Saturday, April 4, 2020

শবে বরাত বিষয়ে কুরআন-হাদীসে কী আছে আর কী নাই


।। ইমদাদুল হক যুবায়ের।।

মোরা মহা পাপি তাই চাহি মাপি, কসুর মোদের করিও মাপ,
এই ধরণীতে আর আখেরাতে দিয়োনাগো প্রভু মনস্তাপ।
নেইকো সাহস খোদার আরশ চুমিয়া করিবো পুণ্য পণ,
জীবনের শেষে ভক্তের বেশে পারি যেন করিতে মনোরঞ্জন।  
-অধ্যাপক আব্দুস সালাম

রহমত বরকত নাজাতের মাস মাহে রামাদ্বান। আর রামাদ্বানের পূর্বের মাস তথা রামাদ্বানের প্রস্তুতির মাস শা’বান । এ মাসের একটি বিশেষ রাত হলো শবে বরাত। আমরা বাংলায় অনেক সময় ভাগ্য রজনী” বলে থাকি। কিছু হাদীস প্রচলিত আছে যে, এ রাত্রিতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত-মওত ও রিযক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়।

মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলোর সনদ অত্যন্ত দুর্বল অথবা জাল ও বানোয়াট। এ অর্থে কোনো সহীহ, হাসান বা কোনো গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয় নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।” (আল কুরআন, সূরা দুখান, আয়াত ৩-৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাবিয়ী ইকরিমাহ, বলেন, এখানে মুবারক রজনী’ বলতে মধ্য শাবানের’ রাতকে বুঝানো হয়েছে। তার মতে, এ রাতে পুরো বছরের সকল  বিষয়ে ফয়সালা করা হয়। কিন্তু অন্যান্য সাহাবী-তাবিয়ী বলেছেন যে, এখানে লাইলাতুম মুবারাকা” বলতে লাইলাতুল কদরকে বুঝানো হয়েছে। তবে মুফাসসিরীনে কেরামগণ ইকরিমার মতকে বাতিল বলেছেন এবং অন্যান্য সাহাবী-তাবিয়ীর মত গ্রহণ করেছেন।
শবে বরাতের ফযীলত প্রমাণিত। তবে এ আয়াতে শবে বরাতের কথা বলা হয় নি। কারণ আল্লাহ কুরআনে সুস্পষ্ট বলেছেন যে, তিনি রামাদানে কুরআন নাযিল করেছেন। কাজেই বিভিন্ন উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে শবে বরাতে কুরআন নাযিলের দাবি করা ভিত্তিহীন ও অর্থহীন। আল্লাহ কুরআন নাযিলের রাতকে “লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনী বলে অভিহিত করেছেন। অন্যত্র এই রাত্রিকেই লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন। এ মহিমান্বিত ও বরকতম রাত বা লাইলাতুল কদরেই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।

হাদীসে এবং সাহাবী-তাবিয়ীদের যুগে লাইলাতুল বারাআত” পরিভাষাটি ছিল না। হাদীসে এ রাতটিকে লাইলাতু নিসফি শাবান” বা মধ্য শাবানের রাতবলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
“আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।
(ইবনু মাজাহ, আস- সুনান, খণ্ড-১, পৃ. ৪৪৫; বাযযার, আল-মুসনাদ, খণ্ড-১, পৃ. ১৫৭, ২০৭; আহমদ ইবনু হাম্বল, আল-মুসনাদ, খণ্ড-২, পৃ. ১৭৬; ইবনু আবি আসিম, আস-সুন্নাহ, পৃ. ২২৩-২২৪; ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ, খণ্ড-১২, পৃ. ৪৮১; তাবরানী, আল-মুজাম আল-কাবীর, খণ্ড-২০, পৃ. ১০৮, , খণ্ড-২২, পৃ. ২২৩; আল-মুজাম আল-আওসাতখণ্ড-৭, পৃ. ৬৮; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃ. ৩৮১; ইবনু খুযায়মা, কিতাবুত তাওহীদ, খণ্ড-১, পৃ. ৩২৫-৩২৬)

উপরের হাদীসটি ৮ জন সাহাবীর সূত্রে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত। শবে বরাত বিষয়ে এটিই একমাত্র সহীহ হাদীস। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ রাতটি ফযীলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। আর ক্ষমা লাভের শর্ত হলো শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হওয়া।

এ দুটি বিষয় থেকে যে ব্যক্তি মুক্ত হতে পারবেন তিনি কোনোরূপ অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। আর যদি এ দুটি বিষয় থেকে মুক্ত হতে না  পারেন তবে কোনো আমলেই কোনো কাজ হবে না। কারণ ক্ষমার শর্ত পূরণ হলো না। দুঃখজনক হলো, আমরা শবে বরাত উপলক্ষ্যে অনেক কিছুই করি, তবে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ দুটি শর্ত পূরণের চেষ্টা খুব কম মানুষই করেন।

শিরকের ভয়াবহতা আমরা জানি। আরেকটি ভয়ঙ্কর পাপ হিংসা বিদ্বেষ। মহাপাপ হওয়া ছাড়াও এ পাপের দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

প্রথমত, হিংসা বিদ্বেষ এমন একটি পাপ যা অন্যান্য নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, আগুন যেমন খড়কুটো ও খড়ি পুড়িয়ে ফেলে হিংসাও তেমনি মানুষের নেক আমল পুড়িয়ে ফেলে।

দ্বিতীয়ত, এটা এমন একটা পাপ যে হিংসা বিদ্বেষকারীকে তার হিংসা করাটা আল্লাহর সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করে দেয়। উপরের হাদীস থেকে আমরা তা জেনেছি। এ বিষয়ে অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন:
تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ يَوْمَ الاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ إِلاَّ عَبْدًا بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ اتْرُكُوا أَوْ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا
মানুষদের আমল প্রতি সপ্তাহে দুবার পেশ করা হয়: প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। তখন সকল মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়, কেবলমাত্র যে বান্দার সাথে তার ভাইয়ের বিদ্বেষ-শত্রুতা আছে সে ব্যক্তি বাদে। বলে দেওয়া হয়, এরা যতক্ষণ না ফিরে আসে ততক্ষণ এদেরকে বাদ দাও।” (মুসলিম, আস-সহীহ, খণ্ড-৪, পৃ১৯৮৮)

হিংসা বিদ্বেষের ভয়ঙ্করতম রূপ ধর্মীয় মতভেদগত বিদ্বেষ। খুটিনাটি মতভেদ নিয়ে শত্রুতা করা এবং মতভেদকে দলভেদ বানিয়ে দেওয়া ইহূদী-খৃস্টান ও অন্যান্য জাতির ধ্বংসের অন্যতম কারণ।
তাই আমরা সবাই আল্লাহর দরবারে বারবার প্রার্থনা করে নিজেদের অন্তরগুলোকে সকল হিংসা, বিদ্বেষ ও অহংবোধ থেকে পবিত্র করি। আমরা শবে বরাত উপলক্ষ্যে সকল প্রকার শিরক, হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে তাওবা করি ও হৃদয়গুলোকে মুক্ত করি। জাগতিক কারণে বা ধর্মীয় মতভেদের কারণে যাদের প্রতি শত্রু বা বিদ্বেষ ছিল তাদের জন্য দুআ করি। যদি আমরা একাজগুলো করতে পারি তাহলে আমাদের কয়েকটি লাভ হবে।

প্রথমত, কঠিন পাপ থেকে তাওবা করা হলো।
দ্বিতীয়ত, শবে বরাতের সাধারাণ ক্ষমা লাভের সুযোগ হল।
তৃতীয়ত, যার মনে হিংসা, বিদ্বেষ বা অমঙ্গল কামনা নেই তিনি অল্প আমলেই জান্নাত লাভ করবেন এবং জান্নাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচার্য লাভ করবেন। 

হৃদয়কে শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করাই শবে বরাতের মূল কাজ। এ রাত্রিতে অন্য কোনো আমল করতে হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। তবে আমল করার মত কয়েকটি যয়ীফ হাদীস থেকে তিনটি আমল জানা যায়। আর তা হলো-

প্রথমতঃ কবর যিয়ারত করা;
দ্বিতীয়তঃ দুআ করা এবং
তৃতীয়তঃ নফল সালাত আদায় করা।

ইমাম তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ আয়েশা (রা)-এর সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, যাতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের গভীরে কাউকে না বলে একাকী বাকী গোরস্তানে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য দুআ করেছেন। তিরমিযী উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর উস্তাদ ইমাম বুখারী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন। (আহমদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ, খণ্ড-৬, পৃ. ২৩৮।)

ইমাম ইবনু মাজাহ আলী (রা)-এর সূত্রে একটি হাদীস সংকলন করেছেন, যাতে বলা হয়েছে:
إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ أَلا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ أَلا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلا كَذَا أَلا كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ.
যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাতে (সালাতে-দোয়ায়) দণ্ডায়মান থাক এবং দিবসে সিয়াম পালন কর। কারণ; ঐ দিন সুর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিয্ক অনুসন্ধানকারী আছে কি? আমি তাকে রিয্ক প্রদান করব। কোনো দুর্দাশাগ্রস্থ ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে মুক্ত করব। এভাবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে।” (ইবনু মাজাহ, আস- সুনান, খণ্ড-১, পৃ. ৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮)

এ হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী ইবনু আবী সাবরাহকে ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারী  ও অন্যান্য মুহাদ্দিস মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করেছেন। (ইবনু হাজার, তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃ. ৬৩২) এছাড়া এ অর্থে আরো কয়েকটি যযীফ সনদের হাদীস থেকে এ রাতে দুআ ও সালাত আদায়ের ফযীলত জানা যায়।

এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে।

প্রথমত, এ রাতের নামাযের কোনো সুনির্ধারিত নিয়ম হাদীসে বলা হয় নি। অমুক সূরা অতবার পড়ে অত রাকাত সালাত আদায় করলে অত সাওয়াব ইত্যাদি যা কিছু বলা হয় সবই জাল ও বানোয়াট কথা। মুমিন তার সুবিধামত যেকোনো সূরা দিয়ে যে কয় রাকআত সম্ভব সালাত আদায় করবে এবং দুআ করবে।

দ্বিতীয়ত, যিয়ারত, দুআ ও সালাত সবই একাকী আদায় করাই সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবীগণ কেউ কখনোই এ রাতে মসজিদে সমবেত হন নি বা সমবেতভাবে কবর যিয়ারত করতে যান নি। সকল নফল নামায ও তাহাজ্জুদের মত এ রাতের নামাযও নিজের বাড়িতে পড়া সুন্নাত। হাদীস থেকে আমরা জানি যে, এতে বাড়িতে বরকত নাযিল হয়। এছাড়া এতে স্ত্রী ও সন্তানগণও উৎসাহিত হয়।

শবে বরাত হলো ইবাদত বন্দেগি ও দুআ-ক্রন্দনের রাত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা একে খাওয়া-দাওয়া ও উৎসবের রাত বানিয়ে ফেলেছি। এ রাতে হালূয়া-রুটি বা ভাল খাবার খাওয়া ও এরূপ করার মধ্যে কোনোরূপ সাওয়াব আছে বলে কল্পনা করা ভিত্তিহীন কুসংস্কার ছাড়া কিছুই নয়। এ রাতে আলোকসজ্জা, কবর বা গোরস্তানে আলোকসজ্জা, বাজি ফোটানো ইত্যাদি আরো গুরুতর অন্যায়। এগুলো মূলত এ রাতের ইবাদত ও আন্তরিকতা নষ্ট করে এবং মুমিনকে বাজে কাজে ব্যস্ত করে।

ফরয ও নফলের সীমারেখা অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে শবে বরাতে রাত্রিতে কম বেশি কিছু নামায পড়েন, কিন্তু সকালে ফযরের নামায জামাতে পড়েন না বা মোটেই পড়ছেন না। এর চেয়ে কঠিন আত্মপ্রবঞ্চনা আর কিছুই হতে পারে না। শবে বরাত বা অনুরূপ রাত বা দিনগুলোতে আমরা যা কিছু করি না কেন সবই নফল ইবাদত।

সারা জীবনের সকল নফল ইবাদতও একটি ফরয ইবাদতের সমান হতে পারে না। জীবনে যদি কেউ শবে বরাতের নামও না শুনে, কিন্তু ফরয-ওয়াজিব ইবাদত আদায় করে যায় তবে তার নাজাতের আশা করা যায়। আর যদি জীবনে ১০০টি শবে বরাত পরিপূর্ণ আবেগ নিয়ে ইবাদত করে কাটায়, কিন্তু একটি ফরয ইবাদত ছেড়ে দেয় তবে তার নাজাতের আশা থাকে না। আল্লাহর ফরয নির্দেশ অমান্য করে এক রাতে কাঁদা-কাটা করে তাঁর কাছ থেকে ভালো ভাগ্য লিখিয়ে নেওয়ার মত চিন্তা হাসির খোরাক ছাড়া আর কি হতে পারে।

ফরয ইলম, আকীদা, নামায, যাকাত, রোযা, হজ্ব, হালাল উপার্জন, সাংসারিক দায়িত্ব, পিতা-মাতা, সন্তান ও স্ত্রীর দায়িত্ব, সামাজিক দায়িত্ব, সৎকাজে আদেশ অসৎকাজ থেকে নিষেধ ইত্যাদি সকল ফরয ইবাদত, যার ক্ষেত্রে যতটুকু প্রযোজ্য, পালন না-করে শবে বরাতের সারারাত নফল ইবাদত করা হলো দেহের ফরয সতর আবৃত না করে উলঙ্গ অবস্থায় টুপি-পাগড়ি পরে ফযীলত লাভের চেষ্টার মতই অবান্তর ও বাতিল কর্ম।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, মুমিন যদি একটু আগ্রহী হন তবে প্রতি রাতই তার জন্য শবে বরাত। বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ইমাম সংকলিত সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
يَنْزِلُ اللَّهُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا كُلَّ لَيْلَةٍ حِينَ يَمْضِي ثُلُثُ اللَّيْلِ الأَوَّلُ فَيَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَنَا الْمَلِكُ مَنْ ذَا الَّذِي يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ ذَا الَّذِي يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ ذَا الَّذِي يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ فَلا يَزَالُ كَذَلِكَ حَتَّى يُضِيءَ الْفَجْرُ
প্রতি রাতে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে বলেন, আমিই রাজাধিরাজ, আমিই রাজাধিরাজ। আমাকে ডাকার কেউ আছ কি? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে প্রদান করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। প্রভাতের উন্মেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে তিনি বলতে থাকেন।” (মুসলিম, আস-সহীহ, খণ্ড-১, পৃ. ৫২২)

অন্যান্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, মধ্যরাতের পরে এবং বিশেষত রাতের দু-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পরে তাওবা, দুআ কবুল ও হাজত মেটানোর জন্য আল্লাহ বিশেষ সুযোগ দেন।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, শবে বরাতের যে ফযীলত ও সুযোগ, তা মূলত প্রতি রাতেই মহান আল্লাহ সকল মুমিনকে প্রদান করেন। শবে বরাত বিষয়ক যয়ীফ হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায় যে, এ সুযোগ সন্ধ্যা থেকেই। আর উপরের সহীহ হাদীসগুলো থেকে জানা যায় যে, প্রতি রাতেই এ সুযোগ শুরু হয় রাতের এক তৃতীয়াংশ- অর্থাৎ ৩ বা ৪ ঘন্টা রাত অতিবাহিত হওয়ার পরে, রাত ১০ বা ১১ টা থেকে। 

কাজেই মুমিনের উচিত শবে বরাতের আবেগ নিয়ে প্রতি রাতেই সম্ভব হলে শেষ রাত্রে, না হলে ঘুমানোর আগে রাত ১০ বা ১১ টার দিকে দুচার রাকআত সালাত আদায় করে মহান আল্লাহর দরবারে নিজের সকল কষ্ট, হাজত, প্রয়োজন ও অসুবিধা জানিয়ে দুআ করা, নিজের যা কিছু প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং সকল পাপ-অন্যায় থেকে ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাহ পদ্ধতিতে সঠিক আমল করে তার সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও গবেষক
শিক্ষক, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট।
মোবাইল: 01712374650
ইমেইল: zubairjcpsc@gmail.com
Website: www.bdzubair.info
facebook: Imdadul Haque Zubair
Facebook Page:  ইমদাদুল হক যুবায়ের


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here