Tuesday, April 28, 2020

তাহাজ্জুদ: আল্লাহকে খুশি করার প্রধান অবলম্বন

।। প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ মাকসুদুর রহমান।।

রামাদ্বান মাসকে ইবাদতের মওসুম বলা যায়। এটি এমন একটি মাস যে মাসে বান্দা অতিসহজে বিভিন্ন ফরজ ও নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে তাঁর গুণাহ মাফ করে নেওয়ার মোক্ষম সময়। আর তাহাজ্জুদ সালাত সকল নফল ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি নফল ইবাদত।

সালাত শব্দের অর্থ নামাজ। তাহাজ্জুদ (আরবি শব্দ: تهجد‎‎), এর দ্বারা রাতের নামাজ বুঝানো হয়েছে। তাহাজ্জুদ এর সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দিয়ে আরবি ভাষাবিদগণ বলেন,
﴿قضاء الليل، أو جزء منه ولو ساعة، في الصلاة وتلاوة القرآن وذكر الله، ونحو ذلك من العبادات, ولا يشترط أن يكون مستغرقًا لأكثر الليل . التهجد: هو القيام من النوم فهو صلاة الليل خاصة، وقيده بعضهم بكونه صلاة الليل بعد نوم
কিয়ামুল লাইল নামে সালাতুল তাহাজ্জুদকে বুঝানো হয়। ইসলামী শরীআতে ইহা একটি ঐচ্ছিক ইবাদত। এটা বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং তাঁর সাহাবাদের রাদিয়াল্লাহু আনহু এটা পালনে উৎসাহিত করতেন।

আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সালাতুল তাহাজ্জুদ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সালাতুল তাহাজ্জুদ সম্পর্কে আল-কুরআন
সালাতুল তাহাজ্জুদ এর গুরুত্ব সম্পর্কে আল-কুরআনে অসংখ্য আয়াত বিদ্যমান। এ বিষয়ে সুরা আল মুজাম্মিলে আল্লাহ তাআল ইরশাদ করেন,
﴿يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّل -قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا-نِصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا-أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا﴾
অর্থ: হে বস্ত্রাবৃত) রাত্রিতে দণ্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়েঅর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি এবং কুরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে। (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত: ১-৪) এছাড়া আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন,
 ﴿مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا﴾
অর্থ: “মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন। তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।” (সুরা ফাতাহ ৪৮:২৯) আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন,
﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا﴾
অর্থ: “রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন”। (সূরা ইসরা, আয়াত:৭৩) আল কুরআনে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা জন্যে তাকিদ এসেছে এভাবে- আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
﴿كَانُوا قَلِيلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ﴾
অর্থ: “তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত।” (সুরা আয যারিয়াত, আয়াত-১৭) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন,
﴿وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ﴾
অর্থ: “রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করত।” (সূরা আয যারিয়াত, আয়াত-১৮) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন,
"﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا﴾
 অর্থ: "অবশ্য রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা যিকির করা একেবারে যথার্থ কাজ। আল্লাহ তাআলা এ সময় ইবাদত খুশি হন।” (সূরা আল ইসরা, আয়াত-৭৯) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন,
﴿إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْءًا وَأَقْوَمُ قِيلًا﴾
অর্থ: “নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল।” (সুরা আল মুজাম্মিল, আয়াত-৭৩) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন,
﴿وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا﴾
অর্থ: “এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে।” (সুরা ফুরকান, আয়াত:৬৪) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন,
﴿الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنْفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ﴾
অর্থ: “তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত:১৭)

উপরোক্ত আয়াতে কারীমা প্রমাণ করে যে, তাহাজ্জুদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যার দ্বারা বান্দার অতি সহজে আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল করতে পারে।
সালাত তাহাজ্জুদ সম্পর্কে আল-হাদীস
তাহাজ্জুদ এর গুরুত্ব বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাহল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসংখ্য হাদীস পাওয়া যায়। যেমন-
﴿أبي هريرة رضي الله عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ) رواه البخاري  الصوم/1768) والله أعلم .
সালাতুল তাহাজ্জুদ এর গুরুত্ব সম্পর্কে নিচের হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য। যেমন-
﴿وروت السيدة عائشة -رضي الله عنها-  عن النبي صلى الله عليه وسلم: أنه "كَانَ يَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ تَصْنَعُ هَذَا يَا رَسُولَ اللهِ وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ؟ قَالَ: أَفَلَا أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا، فَلَمَّا كَثُرَ لَحْمُهُ صَلَّى جَالِسًا فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ قَامَ فَقَرَأَ ثُمَّ رَكَعَ" صلاة التهجد  تقرب العبد إلى ربه وإخلاصه ونيل الأج والثواب والحسنات وإجابة الدعاء، فالمسلم ترك واستغنى عن راحة النّوم إلى طلب الله تعالى والوقوف بين يديه عزّ وجل﴾
অন্য এক হাদীসে এসেছে-
﴿روت أُمُّ سَلَمَةَ رضي الله عنها فقالت: (اسْتَيْقَظَ النبي صلى الله عليه وسلم من اللَّيْلِ وهو يقول: لَا إِلَهَ إلا الله مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ من الْفِتْنَةِ؟ مَاذَا أُنْزِلَ من الْخَزَائِنِ؟ من يُوقِظُ صَوَاحِبَ الْحُجُرَاتِ؟ كَمْ من كَاسِيَةٍ في الدُّنْيَا  .
অন্য হাদীসে এসছে এভাবে-
﴿وحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْتَشِرِ ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، يَرْفَعُهُ ، قَالَ : سُئِلَ : أَيُّ الصَّلَاةِ أَفْضَلُ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ ؟ وَأَيُّ الصِّيَامِ أَفْضَلُ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ ؟ فَقَالَ : أَفْضَلُ الصَّلَاةِ ، بَعْدَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ ، الصَّلَاةُ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ ، وَأَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ ، صِيَامُ شَهْرِ اللَّهِ الْمُحَرَّمِ وحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ ، حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ ، عَنْ زَائِدَةَ ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ ، بِهَذَا الْإِسْنَادِ فِي ذِكْرِ الصِّيَامِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِثْلِهِ صحيح مسلم كِتَاب الصِّيَامِ  بَابُ فَضْلِ صَوْمِ الْمُحَرَّمِ  حديث رقم 2069
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
﴿عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((أفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل)؛ أخرجه مسلم.
 অর্থ: “ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।" (মুসলিম)
والسلام: ينزل ربنا تبارك وتعالى إلى السماء الدنيا كل ليلة حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول: من يدعوني فأستجيب له، من يسألني فأعطيه، من يستغفرني فأغفر له، حتى ينفجر الفجر متفق على صحته.
অর্থ: “আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন- কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব?” (বুখারি ও মুসলিম)
وسأل سعد بن هشام رحمه الله تعالى عائشة رضي الله عنها عن قِيَامِ الرسول عليه الصلاة والسلام فقالت: (أَلَس تَ تَقْرَأُ: يا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ؟ قلت: بَلَى، قالت: فإن اللَّهَ عز وجل افْتَرَضَ قِيَامَ اللَّيْلِ في أَوَّلِ هذه السُّورَةِ فَقَامَ نَبِيُّ الله صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ حَوْلًا وَأَمْسَكَ الله خَاتِمَتَهَا اثْنَيْ عَشَرَ شَهْرًا في السَّمَاءِ حتى أَنْزَلَ الله في آخِرِ هذه السُّورَةِ التَّخْفِيفَ فَصَارَ قِيَامُ اللَّيْلِ تَطَوُّعًا بَعْدَ فَرِيضَةٍ) رواه مسلم.

 وفي رواية لأبي داود والدارمي: (فَقَامَ أَصْحَابُ رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى انْتَفَخَتْ أَقْدَامُهُمْ وَحُبِسَ خَاتِمَتُهَا في السَّمَاءِ اثْنَيْ عَشَرَ شَهْرًا ثُمَّ نَزَلَ آخِرُهَا فَصَارَ قِيَامُ اللَّيْلِ تَطَوُّعًا بَعْدَ فَرِيضَةٍ.

 بيد أن قيام الليل وإن وُضع فرضه عن المسلمين؛ رحمة من الله تعالى بهم، وتخفيفا علىهم؛ لعجزهم وضعفهم؛ فإنه ظل فريضة على النبي عليه الصلاة والسلام؛ تعظيما لشأنه، وزيادة في رفعة درجاته، وتخصيصا له بفضائل الأعمال كما اختصه الله تعالى بأعلى المنازل والمقامات ؛ وفي سورة الإسراء خوطب النبي عليه الصلاة والسلام بالفرائض، ثم خُوطب عقبها بقيام الليل ﴿ وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ ﴾ [الإسراء:79] أي لأجلك، وهذا دليل اختصاص النبي عليه الصلاة والسلام بفرض قيام الليل دون أمته.

 والله تعالى لا يختار لخاتم رسله إلا ما هو أفضل وأكمل، ولا يفترض عليه إلا ما يقربه إليه، ولا سيما أن الله تعالى قد علَّلَ هذا الأمر لنبيه عليه الصلاة والسلام في فرض قيام الليل عليه بقوله سبحانه ﴿ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا ﴾ الإسراء :79.
উপরোক্ত হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে তাহাজ্জুদ সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
সালাতুল তাহাজ্জুদ  পড়ার সময়, নিয়ম ও রাকআত
এশার সালাতের পর তাহাজ্জুদ নামাজের ওযাক্ত শুরু হয় এবং ফজরের পূর্ব পর্যন্ত ওয়াক্ত থাকে।
 ﴿صلاة التهجد تكون فى الوقت ما بعد صلاة العشاء، وهى آخر الصلوات التى يؤديها المسلم فى الليل وحتى قبل طلوع وموعد صلاة الفجر، ويقال إن أفضل وقت لصلاة التهجد هو الثلث الأخير من الليل﴾
সালাতুল তাহাজ্জুদ দুই রাকাত থেকে বার রাকাআত পড়া যায়। তবে আট রাকাআত উত্তম।
 ﴿صلاة التهجد ليس لها عدد معين من الركعات، فيمكن للمسلم أن يصلى ما يشاء، ويقال أن النبى صلى الله عليه وسلم كان يصليها إحدى عشرة ركعة.
তাহাজ্জুদ নামাযের পূর্বেই যে সকল কাজ করতে হবে তা হলো- সালাতুল তাহাজ্জুদ আদায করার নিয়তে ঘূমাবেন। ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে অযু করে দু রাকাআত করে সালাত আদায় করবে।
﴿يجب على المسلم أن يصدق النية للنهوض من نومه وأداء صلاة التهجد ، ثم ما أن يستيقظ حتى يتوضأ ويحسن وضوءه ويفتتح صلاته بركعتين خفيفتين على نية الصلاة، ومن ثم يصلى ركعتين ركعتين، كما ثبت عن صلاة النبى عليه أفضل الصّلاة والسلام مثنى مثنى.
তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নাত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েজ আছে। এ নামাজের রাকাত সংখ্যা সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ ৮ রাকাত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশি পড়া জায়েজ আছে। এরপরে বিতর নামাজ পড়া। হাদীসে এসেছে-
﴿روى جَابِرٌ رضي الله عنه فقال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: (إِنَّ في اللَّيْلِ لَسَاعَةً لَا يُوَافِقُهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ خَيْرًا من أَمْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ إلا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ) رواه مسلم﴾
তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত দুই রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়া। কিরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য। জামাতে পড়া রামাদ্বান ছাড়া অন্য সময় মাঝেমধ্যে জামাতে পড়া জায়েজ আছে তবে নিয়মিতভাবে নয়।
﴿فصلاة التهجد في العشر الأواخر من رمضان جماعة في المساجد مشروعة بالاتفاق، لفعل النبي صلى الله عليه وسلم لها، كما روى الشيخان وأحمد وغيرهما، وإنما الخلاف في الاستحباب هل المستحب صلاتها فرادى في البيوت أم جماعة في المسجد، ونرى أن الأمر تابع لنشاط الإنسان ومدى خشوعه وإخلاصه، فإن كان مع الجماعة أنشط وأخشع وهو محافظ على الإخلاص، فالصلاة مع الجماعة مستحبة في حقه وأولى من صلاته منفردا. هذا، وقد دل على أن النبي صلى الله عليه وسلم إنما قام بالناس في العشر الأواخر ما رواه أبو داود والترمذي وصححه والنسائي وابن ماجه وغيرهم بإسناد صحيح عن أبي ذر رضي الله عنه قال: صمنا فلم يصلِّ صلى الله عليه وسلم بنا حتى بقي سبع من الشهر، فقام بنا في الخامسة حتى ذهب شطر الليل فقلنا يا رسول الله: لو نفلتنا بقية ليلتنا هذه فقال: إنه من قام مع الإمام حتى ينصرف، كتب له قيام ليلة، ثم لم يصلِّ بنا حتى بقي ثلاث من الشهر، فصلى بنا الثالثة ودعا أهله ونساءه فقام بنا حتى تخوفنا الفلاح، قلت: وما الفلاح؟ قال: السحور. والله أعلم﴾
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে এ  সালাত আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।

তাহাজ্জুদ সালাত পড়ার নিয়মগুলো হলো-
এক: তাকবিরে তাহরিমা আল্লাহু আকবারবলে নিয়ত বাঁধা।
দুই: অতঃপর ছানা পড়া।
তিন: সুরা ফাতেহা পড়া।
চার: সুরা মিলানো তথা কিরাত পড়া।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক লম্বা কিরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দুআ মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে  সালাত সম্পন্ন করা। এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
উপসংহার
আমরা আলোচনা থেকে বুঝতে পারছি সালাতুল তাহাজ্জুদ খুব গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্টি অর্জনের বান্দার সালাতুল তাহাজ্জুদ আদায়ের বিকল্প নেই। আর সালাতুল তাহাজ্জুদ পড়ার মোক্ষম সময় হলো রামাদ্বান মাস। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে সালাতুল তাহাজ্জুদ আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখকঃ
প্রফেসর,
আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ।


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here