।। প্রফেসর
ডক্টর সৈয়দ মাকসুদুর রহমান।।
আরবি শব্দ الشرك পৌত্তলিকতা বা বহুঈশ্বরবাদ চর্চা করার পাপকে বুঝায় অর্থাৎ শির্ক
হল আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে সাব্যস্ত করা বা তার উপাসনা করা। আরবি ভাষায়
শিরক সংজ্ঞা এভাবে প্রদান করা হয়েছে,
الشرك بالله، مصطلح إسلامي يشير إلى جعل لله شَريكًا
في العبادة وملكه. ... والشرك والكفر قد يُطلقان بمعنى واحد وهو الكفر بالله أي: التكذيب
والجحود بالله، وقد يُفرَّق بينهما فيُخَص الشرك بعبادة الأوثان أو النجوم وغيرها من
المخلوقات مع اعترافهم بالله، فيكون الكفر أعم من الشرك
শাব্দিকভাবে এর দ্বারা এক বা একাধিক কোন কিছুকে
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও কর্তৃত্বের অংশীদার সাব্যস্ত করাকে বুঝায়। এটি তাওহীদের পরিপন্থী
একটি বিষয়। ইসলামে শির্ক হল একটি অমার্জণীয় অপরাধ যদি না মৃত্যু নিকটবর্তী হবার পূর্বে
আল্লাহর নিকট এই অপরাধের জন্যে ক্ষমা চেয়ে না নেয়া হয়। ইসলামের নির্ভরযোগ্য তথ্য
অনুসারে, আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা না চাইলেও মৃত্যুর পর নিজের বিচার
অনুসারে তার ইবাদতকারীদের যে কোন ভুল ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু শিরকের
অপরাধী দুনিয়াতে ক্ষমা না চাইলে কখনোই ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তা’আলা শিরকারীর
প্রতি রাগান্বিত হন। আল কুরআন এবং হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিস্কারভাবে
উল্লেখ করেছেন।
اعلم ـ وفقك الله لهداه ـ أن الشرك في اللغة هو
: اتخاذ الشريك يعني أن يُجعل واحداً شريكاً لآخر . يقال : أشرك بينهما إذا جعلهما
اثنين ، أو أشرك في أمره غيره إذا جعل ذلك الأمر لاثنين .
আল্লাহ তা’আলার গুণবাচক এবং পালনকর্তা
ও খালিক হিসেবে অন্যকে মান্য করা ও তার ইবাদত করা শিরক।
وأما في الشرع فهو : اتخاذ الشريك أو الند مع الله
جل وعلا في الربوبية أو في العبادة أو في الأسماء والصفات .
শিরক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার মানা, আল্লাহর অস্তিত্ব
ও গুণরাজিকে কাউকে শরীক করে নেয়া। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ বিভিন্নভাবে খোদার
খোদায়ীত্বে শরীক বানিয়েছে। মানুষ কখনও একাধিক খোদা বানিয়েছে। কখনও খোদাকে বিভিন্নভাবে
বিভক্ত করেছে। আবার কখনও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ও বস্তুকে খোদা বানিয়েছে। কখনও নিজেরাই
মূর্তি তৈরি করে তার পূঁজা করেছে। আবার কখনও কখনও শক্তিশালী মানুষকে খোদার মর্যাদা
দিয়েছে। আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কাউকে যে সকল উপাসনা করা হয়েছে সব কিছু শিরক
।
শিরক সম্পর্কে কুরআন:
শিরক সম্পর্কে কুরআন:
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأَرْضَ فِرَاشاً وَالسَّمَاء
بِنَاء وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقاً لَّكُمْ
فَلاَ تَجْعَلُواْ لِلّهِ أَندَاداً وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ: যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ
স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন
তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব
তোমরা জান। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২)
وَبَرَزُواْ لِلّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاء
لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ
عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللّهِ مِن شَيْءٍ قَالُواْ لَوْ هَدَانَا اللّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ
سَوَاء عَلَيْنَآ أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍ
অর্থ: সবাই আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং দুর্বলেরা বড়দেরকে
বলবেঃ আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম-অতএব, তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদেরকে
কিছুমাত্র রক্ষা করবে কি? তারা বলবেঃ যদি আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ দেখাতেন, তবে আমরা অবশ্যই
তোমাদেরকে সৎপথ দেখাতাম। এখন তো আমাদের ধৈর্য্যচ্যুত হই কিংবা সবর করি-সবই আমাদের জন্যে
সমান আমাদের শিরক করলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ২১)
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
لَقَدْ
كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ وَقَالَ الْمَسِيحُ
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُواْ اللّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ
بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ
مِنْ أَنصَارٍ
অর্থ: তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয়
মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর
এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি
আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয়
জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৭২) আল্লাহ তা’আলার নিকট সব
বর্তমান। তিনি ইরশাদ করেন,
وَيَعْبُدُونَ
مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـؤُلاء شُفَعَاؤُنَا
عِندَ اللّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللّهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلاَ
فِي الأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
অর্থ: আর উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা না তাদের
কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে, না লাভ এবং বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের
সুপারিশকারী। তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ে অবহিত করছ, যে সম্পর্কে
তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে? তিনি পুতঃপবিত্র ও মহান সে
সমস্ত থেকে যাকে তোমরা শরীক করছ। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০) শিরক সম্পর্কে আল্লা হ তাআলা
পবিত্র কুরআনে বলেন-
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ
يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
অর্থ: যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বললঃ হে বৎস, আল্লাহর সাথে
শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়। (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৩)
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ
اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء وَمَن
يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
অর্থ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর
সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি
ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ
আরোপ করল। (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮)
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ
وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ فَآَمِنُوا
بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ انْتَهُوا خَيْرًا لَكُمْ إِنَّمَا
اللَّهُ إِلَهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَا فِي الْأَرْضِ وَكَفَى بِاللَّهِ وَكِيلًا
অর্থ: "হে আহলে কিতাব! ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। আল্লাহ্
সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত সামান্যমাত্র অন্য কিছু বলো না। মারইয়ামের পুত্র ঈসা মাসিহ আল্লাহ্র
রাসূল ব্যতীত আর কিছু নয়, এবং তাঁর বাণী যা তিনি প্রেরণ করেছেন মরিয়মের নিকট এবং রূহ-তাঁরই
কাছ থেকে আগত। সুতরাং আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। আর একথা
বলো না যে, আল্লাহ্ তিনের এক, একথা পরিহার কর; তোমাদের মঙ্গল
হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয়। সন্তান-সন্ততি হওয়াটা তাঁর যোগ্য বিষয় নয়। যা
কিছু আসমান সমূহ ও যমীনে রয়েছে সবই তার। আর কর্মবিধানে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।" (সূরা
নিসা, আয়াত:১৭১) আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
مَن
يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَـٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَـٰنَ لَهُ ۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ
ۥ عِندَ رَبِّهِۦۤۚ إِنَّهُ ۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَـٰفِرُونَ ١١٧.٢٣
অর্থ: আর যে আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে, যে বিষয়ে তার
কাছে প্রমাণ নেই; তার হিসাব কেবল তার রবের কাছে। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না। (সূরা
মুমিনুন, আয়াত:১১৭) আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَجَعَلُوا لَهُ مِنْ عِبَادِهِ جُزْءًا ۚ إِنَّ
الْإِنْسَانَ لَكَفُورٌ مُبِينٌ
অর্থ: তারা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে আল্লাহর অংশ স্থির করেছে।
বাস্তবিক মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ। (সূরা যুখরুফ, আয়াত:১৫)
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ
ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ
وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا
অর্থ: "তোমরা আল্লাহর বন্দেগী বা দাসত্ব কর। কোন কিছুকে তার
শরীক করবে না। বাবা-মা আত্মীয় স্বজন এতিম বা দরিদ্র নিকট ও দূরের প্রতিবেশী সঙ্গী সাথী, পথচারী এবং
তোমাদের অধিকারভূক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক ও
অহংকারীকে ভালোবাসেন না।" (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬) আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ
করেন,
‘قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ
إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ
فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
অর্থ: অতএব যে ব্যক্তি তার রবের সঙ্গে সাক্ষাত লাভের আকাঙ্ক্ষা পোষণ
করে সে যেন নিষ্ঠার সঙ্গে সৎকর্ম সম্পাদন করতে থাকে আর তার রবের দাসত্ব, ইবাদ-বন্দেগিতে
যেন অপর কাউকেও শরীক না করে। (কাহাফ, আয়াত: ১১০) আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ
করেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ
أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلّهِ
وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلّهِ
جَمِيعاً وَأَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ
অর্থ: আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত
করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা
হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালোবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ
বেশী। আর কতইনা উত্তম হ'ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি
করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে
কঠিনতর। (সুরা বাকারা, আয়াত:১৬৫)
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ - بَلِ ادَّارَكَ
عِلْمُهُمْ فِي الْآَخِرَةِ بَلْ هُمْ فِي شَكٍّ مِنْهَا بَلْ هُمْ مِنْهَا عَمُونَ
অর্থ: (হে নবী) বল, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবী ও আকাশে
কেউ অদৃশ্যের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, কখন পুনরুজ্জীবিত করা হবে।"
(সূরা নমল, আয়াত:৬৫)
উপরের সকল আয়াত পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি বুঝা
যায় যে, আল্লাহ তাআলার নিকট কোন প্রকার শিরক গ্রহণযোগ্য হবে না বরং তার
প্রাপ্য পূর্ণ শান্তি। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি কলেবর বাড়তে
পারে তাই অনেক স্থানে অনুবাদ করা হয়নি। তবে সাধারণ পাঠকের জন্য অনেক হাদীস অনুবাদ করা
হয়েছে। হাদীসে এসেছে-
وعن
ابن عبَّاس - رضي الله عنهما - قال: كنتُ خلْفَ النبي - صلَّى الله عليه وسلَّم - يومًا
فقال: يا غلامُ، إني أُعلِّمك كلمات: احفظِ الله يحفظْك، احفظِ الله تجدْه تُجاهَك،
إذا سألتَ فاسألِ الله، وإذا استعنتَ فاستعن بالله ، واعلم أنَّ الأمة لو اجتمعتْ على
أن ينفعوك بشيءٍ لم ينفعوك إلا بشيء قد كتبه الله لك، وإنِ اجتمعوا على أن يضرُّوك
بشيء لم يضرُّوك إلا بشيء قد كتَبَه الله عليك، رُفِعت الأقلام وجفَّتِ الصُّحُف
অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন,
أنَبِئكُمْ
بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله . قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله
وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ.
অর্থ: ‘আমি কি তোমাদেরকে
সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর
রাসূল! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া৷’ বুখারীর অন্য এক বর্ণনায়
এসেছে-
وفي الحديث أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : (
من مات وهو يدعو من دون الله ندا دخل النار ) رواه البخاري
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন নবী করীম (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে এমন
অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, সে তাঁর সঙ্গে শিরক করে না, সে অবশ্যই বেহেশতে
প্রবেশ করবে। আর যে তাঁর সঙ্গে শিরক করা অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে, সে জাহান্নামে
যাবে।’
(মুসলিম, হাদীস নং ৪৪৯৭)
أن ينص النبي صلى الله عليه وسلم صراحة على أن هذا
الفعل من الشرك الأصغر : كما في المسند عن مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ
الشِّرْكُ الأَصْغَرُ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ : وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ؟
قَالَ :الرِّيَاء . إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ تُجَازَى الْعِبَادُ
بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ بِأَعْمَالِكُمْ فِي
الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً " وصححه الألباني في
السلسلة الصحيحة
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (সা.)
বলেছেন, কবীরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা, পিতা-মাতার
অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা। (বুখারী, হাদীস নং ২৭৭৪২)
عن
مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الأَصْغَرُ . قَالُوا يَا رَسُولَ
اللَّهِ : وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ؟ قَالَ :الرِّيَاء . إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ
وَتَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ تُجَازَى الْعِبَادُ بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ
كُنْتُمْ تُرَاءُونَ بِأَعْمَالِكُمْ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ
جَزَاءً " وصححه الألباني في السلسلة الصحيحة
رَوى البخاريُّ ومسلمٌ عنِ ابن عمرَ مرفوعًا قال - صلَّى الله عليه وسلَّم
:ألاَ إنَّ الله ينهاكم أن تحلِفوا بآبائكم، فمَن كان حالفًا فليحلفْ بالله أو ليصمت
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি গায়রুল্লার কসম করল, সে কুফুরী কিংবা
শিরক করল। ’হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.)
বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক পাপ হতে বিরত থাকবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস
করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে সাতটি পাপ কী কী? তিনি বললেন, এগুলো হল- আল্লাহর
সঙ্গে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, শরীয়তের অনুমোদন ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল
আত্মসাৎ করা, জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা এবং অচেতন পবিত্র ঈমানদার মহিলাদের
বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ আনা। (বুখারী-মুসলিম)
ورد التحذير من فتنة الدنيا وفتنة النساء، ففي صحيح
مسلم أن رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَخْوَفُ مَا أَخَافُ
عَلَيْكُمْ مَا يُخْرِجُ اللَّهُ لَكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا، قَالُوا: وَمَا
زَهْرَةُ الدُّنْيَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ « بَرَكَاتُ الأَرْضِ »
وقال صلى الله عليه وسلم محذراً: إن الدنيا حلوة
خضرة، وإن الله مستخلفكم فيها فينظر كيف تعملون، فاتقوا الدنيا واتقوا النساء، فإن
أول فتنة بني إسرائيل كانت في النساء. رواه مسلم.
وفي النهي عن تبرج النساء وذمه، جاء قوله صلى الله
عليه وسلم: خير نسائكم الودود الولود المواتية المواسية، إذا اتقين الله، وشر نسائكم
المتبرجات المتخيلات، وهن المنافقات لا يدخل الجنة منهن إلا مثل الغراب الأعصم. رواه
البيهقي وصححه الألباني في صحيح الجامع الصغير.
(কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন আল্লাহ তা'আলা শির্কের
বিপরীত তাওহীদের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন এভাবে, বলঃ তিনিই আল্লাহ। একক/অদ্বিতীয়।
وعن ابن عبَّاس - رضي الله عنهما - قال: كنتُ خلْفَ
النبي - صلَّى الله عليه وسلَّم - يومًا فقال: يا غلامُ، إني أُعلِّمك كلمات: احفظِ
الله يحفظْك، احفظِ الله تجدْه تُجاهَك، إذا سألتَ فاسألِ الله، وإذا استعنتَ فاستعن
بالله ، واعلم أنَّ الأمة لو اجتمعتْ على أن ينفعوك بشيءٍ لم ينفعوك إلا بشيء قد كتبه
الله لك، وإنِ اجتمعوا على أن يضرُّوك بشيء لم يضرُّوك إلا بشيء قد كتَبَه الله عليك،
رُفِعت الأقلام وجفَّتِ الصُّحُف
আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোন সন্তান নেই
এবং তিনিও কারও সন্তান নন, এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই। (সূরা ইখলাস)
শিরক দুই প্রকার:
১. শিরকে আকবার (বড় শিরক)
যা বান্দাকে ইসলাম গন্ডী থেকে বের করে দেয়৷ এ ধরণের
শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি শিরকের উপরই মৃত্যুবরণ করে, এবং তা থেকে
তওবা না করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে৷ শিরকে আকবর
হলো আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর
উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত আদায় করা, গায়রুল্লাহর উদ্দেশে কুরবানী করা, মান্নাত করা, কোন মৃত ব্যক্তি
কিংবা জিন অথবা শয়তান কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয়
পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব
ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখেনা সে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর
কারো কাছে আশা করা৷ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ
وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهَِ
অর্থ: তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের
কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার৷ আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর
কাছে আমাদের সুপারিশকারী৷’
(সূরা ইউনুস, আয়াত:১৮)
২. শিরকে আসগার (ছোট শিরক)
শিরক আসগার বান্দাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়না, তবে তার একত্ববাদের
আক্বীদায় ত্রুটি হবে৷ এটি শিরকে আকবারে লিপ্ত হওয়ার অসীলা ও কারণ৷ এ ধরনের শিরক দু’প্রকার:
প্রথম প্রকার: স্পষ্ট শিরক
এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে৷ যেমন-
عن مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ
الشِّرْكُ الأَصْغَرُ . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ : وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ؟
قَالَ :الرِّيَاء . إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ تُجَازَى الْعِبَادُ
بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ بِأَعْمَالِكُمْ فِي
الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً " وصححه الألباني في
السلسلة الصحيحة
কথার ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
আল্লাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ করা৷ রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ كَفَرَ أوْ أشْرَكَ.
‘যে ব্যক্তি গায়রুল্লার কসম করল, সে কুফুরী কিংবা
শিরক করল’ অনুরূপভাবে এমন কথা বলা যে, ”আল্লাহ এবং
তুমি যেমন চেয়েছ” ماشاء الله وشئت কোন এক ব্যক্তি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ”আল্লাহ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন” কথাটি বললে
তিনি বললেন,
”তুমি কি আমাকে আল্লাহ তা’আলা সাথে সমকক্ষ
স্থির করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন৷” অন্য হাদীসে এসেছে-
عن أبي هريرة قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَمْ تَرَوْا إِلَى مَا قَالَ رَبُّكُمْ ؟ قَالَ :
"مَا أَنْعَمْتُ عَلَى عِبَادِي مِنْ نِعْمَةٍ إِلَّا أَصْبَحَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ
بِهَا كَافِرِينَ يَقُولُونَ الْكَوَاكِبُ وَبِالْكَوَاكِبِ
আর একথাও বলা যে, ”যদি আল্লাহ
ও অমুক ব্যক্তি না থাকত” ৷ لولا الله و فلان উপরোক্ত ক্ষেত্রদ্বয়ে
বিশুদ্ধ হল নিম্নরূপে বলা –
”আল্লাহ চেয়েছেন, অতঃপর অমুক যেমন চেয়েছে” ماشاء الله ثم فلان ”যদি আল্লাহ না থাকতেন, অতঃপর অমুক ব্যক্তি না থাকত” لولا الله ثم فلان । কেননা অব্যয়টি বিলম্বে পর্যায়ক্রমিক অর্থের জন্য ব্যবহৃত
হয়৷ তাই ”এবং” শব্দের বদলে “তারপর” কিংবা “অতঃপর শব্দের
ব্যবহার বান্দার ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনস্ত করে দেয়৷ যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন,
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ
الْعَالَمِينَ -
অর্থ: তোমরা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুরই ইচ্ছা
করতে পারনা৷’
(সূরা তাকবীর, আয়াত:২৯)
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, সর্ব প্রকারের
শিরক থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদের ঈমান ও আমল সব বিফলে যাবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের
সবাইকে শিরকমূক্ত আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন ।
লেখক:
প্রফেসর, আল-হাদীস বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
0 coment rios:
You can comment here