Friday, May 22, 2020

সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার ঈদুল ফিতর

 

।। ইমদাদুল হক যুবায়ের।।

মানবজীবনের পরিপূর্ণ জীবন বিধান ইসলাম। মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তাই হলো ইসলামের বিধান। ইসলাম মানুষদেরকে নিরানন্দ, কঠোর ও অনুৎফুল্ল হতে নিরুৎসাহিত করে, মানবীয় প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আনন্দ উৎসব করতে নির্দেশ দেয়। ইসলাম শুধুমাত্র দৈহিক বা জৈবিক আনন্দ ফুর্তির উৎসাহ না দিয়ে মানুষের প্রকৃতির সাথে মিল রেখে দৈহিক-জৈবিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিক আনন্দের সমন্বয়কে উৎসাহিত করে। ইসলাম ঈদের  আনন্দকে মানবতা, আধ্যাত্মিকতা ও সামাজিকতার সাথে সমন্বিত করেছে। একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর নামক উৎসব পালনের ব্যবস্থা করেছে ইসলাম।

'ঈদ’ আরবি শব্দ। এটা আরবি শব্দ عاد يعود  থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যার অর্থ ফিরে আসা। অনেকে বলেন এটা আরবি শব্দ العادة আদাত বা অভ্যাস থেকে উৎপত্তি হয়েছে। কেননা মানুষ ঈদ উদযাপনে অভ্যস্ত। যেহেতু এ দিনটি বার বার ফিরে আসে তাই এর নাম ঈদ। এ শব্দ দ্বারা এ দিবসের নাম রাখার তাৎপর্য হলো- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দিবসে তার বান্দাদেরকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বার বার ধন্য করেন ও বার বার তার ইহসানের দৃষ্টি দান করেন। যেমন রামদ্বানে পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম উম্মাহর প্রতি রহমত হিসেবে ঈদ দান করেছেন। হাদীসে এসেছে-
عن أنس بن مالك رضى الله عنهما قال: قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة، ولهم يومان يلعبون فيهما، قال: ما هذان اليومان؟ قالوا كنا نلعب فيهما في الجاهلية، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: قد أبدلكم الله خيرا منهما : يوم الأضحى ويوم الفطر
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন মদিনাতে আগমন করলেন তখন মদিনাবাসীদের দুটো দিবস ছিল, যে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন এ দুদিনের কি তাৎপর্য আছে? মদিনা বাসীগণ উত্তর দিলেন : আমরা মূর্খতার যুগে এ দুদিনে খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দুদিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ) 

শুধু খেলাধুলা, আমোদ-ফুর্তির জন্য যে দুটো দিন ছিল আল্লাহ তাআলা  তা পরিবর্তন করে এমন দুটো দিন দান করলেন যে দিনে আল্লাহর শুকরিয়া, তার জিকির, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সাথে সাথে শালীন আমোদ-ফুর্তি, সাজ-সজ্জা, খাওয়া-দাওয়া করা হবে।


ঈদুল ফিতর আরবি শব্দ। অর্থাৎ সাওম ভাঙ্গার দিবস। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানগণ কর্তৃক পালিত উৎসব হলো ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দ-উৎসবের শুরুতে আল্লাহর কাছে সালাত আদায়, যাকাত ও ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের গরীবসহ পুরো সমাজকে ঈদের আনন্দে শরীক করার সুন্দর রীতি প্রবর্তন করেছে ইসলাম। পাশাপাশি ঈদের দিনে সামাজিক শুভেচ্ছা বিনিময়, পরস্পর সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করা, বেড়ানো, খেলাধুলা, হাসি-আনন্দ ইত্যাদি নির্দোষ বিনোদনের উৎসাহ প্রদান করেছে।

ঈদের মাঠে হেঁটে যাওয়া সুন্নাত। এছাড়া এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া ও অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসার নির্দেশনা রয়েছে আল-হাদীসে। কারণ, এতে সকলের সাথে দেখা সাক্ষাত হয়, ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও ভালোবাসা প্রকাশ পায়। ইসলামী আদব হলো ঈদের পরে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা। অভিবাদন করা মানুষের সুন্দর চরিত্রের একটি দিক। এতে খারাপ কিছু নেই। বরং এর মাধ্যমে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা ও দোয়া করা যায়। পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। ঈদ উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরীয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন :
(এক) রাসূলে করীম (সাঃ) এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন:
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
হযরত জুবাইর ইবনু নুফাইর বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণ ঈদের দিনে একে অপরকে বলতেন: তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকাআল্লাহ আমাদের এবং আপনার আমল কবুল করুন।(ইবনু হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী, খন্ড-২, পৃ. ৪৪৬)

(দুই) ঈদ মুবারক বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।

(তিন) প্রতি বছরই আপনারা ভাল থাকুন: وَكُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ বলা যায়। এ ধরনের সকল মার্জিত বাক্যের দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে   উল্লেখিত বাক্য (تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ) দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এ বাক্য ব্যবহার করতেন ও এতে পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া রয়েছে। আর যদি কেউ সব বাক্যগুলো দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে চায় তাতে অসুবিধা নেই। যেমন ঈদের দিন দেখা হলে বলবে-
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ، وَكُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ، عِيْدُكَ مُبَارَكٌ
অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার ও আপনার সৎ-কর্ম সমূহ কবুল করুন। সারা বছরই আপনারা সুখে থাকুন। আপনাকে বরকতময় ঈদের শুভেচ্ছা।’ আমরা সাধারণত ঈদ মোবারক ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকি। তাতে দুষের কিছু নেই তবে, সাহাবীগণ যে বাক্যগুলো বলতেন সেগুলো ব্যবহার করাই উত্তম।
 
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিনে শরীরচর্চা ও বিনোদনের জন্য খেলাধুলা ও আনন্দ উল্লাসের উৎসাহ দিয়েছেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন আর আমি মসজিদের মধ্যে ক্রীড়ারত হাবশীদের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। এ সময় হযরত ওমর (রা.) এসে তাদেরকে ধমক দেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে ওমর! ওদের ছেড়ে দাও। ছেলেরা, তোমরা নিশ্চিন্তে খেল। (মুসলিম, আস-সহীহ, খন্ড-২, পৃ. ৬০৯)

বর্তমানে ঈদের দিনে এবং ঈদ পূর্বাপর অন্যান্য সময়ে বিনোদন ও খেলাধুলার নামে বেহায়াপনা, বেল্লেলপনা ও অশ্লীলতা সমাজকে গ্রাস করেছে। এছাড়া শরীরচর্চামূলক খেলাধুলার স্থান দখল করছে অলস বিনোদন। বিনোদন বা আনন্দের নামে যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা টেলিভিশন, হিন্দি সিরিয়াল, কম্পিউটার বা মোবাইল নিয়ে বসে থাকাটা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বর্তমান প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মানে এগুলো বন্ধ করা খুবই জরুরী। এজন্য বিকল্প হিসেবে আমাদের কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের শরীর ও মনের সুষম উন্নয়নের জন্য শরীরচর্চামূলক নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো- ঈদের দিনে কঠিন পাপে লিপ্ত হওয়া। পুরোমাস সিয়াম ও কিয়ামুল্লাইল পালন করে ঈদের দিনে অনেকেই সিনেমা, গান-বাজনা ও বেহায়াপনায় লিপ্ত হন। কিশোরী, যুবতী ও বয়স্ক মহিলারা ঈদের পোশাক ও অলঙ্কার প্রদর্শনীর জন্য দেহ ও পোশাক অনাবৃত করে ঈদের বেড়ানোর জন্য রাস্তায় বের হন। মুসলিম নারীর জন্য পুরুষের সামনে ও বাড়ির বাহিরে বের হতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। যখন কোনো মহিলা মাথার চুল, গলা, কান, ঘাড়, কনুই ও বাজু ইত্যাদি অঙ্গ অনাবৃত রেখে বাহিরে বের হন তখন প্রতিটি মুহূর্তে তার আমলনামায় ব্যভিচারের মত একটি ভয়ঙ্কর মহাপাপ লেখা হয়। রমজানের একটি মাসে যা কিছু নেক আমল করা হয়েছে তা কি সবই আমরা এভাবে একদিনের পাপে নষ্ট করে দিব?

মেয়েদের জন্য যেমন মাথা ও দেহ আবৃত করা ফরয, তেমনি তাদের অভিভাবকদের ওপর ফরয দায়িত্ব হলো তাদেরকে পর্দা প্রথার ভিতরে নিয়ে আসা। ঈদের নামায আদায় করা ওয়াজিব। আপনার মাথায় টুপি দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু আপনার স্ত্রী ও মেয়ের মাথায় কাপড় দেওয়া ফরয। আপনি কি ফরয পরিত্যাগ করে সুন্নাত এবং ওয়াজিব আদায় করে জান্নাতী হতে চান? আমাদের সকলেরই উচিত সাধ্যমত আল্লাহর হুকুম মান্য করা ও অন্যদের করানোর প্রাণপন চেষ্টা অব্যহত রাখা।

ঈদকে তার আপন মহিমা থেকে হটিয়ে ভিন্নতর এক মাত্রায় উপস্থাপন করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে নবীন প্রজন্মের সামনে ঈদকে একটা হৈ-হুল্লোড়, রঙ-তামাশা, মার্কেটে গিয়ে শপিং করা, বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরাঘুরির উপলক্ষ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টায় ব্যস্ত কতক গোষ্ঠী। ঈদ যে রমজানের শিক্ষা-সংযম, ত্যাগ  ও তৌহিদি চেতনার পরিসীমার মধ্যে সম্পাদ্য একটি ধর্মীয় আচার ও ইবাদতের অংশ তা ভুলিয়ে দিয়ে নবীন প্রজন্মকে ভিন্নদিকে ধাবিত করানো হচ্ছে। যদিও বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এবারের ঈদ একটু ভিন্ন পরিবেশের জন্ম দিয়েছে। 

সংস্কৃতির এই আগ্রাসন থেকে ঈদকে তার আপন মহিমায় ফিরিয়ে আনা সময়ের অনিবার্য দাবি। ঈদের মূল চেতনা জাগ্রত করে শরীয়ত নির্ধারিত বিধি-বিধান পালন ও এ সম্পর্কিত সব কুসংস্কার দূর করতে হবে।

রমজানের পূর্ণ একটি মাস ইবাদত করে আমরা সালাতুল ঈদের মাধ্যমে রমজানকে বিদায় দিয়ে থাকি। কিন্তু রমজানের উপহার গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা উদাসীন। যেমন- রমজান আমাদের জন্য তিনটি উপহার দিয়ে যায়। সিয়াম, কিয়াম ও কুরআন। আমাদের উচিত প্রতিমাসে কিছু নফল সিয়াম পালনের চেষ্টা করা। রমজানের সিয়াম পালন করার পরে শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম পালন করলে সারাবৎসর সিয়াম পালনের সাওয়াব লাভের কথা হাদীসে এসেছে।

বছরের প্রতিদিনই কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদ আদায়ের চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া কুরআন তিলাওয়াত করা এবং কুরআন বুঝে পড়া গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রমজানে আমরা অন্তত একবার পূর্ণ কুরআন শুনেছি। কিন্তু না বুঝার কারণে আমাদের মধ্যে সত্যিকার সততা ও তাকওয়া হয়তো তৈরি হয়নি। তাই কোনো ভালো আলিমের কাছে সরাসরি কুরআন পড়ে বা ভালো আলিমদের অনূদিত কুরআনের অর্থানুবাদ পড়ে কুরআনের অর্থ বুঝার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। ইনশা আল্লাহ অর্থসহ কুরআন পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে বান্দার হৃদয়ের আনন্দ ও তৃপ্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনের ধারা পাল্টে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমরা রমজানে অনেক ভালো থাকার চেষ্টা করেছি। এমন চেষ্টা বাকী মাসগুলোতেও চালিয়ে যেতে হবে। নূন্যতম মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকতে অন্তত: ৬টি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।

এক: ঈমানকে বিশুদ্ধ করা।
দুই: সকল প্রকার শিরক, কুফর ও ঈমান বিরোধী চিন্তা চেতনা থেকে আত্মরক্ষা করা।
তিন: হালাল উপার্জনের উপর নির্ভর করা।
চার: হারাম ও অবৈধ উপার্জন বর্জন করা।
পাঁচ: যে কোনো পরিস্থিতিতে যেভাবেই সম্ভব পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করা।
ছয়: হক্কুল ইবাদ বা মানুষের অধিকার সঠিকভাবে আদায়ের চেষ্টা করা। কারণ, আল্লাহর হক্ক আদায়ে ক্রটি হলে সহজেই তাঁর নিকট থেকে ক্ষমা পাওয়ার আশা করা যায়। কিন্তু মানুষের হক্ক নষ্ট করলে তার ক্ষমা পাওয়া খুবই কঠিন।

জীবনকে আল্লাহর পূর্ণ রহমত ও বরকতে ভরে তুলতে রাসূলুল্লাহ (সুা.) এর উম্মাত হিসেবে সকল মুমিনকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে হবে। আর তারা কোনো অন্যায় করে থাকলে তাদেরকে সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে অন্তর দিয়ে তাঁদের জন্য দুআ করতে হবে। কিন্তু কখনোই মুমিনের অন্যায়কে তার ঈমানের চেয়ে বড় মনে করে মুমিনকে হিংসা করা যাবে না। বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, হৃদয়কে হিংসামুক্ত করা জান্নাত লাভের এবং তাঁর সাথে জান্নাতে অবস্থানের অন্যতম পথ। সকল সৃষ্টির সেবা ও উপকার করতে পারলে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ করে সর্বোপরি সদা সর্বদা আল্লাহর যিকর, দুআ ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর দুরুদ সালাম পাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলেই ঈদুল ফিতর ও রমজানের প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়েছে বলে আশা করা যাবে।

স্বাভাবিকভাবেই মুসলমান প্রধান দেশ বাংলাদেশ হিসেবে ঈদ এখন গৌরবোজ্জ্বল, ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান করে নিয়েছে। মুসলমানদের ধর্মীয় তামাদ্দুন জাগ্রত হয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ, বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় বাংলাদেশের স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো রমজান আসার সাথে সাথে অপসংস্কৃতিকে টেলে দিয়ে ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে হামদ-নাত, হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা, ইসলামী প্রশ্নোত্তরপর্ব, সাহরী-ইফতার কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান ও সময়সূচি এবং আযান দিয়ে জানান দিচ্ছে এবং তার পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রচার করছে ঈদ ও সাওমের তাৎপর্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রবন্ধ। যা আমাদেরকে আশার আলো দেখাচ্ছে।
 
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এদেশে প্রতিবছর আসুক সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার ঈদ। বয়ে যাক সবার মাঝে আনন্দের উতসব। ধনী-গরীব, ফকীর-মিসকীন সবার মুখে ফুটুক তৃপ্তির হাসি।

পরিশেষে বলবো, যাচ্ছেতাই খুশী উদযাপনের নাম ঈদ নয়। সামষ্টিকভাবে ঈদের দিন খুশির দিন হলেও ব্যক্তির জন্য দিনটি আত্ম-সমালোচনা ও আত্ম-বিশ্লেষণের দিন। আল্লাহর দরবারে কার সিয়াম সাধনার প্রশিক্ষণ কবুল হল তা জানার উপায় নেই। তবে এর কিছু আলামত রয়েছে। যেমন যদি কারো তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে থাকে তবে সে গুনাহর কাজগুলো আর পুনরাবৃত্তি করবে না। এবং খারাপ কাজের পরিবর্তে নেক কাজ করার চেষ্টায় রত থাকবে। আর সিয়াম সাধনা কবুলের প্রধান আলামত তাক্বওয়ার অধিকারী হতে পারা। পরবর্তী ১১টি মাস আমার মন-মগজে ও চরিত্রে তাকওয়ার প্রকাশ ঘটবে- এটাই তো সিয়ামের সাফল্য। যদি কাজ-কর্মে বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন না ঘটে তাহলে ধরে নিতে হবে আমার এ সিয়াম সাধনা কোনো কাজে আসেনি। আজকের এই দিনে সিয়াম সাধনার শিক্ষার নির্যাস কতটুকু বলবৎ রাখতে পেরেছি এর উত্তর আমাদের প্রত্যেকের নিজ বিবেককে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে।

আমরা যদি রমজান, সিয়াম ও কুরআনের হক্ব যথাযথ পালন করতে পারি, তথাকথিত অনুষ্ঠান সর্বস্বতা থেকে আমাদের ঈদ সংস্কৃতিকে মুক্ত করে শরীয়ত নির্দেশিত মানব কল্যাণে জীবন পরিচালনা করতে পারি তবেই ঈদ তার নিজের প্রকৃতিতে ভাস্বর হয়ে উঠবে, বয়ে আনবে শান্তি সমৃদ্ধির স্পন্দন। মহান আল্লাহর কাছে আমরা দুআ করি তিনি যেনো আমাদের সকলের জীবনের প্রতিটি দিনকে ঈদের দিনের মতই আনন্দময়, পুন্যময় ও ভালোবাসাময় করে দিন। আমীন।

লেখক:
প্রাবন্ধিক ও গবেষক
শিক্ষক
জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজসিলেট।
মোবাইল: 01712374650
ইমেইল: zubairjcpsc@gmail.com
facebook: Imdadul Haque Zubair

Facebook Page ইমদাদুল হক যুবায়ের


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here