ইমদাদ বিন আফতাব: মানুষ তার কর্মে স্থায়ী হয় আর স্মৃতিতে বেঁচে থাকে।
মানুষের জীবনের দু’টি অধ্যায়, একটি দুনিয়ার জীবন অপরটি আখেরাতের জীবন।
দুনিয়ার জীবনে যা আমল করবে তার প্রতিদান আখেরাতের জীবনে পাবে। যে দুনিয়ায় ভালো কাজ
করবে, সে আখেরাতে এর উত্তম প্রতিদান পাবে, আর যে মন্দ কাজ করবে সেও এর বদলা পাবে।
আমরা জানি, মানুষের
মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার আমল করার কোনো ক্ষমতা থাকে না। তার সব আমল থেকে যায়।
কিন্তু এমন কিছু আমল রয়েছে যেগুলো দুনিয়ার জীবনে করলে মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তি
কবরেও সে আমলের সওয়াব পেতে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে হয়েছে, আমিই তো মৃতকে জীবিত করি, আর লিখে রাখি যা তারা
অগ্রে প্রেরণ করে এবং যা পিছনে রেখে যায়। আর প্রতিটি বস্তুকেই আমি সুষ্পষ্ট কিতাবে
সংরক্ষণ করে রেখেছি। (সূরা ইয়াসিন:১২)
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না-
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না-
১. সদকায়ে জারিয়া,
২. এমন জ্ঞান (ইলম)- যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়
ও
৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে।– (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং: ৪৩১০)
এমন ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা দেয়া যা মানুষের জন্য উপকারী এবং কল্যাণকর। যে ইলম মানুষকে হেদায়েতের দিকে নিয়ে যায়। মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় এবং জান্নাতের পথে চলতে নির্দেশ করে। এ ধরনের ইলম শিক্ষা দেয়ার কারণে মৃত ব্যক্তি কবরে এর সওয়াব পাবেন। কোরআন, হাদিস, তাওহিদ, আখেরাত, হালাল-হারাম, বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া, মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান শিক্ষা দেয়া এবং দুনিয়া পরিচালনা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দেয়া এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মানুষকে কোনো ইলম শিক্ষা দিবে, সে ওই ইলম অনুযায়ী আমলকারীর সমতুল্য প্রতিদান পাবে; অথচ আমলকারীর প্রতিদানে কোন কমতি হবে না।- ইবনে মাজা
সু-সন্তান বলতে ঈমানদার সন্তান রেখে যাওয়া। যারা মাতা-পিতা বেঁচে থাকা অবস্থায় তাদের অনুগত যেমনটি ছিল, তাদের মৃত্যুর পরও তারা মাতা-পিতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আবু উমামাতা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর ৪টি আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকে-
১. যে ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দিল তার
সওয়াব;
২. ভালো কাজ চালু করার ফলে তাকে যারা অনুসরণ
করল তার সওয়াব;
৩. যে ব্যক্তি এমন সদকা করলো, যা প্রবাহমান থাকে তার সওয়াব, ও
৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া- যে তার জন্য
দোয়া করে। -মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং : ২২২৪৭
স্রষ্টার এ সৃষ্ট জগতে আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে
স্রষ্টা মানুষকে শ্রেষ্টত্ব প্রদান করেছেন মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, বিবেচনা, মেধা, প্রজ্ঞা ইত্যাদির
সম্বন্বয় প্রদানের মাধ্যমে। মানুষের অমরত্ব লাভের সুযোগ নেই। কিন্তু মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত
গুণাবলীর মধ্য দিয়ে তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে দীর্ঘ দিন মানব মনে স্থান করে নেয়ার সক্ষমতায়
অমর হয়ে থাকেন। বলছিলাম মাওলানা ওলিউর রহমান’র কথা। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী।
যার প্রমাণ আমরা পাই তিনির অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও তীক্ষ্ণ ধী শক্তির পরিচয়
সমৃদ্ধ তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এলাহাবাদ (তেলিকোনা) আলিম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
আজ এখান থেকে শিক্ষা অর্জন করে অনেকে হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত সমাজে।
মাওলানা ওলিউর রহমান জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালের
১ জুলাই বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নস্থ এলাহাবাদ (তেলিকোনা) গ্রামে পিতা মরহুম মোশাররফ আলী
ও মাতা মরহুমা তেরাবান বিবি দম্পতির ঔরসে। নিজ গৃহে পিতামাতার তত্ববাবধানে স্থানীয়
মক্তবে কুরআন শিক্ষাসহ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন কান্দিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সে সময় বিশ্বনাথের আলেম শিরমণি মরহুম মাওলানা গোলাম হোসেন প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হন
সৎপুর কামিল মাদ্রাসা। যে ক’জন ছাত্র নিয়ে সৎপুর মাদ্রাসার যাত্রারম্ভ হয় মরহুম মাওলানা
ওলিউর রহমান তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন। অর্থাৎ সৎপুর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্র
হচেছন মাওলানা ওলিউর রহমান।
আর এ মাদ্রাসা থেকেই ১৯৬৭ সালে মাওলানা ওলিউর রহমান
কামিল পাশ করেন। তিনির ওস্তাদ মাওলানা গোলাম হোসেনের নির্দেশনায় বুরাইয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠালগ্নে
এ মাদ্রাসার মুতামিম হিসেবে যোগ দেন। এক বৎসরের মাথায় ১৯৬৮ সালে বুরাইয়া মাদ্রাসাকে
দাখিল পর্যন্ত উন্নীত করেন এবং ঐ বৎসরই যুগল জীবনে আবদ্ধ হন। অর্থ্যাৎ বিয়ে করেন সিলেটের
একজন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ সৎপুরের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মরহুম গোলাম হাফিজ এর
প্রথমা কন্যা মোছাম্মৎ রাবেয়া আক্তারের সাথে পরিণয় সুত্রে হন আবদ্ধ হন। সাংসারিক জীবনে
পা দিলে ও জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা মোটেই বাধাগ্রস্থ করতে পারেনি। তিনির আগ্রহ ও উৎসাহে
অভিভুত হয়ে সিলেটের খ্যাতিমান মুফতি সামছুল হক ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হবার অনুপ্রেরণা
যোগালে ওলিউর রহমান তা গ্রহণে হয়ে উঠেন অতি উৎসাহী।
ওলিউর রহমান ভাবতেন “শিক্ষাই হচ্ছে মানুষের শক্তি। ভাষার মাধ্যমেই সেই শিক্ষা সম্ভব হয়। জীবনের ব্যাপক সময় ধরে শিক্ষা
গ্রহণ করতে হয়। শিক্ষার শেষ নেই।” মন্তব্যকে অনুসরণ ও লালন করেই ভর্তি হন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার
ফিকাহ বিভাগে। ফিকাহ বিভাগে কামিল পরিক্ষায় ১৯৬৮-৬৯ তিনি তারঁ মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে
লাগিয়ে অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনে সক্ষম হন। এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই মাওলানা
ওলিউর রহমানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বনফুলের সে বিখ্যাত উক্তি অত্যন্ত ফলপ্রসু। বনফুলের
সে উক্তিটি হচ্ছে- “সমাজের কল্যাণে মানুষ নামক ব্যক্তিটির ব্যক্তিত্ব যে উপায়ে সম্যকরুপে
বিকশিত হয় তার নামই শিক্ষা।” বাক্যটি পুরোপুরি
ওলিউর রহমানের জীবনে সফল বাস্তবায়নের পরিচয় আমরা পাই। এদিকে ১৯৬৯ সালে মাওলানা ওলিউর
রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রমে বুরাইয়া মাদ্রাসা দাখিল স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯৭০ সালে
আলিম ক্লাস খোলার ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করেন।
চলবে -------
লেখক :
নির্বাহী সম্পাদক,
মাসিক প্রান্তিক জনপদ।
0 coment rios:
You can comment here