আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম ইতিকাফ: শরয়ী মানদন্ড

 

।। প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ মাকসুদুর রহমান।।

ভূমিকা

ইতিকাফ হল মুসলিমদের একটি ইবাদত। যেখানে একজন মুসলিম তার নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী এক বা একাধিক দিন নিকটবর্তী মসজিদে অবস্থান করেন। রমজান মাসে ইবাদতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, বিশেষত রমজানের শেষ দশ দিনের জন্য। অনেক মসজিদেই মুসলমানরা রমজান মাসের শেষ দশ দিনে ইতিকাফে থাকেন। ইতিকাফ করা সুন্নত। আলোচ্য প্রবন্ধে ইতিকাফ বিষয়ক শরয়ী মানদন্ড এবং গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

ইতিকাফ এর অর্থ

মসজিদে ইতিকাফ তথা সওয়াবের নিয়তে মসজিদে  নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান। আরবি ভাষায় ইতিকাফ এর অনেক অর্থ পাওয়া যায়।

ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ: কোনো জিনিসকে বাধ্যতামূলকভাবে ধরে রাখা। কোনো জিনিসের উপর নিজেকে শক্তভাবে আটকে রাখা। আর শরীয়তের পরিভাষায়-

الشرع هو: "المكث في المسجد بنية التقرب إلى الله سبحانه وتعالى  في اللغة هو لزوم الشيء وحبس النفس عليه برا كان أو غيره ومنه قول اللّه تعالى في القرآن: {ما هذه التماثيل التي انتم لها عاكفون} وهو في الشرع الإقامة في المسجد، وهو سنة مؤكدة عن النبي صلى الله عليه وسلم، لقول السيدة عائشة: (كان النبي صلى الله عليه وسلم —يعتكف العشر الأواخر

 এর দ্বারা মসজিদেই রমজান মাসে শেষ দশ দিন ইবাদতের জন্য অবস্থান করা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,  :

وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ" (سورة البقرة، الآية: 187)، وقوله: "أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ"

অর্থ: মসজিদে ইতিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না। এই হলো আল্লাহর দেওয়া সীমা, এর কাছেও যাবে না। এভাবে আল্লাহ তার বাণীকে মানুষের জন্য পরিস্কার করে দেন, যেন মানুষ অন্যায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে। (আল-বাক্বারাহ ১৮৭)

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেন, ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘শুধু অবস্থান করা’। যে লোক মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করেছে তাকে বলা হয়— আকিফ বা অবস্থানকারী।

আর শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ হল— আল্লাহ্ নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে থাকা ও অবস্থান গ্রহণ করা। (উমদাতুল কারী)

 

কুরআন মজিদের দুইটি আয়াতে এই ইতিকাফ শব্দটি উল্লিখিত হয়েছে— ‘আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করো, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)। এছাড়াও আল কুরআনে আরো বলা হচ্ছে, ‘তোমরা দুইজনে আমার ঘরকে তওয়াফকারী ও অবস্থানকারীদের জন্য পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে রাখ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)

ইতিকাফ সংক্রান্ত বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

 , عن طلحة بن عبيد الله - رضي الله عنه - قال: (جاء رجل من أهل نجد (1) إلى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ثائر الرأس (2) يسمع دوي صوته (3) ولا يفقه ما يقول , حتى دنا) (4) (من رسول الله - صلى الله عليه وسلم -) (5) (فإذا هو يسأل عن الإسلام (6) فقال رسول الله - صلى الله عليه وسلم -: " خمس صلوات في اليوم والليلة (7) فقال: هل علي غيرها؟ , قال: " لا , إلا أن تطوع (8) ثم قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم -: " وصيام رمضان " , فقال: هل علي غيره؟ , قال: " لا , إلا أن تطوع " وذكر له رسول الله - صلى الله عليه وسلم - الزكاة " , فقال: هل علي غيرها؟ , قال: " لا , إلا أن تطوع "

অর্থ: ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

’ عن نافع , عن ابن عمر - رضي الله عنهما - قال: " كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يعتكف العشر الأواخر من رمضان , قال نافع: وقد أراني عبد الله - رضي الله عنه - المكان الذي كان يعتكف فيه رسول الله - صلى الله عليه وسلم - من المسجد "

এরপর মানুষ তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম, হাদিস নং: ১৯৯৪) ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো বাইতুল্লাহ শরিফ। বাইতুল্লাহ শরিফের পর মসজিদে নববী। এরপর বাইতুল মাকদিস বা মুকাদ্দাস। তারপর জুমা আদায় করা হয় এমন মসজিদ। এরপর মহল্লার যে মসজিদে নামাজির সংখ্যা বেশি হয়, সে মসজিদে ইতিকাফে সাওয়াব বেশি। ইতিকাফ একটি মহৎ ইবাদত। এ ইবাদত স্বেচ্ছায় পালনীয়।

عن عبد الله بن أنيس الجهني - رضي الله عنه - قال: قلت: يا رسول الله , إن لي بادية أكون فيها , وأنا أصلي فيها بحمد الله , فمرني بليلة أنزلها إلى هذا المسجد , فقال: " انزل ليلة ثلاث وعشرين " , قال محمد بن إبراهيم: فقلت لابن عبد الله بن أنيس: كيف كان أبوك يصنع؟ , قال: كان يدخل المسجد صلاة العصر , ثم لا يخرج منه لحاجة حتى يصلي الصبح , فإذا صلى الصبح وجد دابته على باب المسجد , فجلس عليها فلحق بباديته

ইসলামী শরিয়তে বিনিময় দিয়ে ভাড়া করে ইবাদত করানোর সুযোগ নেই। টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করা ও করানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এভাবে ইতিকাফ করানোর মাধ্যমে মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হয় না। (রদ্দুল মুহতার: খন্ড-২, পৃ. ৫৯৫, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড- ১৭, পৃ. ১৭১)

ইতিকাফ হল ইসলামের একটি ধর্মীয় ইবাদত, যেখানে একজন মুসলিম তার নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী এক বা একাধিক দিন নিকটবর্তী মসজিদে দিনানিপাত করেন। রমাযান মাসে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, বিশেষত রমযানের শেষ দশ দিনের জন্য। অনেক মসজিদেই মুসলমানরা রমযান মাসের শেষ দশ দিনে ইতিকাফে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن عائشة - رضي الله عنها - قالت: " كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يعتكف العشر الأواخر من رمضان حتى توفاه الله , ثم اعتكف أزواجه من بعده "

ইতিকাফের প্রকরণ :

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।

وَالدَّلِيلُ عَلَى سُنِّيَّتِهِ فِعْلُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ، وَمُدَاوَمَتُهُ عَلَيْهِ، تَقَرُّبَاً إلى اللهِ تعالى، وَطَلَبَاً لِثَوَابِهِ، وَاعْتِكَافُ أَزْوَاجِهِ مَعَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ وَبَعْدَهُ.

ওয়াজিব ইতিকাফ

নজর বা মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধা হলে আমি এত দিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি এত দিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যত দিন শর্ত করা হবে তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। ভঙ্গ করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

নফল ইতিকাফ

সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা নফল। এর কোনো দিন কিংবা সময়ের পরিমাপ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের আগে ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা ভালো।

ইতিকাফের প্রকরণ

وَيَكُونُ الاعْتِكَافُ وَاجِبَاً بِالنَّذْرِ، لِقَوْلِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلاَ يَعْصِهِ» رواه الإمام البخاري عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا. وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي كُنْتُ نَذَرْتُ أَنْ أَعْتَكِفَ لَيْلَةً فِي المَسْجِدِ الحَرَامِ فِي الجَاهِلِيَّةِ. قَالَ: «أَوْفِ بِنَذْرِكَ» رواه الترمذي

নফল ইতিকাফ

সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা নফল। এর কোনো দিন কিংবা সময়ের পরিমাপ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের আগে ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা ভালো।

عْتِكَافٌ مَنْدُوبٌ، وَهُوَ أَنْ يَنْوِيَ الإِنْسَانُ الاعْتِكَافَ تَطَوُّعَاً للهِ تعالى، وَأَقَلُّهُ لَحْظَةٌ، أَو يَوْمٌ، أَو لَيْلَةٌ.

ইতিকাফের উদ্দেশ্য

ইতিকাফ এর মুল উদ্দেশ্য একান্তভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা করা।

 الاعتكاف لجهلنا بقيمة هذه الخلوة الربانية في إصلاح النفس وتزكيتها وإشراق الروح وتطهير القلب من أدران المعاصي والشهوات ..

ইতিকাফ একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি জন্য করা। ইতিকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ। ইতিকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন, ‘আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট করা, তাঁর সাথে নির্জনে বাস করা এবং স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি থেকে দূরে অবস্থান করা, যাতে তার চিন্তা ও ভালোবাসা মনে স্থান করে নিতে পারে।

المقصود بالاعتكافِ: انقطاع الإنسان عن الناس ليتفرَّغ لطاعة الله في مسجد من مساجده، طلبًا لفضله وثوابه وإدراك ليلة القدر، وكما يُعبِّر عن ذلك الحافظ ابن رجب - رحمه الله تعالى - فيقول: حقيقة الاعتكاف: قطع العلائق عن الخَلائق، للاتِّصال بخدمة الخالق، ويقول أيضًا: المُعتكِف قد حبَس نفسه على طاعة الله وذِكره، وقطع عن نفسه كل شاغل يَشغله عنه، وعكَف بقلبِه وقالبه على ربه وما يُقرِّبه منه، فما بقي له همٌّ سوى الله، وما يُرضيه عنه. ولذلك يَنبغي على المُعتكِف أن يَشتغِل بالذِّكر والقراءة والصلاة والعبادة، وأن يتجنَّب ما لا يَعنيه من حديث الدنيا ولا بأس أن يتحدَّث قليلًا بحديث مُباح مع أهله أو غيرهم

সময় পবিত্র রমযান মাস। আর এই রমাযানের রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণময় রাত লাইলাতুল কদর। এ কদর রাত্রির সন্ধানের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে মানবিক ও আত্মিক যাবতীয় কল্যাণ। মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে খলিফা হিসেবে। আর তাকে পবিত্র জান্নাতের মাধ্যমে কিনে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই মানুষ খলিফা হিসেবে আল্লাহর কাছে সব থেকে প্রিয়। সে কারণে মানুষের প্রথম ও একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে সেই মহান স্রষ্টার রঙে রঙিন হওয়ার। ঝকমারী দুনিয়াদারীর কারণে বান্দাহ কলবে ময়লা-জঞ্জালের সমাবেশ ঘটে। এটাকে দূর করতেই প্রতিবছর আসে রমজান। এই রমজানের শেষ দশকটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। 

এই দশকে লাইলাতুল কদর হাসিলের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে সমূহ কল্যাণ।

 أما حُكم الاعتكاف فهو "سنة" بإجماع أهل العلم، ويرى بعض المذاهب الفقهية أنه "سنة مؤكدة" في العشر الأواخر من رمضان. لكن يجب الاعتكاف إذا كان منذورا. وقد اعتكف الرسول صلى الله عليه وسلم كما ثبت عنه في أحاديث صحيحة بعضها رواه البخاري ومسلم، ومن بعده اعتكفت زوجاته أمهات المؤمنين رضي الله عنهن وبعض أصحابه رضي الله عنهم.

واتفق جمهور العلماء على أن الاعتكاف يُسنّ في كل وقت في رمضان أو غيره، وأفضله في رمضان وآكده ما كان في العشر الأواخر منه. ولا حد لأقله من حيث مدته عند بعض العلماء، ويرى آخرون أن أقله يوم أو يوم وليلة (24 ساعة. ويُستحب للمعتكف الاشتغال بما يتقرب به إلى الله تعالى كالصلاة والاستغفار والذكر وقراءة القرآن والتسبيح، وتعليم القرآن الكريم والحديث النبوي وتدريس العلم. وكذلك اجتناب ما لا يعنيه من كل قول أو فعل يشغله عن اعتكافه.

شروطه ومبطلاته

يصح الاعتكاف من كل إنسان مسلم عاقل بالغ أو مميز سواء أكان ذكرا أو أنثى، ويجب أن يكون المعتكف طاهرا من الحدث الأكبر (الجنابة)، وأن يكون الاعتكاف في مسجد تقام فيه الصلاة للآيتين المتقدمتين، وأفضله ما كان في المساجد الثلاثة المقدسة في مكة المكرمة والمدينة المنورة والقدس.

ويصح الاعتكاف من غير صوم عند أكثر العلماء لأنه مستحب عندهم لا واجب؛ والأوْلى بالمعتكف أن يصوم أو يعتكف في وقت الصيام (رمضان مثلا). ويجوز للمعتكف التنظف والتعطر والتزين في الملبس والمظهر.

ويبطل الاعتكاف بحصول أحد الأمور التالية:

الجماع إذا كان مرتكبه عامدا عالما ذاكرا لقول الله تعالى: "وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ" (سورة البقرة، الآية: 187

الخروج من المسجد، ولا يبطله الخروج لقضاء حاجة دورة المياه، أو للوضوء والاغتسال الواجب، أو للأكل والشرب إن لم يستطع إحضاره إلا بالخروج، أو لعلاج من مرض شديد.

الحيض والنفاس بالنسبة للمرأة عند أكثر العلماء.

আর এ কারণে মু’মীনগণ মসজিদে ইতিকাফ করেন।

عن عمرة بنت عبد الرحمن , عن عائشة - رضي الله عنها - قالت: (" كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إذا أراد أن يعتكف صلى الصبح ثم دخل في المكان الذي يريد أن يعتكف فيه) (1) (قالت: وإنه أراد مرة أن يعتكف في العشر الأواخر من رمضان , قالت: فأمر ببنائه فضرب ") (2) (قال: فاستأذنته عائشة أن تعتكف " فأذن لها " , فضربت فيه قبة , فسمعت بها حفصة - رضي الله عنها - فضربت قبة , وسمعت زينب - رضي الله عنها - بها , فضربت قبة أخرى , " فلما انصرف رسول الله - صلى الله عليه وسلم - من الغداة) (3) (إلى المكان الذي أراد أن يعتكف) (4) (أبصر أربع قباب , فقال: ما هذا؟ ") (5) (قالوا: بناء عائشة , وحفصة , وزينب , فقال رسول الله - صلى الله عليه وسلم -:) (6) (" ما حملهن على هذا؟) (7) (ألبر أردن بهذا؟ , ما أنا بمعتكف) (8) (انزعوها فلا أراها) (9) (قالت: فأمر ببنائه فقوض , وأمر أزواجه بأبنيتهن فقوضت) (10) (فرجع) (11) (فلم يعتكف في رمضان , واعتكف) (12) (في العشر الأول من شوال) (13) وفي رواية (14): اعتكف في آخر العشر من شوال "

ইতিকাফ শব্দের মূল ভাবধারা

তাজুল উরুস গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যবিন্দুতে মন-মগজ দৃঢ়ভাবে নিবদ্ধ রেখে অবস্থান করা এমনভাবে যে সেই দিক হতে অন্য কোনো দিকে দৃষ্টি আদৌ ফিরবে না। ইতিকাফ হল সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। এটা হল সুন্নত।

হজরত আয়েশা রাদীআল্লাহু আনহা বলেন-

ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﺘَﻜِﻒُ ﺍﻟﻌَﺸْﺮَ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮَ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻮَﻓَّﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ، ﺛُﻢَّ ﺍﻋْﺘَﻜَﻒَ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻪُ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ

অর্থ, ‘রাসূলুলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। যতদিন না আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেছেন ততদিন তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। তার ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারী, হাদীস নং: ২০২৫)

ইতিকাফ শুরুর ক্ষণ

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেছেন, রাসূলে করিম (সা.) যখন ইতিকাফের ইচ্ছা করতেন, তখন ফজরের নামাজ পড়তেন ও পরে তাঁর ইতিকাফ স্থানে প্রবেশ করতেন।– (তিরমিজি)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, উল্লিখিত হাদীস থেকে বাহ্যত জানা যায় নবী করীম (সা.) ফজরের নামাজ পড়ে ইতিকাফ শুরু করতেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হল, তিনি তো পূর্ণ দশ দিনের জন্য ইতিকাফ করতেন। আর সেই জন্য রমাযানর মাসের একুশ তারিখ ফজর পড়ে নয়। — তার পূর্বের রাত্রি সূচনায়-বিশ তারিখ মাগরিবের সময় হতে ইতিকাফ স্থানে উপস্থিত হওয়া আবশ্যক।

অন্যথায় চান্দ্রমাসের হিসাবে দশ দিন পূর্ণ হতে পারে না। এই কারণে মুহাদ্দীসদের মধ্যে দুইটি মতের উদ্ভব হয়েছে। কয়েকজনের মত হচ্ছে, বিশ তারিখ মাগরিবের সময়ই ইতিকাফ কেন্দ্রে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। তারা এই হাদীসের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, আসলে তিনি আগের দিন মাগরিবের সময় থেকেই ইতিকাফ শুরু করেছেন। পরবর্তী ফজরের নামাজ পড়ে তিনি ইতিকাফ কেন্দ্রে তার জন্য নির্দিষ্ট হুজরায় প্রবেশ করেছেন মাত্র।

এ পর্যায়ে আরও একটি প্রশ্ন উঠেছে। তা হলো- ইতিকাফ দশ দিন না দশ রাত? হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত এক হাদীসের ভাষা হলো, নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن أبي هريرة - رضي الله عنه - قال: (" كان يعرض على النبي - صلى الله عليه وسلم - القرآن كل عام مرة , فعرض عليه مرتين في العام الذي قبض فيه , وكان يعتكف) - (في العشر الأواخر من رمضان , فلم يعتكف عاما , فلما كان في العام المقبل اعتكف عشرين ")  وفي رواية: " كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يعتكف العشر الأواخر من رمضان والعشر الأواسط , فمات حين مات وهو يعتكف عشرين يوما عن أبي بن كعب - رضي الله عنه - قال: " كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يعتكف في العشر الأواخر من رمضان , فسافر سنة فلم يعتكف , فلما كان العام المقبل اعتكف عشرين يوما "  عن أنس بن مالك - رضي الله عنه - قال: " كان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إذا كان مقيما اعتكف العشر الأواخر من رمضان , وإذا سافر اعتكف من العام المقبل عشرين "

এছাড়া আর আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলে করিম (সা.) প্রত্যেক রমযান মাসের দশ দিন ইতিকাফ করতেন। প্রথমোক্ত হাদীস থেকে দশ রাত প্রমাণিত হয়। আর শেষোক্ত হাদীস হতে প্রমাণিত হয় দশ দিন। এই কারণে মুহাদ্দীসগণ বিশ তারিখ দিনগত রাত শুরু-মাগরিবের সময়-থেকেই ইতিকাফ ধরেছেন। এতে উভয় হাদীস অনুযায়ী আমল হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। ইতিকাফ সংক্রান্ত হাদীসসমূহ থেকে জানা যায়, ইতিকাফের জন্য মসজিদ জরুরী শর্ত  ইতিকাফ মসজিদেই করতে হবে। (উমদাতুল ক্বারী)

উপসংহার  

ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তায়ালা'র নৈকট্য হাসিল করা যায়।

 الحكمة من تشريع الاعتكاف أمور كثيرة يلخصها أنه، شـُرع للتقرب إلى الله سبحانه وتعالى بالتفرغ لعبادته وذكره وتسبيحه واستغفاره وقراءة القرآن، وبالانقطاع عن الناس والتخفف من الشواغل لأجل ذلك التقرب تزكية للنفس وتنقية للقلب

তাই, আসুন, শরীয়ত সম্মত পন্থায় ইতিকাফ করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা লাইলাতুল কদর তালাশ করতে আমরা সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।

লেখকঃ
প্রফেসর,
আল-হাদীস এন্ড ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগ,

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন