোর্ড অব ট্রাষ্টেব সদস্য ও মীরাবাজার মডেল
হাই স্কুলের সহ-সভাপতি হিসাবে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন।
সিলেটের
উন্নয়নেও রয়েছে বোরহান উদ্দিন খানের বিশাল ভূমিকা। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার
সফল কূটনীতিক হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, অর্থনৈতিক সংস্কারক ও সফল অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও
কিংবদন্তী রাজনীতিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সহ সিলেট অঞ্চলের
জনপ্রতিনিধিদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল,সিলেটের দাবি আদায়ের আন্দোলনে তিনি তা কাজে লাগিয়েছেন।
২০০৫
সালে বোরহান উদ্দিন খানকে আমরা লন্ডনে প্রবাসিদের পক্ষ থেকে নাগরিক সম্বর্ধনা
প্রদান করেছিলাম। ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সম্বর্ধনায় প্রধান অতিথি ছিলেন লন্ডনে
বালাদেশের হাইকমিশনার সিলেটের আরেক কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব সাবেক সচিব ও সফল
কূটনীতিক লেখক-কলামিস্ট এএইচ মোফাজ্জল করিম। অনুষ্ঠানে আগত গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তিদের আবেগঘন বক্তব্য থেকেই তাঁর অবদানের স্বীকৃতি মিলে। এই মহতি ব্যক্তিত্ব
বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার উদ্যোগে অনেক সম্মাননা ও পদকে ভূষিত হয়েছেন।
২০০৬
সালের ২ ফেবুযারী আমাদের আত্মার আত্মীয় প্রিয় সাংবাদিক ও কলামিস্ট বোরহান উদ্দিন
খান না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাঁর মত প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের ইন্তেকালে সংবাদ
মাধ্যমের অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে, যা কোন কিছুর বিনিময়ে পরিমাপ যোগ্য নয়। তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর সিলেটের জনগনকে আপ্লুত ও বিপ্লবী হতে
সহায়তা করতো। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি আল্লাহ পাক যেন তাঁকে
জান্নাতবাসী করেন।
২০১৯
সালে সিলেট প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি বোরহান উদ্দিন খানের অবদানের স্বীকৃতি
স্বরুপ তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে কনফারেন্স হলের নামকরণ করা হয়েছে ’রোরহান উদ্দিন খান কনফারেন্স হল’। এজন্য প্রেসক্লাবের তৎকালীন
সৃজনশীল নেতৃত্ব সভাপতি ইকরামুল কবির ও সেক্রেটারি ইকবাল মাহমুদ সহ কার্যনির্বাহী
কমিটিকে অনেক ধন্যবাদ।
বোরহান
উদ্দিন খানের প্রিয় সহযোদ্ধাদের মধ্যে সৎ ও সাহসী কলম সৈনিক হারুনুজ্জামান চৌধুরী, নির্ভিক সাংবাদিক আব্দুল মালিক
চৌধুরী, লেখক-সম্পাদক
মুক্তাবিস-উন-নুর, সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক আব্দুল হামিদ মানিক, গবেষক-সম্পাদক ফয়জুর রহমান লেখালেখিতে এখনো সরব আছেন। তাঁদের কাছ থেকে
বোরহান উদ্দিন খান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ মূলক লেখা সংগ্রহ করে একটি বিশেষ প্রকাশনা
বের করা এখন সময়ে দাবি।
লেখকঃ লন্ডন প্রবাসী, বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট
0 coment rios:
You can comment here