।। মামুন সুলতান।।
গত ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখে বাসায় ডুকেছি এখনও পর্যন্ত বাসায়
আছি। এটা রাষ্ট্রীয় আদেশ। নিজেকে বাঁচানোর জন্য নয় প্রথমে পরিবার পরিজন তারপর পাড়া
প্রতিবেশি থেকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এই আত্মবন্দিত্ব জীবন বেচে
নিলাম।
আমি বিশ্বাস করি দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ এরকমভাবেই
এখনকার সময় অতিবাহিত করছেন। এটা আনন্দের নয় বরং বিরক্তিকর একটা জীবন। তবু পঁচিশে
মার্চের কালো রাত্রির মত নিজেকে লুকিয়ে রাখা। যুদ্ধকালীন সময়ের মত গুহায় বাস। মনে
হচ্ছে পৃথিবীতে যুদ্ধ চলছে। সবাই পালাই পালাই তবুও যেন অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে পারি। তবুও আমরা ভালো আছি। পরিবার পরিজন নিয়ে একসাথে
হেসে খেলে দুঃখ দারিদ্র্য শেয়ার করে যেন ভালো আছি।
আমরা যারা ঘরে আছি আমরা নীরব যোদ্ধা। আত্মগোপন করে রাখার
যোদ্ধা। কিন্তু পুলিশ, আর্মি, র্যাব,
ডাক্তার নার্স চিকিৎসাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবীদল
তারা ত ঘরে নেই। তারা বাইরে। সরাসরি যুদ্ধ করছেন। অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে
যাচ্ছেন। শহরে গ্রামে পয়েন্টে পয়েন্টে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা নিরলস কাজ করে
যাচ্ছেন।
মাইকিং করে গান গেয়ে কখনো কঠোর হয়ে আমাকে আপনাকে ঘরে পাঠিয়ে
দিচ্ছেন। বলছেন আমরা বাইরে আছি আপনারা ঘরে যান।
একবার চিন্তা করুন তাঁদেরও ছেলেমেয়ে মা-বাবা আত্মীয় স্বজন আছেন। এখন পর্যন্ত একজন
পুলিশ যুদ্ধমাঠ থেকে পালিয়ে যাননি। সংযমের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা গেলে কোনো আত্মীয় স্বজন কবরস্থ
করার জন্য এগিয়ে আসেনা। সমাজের কোনো স্বেচ্ছাসেবী আসে না। জানাজা পড়ানোর জন্য কোনো
ইমাম পাওয়া যায় না সেই দুর্যোগ সময়ে আমার পুলিশ ভাইয়েরা কত মমতায় সেই লাশকে দাপন
করছেন। করোনা তাঁদেরও পাকরাও করতে পারে। তবুও তারা আত্মপ্রত্যয়ী। করোনা কালে
ইতিপূর্বে অন্তত তিনশ পুলিশ করোনাক্রান্ত হয়েছেন। তবুও তারা পিছ পা হচ্ছেন না।
স্যালুট পুলিশ ভাই স্যালুট করোনাযোদ্ধা।
একইভাবে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) যাদের কালো
পোষাকের নিচে কেবলই মাদক সন্ত্রাস আর কালোবাজারি ধরার কঠিন দায়িত্ব তারা আজ
করোনাযোদ্ধা। যারা ক্রসফায়ার করতে অভ্যস্ত তারা আজ মায়াবী মানুষ। ভালোবাসা আর ত্যাগে
দেশপ্রেমিক। সিলেটের র্যাব-৯ সেদিন দেখলাম দক্ষিণ সুরমায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের
কাছে নিজেদের বেতনের টাকা দিয়ে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। ব্র্যাভো ব্র্যাভো। সাবাশ
বাংলাদেশ সাবাশ র্যাব।
বাংলাদেশ আর্মি যারা কেবল ব্যারাক আর যুদ্ধ। সমরে যাদের
ট্রেনিং। আর্মি দেখলেই পাবলিক ভয় পায়। যুদ্ধাচরণ ছাড়া তাদের ভাবাই যায় না। আজ তারা
কতো মানবিক। পাবলিক বাইরে গেলেই যত্নে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারা আজ
মানুষের প্রতি কত দায়িত্বশীল আচরণ করছে। তাই দেশের কোনো গোলযোগে আর্মিই ভরসা।
জনগণের সেই ভরসার প্রতীক আর্মির ভাইয়েরা কোনো প্রকার টর্চার
করছে মানুষের শরীরে। সারাক্ষণ গলির মোড়ে মোড়ে পয়েন্টে পয়েন্টে দাঁড়িয়ে মানুষকে সচেতন করছেন। ভালোবেসে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ত্রাণ কাজে
সাহায্য করছেন। কোথাও কেউ বিপদে পড়লে সাহায্যে এগিয়ে আসছেন। এরাই করোনা যুদ্ধের
সামনের সারির যোদ্ধা। সালাম তুজে সালাম।
ডাক্তার নার্স। তাদের কথা কি বলব আমি ত নির্বাক। হাজার
সমস্যার সম্মুখে দাড়িয়ে বলা যায় মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আমাদের চিকিৎসক সেবক আর চিকিৎসা
সংশ্লিষ্ট ভাই-বোনেরা যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে ডাক্তার মঈন উদ্দিন সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে পরপারে চলে গেছেন। এভাবে প্রতিটি ডাক্তার জীবনকে বাজি রেখে সমস্ত পিছুটানকে পিছনে ফেলে দীপ্ত পায়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তাঁদের পিপিই মাস্ক যথেষ্ট সরবাহ দেওয়া যাচ্ছে না তবুও তারা আত্মপ্রত্যয়ী। যুদ্ধে তারা জয়ী হয়েই বাড়ি ফিরবেন।
ইতোমধ্যে ডাক্তার মঈন উদ্দিন সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে পরপারে চলে গেছেন। এভাবে প্রতিটি ডাক্তার জীবনকে বাজি রেখে সমস্ত পিছুটানকে পিছনে ফেলে দীপ্ত পায়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তাঁদের পিপিই মাস্ক যথেষ্ট সরবাহ দেওয়া যাচ্ছে না তবুও তারা আত্মপ্রত্যয়ী। যুদ্ধে তারা জয়ী হয়েই বাড়ি ফিরবেন।
সমাজের আরও নানান পেশার লোক সংগঠন ইত্যাদি নানান অর্গান
করোনাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন। এগিয়ে আসছে তরুণ স্বেচ্ছাসেবী দল। এগিয়ে আসছেন
বিত্তবান মানুষেরা। এভাবেই একদিন আমরা করোনাকে যাদুঘরে পাঠাবো। আমরা ফিরিয়ে আনবো
নতুন সভ্যতা। মানুষ আবার শ্বাস নেবে স্বচ্চ সবুজের। মাঠে খেলা করবে শিশুরা। পাড়া
মহল্লা আবার কলকল করবে মানুষের কোলহলে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, সিলেট।
বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যক, লেখক ও প্রকাশক।
মোবাইলঃ ০১৭১২৬৮৩২০৩
0 coment rios:
You can comment here