।। মাহফুজ আল মাদানী।।
সারা বিশ্ব যখন লকডাউন আর কারফিউ এর মধ্যে অতিবাহিত
করছে সে মুহুর্তে সময়ের আবর্তনে প্রতি বছরের মতো রামাদ্বান মাস আমাদের মাঝে উপস্থিত
হয়েছে। মহামারী করোনার কারণে বিশ্বের সকল দেশের জল, স্থল ও আকাশ
পথের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। সারা বিশ্ব আজ একটি বৃহৎ জেলখানা। অনলাইন-ই যোগাযোগের অন্যতম
মাধ্যম। তার মাঝে আমাদের মাঝে বিরাজমান ইবাদতের মৌসুম রামাদ্বান মাস। যে মাস রহমত, মাগফেরাত আর
দোযখ থেকে মুক্তির মাস। তবে এবারের রামাদ্বান অন্য বছরের মতো নয়। নেই ইবাদতের আমেজ, নেই কোলাহল।
শুধু উৎকণ্ঠা আর হতাশার মধ্যে সময় কাটছে। বান্দার
অব্যাধ্যতা আর পাপাচারের কারণে আজ বিশ্বের মসজিদসহ সবকিছু বন্ধ (যদিও বাংলাদেশে শর্তসাপেক্ষে
খুলে দেয়া হয়েছে)। বিশ্বের সকল মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তকরণ হচ্ছে। এ রক্তকরণ রামাদ্বানকে
ভালোভাবে বরণ না করতে পারার, মসজিদ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার, মসজিদে জুমআ, পাচঁ ওয়াক্ত
ফরজ নামাজ আর জামাতবদ্ধ তারাবীহ’র নামাজ আদায় করতে না পারার।
এ সব কিছুর জন্য আমরাই দায়ী। আমরা পাপাচারে এমনভাবে
লিপ্ত হয়েছি যার দরুণ আমাদের মেহেরবান রব রাগান্বিত হয়ে আছেন। আমাদেরকে তাঁর ঘর সমূহ
হতে বের করে দিয়েছেন। এরপরও যদি আমাদের টনক নড়ে। আমরা যদি খালিছভাবে তাওবাহ করে রবের
দিকে ফিরতে পারি। তবেই সফল হবো, তবেই আমাদের রব খুশি হবেন, রাজি হবেন। করোনার প্রকোপ দ্বারা আল্লাহ তা’আলা আমাদের
পরীক্ষা করতে চান। আল্লাহর বানী,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ
الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ
‘অবশ্যই আমি
তোমাদিগকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের
ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে’ -(সুরা আল বাক্বারাঃ ১৫৫)। আর এ পরীক্ষার কারণ হলো, আমাদের মাঝে
কে কর্মে ভালো কে মন্দ তা বাছাই করার জন্য। সেটাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরিষ্কারভাবে
বলে দিয়েছেন।
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ
وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে
পরীক্ষা করেন কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?’ -(সুরা আল মুলকঃ
০২)।
করোনা নামক মহামারী হলো সেই পরীক্ষার সমূহের একটি।
আমরা কি এরপর সংশোধন হচ্ছি? আমরা কি ভালো হওয়ার সুযোগকে গ্রহণ করতেছি? না কি আমরা
ভিন্নভাবে সুযোগের অপব্যবহার করে ত্রাণের মাল লুঠেপুটে খাচ্ছি? আমরা কি সুন্দর
সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখতেছি? আমরা কি বিশ্বব্যাপী রবের বিধান প্রতিষ্টিত করার কাজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
হচ্ছি? বিবেককে কাজে লাগানোর সময় এসেছে। সময় এসেছে খালিছ তাওবাহ করার।
সময় এসেছে সংশোধন হওয়ার।
সবচেয়ে বড় যে সুযোগ আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
তা হলো পবিত্র রামাদ্বান। আজ মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তাঁর
ঘর মসজিদের দরজা বন্ধ করে দিলেও তাঁর রহমতের দরজা বন্ধ করে দেন নি। বন্ধ করে দেন নি
মাগফিরাত আর নাজাতের দরজা। আমাদের জন্য জান্নাতের দরজা খোলে দিয়েছেন, জাহান্নামকে
বন্ধ করে দিয়েছেন। শয়তানকে আবদ্ধ করে রেখেছেন।
‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখন রামাদ্বান মাসের প্রথম
রাত হয় শয়তান ও অবাধ্য জ্বীনসমূহকে শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের
দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। অতঃপর একটি দরজাও খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া
হয়, অতঃপর এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে
থাকেন, হে পূণ্যের অন্বেষণকারী! সম্মুখে অগ্রসর হও। আর হে মন্দের অন্বেষণকারী!
থেমে যাও। এ মাসে আল্লাহ তা’আলা অনেককে দোযখের আগুন হতে মুক্তি দেন। আর এটা প্রতি রাতেই
সংঘটিত হয়ে থাকে’
-(তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।
এ সুযোগে যদি আমরা তাঁর প্রিয় হতে পারি। যদি পারি
তাঁর করুণা লাভ করতে। তবেই করোনা থেকে আসবে মুক্তি। নচেৎ এর চেয়ে আরো বড় কিছু হয়তো
আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আসুন, রামাদ্বানের
বাকী দিনগুলোর দিন ও রাতে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় হই। বেশি বেশি কোরআন
তেলাওয়াত করি, কোরআন চর্চা করি। কোরআনকে বুঝি, হাদীস পড়ার
অভ্যাস করে বাস্তব জীবনে আমল করি। বেশি বেশি ইস্তেগফার করি, দুরুদ পাঠ করি।
মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকি। যথাসম্ভব ভালো কাজ করি। ভালো কাজ করতে না পারলে অন্ততঃ মন্দ
বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকি। আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করি। আল্লাহকে খুশি করা ছাড়া
আমাদের কোন পথ খোলা নেই।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, আয়দীন বিশ্ববিদ্যালয়।
0 coment rios:
You can comment here