Saturday, May 30, 2020

পিতা আল্লামা এটি এম ওলিউর রহমান রহ. এর দেখানো পথেই হাটঁছেন ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান, দ্বিতীয় পর্ব


পিতা আল্লামা এটি এম ওলিউর রহমান রহ. এর দেখানো পথেই হাটঁছেন ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান,  দ্বিতীয় পর্ব

পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর --------

প্রথম পর্বের লিংক



ইমদাদ বিন আফতাব:
ছাত্র জীবনেই মাওলানা ওলিউর রহমানের মনে রেখাপাত করে পরোপকার , সমাজ হিতেশী কর্মকান্ড, মানুষকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলা। এ সকল কাজের পরিচয় আমরা বিভিন্ন সময় পেয়েছি তিনির জীবনালেখ্য পর্যালোচনায়। তিনির সংস্পর্শে যিনি গমণ করেছেন তাঁকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন , অনুপ্রাণিত করেছেন পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। বুরাইয়া মাদ্রাসার সফলতা ও অগ্রযাত্রার পাশাপাশি তিনি নিজ এলাকা নিয়ে ও ভাবতেন আন্তরিক সুহৃদ্যতা নিয়ে। তার উজ্জল প্রমাণ তিনি পাখিচিরী নিবাসী মরহুম সাজিদুর রহমান ও নিজ গ্রামের অধিবাসী হাজী হুসিয়ার আলীর সার্বিক সহযোগিতা এবং এলাকাবাসীর উৎসাহে স্থানীয় গণ্যমান্য মুরবিবয়ানদের নিয়ে নিজ গ্রাম তেলিকোনায়, “ (এলাহাবাদ) তেলিকোনা ফুরকানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠা করে তা বিভাগীয় মঞ্জুরী লাভ করান।
১৯৭০ সালে নিজ বাড়িতে তাঁর পিতা মরহুম মোশাররফ আলী নামানুসারে মশরাফিয়া এইডেড বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এলাকায় নারী শিক্ষার দ্বার উম্মোচন করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে শুরু হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিজ গ্রামের মরহুম তমিজ উল্লাহ্ সাহেব ভুমি দান করলে তিনি উক্ত ভুমিতে একটি অবৈতনিক প্রাইমারী স্কুল স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রুপে স্থায়িত্ব পায়। এখানে একটি কথা উল্লেখ করতেই হয়। ১৯৭২ সালে শিক্ষা বিভাগের নির্দেশে মশরাফিয়া এইডেড বালিকা বিদ্যালয় ও তেলিকোনা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় এ দুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান একীভুত হয়ে তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভালকি আলী নগরের আলহাজ আব্দুন নুর মাষ্টারের সুদৃঢ আন্তরিকতা , আর্থিক সহযোগিতা, দৌলতপুরের সুফী হাবিবুর রহমানের নির্দেশে ৭৩ সালে তেলিকোনা ফুরকানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে মাদ্রাসার নামে আংশিক পরিবর্তন এনে জামেয়া-এ-ইসলামিয়া তেলিকোনা মাদ্রাসা নামকরণ করে দাখিল পর্যন্ত উন্নীত করেন। ১৯৮১ সালে এ প্রতিষ্ঠানে এসে যোগদান করেন সিলেটের অন্যতম এক শিক্ষাবিদ মাওলানা কাজী শাহেদ আলী সুপার হিসেবে।
১৯৮৩ সালে জামেয়া-এ-ইসলামিয়া (এলাহাবাদ) তেলিকোনা মাদ্রাসা দাখিলের অনুমতি লাভ করে এবং এমপিও ভুক্ত হয়। পহেলা জুলাই ১৯৯৮ সালে আলিম ক্লাস খোলার অনুমতি প্রাপ্ত হয়। ১৯৯৯ সালে জামেয়া-এ-ইসলামিয়া নাম পরিবর্তন করে এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা নামকরণের মাধ্যমে আলিম ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হয়। 

পহেলা জুলাই ২০০২ সালে আলিম ক্লাসের স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৪ সালে এমপিও এর অন্তর্ভুক্তি লাভ করে। তবে এতসবের নেপথ্যে যিনি নিরলস সাহায্য, সহযোগিতা ও অক্লান্ত পরিশ্রম প্রদান করে তেলিকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এলাহাবাদ আলিম মাদ্রাসার উন্নতি, অগ্রগতি ও সফল অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে উত্তর বিশ্বনাথ বাসীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ গঠনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে গেছেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি হচেছন মাওলানা ওলিউর রহমান। আমি মনে করি তিনি একজন সফল ও সার্থক মানুষ। এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যত দিন শিক্ষার আলো বিলিয়ে সুনাগরিক তৈরী করবে, দেশ ও জাতীকে অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে নেবে, ততদিন মাওলানা ওলিউর রহমানের কীর্তি গাঁথা স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে। তিনির স্বপ্ন সমাজ যেন আলোকময় প্রভায় উদ্ভাসিত হয় আগামীর অগ্রযাত্রায় আলোকিত মানুষ সৃষ্টির মাধ্যমে।

এখানেই কিন্তু মাওলানা সাহেবের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল না। অথবা থেমে থাকেননি। ২০০১ সালে মাওলানা ওলিউর রহমান তিনির প্রথম পুত্র তরুন আলেম মাওলানা নুরুর রহমানকে অনুপ্রাণিত করে গঠন করেন আর-রহমান এডুকেশন ট্রাষ্ট । এ ট্রাষ্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজ সেবামুলক কার্যক্রম পরিচালিত হচেছ।

ইমাম মাওলানা এম. নরুর রহমান ১৯৭৯ সালের ৩০ জানুয়ারী, বুরাইয়া কামিল মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম পিতা হযরত মাওলানা এটি এম ওলিউর রহমান (রহ.) ও শিক্ষিকা মাতা রাবেয়া আক্তারের ঔরষে সভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে মাধবপুরের হাফিজ আকরাম আলী রহ. দ্বিতীয় কন্যা সালমা বেগমকে জীবন সঙ্গী করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। ২০০১ সাল থেকে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত ও দ্বীন ইসলামের প্রচারক হিসেবে বিলেতে স্ত্রী সালমা বেগম ও ৬ সন্তানসহ সপরিবারে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।স্ত্রী সালমা রহমান এমন এক মহিয়সী নারী যিনি তাকে পারিবারিক ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়ে সমাজ ও শিক্ষা কল্যাণ কাজে তাকে সর্বদা সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখান।


তিনি একজন সুলেখক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। তিনি স্থানীয় ও জাতীয় স্থানীয় প্রিন্ট ও অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন পত্রিকায় কুরআন ও হাদীসের দলীল ভিত্তিক ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে লিখে যাচ্ছেন। তার রচনাসমূহ পড়ে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ ইসলামের অনেক মৌলিক বিষয় সম্পর্কে সহজে জানতে পারছে।
এছাড়া শিশুতোষ ইসলামী বইসহ ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ২০টি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং ৯টি বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ.কে এর ইমাম ও খতিব হিসেবে সুনামের সাথে দীর্ঘদিন থেকে তিনি দ্বীনি খেদমতের এ মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি একজন সুবক্তা, শিক্ষিত সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে রয়েছে তার গভীর সম্পর্ক। তিনি একজন সমাজ চিন্তক।

জনাব এম. নুরুর রহমানের এ সকল বরেণ্য কাজের পিছনে যাদের একান্ত পরামর্শ , সহযোগিতা পেয়ে তিনি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, তার বড় বোন ফাতিমা আখতার নার্গিস, ছোট ভাই মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, ছোট বোন নাজমা আখতার রায়হানা ও কনিষ্ট ভাই পীর আমিনুর রহমান। মাথার ছায়ার মতো যাঁরা সার্বক্ষণিক উৎসাহ দিয়ে কাছে আছেন তার ফুফু নেহার বানু, ফাফাতো বোন স্বপ্না খাতুন, মুরশেদা খাতুন ও ফুফাতো ভাই মুহিব উল্লাহ। যাদের অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।

নিকাহনামা সার্টিফিকেট ইউ.কে এর সত্যয়ানকারী চেয়ারম্যন ও শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে-
 সেক্রেটারি হিসেবে অত্যান্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান।শরীয়া কাউন্সিল চেয়ারম্যান হাকিম মাওলানা আব্দুল গাফফার, সহযোগি বন্ধু  হাফিজ মাওলানা ফখরুল ইসলাম তাকেঁ সার্বিক পরামর্শ, উৎসাহ ও সহযোগিতা করে তাকে কাজে অনুপ্রাণিত করেন। 


ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান শিক্ষানুরাগী এক সমাজসেবী মহান ব্যক্তি। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান অস্বীকার করার নয়। ছাত্র জীবন শেষ করেই তিনি তার পিতার প্রতিষ্ঠিত এলাহাবাদ ইসলামীয়া আলীম মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতা যার পেশা আর নেশা তিনি তো আর দমে থাকার পুরুষ নন। তিনি বিলেতে পাড়ি দিয়েই প্রতিষ্ঠা করেন আর রাহমান একাডেমি ইউ.কে। বর্তমানে তিনি এর প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সমাজের দরিদ্র মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী গরিব-বিধবা, এতিম, ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য প্রদানের জন্য তথা মানবতার কল্যাণে গড়ে তোলেন আর-রহমান এডুকেশন ট্রাষ্ট। তার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাষ্ট এর মাধ্যমে তিনি সমাজের দরিদ্র অসহায় মানুষের মধ্যে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার জন্য নিয়মিতই বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছেন। ২০০১ সালে আর রহমান এডুকেশন ট্রাষ্ট ইউকে শাখা প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সাথে আর্তমানবতার সেবায় দেশে ও বিদেশে কাজ করে যাচ্ছেন।
শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণে নিয়োজিত ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান সবার প্রিয় একটা নাম। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় দ্বীনের জন্য মহান রাব্বে কারীমের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে কাজ করে যেতে চান তিনি। সমাজে  ও মানবতার কল্যাণে অসহায় দরিদ্র মানুষের সহযোগীতা, অনাগ্রসর শিক্ষা বঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার মহান ব্রত নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করার স্বপ্ন দেখেন এ গুণি ব্যক্তি। নিজের বাবার দেখানো পথেই তিনি এগিয়ে যেতে চান সমাজ, শিক্ষা ও মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে।

চলবে -------

লেখক :
নির্বাহী সম্পাদক,
মাসিক প্রান্তিক জনপদ।

শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here