।। মাওলানা নুরুর রহমান।।
মাহে রমজান আল্লাহর নৈকট লাভের বিশেষ মৌসুম
মানবতার মুক্তির ও শান্তির ধর্ম হলো ইসলাম। রমজানের রোজা হচ্ছে ইবাদতের মাঝে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম।
ঈমান, সালাত ও জাকাতের পরই
রোজার স্থান। রোজার আরবি শব্দ সাওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। সাওম হলো, প্রত্যেক সন্তান, বালেগ মুসলমান নর-নারীকে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত
রোজার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোজা
ভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা।
সুতরাং রমজান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এবং হায়েজ নেফাসমুক্ত (মাসিক ও সন্তান
হওয়ার পরে রক্তস্রাব) প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর ওপর রোজা রাখা ফরজ। পবিত্র কোরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
﴿شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ
الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ
أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ
الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ﴾
অর্থাৎ, রমজান মাস হল সে মাস, যে মাসে নাযিল করা হয়েছে পবিত্র কোরআন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর
ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। (সূরা আল বাক্বারা, আয়াত: ১৮৫) মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন,
﴿أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَن كَانَ مِنكُم
مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ
فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَن تَصُومُواْ
خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴾
অর্থাৎ, “কাজেই তোমাদের মধ্যে
যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে।
আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পুরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে
চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেননা- যাতে তোমরা গণনা পুরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুণ আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” (সূরা আল বাক্বারা, আয়াত: ১৮৪)
মুমিন বান্দার জীবনে বছরের মধ্যে রমজান মাসটিই এক দুর্লভ সুযোগ
এনে দেয়। তাই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব এত বেশি। এ কারণেই বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে ইবাদত, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, জিকর, শোকর ও আল্লাহর নৈকট্য
লাভের এক বিশেষ মৌসুম।
নবী করিম (সা.) মাহে রমজানের প্রাক্কালে বলেন, “রমজান মাস আগতপ্রায়, এ মাস বড়ই বরকতের মাস, আল্লাহ তাআলা বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাস রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন ও দোয়া কবুল করেন।
রোজাদারের মর্যাদা উল্লেখ করে হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) এরশাদ
করেছেন, “রোজাদারের নিদ্রা ইবাদতের
সমতুল্য, তার চুপ থাকা তসবিহ পাঠের
সমতুল্য, সে সামান্য ইবাদতে অন্য
সময় অপেক্ষা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হয়। ঈমান ও এহতেসাবের সঙ্গে যে ব্যক্তি রোজা
রাখে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১০)
রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, “মানুষ যত প্রকার নেক কাজ করে আমি তার সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০
গুণ বৃদ্ধি করে দেই। কিন্তু রোজা এই নিয়মের বাইরে। রোজার সওয়াব একই নিয়মে সীমাবদ্ধ
বা সীমিত নয়।”
“রোজার সওয়াবের পুরস্কার স্বয়ং আমি প্রদান করব। অথবা আমি নিজেই রোজার সওয়াবের পুরস্কার।” (সহীহ মুসলিম, পৃ. ৮০৭)
كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ
فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ﴿
“রোজার সওয়াবের পুরস্কার স্বয়ং আমি প্রদান করব। অথবা আমি নিজেই রোজার সওয়াবের পুরস্কার।” (সহীহ মুসলিম, পৃ. ৮০৭)
হাদিস শরিফে উল্লেখ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নফল কাজ করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজই
আদায় করল। আর যে এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল।
নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, “যারা রমজান মাসের প্রথম
থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে, তারা ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে প্রসব করেছিলেন।”
রামাদান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজই হল সিয়াম। আর সিয়াম
হলো ফজরের উদয়লগ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়াতসহ পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত
থাকা। রামাদান মাসের রোজাকে ফরজ করে যে আয়াত নাজিল হয় তাতে আল্লাহ রোজার উদ্দেশ্য
বা লক্ষ্য নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ
الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴾
অর্থাৎ, “হে ঈমানদারগণ! তোমদের ওপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।” (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩)
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে।’’ (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)
সে সব ফজিলতের দ্বারা, পবিত্র রমজান মাসের বিশেষত্ব দান করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
(১) রমজান হলো কুরআন নাজিলের মাস।
“রমযান মাস হল সে মাস,যে মাসে নাযিল করা হয়েছে পবিত্র কোরআন।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
﴿شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ ﴾
(২) এ মাসে জান্নাতের দ্বারসমূহ
উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দ্বারসমূহ
রুদ্ধ করে দেয়া হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
﴿إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ
الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ وَصُفِّدَتْ الشَّيَاطِينُ ﴾
“রমজান মাসে এলে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত
করা হয়।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০০; সহীহ মুসলিম, পৃ. ৭৮৫)
(৩) এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল ক্বদেরর ন্যায় বরকতময় রজনী। মহান আল্লাহ পবিত্র
কোরআনের সূরায়ে কদরে এরশাদ করেন-
﴿إِنَّا
أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ (1) وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
(2) لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ (3) تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ
وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ (4) سَلَامٌ هِيَ حَتَّى
مَطْلَعِ الْفَجْرِ (5) ﴾
নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআনুল কারীমকে লাইলাতুল কদরে
অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হলো হাজার
মাস অপেক্ষা উত্তম। উক্ত রজনীতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল (আ.) তাদের প্রতিপালকের
নির্দেশে প্রত্যেক বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হন এটা শান্তিময় রজনী যা ফজরের উদয় পর্যন্ত
অব্যাহত থাকে। (সূরা আল কদর: ১-৫)
(৪) এ মাস দোয়া কবুলের
মাস। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদততুল্য, চুপ থাকা তাসবিহ-তাহলিলতুল্য, আমল ইবাদত সওয়াব হাসিলে বেশি অগ্রগণ্য, দোয়া কবুলযোগ্য ও তার গুনাহ ক্ষমার যোগ্য।’ (বায়হাকি)
(৫) রোজার পুরস্কার আল্লাহ
স্বয়ং নিজে প্রদান করবেন।
(৭) রোজা জান্নাত লাভের
পথ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে, যার নাম ‘রাইয়ান’। কেয়ামতের দিন রোজাদাররাই শুধু ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।
অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোযাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন
তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে
দেওয়া হবে। ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বোখারি, হাদিস নং: ১৭৯৭)
(৮) সিয়াম রোজাদারের জন্য
কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।
(৯) রোজা জাহান্নামের অগ্নি
থেকে মুক্তিলাভের ঢাল।
(১০) এ মাসের রোজা রাখা একাধারে
বছরের দশ মাস রোজা রাখার সমান।
(১১) রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ
আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ! রোজাদারের মুখের গন্ধ
কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়েও সুগন্ধিময়।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪)
(১২) রোজা ইহ-পরকালে সুখ-শান্তি
লাভের উপায়।
রোজা মানুষের ইচ্ছা ও সঙ্কল্পে দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়, চারিত্রিক মাহাত্ম্য অর্জিত হয়, শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় এবং সর্বোপরি তা মুসলিম
উম্মাহ্ একতাবদ্ধ হওয়ার এক বাস্তব নিদর্শন। তাই আসুন আমরা সঠিক ও শরয়ী ত্বরিকায় আমরা রমজানের রোজা রেখে মহান আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের প্রানান্তরকর চেষ্টা করি।
আল্লাহ মুসলমানদেরকে এক হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।।
লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা
লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা
সেক্রেটারি:
শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে-
ইমাম ও খাতিব:
মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ কে
সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:
নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে
প্রিন্সিপাল:
আর রাহমান একাডেমি ইউ কে
পরিচালক:
আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে
📞07476136772 📞 07476 961067
nrahmansky@googlemail.com
Arrahmaneducationtust@gmail.com
https://www.facebook.com/Imam.Nurur
https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/
https://www.youtube.com/user/nurur9
0 coment rios:
You can comment here