।। মাহফুজ আল মাদানী।।
বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে মাহে রামাদ্বানের সুসংবাদ নিয়ে
শা’বান মাস
এসেছে। এটি গুরুত্ববহ একটি মাস। এই মাসকে বরকতময় করার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে
প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোআ করেছেন, প্রার্থনা
করেছেন।
এই মাসের একটি গুরুত্ববহ রাত হলো ১৪ই দিবাগত রাত। যাকে
হাদীস শরীফের ভাষায় লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান বলে আলোকপাত করা হয়েছে। যা নিয়ে
আমাদের সমাজে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি দুটোই করা হচ্ছে। যা আসলে অনুচিত।
লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান বা ১৪ই দিবাগত রাতে নফল নামাজ আদায় করা,
মহান আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়া, রিযিক চাওয়া, ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ চাওয়া
অনেকগুলো হাদীসের মাধ্যমে উল্লেখিত হয়েছে। যদিও অনেকে এগুলোর মধ্য হতে কয়েকটি
হাদীসকে দূর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তারপরও যেহেতু ইহা
আক্বীদা বা বিশ্বাস সম্পর্কিত কোনো বিষয় নয়, বরং আমল
সম্পর্কিত বিষয় এজন্য আমল করার স্বার্থে বা মানুষকে ইবাদতের দিকে আহবানের
স্বার্থে সঠিক দ্বীন বুঝিয়ে প্রজ্ঞা অবলম্বন করে দ্বীনের দিকে নিয়ে আসাই হবে
সর্বোত্তম কাজ।
মহান রাব্বুল আলামীন এ রাতে দুনিয়াবাসীর প্রতি রহমতের নজর দেন বা ফিরেন হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। শিরককারী এবং হিংসাকারী ছাড়া সবাইকে মহান আল্লাহ পাক তাঁর রহমত দ্বারা ক্ষমা প্রদান করেন।
মহান রাব্বুল আলামীন এ রাতে দুনিয়াবাসীর প্রতি রহমতের নজর দেন বা ফিরেন হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। শিরককারী এবং হিংসাকারী ছাড়া সবাইকে মহান আল্লাহ পাক তাঁর রহমত দ্বারা ক্ষমা প্রদান করেন।
এই হাদীসের বর্ণনাসূত্রকে হাসান হিসেবে হাদীস বিশারদগণ
উল্লেখ করেছেন। এই হাদীসের অনুরূপ আরো একটি হাদীসও বর্ণিত হয়েছে। যা ঐ রাতের
গুরুত্বকে আলাদাভাবে প্রকাশ করে। তাই শবে বরাতের গ্রহণযোগ্যতা তুচ্ছ করে দেখার কোনো
সুযোগ নেই। আরো বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, এই রাতে মহান আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।
এই রাতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে
কবর যিয়ারতের বর্ণনা ও মহান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাঁর অধিক সংখ্যক বান্দাদেরকে
ক্ষমা করে দেয়ার কথা আলোচিত হয়েছে। হাদীস শরীফের ভাষ্যানুযায়ী, “হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম -কে হারিয়ে ফেললাম (বিছানায় পেলাম না)। আমি (তাঁর সন্ধানে) বের হলাম।
এসে দেখলাম তিনি বাকী কবরস্থানে আছেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি ভয় করছ আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল তোমার প্রতি কোনো অবিচার করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অনুমান করলাম আপনি আপনার অন্য কোনো বিবির নিকটে
গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা মধ্য শা’বানে (১৫ তারিখের রাতে) দুনিয়ার কাছের আকাশে অবতীর্ণ হন। তারপর কালব
গোত্রের বকরী পালের লোমের চেয়েও বেশী সংখ্যক লোককে তিনি মাফ করে দেন। -(জামে’ আত তিরমিজি ৭৩৯, ইবনু মাজাহ ১৩৮৯)। হাদীসটিকে অনেকে দূর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই
হাদীসের মাধ্যমেও শবে বরাতের রাতকে বিশেষভাবে বিশেষায়িত করা হয়েছে।
অন্য একটি হাদীসেও হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা পাওয়া যায়, যে হাদীসটি এই হাদীসের
প্রায় অনুরূপ। সামান্য কিছু অংশ পরিবর্তিত। হাদীসের ভাষায়, “হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, এক রাতে
আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে (বিছানায়)
না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি
জান্নাতুল বাকিতে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি
বলেন, হে আয়িশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়িশা
(রাঃ) বলেন, তা নয়, বরং আমি ভাবলাম যে,
আপনি হয়তো আপনার কোনো স্ত্রীর কাছে গেছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং
কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। -(মুসলিম ৯৭৩-৭৪, তিরমিযী ৭৩৯, নাসায়ী ২০৩৭, আহমাদ ২৫৪৮৭। তাহক্বীক্ব আলবানী: হাদীসটি দূর্বল।
অত্র হাদীসে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমা
করার বর্ণনা দিয়ে শবে বরাতের আলাদা মহিমা প্রকাশ করেছেন।
শবে বরাত রাতে মহান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক আদম সন্তানের
পরবর্তী বছরে যারা ইহকাল ত্যাগ করবেন এবং যাদের জন্ম হবে তাদের তালিকা করা হয়।
আমলগুলো আল্লাহর কাছে উত্থাপিত করা হয়। বান্দাদের রিযিক বরাদ্ধ করা হয। যা হাদীস
শরীফে উল্লেখিত হয়েছে। যদিও অনেকে হাদীসটি দূর্বল বর্ণনার মাধ্যমে বর্ণিত হওয়ার
কথা আলোকপাত করেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে, “হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে
বললেন: তুমি কি জানো এ রাতে অর্থাৎ শা‘বান মাসের পনের তারিখে
কি ঘটে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল!
আমি তো জানি না। আপনিই বলে দিন এ রাতে কি ঘটে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বনী আদমের প্রতিটি
লোক যারা এ বছর জন্মগ্রহণ করবে এ রাতে তাদের নাম লেখা হয়। আদাম সন্তানের যারা এ
বছর মৃত্যুবরণ করবে এ রাতে তা ঠিক করা হয়। এ রাতে বান্দাদের ‘আমল উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। এ রাতে বান্দাদের রিযিক্ব আসমান থেকে নাযিল
করা হয়। আয়িশা (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, হে
আল্লাহর রাসূল! কোনো লোকই কি আল্লাহর রহমত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না?
তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
ইরশাদ করলেন: হ্যাঁ! কোনো মানুষই আল্লাহর রহমত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে
না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বাক্যটি
তিনবার উচ্চারণ করলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) আবেদন করলেন, এমনকি আপনিও নয়? এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপন মাথায় হাত রেখে বললেন, আমিও
না। তবে, আল্লাহ তার রহমত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেবেন। এ
বাক্যটিও তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। -(মিশকাতুল মাসাবীহ ১৩০৫)।
লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানের রাতে নফল নামাজ আদায় এবং পরের দিন
রোযা রাখার কথাও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ পাক তারঁ বান্দাদেরকে ঐ রাতে আহবান
করতে থাকেন তাঁর কাছে চাওয়ার জন্য। তাই আমাদের উচিৎ মহান আল্লাহ পাকের কাছে
আমাদের চাওয়াগুলো উত্থাপন করা। এজন্য উচিৎ নিরিবিলিভাবে ঐ রাতে ইবাদত করা।
হাদীসে শরীফের এসেছে, হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: শা‘বান মাসের পনের তারিখ রাত হলে তোমরা সে রাত্রে সালাত আদায় কর ও দিনে রোযা রাখো। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা এ রাত্রে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং (দুনিয়াবাসীকে উদ্দেশ্য করে) বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। কোনো রিযিক্বপ্রার্থী আছে? আমি তাকে রিযিক্ব দান করব। কোনো বিপদগ্রস্থ কি আছে, আমি তাকে বিপদ মুক্ত করে দেব? এভাবে আল্লাহ মানুষের প্রতিটি দরকার ও প্রতিটি বিপদের নাম উল্লেখ করে তাঁর বান্দাদেরকে সকাল হওয়া পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন। -(মিশকাতুল মাসাবীহ ১৩০৮, ইবনু মাজাহ্ ১৩৮৮, আত্ তারগীব ৬২৩)। হাদীসটিকে অনেকে অধিক দূর্বল বলে অভিহিত করেছেন।
হাদীসে শরীফের এসেছে, হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: শা‘বান মাসের পনের তারিখ রাত হলে তোমরা সে রাত্রে সালাত আদায় কর ও দিনে রোযা রাখো। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা এ রাত্রে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং (দুনিয়াবাসীকে উদ্দেশ্য করে) বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। কোনো রিযিক্বপ্রার্থী আছে? আমি তাকে রিযিক্ব দান করব। কোনো বিপদগ্রস্থ কি আছে, আমি তাকে বিপদ মুক্ত করে দেব? এভাবে আল্লাহ মানুষের প্রতিটি দরকার ও প্রতিটি বিপদের নাম উল্লেখ করে তাঁর বান্দাদেরকে সকাল হওয়া পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন। -(মিশকাতুল মাসাবীহ ১৩০৮, ইবনু মাজাহ্ ১৩৮৮, আত্ তারগীব ৬২৩)। হাদীসটিকে অনেকে অধিক দূর্বল বলে অভিহিত করেছেন।
আমাদের সমাজে এ রাতকে কেন্দ্র করে আতশবাজিঁ, কবরে মোমবাতি জ্বালানো,
হৈ হুল্লোর করা, দলে দলে বিভক্ত হয়ে ইবাদত
করার রেওয়াজ রয়েছে। এ রাতকে ঘিরে ইসলাম ধর্ম অসমর্থিত কোন কাজ করা মোটেই সমীচীন
নয়। রাত জেগে ইবাদত করতে চাইলে একাকী নিরিবিলিভাবে নফল নামাজ আদায় করা, কবর যিয়ারত করা, নিজের জন্য আত্মীয় স্বজনের জন্য
এমনকি সমস্থ মুসলিম উম্মাহর জন্য দোআ করা দোষের কিছু নয়। বরং হাদীসের মাধ্যমে তা
করার সুযোগ প্রদান করেছে। এ রাতকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না, আবার কোন কিছু নাই বলেও উড়িয়ে দেয়া যাবে না।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, শাবানের ১৫ তারিখের পরে রামাদ্বানের পূর্ব
পর্যন্ত রোযা না রাখাই উত্তম। যা হাদীস শরীফের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে আলোকপাত করা
হয়েছে। হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন শাবান মাসের অর্ধেক বাকী থাকবে, তখন তোমরা রোযা
রাখবে না।” (তিরমিযী ৭৩৮,
হাসান সহীহ)।
মহান আল্লাহ পাক যেন সঠিকভাবে তাঁর বন্দেগী করার সুযোগ
আমাদের সবাইকে দান করেন।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
ইমেইলঃ mahfujnb@yahoo.com
0 coment rios:
You can comment here