Tuesday, April 7, 2020

আদর্শ শিক্ষকের নৈতিক গুণাবলী, পর্ব-১

 

।।আবদুল্লাহ আল মনসুর।।

একটি স্বচ্ছ গ্লাসে যদি পানি রাখা হয়, তাহলে পিপাসা না থাকলেও পান করতে মন চায়। কিন্ত ওয়াশরুমের বদনায় যদি দুধও পরিবেশন করা হয়, তাহলে সেটা কেউ নেয়না। ঠিক তদ্রুপ একজন শিক্ষকের উপস্থাপন শৈলী যদি চমৎকার হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা সহজে তা গ্রহণ করতে পারে। এজন্য শিক্ষকতাকে বলা হয় একটি শিল্প। একটি বিজ্ঞান। একটি কৌশল।

পৃথিবীর যত সম্মানজনক পেশা আছে তার অন্যতম হলো শিক্ষকতা। অনেক ভাল ছাত্র, ভাল শিক্ষক হতে পারেনা। আবার অনেক কম মেধার ছাত্রও ভাল শিক্ষক হতে পারে। একজন শিক্ষকের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও দক্ষতা যেমন দরকার। ঠিক তেমনি কোনো ক্ষেত্রে তার চাইতেও বেশী দরকার হলো উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি ও ইতিবাচক আচরণ। এজন্য মেনে চলতে হয় কিছু নিয়ম নির্দেশনা। অর্জন করতে হয় কিছু গুণাবলী। তাহলেই সম্ভব একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া।

কেন আপনি একজন আদর্শ শিক্ষক হবেন?
আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য?
পার্থিব যশ, খ্যাতি বা মোহের জন্য?

নিশ্চয় না। আমরা জানি কেউই পৃথিবীতে স্থায়ী না। কারো জন্য কখন ইন্না লিল্লাহপড়া হয়ে যাবে কেউই জানিনা। সুতরাং দুনিয়াতে থাকাকালীন এমন কিছু করে যেতে হবে যেটার সওয়াব মউতের পরও বহাল থাকে। আর এটি অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা হলো শিক্ষকতা। শিক্ষকতা পেশায় আছে একটি আত্মতৃপ্তি যা একজন আদর্শ শিক্ষকই কেবল অনুধাবন করেন ও উপভোগ করেন।
আলোচ্য নিবন্ধে কয়েক পর্বে একজন আদর্শ শিক্ষকের নৈতিক গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। ওয়াবিল্লাহিত তাওফিক।

শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়, বরং ইবাদাতও। তাই শিক্ষকতায় আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম। তিনি যে পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করেছেন, বর্তমান আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞান রিসার্চ করলে তারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়।

একজন আদর্শ শিক্ষকের মৌলিক গুণাবলী:

এক: ইখলাসুন নিয়্যাহ:
নিয়তের পরিশুদ্ধিতা। ধরুন আপনি সারাজীবন অনেক নেকীর কাজ করলেন। প্রতিটি মূহুর্ত আপনার ব্যয় হয়েছে ভালো কাজে। কিন্তু কবরে গিয়ে দেখলেন কোনো আমলেই পৌঁছেনি আপনার কাছে। আপনি আশ্চর্য্য হবেন? কিন্তু আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই এখানে। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেই দিয়েছেন,
﴿حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْأَنْصَارِيُّ قَالَ أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
অর্থাৎ,নিশ্চয় সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১)

এজন্য প্রথমেই নিয়তটাকে সহিহ করে নেয়া চাই শয়তান মানুষের নিয়তের মাঝে এসে নক করে। সে নিয়তে গড়বড় লাগিয়ে দেয়। প্রতিটি কাজের মাকসাদ বা উদ্দেশ্যে হতে হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি। রেযায়ে মাওলা যাকে বলি আমরা সংক্ষেপে। নিয়তকে বারবার তাজদীদ করতে হবে। কারণ আপনি হয়ত ভালো মাকসাদ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু মাঝপথে এসে শয়তান আপনাকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করবেনা, তার কী নিশ্চয়তা আছে! এজন্য বারবার নিয়তকে ঝালাই দিতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হাদিসটি মাথায় রাখা যেতে পারে সবসময়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিস থেকে জানা যায়, জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্জ্বলিত করা হবে তিন ব্যাক্তির দ্বারা, তার প্রথমজন হলেন আলিম। যিনি সারা জীবন দ্বীনের বহুবিদ খিদমাত আঞ্জাম দিয়েছেন। আর এসবই ছিল পার্থিব যশ, খ্যাতির উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ ইখলাস ছিলনা। এজন্য ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ নিয়তের হাদিস দিয়ে তার কিতাব শুরু করেছেন।

 দুই: শোকর গুজার:
আমাদের অনেক আসাতেযায়ে কেরাম তথা শিক্ষকগণকে হীণমন্যতায় ভুগতে দেখা যায়। তারা নিজেদেরকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের খাদিম (শিক্ষক) হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেন। তারা মনে করেন এটি খুব ছোটখাটো একটি পেশা। তারা পার্থিব অন্যান্য পেশাকে খুব বড় করে দেখে থাকেন। অথচ তারা জনেননা এমন মানসিকতা শয়তানের ধোকার একটি অন্যতম অংশ।

কারণ চাইলেই যে কেউ মহান এই কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেননা আল্লাহ তায়ালা সুরা রাহমানে বলেন,
﴿عَلَّمَ الْقُرْآَنَ
অর্থাৎ, “তিনি কোরআন শিক্ষা দেন।(আল কুরআন, সূরা আর রহমান, আয়াত:২)
এতে বুঝা যায় তালিমে কুরআন এটি তার দয়ার এক অংশ। তাছাড়া এটি একটি নবীওয়ালা কাজও। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্বও ছিল মানুষকে কুরআন, সুন্নাহ শিক্ষা দেয়া ও এর দ্বারা মানুষকে পরিশুদ্ব করা। এক্ষেত্রে রাব্বে কারীমের তাওফিক খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাব্বে কারীম যাদের কল্যাণ চান ও যাদের প্রতি বিশেষ রহমত দেয়ার মনস্থ করেন, তাদেরকেই এসব মহান খেদমাতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেন। সুযোগ দিয়ে আমাদেরকে পরীক্ষা করেন, আমরা এত বড় নেয়ামাত পাওয়ার পর তার কতটুকু শোকর গুজার হই। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
অর্থাৎ, তোমরা যদি আমার নেয়ামত পাওয়ার পর শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি তোমাদের নিয়ামত কে আরো বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (জেনে রাখো) আমার আযাব বড় কঠিন।” (আল কুরআন, সূরা ইবরাহীম, আয়াত:৭)


এজন্য নিজ পেশাকে বড় করে দেখুন। একবার চিন্তা করুন, সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দেবার কারণে যদি বাবা মাকে কিয়ামতের দিন নূরের টুপি পরানো হয়ে থাকে তাহলে যে শিক্ষক ঐ সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিলেন তার কী মযার্দা হবে।
তিন: সবর ও সহনশীলতাঃ অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক, নিজের মাঝে সবর ও সহনশীলতা না থাকার কারণে শিক্ষকতার হক আদায় করতে ব্যর্থ হন। শিক্ষার্থী ক্লাসের পড়া আয়ত্ব করতে পারেনি এই দোষ কার? অবশ্যই শিক্ষকের। কিন্তু আমরা রাগ ঝাড়ি ছাত্রের উপর। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর উপর রাগ না করে কারণ বের করতে হবে আসলে ভুল হচ্ছেটা কোথায়? শিক্ষার্থীদের কিছুদুষ্টুমি আছে যেগুলো দেখেও না দেখার ভান করতে হবে। আবার অন্যান্যগুলো সংশোধন করতে হবে সুন্দরতম পন্থায়। বাচ্চাদের পড়ানো দুনিয়ার কঠিন কাজগুলোর অন্যতম। এক্ষেত্রে সবর এক মহাশক্তি। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
অর্থাৎ, “নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।(আল কুরআন, সূরা বাক্বারা, আয়াত:১৫৩)
চতুষ্পদ জন্তুকেও যদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পোষ মানানো যায়, তাহলে আশরাফুল মাখলুকাত ইনসান তথা মানুষকে কেন নয়? সম্ভব। তবে এর জন্য প্রচুর সবর-ধৈর্য্য ও সহনশীলতার গুণ আর্জন প্রয়োজন।

চার: আনুগত্যঃ
প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের কোনো না কোনা লক্ষ্য থাকে। কিছু নিয়ম নির্দেশনা থাকে। সেগুলোর প্রতি আনুগত্য না থাকলে কখনই প্রকৃত শিক্ষক হওয়া যাবেনা। অনেক শিক্ষককে এক্ষেত্রে বেপরোয়া দেখা যায়। যা নিতান্ত দুঃখজনক। কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান একা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারেন না প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে আপনার চিন্তাধারার সমন্বয় না হলে কোনো সময়ই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়া যায়না। এজন্য পরষ্পর আলোচনা, পরামর্শের ভিত্তিতে  সমন্বয় করে নিতে হবে।

পাচ: আমানতদারিতাঃ 
প্রতিটি শিক্ষার্থী একেকটা আমানত। তার যথাযথ হক আদায় করা শিক্ষকের জন্য অপরিহার্য। আমানতের যথাযথ মূল্যায়ন না করলে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাবদিহী করতে হবে। কারণ আপনি প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে আমানত রক্ষা করবেন মর্মে চুক্তিবদ্ধ। আপনি যখন ক্লাসে ঢুকেন, তখন একমাত্র শিক্ষার্থীরা ছাড়া কেউ আপনাকে (মানুষ) দেখছেনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
﴿حَدَّثَنَا عَبْدَانُ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ أَخْبَرَنَا مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
অর্থাৎ, “তোমরা প্রত্যেকেই দ্বায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককে যার যার দ্বায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে(সহিহ বুখারী, খণ্ড-১৬, হাদীস নং৪৮০১)

আমানতের যথাযথ ব্যবহার না করলে কয়েকটি গুনাহ।

১. চুক্তিভঙ্গের গুনাহ;
২. খেয়ানত এর গুনাহ;
৩. আল্লাহর কালামের সাথে বেআদবির গুনাহ।

ছয়: দয়াপরশঃ
মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সম্বোধন করে বলেন, “আপনি আল্লাহর রহমতের দ্বারাই মানুষের সাথে নরম হন, যদি আপনি কঠোর অন্তরের হতেন, তাহলে কেউ আপনার কাছে আসতন।” (আল-হাদীস) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
﴿ارْحَمُوا أَهْلَ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ أَهْلُ السَّمَاءِ
“তোমরা যমিনবাসীদের উপর দয়া করো, তাহলে আল্লাহও তোমাদের উপর দয়া করবেন।” (মুসনাদে আহমদ, খণ্ড-১৩, হাদীস নং৬২০৬)

ভয় দেখিয়ে হয়ত ক্লাসে পড়া মুখস্থ করিয়ে ফেলতে পারবেন। কিন্তু তার স্থায়িত্বকাল  বেশীদিন টিকবেনা। একটি কথা মনে রাখতে হবে সবসময় ভয় দিয়ে কখনো মন জয় করা যায়না ছাত্রদের মাঝে জনপ্রিয় হতে হলে তাদের প্রতি দয়াপরশ হতে হবে। অনেক শিক্ষক গর্ব করে বলেন, ‘আমাকে দেখলে শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালায়
কেন ভাই?
শিক্ষার্থী আপনাকে দেখলে ভীত সন্ত্রস্ত হবে কেন?
আপনি কি হিংস্র কোনো প্রাণী? 

এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সাহাবায়ে কেরাম কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলে এভাবে করতেন? এজন্য বিখ্যাত সাহাবী আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু এর একটি কালজয়ী বক্তব্য রয়েছে এব্যাপারে। তিনি বলেন, “আমি দশ বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমত করেছি। তিনি কোনোদিন আমাকে গালি দেননি এবং মারেনওনি। এবং কোনোদিন আমাকে বলেননি, আনাস তোমাকে বললাম একাজ করার জন্য, তাহলে কেন করনি?  অথবা তোমাকে বললাম একাজটি না করার জন্য ,তাহলে কেন করে ফেললে।’ এ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতটা দয়াপরশ ছিলেন। সকল কাজে তিনিই তো আমাদের আদর্শ। তাহলে কেন আমরা তাঁকে আমাদের সব কাজে অনুসরণ করছিনা?

 সাত: হাসিমুখঃ
অনেক শিক্ষক মনে করেন, ক্লাসে কিংবা শিক্ষার্থীদের সামনে যত বেশি গুমরামুখ করে থাকা যায় তত ভালো এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত থাকে। যে কারণে এই শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা তেমন কিছু নিতে পারেনা। শিক্ষকের যদি শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুসূলভ না হতে পারেন, তাহলে শিখবে কীভাবে এই শিক্ষকের কাছ থেকে। তবে একথা মাথায় রাখতে হবে সবসময় একজন শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর মাঝে একটি অদৃশ্য কাঁচের দেয়াল থাকবে। কোনোক্রমেই যেন শিক্ষার্থী সেই কাঁচের দেয়াল অতিক্রম করতে না পারে। 

একজন শিক্ষক যখন হাসিমুখ নিয়ে ক্লাসরুমে প্রবেশ করেন, তখন পুরো ক্লাসের পরিবেশটাই পাল্টে যায়। ক্লাস প্রাণবন্ত থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে আমাদের মন খারাপ থাকে। কিন্তু ক্লাসরুমে যেন সেটার প্রভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় মুচকি হাসতেন। এটি একটি সুন্নাহ, একটি স্বতন্ত্র ইবাদাত।

আট: ব্যক্তিগত আমলে যত্মবানঃ
একজন শিক্ষকের বড় একটি ক্ষমতা হলো আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলিয়ান হওয়া। আর এটি ততক্ষণ পর্যন্ত অর্জিত হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি ব্যক্তিগত আমলে যত্মবান না হন। বিশেষত ফরজ সালাত। অনেককে সালাতের প্রতি যত্মবান হলেও জামাতের প্রতি চরম উদাসীন থাকেন। আপনি নিজেই যদি জামাতে সালাত আদায়ে তৎপর না হন, তাহলে কীভাবে আপনার ছাত্র সেই আমলে অভ্যস্ত হবে।

একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষক দ্বারা প্রভাবিত থাকে। অর্থাৎ শিক্ষক যদি আমলদার হন, শিক্ষার্থীরা সেভাবেই গড়ে ওঠে। তাছাড়া নামধরে তাহাজ্জুদের সালাতের পর কিংবা অন্য যেকোনো দোয়াতে নিজ শিক্ষার্থীদের জন্য দোয়া করা। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- আমাকে রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন এবং দুয়া করলেন হে আল্লাহ তাকে কুরআনের জ্ঞান দান করুন(সহিহ বুখারী) পূর্ববতী  সালাফদের থেকে এ আমলটি ব্যাপক ভাবে পাওয়া যায়। সারাক্ষণ ইসতেগফার, দুরুদ শরীফ, অন্যান্য ফযিলতপূর্ণ যিকির আযকার এর এহতেমাম করা তথা গুরুত্ব দিতে হবে।

চলবে----
লেখকঃ শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
তাকমিল ফিল হাদিস, (মাস্টার্স সমমান)

জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজারসিলেট।

অনার্স (হাদিস)সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা।

(ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কুষ্টিয়া।)

শিক্ষকশাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা পাঠানটুলাসিলেট।

ইনচার্জকোরানিক গার্ডেনমিরবক্সটুলাসিলেট।

মেবাইল :  ০১৭৪১৫৮৫০৪০
ইমেইল: abmonsur111@gmail.com


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here