Tuesday, May 5, 2020

দোয়া মাওলার প্রিয় করে দেয়

 
।। মুন্সি আব্দুল কাদির।।
            
দোয়া একটি শব্দ, বান্দার আকুতি মিনতি কাকুতির নাম। আল্লাহর নিকট নিজের আরজি পেশ করাম নাম। নিজের দিনতা হীনতা, অসহায়ত্ব, দুর্বলতা, নিজের অভাব অনটন, প্রয়োজন পেশ করার নাম। দোয়া আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দেওয়ার নাম। দোয়া আলাদা একটি ইবাদাতের নাম। সকল ইবাদাতের সার বা মগজের নাম। দোয়া হল মাওলার কাছে কল্যাণকর সবকিছু চাওয়া আর ক্ষতিকর সব কিছু দুর করে দেওয়ার মিনতির নাম।

দোয়াকারী নিজের প্রয়োজনকে এমনকি নিজেকে আল্লাাহ তায়ালার ইচ্ছার কাছে সপে দেয়। তার দুঃখ ভারাক্রান্ত মন হালকা হয়ে যায়। সে আশা করে আজ হোক, কাল হোক তার প্রয়োজন পূরণ হবে। সে তখন বিচলিত হয় না। শত সমস্যার মধ্যেও সে থাকে শান্ত ধীর। সে মনে করে যিনি সব কিছুর মালিক, তিনিই কেবল বান্দার কামনা বাসনা পূরণ করতে পারেন। তাঁর কাছেই আমার নিবেদন যখন পেশ করেছি, আমার আর দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। সে  মাওলার উপর ভরসাকারী হিসেবে স্বীকৃত হয়। তার ইমান বেড়ে যায়। যতই সে দোয়া করে মাওলার প্রিয়পাত্র হতে থাকে।

দোয়াকারী কখনো অহংকারী হয় না। অহংকার নিয়ে কখনো কায়মনোবাক্যে দোয়া করা যায় না। যখন একজন বান্দা হাত পাতে তখন নিজেকে একজন ভিক্ষুক, আশ্রয়প্রার্থী, অভাবী, সাহায্যপ্রার্থী হিসাবেই উপস্থাপন করে। সে কখনো ই আমি এই, আমি সেই হিসাবে প্রকাশ করে না বা করতে পারে না। সে এই বলেই মাওলার নিকট হাত পাতে যে তিনি ছাড়া তার আর কোন আশ্রয়স্থল নেই। তিনি ছাড়া তার অভাব অভিযোগ দূর করার আর কোন শক্তি নেই।

একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদল বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, অতিক্রমকালে তাদের অবস্থা দেখে বললেন, তারা কি আল্লাহ তায়ালার কাছে নিরাপত্তা লাভের জন্য দোয়া করে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, তোমাদের মধ্যে যার জন্য দোয়ার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে (অর্থাৎ দোয়া করার তাওফিক দেওয়া হয়েছে) তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। যত দোয়া করা হয় তার মধ্যে আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রিয় দোয়া হল আল্লাহ তায়ালার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা, কল্যাণ চেয়ে দোয়া করা।

দোয়াকারী সব সময় বিনয়ী হয়, সে প্রার্থনাকারী বলে নিজেকে অবশ্যই হীন থেকে হীনতর মনে করে, নিজেকে ছোট মনে করে, তার মধ্যে অহংকার দানা বাধতে পারে না। হিংসাও তার থেকে অনেক দূরে থাকে। সে যখন মাওলার নিকট চাইতে থাকে তার দু'চোখ দিয়ে টপটপ করে পানির ফুয়ারা বইতে থাকে। তার হৃদয় ব্যাকুল হয়ে যায়। মাওলা ছাড়া তখন তার সামনে অন্য কিছু থাকে না। বিশেষত বান্দা যখন কঠিন মসিবতে পড়ে যায়। তখন দোয়াতে শিরকাতের গন্ধও থাকে না। তখন কায়মনোবাক্যে কেবলমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইতে থাকে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
আর তোমাদের রব বা পালনকর্তা বলেছেন, আমার নিকট দোয়া করো (আমার নিকট চাও) আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব, নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদাতে অহংকার দেখায় তারা অচিরেই লাঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা গাফির, আয়াত:৭)  

সুরা ইউনুসে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যখন কোনো দুঃখ দুর্দশা মানুষকে স্পর্শ করে তখন সে আমাদের ডাকে কাত হয়ে শায়িত অবস্থায় অথবা বসা অবস্থায় অথবা দাঁড়ানো অবস্থায়। কিন্তু যখন আমরা তার থেকে তার বিপদ দূর করে দেই, তখন সে ঘুরে বেড়ায় যেনো সে বিপদের সময় আমাদেরকে ডাকেইনি যা তাকে স্পর্শ করেছিল।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দোয়া ছাড়া কোন কিছু মানুষের ভাগ্য লিপি বদলাতে পারে না। নেক কাজ ছাড়া কোন কিছু আয়ু বাড়াতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন, তাকদীরের ফয়সালা থেকে বাঁচার জন্য কোন চেষ্টাই কাজে আসে না তবে দোয়া বিপদাপদেও উপকার দেয় এবং অনাগত বিপদেও কাজে দেয় (অর্থাৎ দোয়া অনাগত বিপদ রোখে দেয়)। নিঃসন্দেহে দোয়া আসন্ন বিপদ আটকে দেয়। কেয়ামত পর্যন্ত এই দোয়া ও বিপদের মধ্যে সংঘাত চলতে থাকে। (এভাবে মানুষ দোয়ার উছিলায় বিপদ থেকে বেঁচে যায়।
 
রাসুলল্লাল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করতে অপারগ হয়ে যেও না (অর্থাৎ দোয়া করা ছেড়ে দিও না) । কেননা দোয়া করতে থাকা অবস্থায় কেউ কোন বিপদে ধ্বংস হয়ে যাবে না। ইমানদারদের আর যদি কোন অবলম্বন বা অস্ত্র নাও থাকে তবে দোয়ার চেয়ে তার আর কোন বড় অস্ত্র নেই। 

বিভিন্ন সংকট, মসিবতে মুসলমানদের যখন কোন অবলম্বন ছিল না তখন দোয়ার মাধ্যমেই তারা আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছে। যখনই নিজের শক্তির উপর ভরসা করেছে তখনই সে হেরে গেছে। মুসলমানের চরিত্র হল সু সময়, দুঃসময় সর্বাস্থায় দোয়ার কাঙ্গাল থাকে। সে কখনো দোয়া ছেড়ে দেয় না। নিজেকে সে কখনও সম্পূর্ণ মনে করে না। সে সব সমসয় মাওলার মুখাপেক্ষি থাকে। নিজেকে সব সময় সে তুচ্ছ জ্ঞান করতে থাকে। সু সময়ে সে আল্লাহর শোকর আদায় করে তাঁর নিকট কাকুতি মিনতি পেশ করতে থাকে। দুঃসময়ে নিজের প্রয়োজন পেশ করে সাহায্য চাইতে থাকে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি চায় যে আল্লাহ তায়ালা বিপদাপদে যেন তার দোয়া কবুল করেন। সে যেন ভালো অবস্থায়ও অধিক পরিমাণে দোয়া করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, যে ব্যক্তি দোয়া করে না অর্থাৎ মাওলার নিকট মিনতি জানায় না আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি রাগাম্বিত হন।

দোয়াকারী সব সময় আল্লাহর আশ্রয়ের ছায়ায় চলতে থাকে । সে যে দিকে যায় রহমত যেন তাকে আগ বাড়িয়ে নেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে দোয়া করে না সে সবচেয়ে বেশী অলস আর যে সালাম দেয় না সে সবচেয়ে বড় কৃপণ।
 

লেখকঃ কবি ও প্রাবন্ধিক
সিনিয়র অফিসার ও জিবি ইনচার্জ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here