Tuesday, April 7, 2020

পঞ্চাশে পা রাখলেন সুরসম্রাট মশিউর রহমান


।। সুলায়মান আল মাহমুদ।।

চারদিকে বাজছে যুদ্ধের দামামা। প্রতিদিন কারো না কারো শহীদ হবার খবর যেন নিত্য-নৈমত্যিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বাংলার আপামর জনতা সবাই যেন এক কাতারে। ১৯৭১ সালের মহান ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বীর বাঙ্গালী দেশকে শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল। এ থেকে ব্যাতিক্রম ছিলনা ফরিদপুর জেলার ফরিদাবাদ গ্রামও। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই ৭ এপ্রিল সেই জনপদে জন্মেছিলেন এক শিশু। মহান মুক্তিযুদ্ধে চলাকালে জন্ম তাই দেশপ্রেমটা ছিল সেই রকম। দেশের টানে আর বিশ্বাসের পথে পরিচালিত হওয়ার সুযোগই ছোট বেলা থেকে তাঁর জীবনে নিয়ে আসে আমুল পরিবর্তন।

সত্য পথকে আকড়ে ধরে আর বিশ্বাসের পথে অবিচল থেকে তিনি আজ এক গুনী শিল্পী সুরকার। যার কণ্ঠে আজ শত শত গান ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী বনি আদমকে তৃপ্তি দেয়। হ্যা এতক্ষণ দেশবরন্যে শিল্পী ও সুরকার মশিউর রহমান এর কথা বলেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেয়া মশিউর রহমানের ধারাজ সুর যেন বিশ্বাসের পক্ষে এক নতুন প্রেরণাফরিদাবাদের সেই মশিউর রহমান আজ শুধু ফরিদপুরের নয়, সারা বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্বে সবাই তাঁকে আজ এক নামে চিনে ও জানে
ভাবছেন ১৯৭১ থেকে ২০২০ জীবনের ৪৯ টি বসন্ত পেরিয়ে মশিউর রহমান আজ ৫০ বছরের একজন বয়স্ক ব্যাক্তি! না, তেমনটি নয় সেই মশিউর রহমান ৫০ বছরেও যেন চির তরুনের মত সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে ছুটে চলেছেন দেশ থেকে প্রবাসেও। যেখানে গিয়েছেন সেখানেই তুলে ধরেছেন অপসংস্কৃতির বিপরীতে আমাদের সমৃদ্ধ সুস্থ সংস্কৃতির ভান্ডারের কথা। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের এই যুগে আমাদের যুব সমাজ আজ নৈতিক অবক্ষয়ের দ্বারপ্রান্তে।

অপসংস্কৃতি আমাদেরকে ধ্বংস করে দিতে সুদুরপ্রসারী ষড়যন্ত্র করছে। এর বিপরীতে আমাদের প্রস্তুতি নিতান্তই কম। দেশবরন্যে শিল্পী, গীতিকার সুরকার মরহুম মতিউর রহমান মল্লিকের সংস্পর্শে এসে মশিউর রহমান দেশে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে শুরু করেছিলেন তার মঙ্গলিক মিশন। জীবনের ৪৯ বছরেও তিনি থেমে যান নি। চালিয়ে যাচ্ছেন সুস্থ ধারার সংস্কৃতির বিকাশের প্রানান্তকর চেষ্ঠা।

শিল্পী ও সুরকার মশিউর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার ফরিদাবাদ গ্রামের টেপাখোলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মো: মোস্তাফিজুর রহমান (ফরিদ) ও মাতার নাম মোছা: শামছুন্নাহার। বাবা মায়ের প্রচেষ্টা ও অনুপ্রেরণায় তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়ন কালে শিশু বয়সেই ইসলামী সংগীত চর্চা শুরু করেন। হাটি হাটি পা পা করে মশিউর রহমান বাংলাদেশের সবকটি টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট চ্যানেলে শুধু গানই করেন নি। প্রশিক্ষক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন

এছাড়া ইসলামী সংগীতের যে কোনো প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসনের অন্যতম প্রিয় মুখ হচ্ছেন শিল্পী মশিউর রহমান। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের গান ও সংগীত চর্চার পথকে এগিয়ে নিতে তিনি আজো ছুটে চলছেন এখান থেকে ওখানে। সংগীত জগতে কয়দিন কাজ করার সুবাদে মশিউর রহমান ভাইকে খুব কাছ থেকে দেখার, চেনার ও জানার সুযোগ হয়েছে।
আমার বিয়ের মেহেদী সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে মশিউর ভাইয়ের উপস্থিত ছিল চাঁদ হাতে পাওয়ার মত। ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে মশিউর রহমান ভাইয়ের মত গুণী শিল্পী ও সুরকার আরো বেশী হওয়া প্রয়োজন। আগামীর প্রজন্মকে সুস্থ সংস্কৃতিমুখী করতে মশিউর রহমান ভাইকে সঙ্গ দিতে সচেতন অভিভাবক ও শিল্পীদের এগিয়ে আসা আজ সময়ের অপরিহার্য দাবী।

পরিশেষে দোয়া করি আল্লাহ প্রিয় শিল্পী ও সুরকার মশিউর রহমান ভাইকে নেক হায়াত দান করেন। সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর মেধা ও কর্মপন্থা আরো বেশী অগ্রসর হোক।
লেখকঃ সাবেক সহকারী পরিচালক,
দিশারী শিল্পীগোষ্ঠী, সিলেট।


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here