।। মুহাম্মদ শফিকুল
ইসলাম।।
পরকালে মুক্তির জন্য ঈমান আনা অপরিহার্য। তাই কাফিররা
চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। কিন্তু এমন কিছু কাজ আছে, যেগুলো করলে
মুসলমান হয়েও প্রথমবারে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। তার ওই গুনাহর কারণে প্রথমে জাহান্নামে
শাস্তি ভোগ করবে। এরপর আল্লাহ চাইলে তারা জান্নাতে যাবে।
মুসলিম বলতে আমরা সে সকল ব্যক্তিকে বুঝি যারা আল্লাহ্
ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছেন, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত আদায়
করেন এবং কুফুর ও শিরক থেকে মুক্ত। উক্ত বিষয়গুলি আজকের আলোচনার বাহিরে। উপরোক্ত বিষয়গুলিই
তো মুসলিমের প্রদান মানদণ্ড। কারো মধ্যে এগুলি না থাকলে আজকের আলোচনায় আমরা তাকে মুসলিমের
কাতারে শামিল করব না। যদিও এ বিষয়ে অনেক আলোচনা পর্যালোচনা আছে।
এখন আসি আমাদের মূল আলোচনায়। আমরা জানি কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এই বিষয়গুলি ঠিকঠাক আদায় করতে পারলেই আমি একজন সাচ্চা মুসলিম। পরপারে গমনের পরপরই জান্নাতে ঢুকে পড়ব। আমাদের জানা ঠিক আছে; কিন্তু এর মধ্যে কিছুটা ত্রুটি আছে। মুসলিম হিসেবে আল্লাহ্ তা'লা আমাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী করে রাখতে চান। আমরাও মনেপ্রাণে জান্নাত চাই। তাই অনেক কষ্ট হলেও কনকনে শীতের সকালে সুন্দর করে ওযু করে ফজরের নামাজ আদায় করি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রচুর পরিশ্রম করেও সারাদিন রোযা থাকি। কষ্ট করে অর্জন করা সম্পদ ব্যয় করে হজ্জ আদায় করি এবং যাকাত প্রদান করি। এই যে এত ত্যাগ স্বীকার করছি এর উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো আমরা জান্নাতে যেতে চাই। ক্ষণিকের জন্যও জাহান্নামে যেতে চাই না। কিন্তু সেই আমরাই তুচ্ছ জ্ঞান করে এমন কিছু অপরাধমূলক কাজ করি যা আমাদের আশা-ভরসা নষ্ট করে দেয়। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেই অপরাধমূলক কাজগুলি আমাদের উপর জাহান্নাম নির্ধারিত করে দেয়। অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার আগে জাহান্নামের শাস্তি আবশ্যক করে দেয়।
এখন আসি আমাদের মূল আলোচনায়। আমরা জানি কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এই বিষয়গুলি ঠিকঠাক আদায় করতে পারলেই আমি একজন সাচ্চা মুসলিম। পরপারে গমনের পরপরই জান্নাতে ঢুকে পড়ব। আমাদের জানা ঠিক আছে; কিন্তু এর মধ্যে কিছুটা ত্রুটি আছে। মুসলিম হিসেবে আল্লাহ্ তা'লা আমাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী করে রাখতে চান। আমরাও মনেপ্রাণে জান্নাত চাই। তাই অনেক কষ্ট হলেও কনকনে শীতের সকালে সুন্দর করে ওযু করে ফজরের নামাজ আদায় করি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রচুর পরিশ্রম করেও সারাদিন রোযা থাকি। কষ্ট করে অর্জন করা সম্পদ ব্যয় করে হজ্জ আদায় করি এবং যাকাত প্রদান করি। এই যে এত ত্যাগ স্বীকার করছি এর উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো আমরা জান্নাতে যেতে চাই। ক্ষণিকের জন্যও জাহান্নামে যেতে চাই না। কিন্তু সেই আমরাই তুচ্ছ জ্ঞান করে এমন কিছু অপরাধমূলক কাজ করি যা আমাদের আশা-ভরসা নষ্ট করে দেয়। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেই অপরাধমূলক কাজগুলি আমাদের উপর জাহান্নাম নির্ধারিত করে দেয়। অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার আগে জাহান্নামের শাস্তি আবশ্যক করে দেয়।
এখন কথা হলো মুসলিম হিসেবে আমরা সরাসরি জান্নাতে
প্রবেশ করতে চাই এবং জাহান্নামে প্রবেশ করায় এমন কাজগুলি থেকে বেঁচে থাকতে চাই।
আসুন, তাহলে জেনে নিই কী সে কাজগুলি যা আমাদের উপর জাহান্নাম আবশ্যক করে দেয়-
আসুন, তাহলে জেনে নিই কী সে কাজগুলি যা আমাদের উপর জাহান্নাম আবশ্যক করে দেয়-
হারাম উপার্জনঃ
হারাম উপার্জনের তোয়াক্কা না করার ফলে আজ সমাজে
চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, সুদ, ঘুষ, জোয়া, প্রতারণা, মজুদদারী, মাপে ঠকানো, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ
আত্মসাত করা সহ বিভিন্ন প্রকার গর্হিত কাজ ব্যাপকতা লাভ করছে। অথচ জীবিকার্জনের ক্ষেত্রে
শরীয়তের সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'লা বলেন-
﴿يٰأَيُّهَا
النّاسُ كُلوا مِمّا فِى الأَرضِ حَلٰلًا طَيِّبًا وَلا تَتَّبِعوا خُطُوٰتِ الشَّيطٰنِ
ۚ إِنَّهُ لَكُم عَدُوٌّ مُبينٌ﴾
অর্থাৎ, “হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল
ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে
তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাকারাহ, আয়াতঃ ১৬৮)
আল্লাহ্ তা'লা অন্যত্রে বলেন-
﴿فَكُلوا مِمّا
رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلٰلًا طَيِّبًا وَاشكُروا نِعمَتَ اللَّهِ إِن كُنتُم إِيّاهُ
تَعبُدونَ﴾
অর্থাৎ, “অতএব আল্লাহ্ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার
কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে
থাক।” (সূরা নহল,
আয়াতঃ ১১৪)
আল্লাহ্ তা'লা আরো বলেন-
﴿وَلا تَأكُلوا
أَموٰلَكُم بَينَكُم بِالبٰطِلِ وَتُدلوا بِها إِلَى الحُكّامِ لِتَأكُلوا فَريقًا
مِن أَموٰلِ النّاسِ بِالإِثمِ وَأَنتُم تَعلَمونَ﴾
অর্থাৎ, “তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ
জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।” (সূরা বাকারাহ,
আয়াতঃ ১৮৮)
﴿حَدَّثَنَا
مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ يَحْيَى عَنْ هِلاَلِ بْنِ أَبِي مَيْمُونَةَ
حَدَّثَنَا عَطَاءُ بْنُ يَسَارٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِي..............
............قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَإِنَّهُ مَنْ يَأْخُذُهُ بِغَيْرِ
حَقِّهِ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ وَيَكُونُ شَهِيدًا عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ﴾
অর্থাৎ,
............... “যে ব্যক্তি এই সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যক্তির
ন্যায়, যে খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। ক্বিয়ামাত দিবসে ঐ সম্পদ তার
বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।” (আধুনিক
প্রকাশনীঃ ১৩৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৩৭৭)।
অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারীঃ
প্রতারণার ছলে মানুষের সম্পদ ভোগ করা, ঋণ নিয়ে আটকিয়ে
দেয়া, জোরপূর্বক মানুষের সম্পদ দখল করা, জোরপূর্বক মানুষের
সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া ইত্যাদিকে জবরদখল বলে। এটি ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে
আল্লাহ্ তা'লা বলেন-
﴿وَلا تَحسَبَنَّ
اللَّهَ غٰفِلًا عَمّا يَعمَلُ الظّٰلِمونَ ۚ إِنَّما يُؤَخِّرُهُم لِيَومٍ تَشخَصُ
فيهِ الأَبصٰرُ- مُهطِعينَ مُقنِعى رُءوسِهِم
لا يَرتَدُّ إِلَيهِم طَرفُهُم ۖ وَأَفـِٔدَتُهُم هَواءٌ- وَأَنذِرِ النّاسَ يَومَ يَأتيهِمُ العَذابُ فَيَقولُ الَّذينَ ظَلَموا
رَبَّنا أَخِّرنا إِلىٰ أَجَلٍ قَريبٍ نُجِب دَعوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَ ۗ أَوَلَم
تَكونوا أَقسَمتُم مِن قَبلُ ما لَكُم مِن زَوالٍ﴾
অর্থাৎ, “জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না। তাদেরকে তো ঐ
দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহবল চিত্তে দৌঁড়াতে
থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে। মানুষকে ঐ দিনের ভয় প্রদর্শন করুন, যেদিন তাদের
কাছে আযাব আসবে। তখন জালেমরা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে সামান্য
মেয়াদ পর্যন্ত সময় দিন, যাতে আমরা আপনার আহবানে সাড়া দিতে এবং পয়গম্বরগণের অনুসরণ করতে
পারি। (আল্লাহ্ বলবেন) তোমরা কি ইতোপূর্বে কসম খেতে না যে, তোমাদেরকে
দুনিয়া থেকে যেতে হবে না? (সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪১-৪৪)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও কঠোরভাবে জবরদখলকারীদের সতর্ক করেছেন। হাদীসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا
بِشْرُ بْنُ خَالِدٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ سُلَيْمَانَ
عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ
حَلَفَ عَلَى يَمِيْنٍ كَاذِبًا لِيَقْتَطِعَ مَالَ رَجُلٍ أَوْ قَالَ أَخِيْهِ لَقِيَ
اللهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ وَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ تَصْدِيْقَ ذَلِكَ
فِي الْقُرْآنِ إِنَّ الَّذِيْنَ يَشْتَرُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا
قَلِيْلًا الْآيَةَ إِلَى قَوْلِهِ عَذَابٌ أَلِيْمٌ فَلَقِيَنِي الأَشْعَثُ فَقَالَ
مَا حَدَّثَكُمْ عَبْدُ اللهِ الْيَوْمَ قُلْتُ كَذَا وَكَذَا قَالَ فِيَّ أُنْزِلَتْ. ﴾
অর্থাৎ, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি
কারো অথবা তার ভাইয়ের অর্থ আত্মসাতের মতলবে মিথ্যা হলফ করবে, সে (কিয়ামাতে)
মহান আল্লাহর দেখা পাবে এমন অবস্থায় যে, তিনি তার উপর অত্যন্ত রাগান্বিত
থাকবেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা উক্ত হাদীসের সমর্থনে কুরআনে এই আয়াত নাযিল করলেনঃ যারা
আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা এবং নিজেদের শপথ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে, আখিরাতে তাদের
কোন অংশ নেই। আর আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদের প্রতি (করুণা
ভরে) তাকাবেন না এবং তাদেরকে বিশুদ্ধও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
আযাব।” (সূরা আলু ‘ইমরানঃ ৭৭), (বুখারি, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৮২,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪৯৮)
কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকারী আত্মসাৎকৃত সম্পদের সাত
গুণ বোঝা বহন করবে। অর্থাৎ সাত গুণ শাস্তি বহন করবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ أَخْبَرَنَا ابْنُ عُلَيَّةَ عَنْ عَلِيِّ بْنِ الْمُبَارَكِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِيْ كَثِيْرٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيْمَ بْنِ الْحَارِثِ
عَنْ أَبِيْ سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَكَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أُنَاسٍ
خُصُومَةٌ فِيْ أَرْضٍ فَدَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ فَذَكَرَ لَهَا ذَلِكَ فَقَالَتْ يَا
أَبَا سَلَمَةَ اجْتَنِبْ الأَرْضَ فَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
مَنْ ظَلَمَ قِيْدَ شِبْرٍ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِيْنَ﴾
অর্থাৎ, “........রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক এক বিঘত পরিমাণ অন্যের
জমি অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করেছে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনের হার তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে।”
(বুখারি, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৫৪,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৬৫)
মা-বাবার অবাধ্য সন্তানঃ
মুসলিম হয়েও মা-বাবার অবাধ্যতার কারণে জাহান্নামে
যেতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে তাঁর ইবাদতের পরই পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণ করার কথা
বলেছেন বার বার। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'লা বলেন-
﴿وقضي رَبُّكَ
أَلّا تَعبُدوا إِلّا إِيّاهُ وَبِالوٰلِدَينِ إِحسٰنًا ۚ إِمّا يَبلُغَنَّ عِندَكَ
الكِبَرَ أَحَدُهُما أَو كِلاهُما فَلا تَقُل لَهُما أُفٍّ وَلا تَنهَرهُما وَقُل لَهُما
قَولًا كَريمًا﴾
অর্থাৎ, তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া
অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা
উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে
‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ
কথা।” (সূরা বনি ইসরাঈল,
আয়াতঃ ২৩)
আল্লাহ্ তা'লা অন্যত্র ইরশাদ করেন-
﴿وَوَصَّينَا
الإِنسٰنَ بِوٰلِدَيهِ حَمَلَتهُ أُمُّهُ وَهنًا عَلىٰ وَهنٍ وَفِصٰلُهُ فى عامَينِ
أَنِ اشكُر لى وَلِوٰلِدَيكَ إِلَىَّ المَصيرُ﴾
অর্থাৎ, “আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ
দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু’বছরে
হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই
নিকট ফিরে আসতে হবে।” (সূরা লোকমান,
আয়াতঃ১৪)
পিতামাতার সাথে দুর্ব্যবহারের শাস্তি উল্লেখ করে হাদীসে এসেছে -
﴿حَدَّثَنَا
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، حَدَّثَنَا الْجُرَيْرِيُّ،
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم " أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ
". قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ " الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ،
وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ ".﴾
অর্থাৎ, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদের
নিকৃষ্ট কাবীরাহ গুনাহের বর্ণনা দিব না? সকলে বললেনঃ হ্যাঁ হে আল্লাহর
রাসূল! তখন তিনি বললেনঃ তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক করা এবং মাতা-পিতার অবাধ্যতা।”
(বুখারি, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৬)
﴿مُحَمَّدُ
بْنُ مُقَاتِلٍ أَخْبَرَنَا النَّضْرُ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا فِرَاسٌ قَالَ
سَمِعْتُ الشَّعْبِيَّ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم قَالَ الْكَبَائِرُ الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ
وَالْيَمِينُ الْغَمُوسُ﴾
অর্থাৎ, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কবীরা গুনাহ্সমূহের
(অন্যতম) হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতামাতার নাফরমানী করা, কাউকে হত্যা
করা এবং মিথ্যা কসম করা।” (বুখারি, প্রকাশনী- ৬২০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৯)
খোঁটা দানকারীঃ
মানুষের উপকার করা যায় বিভিন্নভাবে। অর্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে
এবং বিদ্যা দিয়ে। আল্লাহ তা‘লা একেকজনকে একেকরকম যোগ্যতা দিয়েছেন। যার যেই যোগ্যতা আছে, সে যদি তার
সেই যোগ্যতাকে সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করে, তবেই তার সেই যোগ্যতা সার্থক
হয়। এর দ্বারা সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে সাফল্য-মণ্ডিত হয়। বস্তুত আল্লাহ
তা‘আলা মানুষকে যে-কোনও যোগ্যতা দেনই এজন্যে যে, সে তা মানব-সেবায়
নিয়োজিত করে নিজ জীবনকে সফল করে তুলবে।
খোঁটা দ্বারা কেবল দান-খয়রাত ও পরোপকারের ছওয়াবই
নষ্ট হয় না; বরং এটা একটা কঠিন পাপও বটে। কেননা এর দ্বারা উপকৃত ব্যক্তির
অন্তরে আঘাত দেওয়া হয়। মানুষের মনে আঘাত দেওয়া কবীরা গুনাহ। সুতরাং খোঁটা দেওয়া
ইসলাম ও ঈমানের সংগে সংগতিপূর্ণ নয়। কেননা মুসলিম বলাই হয় তাকে, যার হাত ও মুখ
থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে (সহীহ
বুখারী, হাদীস নং ১০;
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১)।
এজন্যেই খোঁটা দেওয়াকে কুরআন মাজীদে কাফের-বে-ঈমানের
কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
﴿یٰۤاَیُّهَا
الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقٰتِكُمْ بِالْمَنِّ وَ الْاَذٰی ۙ كَالَّذِیْ
یُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ
ؕ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَیْهِ تُرَابٌ فَاَصَابَهٗ وَابِلٌ فَتَرَكَهٗ
صَلْدًا ؕ لَا یَقْدِرُوْنَ عَلٰی شَیْءٍ مِّمَّا كَسَبُوْا ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهْدِی
الْقَوْمَ الْكٰفِرِیْنَ. ﴾
অর্থাৎ, “হে মু’মিনগণ! খোঁটা
দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকাকে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ
ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না।
সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এরকম, যেমন এক মসৃণ পাথরের উপরে মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে
প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং সেটিকে পুনরায় মসৃণ পাথর
বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত
করতে পারে না। আর আল্লাহ এরূপ কাফেরদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন না। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬৪)
খোঁটা দেওয়া যে কত গুরুতর অপরাধ, এ হাদীস দ্বারা
তা আঁচ করা যায়-
﴿حَدَّثَنَا
أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَابْنُ، بَشَّارٍ
قَالُوا حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ مُدْرِكٍ،
عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، عَنْ خَرَشَةَ بْنِ الْحُرِّ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ
صلى الله عليه وسلم قَالَ " ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ " قَالَ
فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَ مِرَارٍ . قَالَ أَبُو ذَرٍّ
خَابُوا وَخَسِرُوا مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ
وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ "﴾
অর্থাৎ, “হজরত আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামাতের
দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং
তাদেরকে পবিত্র করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিনবার পাঠ করলেন। আবূ যার (রাযিঃ) বলে উঠলেন, তার তো ধ্বংস
হবে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর রাসূল! এরা কারা? তিনি বললেন, যে লোক পায়ের
গোছার নীচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে, কোন কিছু দান করে খোটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি
করে।” (মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫,
ইসলামিক সেন্টারঃ ২০১)
চোগলখোরীঃ
ফেতনা-ফাসাদ ও অসন্তষ্টি সৃষ্টির লক্ষে একজনের কথা
অন্যজনের কাছে বলে বেড়ানোই হচ্ছে চোগলখুরি।
অথবা অন্যের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে বা নিজের
অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বা দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা লাভে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ
করতে যে মানুষ একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে বেড়ায়; সে হচ্ছে চোগলখোর।
কোরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা'লা এদের সাথে
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে মিশতে নিষেধ করে বলেন-
﴿وَلا تُطِع
كُلَّ حَلّافٍ مَهينٍ - هَمّازٍ مَشّاءٍ بِنَميمٍ
- مَنّاعٍ لِلخَيرِ مُعتَدٍ أَثيمٍ - ﴾
অর্থাৎ, “(হে রাসুল), আপনি তার আনুগত্য
করবেন না, যে অধিক শপথ করে, এবং যে লাঞ্ছিত। যে পশ্চাতে
নিন্দা করে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে ফিরে। যে ভালো কাজে বাধা দেয়, সে সীমালংঘন
করে, সে পাপিষ্ঠ।” (সূরা ক্বলম,
আয়াতঃ ১০-১২)
চোগলখোর কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না মর্মে হাদীসে
এসেছে-
﴿حَدَّثَنَا
أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ هَمَّامٍ،
قَالَ كُنَّا مَعَ حُذَيْفَةَ فَقِيلَ لَهُ إِنَّ رَجُلاً يَرْفَعُ الْحَدِيثَ إِلَى
عُثْمَانَ. فَقَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ
" لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ "﴾
অর্থাৎ, “হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, চোগলখোর কক্ষনো জান্নাতে প্রবেশ
করবে না।” (মুসলিম, খণ্ড, পৃ.
৪৫, হাঃ ১০৫,
আহমাদ ২৩৩০৭) আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৫১৭)
﴿وَحَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ، وَأَبُو كُرَيْبٍ
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا
وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ سَمِعْتُ مُجَاهِدًا،
يُحَدِّثُ عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم عَلَى قَبْرَيْنِ فَقَالَ " أَمَا إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا
يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ وَأَمَّا
الآخَرُ فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ " . قَالَ فَدَعَا بِعَسِيبٍ
رَطْبٍ فَشَقَّهُ بِاثْنَيْنِ ثُمَّ غَرَسَ عَلَى هَذَا وَاحِدًا وَعَلَى هَذَا وَاحِدًا
ثُمَّ قَالَ " لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا
" .﴾
অর্থাৎ, “ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি বললেন, (জেনে রাখ) এ
দু' কবরবাসীকে আযাব দেয়া হচ্ছে। তবে কোন কঠিন (কাজের) দরুন তাদেরকে
আযাব দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোগলখোরী করত। আর অপরজন তার প্রস্রাব থেকে সতর্কতা
অবলম্বন করত না। তিনি [ইবনু আব্বাস (রাযিঃ)] বলেনঃ অতঃপর তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল
আনিয়ে দু’টুকরো করলেন। তারপর প্রত্যেক কবরের ওপর একটি করে গেড়ে দিলেন।
আর বললেনঃ সম্ভাবনা আছে, আযাব কিছুটা হালকা করা হবে যতদিন পর্যন্ত এ দুটি না শুকিয়ে
যাবে।” (মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৫৮৪)
প্রিয় পাঠক, আবারও স্মরণ করে দিচ্ছি যে, কেউ যদি কালিমা, নামাজ, রোয়া, হজ্জ, যাকাত ছেড়ে
এবং কুফর ও শিরক মুক্ত না হয় তাহলে সে ব্যক্তি মুসলিম হিসেবে গণ্য নয়। আর মুসলিম হওয়ার
পরেও যে কাজগুলি আমাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে সেগুলি নিয়েই আলোচনা করছি।
আজকে এ পর্যন্ত থাকল। দ্বিতীয় পর্বে এমন আরও কিছু
বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ্।
লেখক:
শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।
মোবাইল: 01712353643
0 coment rios:
You can comment here