Tuesday, May 5, 2020

একজন রোজাদারের যা অবশ্যই করণীয় ও বর্জণীয়


।। ইমদাদুল হক যুবায়ের।।

তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমজান। একজন রোযাদার তাকওয়া অর্জনের নিমিত্তে সিয়াম পালন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায় তাতে সন্দেহ নেই। এজন্য একজন রোযাদারের যা অবশ্যই জানতে হবে তা নিম্নে কুরআন ও হাদীসের আলোকে তা একনজরে সংক্ষেপে উপস্থান করা হলো।

সিয়ামের মাসে করণীয় বিষয়সমূহ
রমযান আসার পূর্বে এই দোআ পড়া- اللَّهُمَّ بَارِكْ لنا فِيْ رَجَبَ وَشَعْبان وبلغنا رَمَضَان  হে আল্লাহ, আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন এবং রমযান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। 

রমদ্বানের চাঁদ দেখার সাথে সাথে পড়া- اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ وَالإِيمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالإِسْلاَمِ وَالتَّوْفِيقِ لِمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى، رَبُّنَا وَرَبُّكَ اللَّهُআল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। হে আল্লাহ, আপনি এই নতুন চাঁদের (নতুন মাসের) সূচনা করুন কল্যাণ, নিরাপত্তা ও ঈমানের সাথে, শান্তি ও ইসলামের সাথে, এবং আমাদের প্রভু যা ভালবাসেন এবং পছন্দ করেন তা পালনের তাওফীকসহ। (হে নতুন চাঁদ) আমাদের ও তোমার প্রভু আল্লাহ।
মুসলিম, প্রাপ্ত বয়স্ক, বুদ্ধিমান, মুক্বিম ও সুস্থ্য ব্যক্তির সাওম পালন করা।
মুসাফির ব্যক্তির যদি সাওম পালনে কষ্ট না হয়, তাহলে তার জন্য সাওম পালন করা।
সময় মতো সাহরী খাওয়া।
সাহরী (শেষ ওয়াক্তে) দেরী করে খাওয়া।
সাহরীর সময়কে ইবাদতের কাজে লাগানো।
সময় মতো ইফতার করা।
অতিরঞ্জিত সাবধানতার নামে ইফতার বিলম্ব না করা।
খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা।
ইফতারের সময় নিম্নোক্ত দোআটি পড়া-اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ   হে আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টির জন্যই সাওম পালন করেছি এবং আপনার রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।
বেশী বেশী করে কুরআন পাঠ করা, সালাত আদায় করা, যিকর ও দোআ পড়া।
ইবাদতের তাওফীক কামনা ও আল্লাহর দয়া অনুধাবন করা।
বেশী বেশী দান খয়রাত করা।
ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা।
সময় মত যাকাত, ফিতরা ও সাদাকাহ দেয়া।
উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা।
অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকা।
রুটিন করে সময়টাকে কাজে লাগানো।
দুনিয়ার ব্যস্ততা কমিয়ে দেয়া।
খাওয়া দাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য রক্ষা করা।
ফজর উদয় হওয়ার পুর্বেই মনে মনে বাংলায় সাওম এর নিয়ত করা। 
আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।
শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য সাওম পালন করা।
সাওম পালনে লোক দেখানোর ইচ্ছা অনূভূতি না রাখা।
সাওম, সেহরী, ইফতার ও তারাবী সকল ইবাদত রাসূলের সুন্নাত মোতাবেক পালন করা।
মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি ও ঝগড়া-বিবাদসহ সকল অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা।
চোখ, কান, জিহবা ও হাত পা সকল ইন্দ্রীয়কে অন্যায় কাজ থেকে হিফাযত রাখা।
তারাবীহসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা।
মিথ্যা না বলা।
গীবত ও চোগলখোরী না করা।
কোনো বিষয়ে কাউকে ধোঁকা না দেয়া।
অশ্লীল গান গাওয়া ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকা।
সকল প্রকার হারাম কাজ-কর্ম পরিহার করা।
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা।
ইসলামকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করা।
সাওম অবস্থায় পাপাচার ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা।
সকল হুকুম আহকাম পালনে রাসূলে সুন্নাতের অনুসরণ করা।
সাওম ভঙ্গের সহায়ক কাজ কর্ম পরিহার করা।
অজানা ভুলের জন্য সাওম ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় অন্তরে পোষণ করা।
সাওমের প্রতিদান পাওয়ার আশা পোষণ করা। 
সিয়ামের মাসে বর্জণীয় বিষয়সমূহ:
সাওম অবস্থায় সহবাস করা।
বীর্যপাত করা; তবে স্বপ্নদোষ হলে সাওম ভঙ্গ হবে না।
ইচ্ছাকৃত পানাহার করা; তবে ভূলক্রমে পানাহার করলে সাওম ভঙ্গ হবে না।
ইচ্ছাকৃত মুখভরে বমি করা।
গর্ভবর্তী নারী, দুগ্ধদাত্রী নারী; যার সাওম পালনের দ্বারা নিজের বাচ্চার জীবনাশংকা রয়েছে ও হায়েয অথবা নিফাসরতা রমনীর সাওম পালন করা। তবে সুস্থ হওয়ার পর কাযা করতে হবে।
ইচ্ছাপূর্বক পানাহার করা।
ধুমপান করা।
স্বেচ্ছায় বমি করা।
থুথু জমা করে গিলে ফেলা অথবা কাশি গিলে ফেলা।
গড়গড়ার সাথে কুলি করা।
বিনা প্রয়োজনে খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করা।
বাচ্চাকে খাদ্য চিবিয়ে দেয়া।
মহিলাদের হায়েয ও নিফাস অবস্থায় রোযা রাখা; তবে সাওম কাযা করতে হবে।

মাহে রামাদ্বান একটি ঈমানী পাঠশালা, সারা বছরের পাথেয় উপার্জন, সারা জীবনের মাকসাদকে শানিত করার জন্যে এটি একটি রুহানি ময়দান। যে ব্যক্তি মাহে রামাদ্বানে নিজেকে সংশোধন করতে পারল না সে আর কখন নিজের জীবন গঠন করবে? মাহে রামাদ্বানই এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাতে আমরা নিজেদের আমল, শরিয়ত পরিপন্থী আচার ব্যবহার পরিত্যাগ ও চরিত্র সংশোধন করে নিতে পারি। তাই আসুন আমাদের নিজেদের অবস্থার সার্বিক পরিবর্তন করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে তাক্বওয়া অর্জনের এ মাসে সঠিকভাবে সাওম পালন এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আমিনের সন্তুষ্টি হাসিলের প্রানান্তকর চেষ্ট করি।
 আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

(উপরোক্ত লেখাটি রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে সাওম পালন করতেন বই থেকে চয়নকৃত)

লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও গবেষক
শিক্ষক
জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজসিলেট।
মোবাইল: 01712374650
ইমেইল: zubairjcpsc@gmail.com
facebook: Imdadul Haque Zubair
Facebook Page ইমদাদুল হক যুবায়ের




শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here