সুহাইল আহমাদ (আবু গালিব)
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ জেলার প্রবেশধার ছাতক থানা, তারই অন্তর্গত
সুনামগঞ্জ সড়কের ধারণ বাজার থেকে উত্তর দিকে কাঞ্চনপুর গ্রাম। ঐ গ্রামে অনেক গণ্য-মান্য
সালিশ ব্যক্তিত্ব, হাফেজে কুরআন ও প্রবীণ আলেম ছিলেন। বর্তমানেও এই গ্রামের অনেক
আলেম, হাফেজে কুরআন, মাস্টার, শিক্ষক ও শিক্ষিকা
দেশ বিদেশের বিভিন্ন মাসজিদ মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন
পরিষদের সাবেক ও বর্তমান সদস্য অনেকই এই গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামে আজিজিয়া ইসলামিয়া
ভ্রাতৃ সংঘ নামে একটি সংগঠন প্রায় তিরিশ বছর ধরে ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে
আসছে।
প্রায় আটাশ বছর ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছে। বর্তমানে
এই সংগঠনের উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিল না হলেও গ্রামে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হওয়ায় মাদরাসার উদ্যোগে
মাঠে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন চালু রয়েছে। ওয়াজ মাহফিলের সুবাদে দেশের শীর্ষ স্থানীয়
আলেমদের পদচারণা ঘটতো এই গ্রামের আজিজ বাড়ির আঙিনায়। আলেমদের সুমধুর বয়ানে অনেকের হৃদয়ে
বয়ে আনে কুরআনি শিক্ষা। ব্যক্তি জীবনে ফুটে উঠে সুন্নাহর প্রতিচ্ছবি। ওয়াজের মায়া মাখা
কথার প্রভাবে অনেকে অনেক স্বপ্ন আঁকেন মনে। অনেক স্বপ্নের বাস্তব রূপের একটি রূপ ফুটে
উঠে ঐ গ্রামের ক্বারী আব্দুল বাসির ওরফে আসির আলী সাহেবের কাজে। নবী শিক্ষার সিলসিলা
জারি রাখতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাঞ্চনপুর গ্রামে আজিজ বাড়ির পাশে তিনি পঁয়ত্রিশ
শতক জমি দান করেন মাদরাসার নামে। উক্ত স্থানে ২০০৪ সালে তাঁর ছেলে মুফতি মাওলানা মুহি
উদ্দীন সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন একটি কওমী মাদরাসা।
এই মাদরাসাটিই বর্তমানে কাঞ্চনপুর মাদরাসা নামে
পরিচিত। মাদরাসার সুবিশাল, চোখ ধাঁধানো বিল্ডিং, সীমানা বাউন্ডারি, সুন্দর পরিবেশে
ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা পড়ার ব্যবস্থা খুবই চমৎকার ও পরিবেশ বান্ধব।
গ্রামে জামে মাসজিদ থাকলেও ছাত্রদের পাঁচবার মাসজিদে
যাওয়া আসার দূরত্বের বিবেচনায়, কর্তৃপক্ষ মাদরাসার বাউন্ডারির ভিতরে একটি মাসজিদের বিল্ডিং
এর ভিত্তি স্থাপন করে সাদ ডালাইর কাজ সম্পন্ন করেন। ইতোমধ্যে উক্ত গ্রামের মরহুম আব্দুল করিম সাহেবের ছেলেরা
মাসজিদ তাদের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দাবী করে তারা মাসজিদের কাজে বাধা প্রদান করেন।
তাদের দাবীর স্বপক্ষে জমির দলিল ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের জবাব শুনে বিষয়টির সুষ্ঠু নিষ্পত্তির
জন্য গ্রামের গণ্য-মান্য ব্যক্তিদের মধ্যে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে ও মাসজিদের কাজ জব্দ
রয়েছে। বিষয়টি যেহেতু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে, তাই সুশীল সমাজের
পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে উভয় পক্ষের কেউ যেন কোনো পক্ষের মানহানি ঘটে এমন কিছু সংবাদ
মাধ্যমে প্রচার না করে গ্রাম ও এলাকার ভাব মর্জাদা রক্ষা করে চলেন।
উল্লেখ্য যে উক্ত মাদরাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমৃত্যু
পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান মুফতি সিলেটস্থ দরগাহ মাদরাসার
সাবেক মুহতামীম মরহুম মাওলানা মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া রাহিমাহুল্লাহ। তিনির ওফাতের
পর বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে আছেন দরগাহ মাদরাসার মুহতামীম মাওলানা মুহিববুল হক গাছ
বাড়ির হুজুর।
যে কোনো বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে সুষ্ঠু সমাধানের
লক্ষ্যে সালিশদের নিরপেক্ষ ভুমিকাই মুখ্য বিষয়। এর পরেও সালিশ ব্যক্তিগণ রাসূল সা.
এর নিম্নের হাদীস থেকেও শিক্ষা নিতে পারি।
উম্মে কুলসুম বিনতে উকবাহ রা. আনহা থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন; আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, "ঐ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী
নয়, যে মানুষের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করার জন্য (বানিয়ে) ভালো কথা
পৌঁছে দেয় অথবা ভালো কথা বলে। (বুখারী ২৬৯২) রিয়াদুস সালিহিন।
আমারা অনেক চলছি এর বিপরীত। দুজনের মধ্যে বা দুপক্ষের
মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে বানিয়ে বা মিথ্যা কথা বলে বেড়াই। যা অত্যন্ত খারাপ ও ঘৃণিত
কাজ। গ্রাম্য বিচারক বা সালিশ ব্যক্তিত্ব, বিবদমান দুব্যক্তি বা দুপক্ষের
মধ্যে মিমাংসার লক্ষ্যে, রাসূল সা. এর এই হাদীসকে অনুস্বরণ করতে পারি।
আল্লাহ আমাদেরকে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার
জন্যে কবুল করুন।
আমিন।
ইমামঃ
আল-বির মাসজিদ, ইয়ারমুক
সৌদি আরব, তাবুক।
0 coment rios:
You can comment here