Saturday, May 9, 2020

মুসলিম হয়েও যে কারণে জাহান্নামে যেতে হবে : দ্বিতীয় পর্ব

 

।। মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, এই জান্নাত, জাহান্নাম কোনো রূপকথার গল্প নয়। এটি কঠিন বাস্তবতা। আপনি, আমি সহ পৃথিবীর সবাই একদিন না একদিন এই দুটির কোনো একটিতে গিয়ে পৌঁছাবই। আমরা যদি সত্যিই বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তা'লা আছেন, তাহলে আমাদের জেগে থাকার প্রতিটি মুহূর্ত চেষ্টা করতে হবে যে, কী করলে আমরা আল্লাহকে যথাসম্ভব খুশি করে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি পেতে পারি, এবং জাহান্নামের ভয়ঙ্কর আগুন যেন আমাদেরকে একদিনও স্পর্শ না করে।

পুরো আলোচনা বুঝতে প্রথম পর্ব একবার পড়ে আসা উচিত মনে করছি।

আসুন, তাহলে দেখা যাক এমন কী কী কাজ আমরা করছি যার কারণে মুসলিম হয়েও আমাদের জন্য জাহান্নামের সতর্কবাণী রয়েছে।

অহঙ্কার
মানুষ যখন নিজেকে সামর্থ্য কিংবা যোগ্যতার চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করে তখনই তার ভেতরে অহমিকা নামের অসৎ গুণ সৃষ্টি হয়।

অহঙ্কারী যে ধ্বংসপ্রাপ্ত- এর উদাহরণ হলো- ইবলিস শয়তান। আল্লাহ্ তা'লা কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন-
﴿وَإِذ قُلنا لِلمَلٰئِكَةِ اسجُدوا لِءادَمَ فَسَجَدوا إِلّا إِبليسَ أَبىٰ وَاستَكبَرَ وَكانَ مِنَ الكٰفِرينَ
অর্থাৎ, এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ 34)

অহঙ্কারী ব্যক্তির  জান্নাতে প্রবেশ করা নিষেধ। হাদীসে এসেছে-
﴿وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبَانَ بْنِ تَغْلِبَ، عَنْ فُضَيْلٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ ‏"‏ ‏.‏﴾
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ..... 'আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) বলেন যে, নাবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ১৭৫)

অহঙ্কারীর দিকে আল্লাহ্ তা'লা কিয়ামতের দিন রহমতের নজর দিবেন না। যেমন হাদীসে এসেছে-
﴿إِسْمَاعِيلُ قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ وَعَبْدِ اللهِ بْنِ دِينَارٍ وَزَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ يُخْبِرُونَه“ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَنْظُرُ اللهُ إِلٰى مَنْ جَرَّ ثَوْبَه“ خُيَلاَءَ﴾
ইবনু উমার হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সে লোকের দিকে দয়ার দৃষ্টিতে) দেখবেন না, যে অহঙ্কারের সাথে তার পরিধেয়) পোশাক টেনে চলে। [৩৬৬৫; মুসলিম ৩৭/৮, হাঃ ২০৮৫, আহমাদ ৫৩৭৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৪)

আত্মহত্যাকারী
আত্মহত্যা করা মহাপাপ। মানুষ না বুঝে নিজে নিজেকে হত্যা করে থাকে। ইসলামে নিরপরাধ মানুষ যেমন হত্যা নিষিদ্ধ, তেমনি আত্মহত্যাও নিষিদ্ধ। মানুষ নিজের প্রাণের মালিক নিজে নয়। প্রত্যেক প্রাণের মালিক মহান রাব্বুল আলামিন। তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। তিনি সব মানুষের জানের নিরাপত্তা দিয়েছেন।

ইসলামী আইন ও বিধানে আত্মহত্যাকে হারাম করা হয়েছে এবং তার পরিণতিতে বলা হয়েছে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির আত্মহত্যা করার পদ্ধতি অনুযায়ী তার যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছে-
﴿وَلا تَقتُلوا أَنفُسَكُم ۚ إِنَّ اللَّهَ كانَ بِكُم رَحيمًا﴾
অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর করুণাময়।(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)
অন্য দিকে অনেক হাদিস আত্মহত্যা এবং এর শাস্তি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে। রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ سَلاَّمِ بْنِ أَبِي سَلاَّمٍ الدِّمَشْقِيُّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، أَنَّ أَبَا قِلاَبَةَ، أَخْبَرَهُ أَنَّ ثَابِتَ بْنَ الضَّحَّاكِ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، بَايَعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَحْتَ الشَّجَرَةِ وَأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ بِمِلَّةٍ غَيْرِ الإِسْلاَمِ كَاذِبًا فَهُوَ كَمَا قَالَ وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَىْءٍ عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَيْسَ عَلَى رَجُلٍ نَذْرٌ فِي شَىْءٍ لاَ يَمْلِكُهُ ‏"‏ ‏.
সাবিত ইবনু যাহহাক (রাযিঃ) বলেন যে,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ................  যে ব্যক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করবে, কিয়ামাত দিবসে উক্ত বস্তু দ্বারা তাকে শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যক্তি এমন বস্তুর মানৎ করে যার মালিক সে নয়, এরূপ মানৎ কার্যকরী নয়।
(মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ২০৩, ইসলামিক সেন্টারঃ২১০)

অন্য হাদীসে রাসুলুল্লাহ  (সঃ) আত্মহত্যার শাস্তি সম্পর্কে বলেন-
﴿حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنَ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ فَحَدِيدَتُهُ فِي يَدِهِ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِي بَطْنِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ شَرِبَ سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَحَسَّاهُ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ‏"‏ ‏.‏﴾
অর্থাৎ, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কোন ধারাল অস্ত্র দ্বারা আত্নহত্যা করবে, সে অস্ত্র তার হাতে থাকবে, জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র দ্বারা সে তার পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি বিষপানে আত্নহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অবস্থান করে উক্ত বিষ পান করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি নিজকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে আত্নহত্যা করবে, সে ব্যাক্তি সর্বদা পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পতিত হতে থাকবে, এভাবে সে ব্যাক্তি সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (মুসলিম, হাদীস নং 201)

লোক দেখানো ইবাদত
লোক-দেখানো ইবাদত আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণার শামিল। ইরশাদ হয়েছে-
﴿إِنَّ المُنٰفِقينَ يُخٰدِعونَ اللَّهَ وَهُوَ خٰدِعُهُم وَإِذا قاموا إِلَى الصَّلوٰةِ قاموا كُسالىٰ يُراءونَ النّاسَ وَلا يَذكُرونَ اللَّهَ إِلّا قَليلًا﴾
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করে। আর তিনি তাদের সঙ্গে কৌশল অবলম্বনকারী। যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়মানুষকে দেখানোর জন্য। তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪২)

এই ধরনের ইবাদতের কোনো মূল্য নেই এবং এই আমল কোনো কাজে আসবে না। এটি একটি নিকৃষ্ট মানসিকতার কাজ। লোকে ভালো বলার জন্য, পরহেজগার বলার জন্য, মুমিন ভাবার জন্য এমন ইবাদত করা হারাম। রিয়া বা অহঙ্কারকে আরেকভাবে গোপন শিরক ও বলা হয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে আরো বলেন,
﴿وَقَدِمنا إِلىٰ ما عَمِلوا مِن عَمَلٍ فَجَعَلنٰهُ هَباءً مَنثورًا﴾
আমি (আল্লাহ্‌) ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য তারা যেসব আমল করবে, আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অত:পর সেইগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।(সূরা আল-ফুরকান: আয়াত: ২৩)

মনে রাখতে হবে যে, যখনই বান্দার আমল নষ্ট হয়ে যাবে তখন তার কাছে এমন কিছুই থাকবে না যা দেখিয়ে সে জান্নাতে চলে যাবে।বরং কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা'লার পরীক্ষায় তারা অকৃতকার্য হবে। হাদীসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ خَالِدِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِلاَلٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ يَكْشِفُ رَبُّنَا عَنْ سَاقِهِ فَيَسْجُدُ لَهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ وَمُؤْمِنَةٍ، وَيَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ فِي الدُّنْيَا رِئَاءً وَسُمْعَةً، فَيَذْهَبُ لِيَسْجُدَ فَيَعُودُ ظَهْرُهُ طَبَقًا وَاحِدًا ‏"‏‏.‏﴾
আদম (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমাদের প্রতিপালক যখন তাঁর পায়ের গোড়ালির জ্যোতি বিকীর্ণ করবেন, তখন ঈমানদার নারী ও পুরুষ সবাই তাঁকে সিজদা করবে। কিন্তু যারা দুনিয়াতে লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য সিজদা করত, তারা কেবল অবশিষ্ট থাকবে। তারা সিজদা করতে চাইলে তাদের পিঠ একখণ্ড কাঠফলকের মত শক্ত হয়ে যাবে। (বুখারি, হাদীস নং 4554)
লোক দেখানো আমল কেবল দুনিয়াতেই কিছু উপকারে আসতে পারে কিন্তু পরকালে কিছুই থাকবে না। যেমন হাদীসে এসেছে-
﴿مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ سُفْيَانَ حَدَّثَنِي سَلَمَةُ بْنُ كُهَيْلٍ ح و حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ سَلَمَةَ قَالَ سَمِعْتُ جُنْدَبًا يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ أَسْمَعْ أَحَدًا يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم غَيْرَهُ فَدَنَوْتُ مِنْهُ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ﴾
অর্থাৎ,  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোক শোনানো ইবাদাত করে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ইবাদাত করবে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন [মুসলিম ৫৩/৫, হাঃ ২৯৮৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৫)

হাদীসের তাৎপর্য হলো- কিয়ামাতের দিন আল্লাহ আমলকারীর আমল লোককে শোনানোর ও লোককে দেখানোর উদ্দেশ্যে করেছিল তা  প্রকাশ করে দিবেন।

অন্যায়ভাবে হত্যাকারী
যারা ইমানদার মুসলমান, তাদের বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ব্যাপারে তো কোরআনে রয়েছে আরও কঠিন ধমকি। ইরশাদ হয়েছে,
﴿وَمَن يَقتُل مُؤمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزاؤُهُ جَهَنَّمُ خٰلِدًا فيها وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذابًا عَظيمًا﴾
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।( সূরা নিসা, আয়াত: ৯৩)

এ আয়াত এ কথাই প্রমাণ করে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা বিচারে কোনো ইমানদারকে হত্যা করলে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম এবং সে আল্লাহর গজব ও অভিশাপের শিকার হবে আর তার জন্য রয়েছে কঠোর আজাব।

অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনাই নয়; ইসলামের দৃষ্টিতে পুরো মানব জাতির বিরুদ্ধে তা একটি ধ্বংসাত্মক কাজ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'লা  ইরশাদ করেন-
﴿مَن قَتَلَ نَفسًا بِغَيرِ نَفسٍ أَو فَسادٍ فِى الأَرضِ فَكَأَنَّما قَتَلَ النّاسَ جَميعًا وَمَن أَحياها فَكَأَنَّما أَحيَا النّاسَ جَميعًا ۚ
অর্থাৎ, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে দুনিয়ার সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে রক্ষা করল।(সূরা মায়িদা, আয়াত:৩২)

যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে হত্যা করল সে কুফুরি করল। হাদীসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ مَنْصُورٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا وَائِلٍ، يُحَدِّثُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم"‏ سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‏"‏‏.‏ تَابَعَهُ غُنْدَرٌ عَنْ شُعْبَةَ‏.‏﴾
অর্থাৎ, আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তাকে হত্যা করা কুফুরী। (বুখারি, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৫)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
আত্মীয় বলতে আমরা বুঝি আত্মিক সম্পর্ক, যিনি আমার সুখে সুখী, আমার দুঃখে দুঃখী, তিনিই আমার আত্মীয়। আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিধান। এ সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গোনাহ। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারীর জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে যেমন রয়েছে পুরস্কার, তেমনই এ সম্পর্ক ছিন্নকারীর জন্য রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের নিন্দা করেছেন এবং তারা মহান রবের অভিসম্পাতপ্রাপ্ত হবে বলে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
﴿وَالَّذينَ يَنقُضونَ عَهدَ اللَّهِ مِن بَعدِ ميثٰقِهِ وَيَقطَعونَ ما أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يوصَلَ وَيُفسِدونَ فِى الأَرضِ ۙ أُولٰئِكَ لَهُمُ اللَّعنَةُ وَلَهُم سوءُ الدّارِ﴾
অর্থাৎ, যারা আল্লাহর (ইবাদত করার) দেওয়া প্রতিশ্রুতির পর তা লঙ্ঘন করে, আর (আত্মীয়তার) সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।(-সূরা আর রাদ, আয়াত:২৫)
ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা মারাত্মক অপরাধ। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীকে আল্লাহ তা'লা অভিশাপ দিয়েছেন। আল্লাহ তা'লা বলেন-
﴿فَهَل عَسَيتُم إِن تَوَلَّيتُم أَن تُفسِدوا فِى الأَرضِ وَتُقَطِّعوا أَرحامَكُم أُولٰئِكَ الَّذينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُم وَأَعمىٰ أَبصٰرَهُم﴾
অর্থাৎ, ক্ষমতা পেলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে কলহ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ দেন। এরপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করে দেন।(সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত ২২-২৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন
﴿يايُّهَا النّاسُ اتَّقوا رَبَّكُمُ الَّذى خَلَقَكُم مِن نَفسٍ وٰحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنها زَوجَها وَبَثَّ مِنهُما رِجالًا كَثيرًا وَنِساءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذى تَساءَلونَ بِهِ وَالأَرحامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كانَ عَلَيكُم رَقيبًا﴾
অর্থাৎ-হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুই জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং আত্নীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।(সুরা নিসা, আয়াত: ০১)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না মর্মে হাদীসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، قَالَ إِنَّ جُبَيْرَ بْنَ مُطْعِمٍ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ ‏"‏‏.﴾‏
অর্থাৎ, যুবায়ের ইবনু মুতইম হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [মুসলিম ৪৫/৬, হাঃ ২৫৫৬, আহমাদ ১৬৭৩২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৫)

আমরা আল্লাহ্ তা'লার কাছে ভিক্ষা চাই যে, এক মুহূর্তের জন্যও যেন তিনি আমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি উপভোগ না করান এবং জাহান্নামে নিয়ে যায় এমন খারাপ কাজ থেকে যেন সারা জীবন আমাদেরকে  মুক্ত রাখেন। যত প্রকার ভালো কাজ আছে আল্লাহ্ তা'লা আমাদেরকে সেগুলি করার তাওফিক দান করুন এবং সকল মন্দ কাজ থেকে হেফাজত রাখুন। আমিন।

লেখক: 
শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

মোবাইল: 01712353643


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here