Wednesday, April 22, 2020

আসছে রামাদ্বান খুলবে জান্নাত


।। মাহফুজ আল মাদানী।।

বছর ঘুরে আবার আমাদের দ্বারে এসে কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রামাদ্বান। শাবানের শেষ দিনগুলো রামাদ্বানের প্রস্তুতিকে আরো ত্বরান্বিত করছে। জানিয়ে দিচ্ছে রামাদ্বানের আগমনী বার্তা। যে মাস তাকওয়া অর্জনের মাস। কোরআন অবতীর্ণের মাস। অফুরন্ত কল্যাণ লাভের মাস। জান্নাত পাবার মাস। পাপ মার্জনা করানোর মাস। আল্লাহর সান্নিধ্য আর নৈকট্য লাভের মাস। রহমত, মাগফেরাত আর দোযখ থেকে মুক্তির মাস। যে মাস শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়, খুলে দেয়া হয় জান্নাতের সকল দরজা। খোলা হয় আকাশের দরজা।  হাদীসের ভাষায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
﴿إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ وَصُفِّدَتْ الشَّيَاطِينُ﴾
অর্থাৎ, রামাদ্বান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (বুখারী, আস-সহীহ, খণ্ড-২, পৃ. ৬৭২, খণ্ড- ৩, পৃ. ১১৯৪; মুসলিম, আস-সহীহ, খণ্ড-২, পৃ. ৭৫৮) 
অন্য এক হাদীসে এসেছে-
﴿أَخْبَرَنَا بِشْرُ بْنُ هِلَالٍ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ عَنْ أَيُّوبَ عَنْ أَبِي قِلَابَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ ﴾


অর্থাৎতোমাদের নিকট রামাদ্বান মাস এসেছে। এই মাসটি বরকতময়। আল্লাহ তোমাদের উপর এই মাসের সিয়াম ফরয করেছেন। এই মাসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এবং এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই মাসে দুর্বিনীত শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়। এই মাসে এমন একটি রাত আছে যা এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি সেই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত সে একেবারেই বঞ্চিত হতভাগা। (নাসাঈআস-সুনানখণ্ড-৪পৃ. ১২৯আলবানীসহীহুত তারগীব খণ্ড-১পৃ. ২৪১। হাদীসটি সহীহ)
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ বলেন, এর দ্বারা রামাদ্বান মাসে জান্নাতের অমীয় শান্তির প্রবাহ দুনিয়ার দিকে প্রবাহিত হওয়ার ইঙ্গিত করা হয়েছে। কাজী আয়ায বলেন, এর দ্বারা রামাদ্বান মাসের আগমন, ইজ্জত ও সম্মানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, এ মাসে অধিক পরিমাণে সাওয়াব ও ক্ষমা প্রদানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সর্বদিক থেকে এ মাস মুসলমানদের জন্য সুখবর আর কল্যাণের সুবার্তা প্রদানকারী। অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে,
﴿حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلَالٍ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو حَازِمٍ عَنْ سَهْلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ لَا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ﴾

অর্থাৎ, "হযরত সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ () বলেছেন- জান্নাতের রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবেরোজা পালনকারীরা কোথায়তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে"। (বুখারী, আস সহীহ, খণ্ড-৬, পৃ. ৪৬১, হাদীস নং ১৭৬৩)
বস্তুতভাবে রামাদ্বান মাস আসে প্রভূত কল্যাণ নিয়ে, মহান রবের করুণা নিয়ে। এ মাস পূণ্যার্জনকারীদের জন্য অন্যতম।
রামাদ্বানের রোজার মাধ্যমে মুসলমান মুত্তাকীরা রাইয়ান দরজা দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে। হাদীসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُطَرِّفٍ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو حَازِمٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ فِيهَا بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانَ لَا يَدْخُلُهُ إِلَّا الصَّائِمُونَ
অর্থাৎহজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি দরজার নাম আর রাইয়ান। ঐ দরজা দিয়ে শুধূ রোজাদারগণই প্রবেশ করবেন -(বোখারী, আস সহীহ, খণ্ড-১২ হাদীস নং ৭০১৭)

আমাদের মাঝে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়ার মাস সমাগত। বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে মসজিদ সমূহে তারাবীহ ও কিয়ামুল লাইল না হওয়ার ব্যাথায় মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তকরণ হচ্ছে। এরপরও প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরকে কোনোভাবেই এ মাসের রহমত, মাগফেরাত আর জাহান্নাম থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগকে হাতছাড়া করা যাবে না। বাসায় হোম কোয়ারেনটাইনে থেকে সময়কে কাজে লাগিয়ে মহান রবের করুণা লাভের জন্য প্রাণপন চেষ্টা করতে হবে।

এ সকল সুযোগকে যে বা যারা হাতছাড়া করবে সেই প্রকৃতভাবে প্রভূত কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবে। আসুন এ পূণ্যময় মাসের কল্যাণকে নিয়ামত হিসেবে গ্রহণ করি। এ মাসের যথাযথ মর্যাদা দেই। 
মহান রবের কাছে তাওবাহ করি, ফিরে যাই তাঁর দিকে, বিশ্বের এ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।

লেখকঃ
প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট।


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here