Tuesday, June 2, 2020

উত্তম আচরণের গুরুত্বঃ ইসলামী দৃষ্টিকোণ


।। প্রফেসর ড সৈয়দ মাকসুদুর রহমান।।

ভূমিকা: 
ইসলাম আল্লাহ তাআলা প্রেরিত জীবন পরিপূর্ণ বিধানের নাম। এ জীবন বিধান মানুষের জন্য সকল সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। ইসলামে সকল প্রকার বিদ্যার সমাহার। যেমন ধর্ম বিজ্ঞান, সামাজিক ও প্রকৃতিবিজ্ঞান। আরবি ভাষায় উত্তম আচরণ বা আখলাখে হাসানাহ এভাবে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে,
الأخلاق الحسنة: تقبّل المُختلف وعدم الإساءة له أو لأفكاره. الرحمة والرأفة بالناس، وفهم معاناتهم ومعاملتهم بشكل جيّد، ولطيف. الشجاعة وعدم الإستسلام للظروف الصعبة التي تواجه الإنسان، كما تتضمن أحياناً المخاطرة من خلال القيام بأمور صعبة
অর্থ :Good morals: accept the difference and not offend him or his ideas.  Mercy and compassion for people, and understand their suffering and treatment well, and gentle.  Courage and not giving in to the difficult circumstances facing a person, as sometimes it involves taking risks by doing difficult things

আলোচ্য প্রবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বিজ্ঞান বা মনস্তত্ত্ববিদ্যা হল, মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা ও অধ্যয়ন। এটি বিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক ও ফলিত শাখা যাতে মানসিক কর্মপ্রক্রিয়া ও আচরণসমূহ নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী মনোবিজ্ঞানকে "মানুষ এবং প্রাণী আচরণের বিজ্ঞান" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

আবার অনেক বিজ্ঞানী একে সংজ্ঞায়িত করেছেন "আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান" হিসেবে। মনোবিজ্ঞান মূলত মানুষের সাথে সম্পর্কিত, তবে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়। মনোবিজ্ঞানকে সম্পূর্ণভাবে অধ্যয়ন করা কঠিন হওয়ার কারণে, মনোবিজ্ঞানীগণ প্রায়শই বিভিন্ন সময়ে এর বিভিন্ন অংশের দিকে নজর দেন বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগসূত্র রয়েছে। এর কিছু ক্ষেত্র হল মেডিসিন, আচরণবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, এবং ভাষাবিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানের কর্মক্ষেত্রে, একজন পেশাগত প্রশিক্ষণার্থী বা গবেষককে মনোবিজ্ঞানী এবং সামাজিক, আচরণিক ও চেতনাবিজ্ঞানী বলে ডাকা হয়। 
মনোবিজ্ঞানী ব্যক্তিগত ও সামাজিক আচরণের ক্ষেত্রে মানসিক কর্মপ্রক্রিয়ার ভূমিকাকে বোঝার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি তারা চেতনাগত প্রক্রিয়া ও আচরণের পেছনের মনস্তাত্ত্বিক ও স্নায়ুবিক প্রক্রিয়াকেও অনুসন্ধান করেন। শিশুদের শিষ্টাচার-সম্পন্ন করো গড়ে তোলার জন্য তাদের প্রতিদিনই উৎসাহ দিতে হবে।  এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যাতে দরকার নিয়মানুবর্তিতা এবং অসীম ধৈর্য।

 আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ছোট থেকে শিক্ষা নিতে পারি। দয়া করে” এবং “ধন্যবাদ” বলা যখনই তারা কথা বলতে শিখবে, তাদের অবশই বিনয়ী হওয়ার গুরুত্ব শিখতে হবে। কাউকে অনুরোধ করার সময়’ (অনুগ্রহ করে) এবং (ধন্যবাদ) বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস এবং এগুলি বলার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উৎসাহিত করা উচিৎ। আমাদের সভ্যতা আর একটু এগিয়ে جزاكم الله خير الجزاء বা شكرا جزيلا বলতে পারি। 

কথোপকথনের মাঝখানে বাধা না দেওয়া যখনই বাচ্চারা তাদের মনের ভাব কথা বলে প্রকাশ করতে শিখবে, মা-বাবাকে তাদের শেখাতে হবে যে অন্যের কথার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যদি না ভীষণ জরুরী কোনও কথা থাকে।‘عفعوا (ক্ষমা করবেন) বলা। 

কারও কথার মাঝখানে কথা বলতে হলে বিনীতভাবে ‘ ক্ষমা ’ বলতে শিখতে হবে।  শিষ্টাচারের এই নিয়মটি ঢেকুর তুললে বা কাশলে অথবা কারও পাশ দিয়ে পার হবার সময়ও প্রযোজ্য। কারও দেহগত আকৃতি নিয়ে মন্তব্য না করা। আল্লাহ তা’আলা  কুরআন  কারীমে এ ধরনের আচরণ নিষিদ্ধ করেছেন।

যদিও শিশুদের সারল্য আপনার স্নেহের চোখে অনাবিল মনে হতে পারে, কিন্তু এর ফলে অন্য কেউ ক্ষুব্ধ ও হতে পারেন।  তাদের জানা উচিৎ যে কাউকে মোটা বলা ঠিক নয়, এমনকি আড়ালেও।

প্রবেশ করার আগে দরজায় টোকা দেওয়া। দরজা যদি ছিটকিনি দেওয়া নাও থাকে, একটি বন্ধ দরজা খোলার আগে বাচ্চাদের টোকা দেওয়া শিখতে হবে। তাদেরকে শেখান যে ভেতর থেকে কেউ সাড়া না দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। খারাপ ভাষা এড়িয়ে চলা শিশুরা স্পঞ্জের মতো। তারা যে টিভিতে যা দেখছে বা বড় বড়দের কাছে যা শুনছে তা আত্মস্থ করে নেয়। অনেক সময়য় তারা জানেই না যে কথাটা খারাপ বা অশ্লীল।  সুতরাং, এটি অভ্যাসে পরিণত হওয়ার আগেই তাদেরকে শোধরান এবং হালাগাল বা জঘন্য ভাষা ব্যবহার করা থেকে বিরত করুন।মনে রাখতে হবে শিশু রা মমের মত।

قال الشافعي رحمه الله: "وعلى الآباء والأمهات أن يؤدبوا أولادهم ويعلموهم الطهارة والصلاة ويضربوهم على ذلك إذا عقلوا.

অন্যদের নিয়ে মজা না করা
অন্যদের ক্ষ্যাপানো বা কাউকে নিয়ে মজা করা খুবই খারাপ আচরণ। খেলার মাঠে যতই বাধাহীন হোক না কেন, বাচ্চারা যেন গালাগালি না দেয় সে ব্যাপারে মা-বাবাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। কাশি বা হাঁচির সময় মুখের সামনে হাত রাখা

অন্যের প্রতি সুবিবেচনা স্বরূপ বাচ্চাদের অবশ্যই হাঁচি বা কাশির সময় মুখ ঢাকার অভ্যেস করতে হবে। সবার সামনে নাক না খোঁটা নাক খোঁটা চলবে না।  তাদের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে শেখান, বা বাথরুমে যাবার ছুতো করতে বলুন। যখন কারও কিছু প্রয়োজন হয়, সাহায্য করতে প্রস্তাব দেওয়া উদাহরণস্বরূপ, যদি তাদের কাকীমা কোনও পারিবারিক সমাগমে রান্নাঘরে নাজেহাল হচ্ছেন, তাদেরকে  বলুন যেন সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়।  এটা করলে বিনয় প্রকাশ করা হয়। কোনোকিছু যদি বিরক্তিকরও হয়, ঠোঁট না ওলটানো।

অনেক সময় বাচ্চাদের ক্লাসে বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বসে থাকতে হয়, যাতে তাদের একটুও মজা লাগে না। তবুও তাদের শান্ত হয়ে ধৈর্য সহকারে ভালভাবে বসে থাকতে শেখান। এটা একেবারে ছোট শিশুদের পক্ষে কঠিন হতে পারে, কিন্তু ক্রমাগত শিখিয়ে গেলে তারা যেমন যেমন বড় হবে, অবশ্যই এটি তাদের অভ্যাসে পরিণত হবে। 

কিছু দরকার থাকলে সুন্দরভাবে বলা যেমন ধরুন, খাবার সময়, যদি তাদের কিছু দরকার হয়, টেবিলের ওপর থেকে তা তুলে না নিতে শেখান। তার বদলে তাদের বলুন যেন সেটি আস্তে করে চায় এবং দেওয়া হয়ে গেলে ধন্যবাদ জানায়! আর কি কি ভাল আচরণ আপনি এই তালিকাতে সংযোজন করতে চান?
 عن عبدالله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما: أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ((مُرُوا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين، واضربوهم عليها وهم أبناء عَشْر، وفرقوا بينهم في المضاجع))؛ رواه أحمد وأبو داود، وهو صحيح

হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা গ্রহনকারী। 

আমরা কুরআন মজীদের আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করি, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
অর্থ :‘হে ঈমানদারগণ! পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।’পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করার অর্থ কী? এই যে  অংশে  ইসলামের অনুসারী আর কিছু অংশে ইসলাম থেকে খারিজ এমন যেন না হয়। আর এ আদেশ আল্লাহ তা’আলা কোনো অমুসলিমকে করেননি। এ আদেশ করেছেন মুমিনকে, মুসলিমকে।

ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে হলে সর্বপ্রথম ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে, ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের বিস্তৃতি সম্পর্কে জানতে হবে। তা জানলে মানার চিন্তা আসবে। না জানলে মানার চিন্তাও আসবে না। তাই ইসলামের  শিক্ষা ও বিধানের ব্যাপকতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। 

আমার জানামতে, এ বিষয়টি দু’ভাবে চিন্তা করা যায়। 
এক: জীবনের অঙ্গনগুলো সম্পর্কে চিন্তা করা। জীবনের সকল অঙ্গনে ইসলামের শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা আছে। 
দুই: ইসলামী শিক্ষার বিভাগগুলো সম্পর্কে চিন্তা করা।

আলিমগণ ইসলামের মৌলিক বিধানাবলী পাঁচটি শিরোনামে তুলে ধরেছেন :
১। আকীদা, 
২। ইবাদত, 
৩। মোয়ামালাত, 
৪। মোয়াশারাত ও
৫। আখলাক।

আকীদা
অর্থ বিশ্বাস। এটি অনেক ব্যাপক বিষয়। ইসলামের একটি মৌলিক বিভাগ। ইসলাম মানুষকে সঠিক ও যথার্থ আকীদা শিক্ষা দান করে। যেমন আল্লাহ তাআলা এক, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল ও শেষ রাসূল, কিয়ামত হবে
,أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
আয়াত-২৩ অর্থ : আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? পুনরুত্থান হবে ইত্যাদি।).

ইবাদত
অর্থ উপাসনা। ইসলামে ইবাদতের প্রসঙ্গ অনেক বিস্তৃত। আমরা যে নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ্ব করি, যাকাত দেই, কুরবানী করি এগুলো  ইসলামের একেকটি ইবাদত।
 والعبادة أصل معناها الذل أيضًا، يقال: طريق معبَّد، إذا كان مذلَّلاً، قد وَطِئته الأقدام، لكنَّ العبادة المأمور بها: تتضمَّن معنى الذل، ومعنى الحب؛ فهي تتضمَّن غاية الذل لله، بِغَاية المحبَّة له، نسأل الله عز وجل أن يثبتنا على طاعته وعبادته ومحبته، إنه وليُّ ذلك والقادر عليه 
ইবাদত সকল প্রকার একমাত্র আল্লাহ তাআলা  ইরশাদ করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। ইবাদত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রদর্শন করা পদ্ধতি অনুযায়ী হতে হবে। 
 মুআমালাত তথা লেনদেন
লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামের অনেক বিধান আছে। একটি মৌলিক বিধান, বেচাকেনা হালাল, রিবা বা সুদ হারাম। উত্তম আচরণের ক্ষেত্রে এটা গুরত্বপূর্ণ। একদা মাইমূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে না জানিয়ে একটি বান্দি স্বাধীন করে দিলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সে সম্পর্কে জানালে তিনি বলেন,
امَا إِنَّكِ لَوْ أَعْطَيْتِهَا أَخْوَالَكِ كَانَ أَعْظَمَ لِأَجْرِكِ
“জেনে রাখো, তুমি যদি বান্দিটিকে তোমার মামাদেরকে দিয়ে দিতে তা হলে তুমি আরো বেশি সাওয়াব পেতে। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন- 
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ 
অর্থ :সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা কঠোর শাস্তিদাতা। [ সুরা মায়েদা ৫:২ ]
روى مسلمٌ عن عائشة زوجِ النبي صلى الله عليه وسلم، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ((إن الرِّفقَ لا يكون في شيءٍ إلا زانه، ولا يُنزَع من شيءٍ إلا شانه))؛ مسلم حديث 2594
আচরণ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের সাথে অন্যের আচরণ কী হবে এটি ইসলামের অনেক বড় শাখা।

আখলাক।
স্বভাব-চরিত্র। যেমন এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রিয় সাহাবী হযরত আনাস বিন মালিক রা. কে বলেছেন, হে আমার বৎস! তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তুমি সকাল সন্ধ্যা এমন অবস্থায় অতিবাহিত করবে যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই, তাহলে তাই কর। কারণ এটি আমার সুন্নাহ। আর যে আমার সুন্নাহকে যিন্দা করে সে আমাকে ভালবাসে। যে আমাকে ভালোবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। -(জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৬৭৮)

কারো প্রতি বিদ্বেষ না থাকা, সবার প্রতি অন্তর নির্মল থাকা এটিও তার সুন্নত। তো আখলাক সম্পর্কে কুরআন মাজীদে অনেক আয়াত রয়েছে এবং হাদীসের কিতাবসমূহে অনেক হাদীস রয়েছে। এই যে বিভাগগুলো এর মধ্য থেকে সাধারণত আকায়েদ ও ইবাদতকে দ্বীনের অংশ মনে করা হয়। লেনদেনকেও  কিছু মানুষ মনে করেন ইসলামী শিক্ষার অধীন। কিন্তু এক্ষেত্রেও অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। তারা মনে করে, আমাদের লেনদেন আমরা যেভাবে ইচ্ছা করব, যেভাবে লাভ হয় সেভাবে করব।

আর মুআশারা এবং আখলাক! ‘এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। বিশেষভাবে মুআশারা বা পারস্পরিক আচরণ সম্পর্কে।’তারা নফল নামায পড়াকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, বুযুর্গী ও দ্বীনদারী মনে করে কিন্তু কষ্টদায়ক আচরণ থেকে বেচে থাকাকে দ্বীনদারীর বিষয় মনে করে না।ফলে লেনদেন ভালো নয অথচ নিজেকে খুব মুত্তাক্বীদের মধ্যে চিন্তা করা উচিত নয়। 

তারা এটাকে ব্যক্তিগত সভ্যতা মনে করে । কেউ তা লক্ষ্য করলে সে সভ্য মানুষ। না করলে বড় জোর সে সভ্য ভদ্র নয়। তবে দ্বীনদার থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। কী ভয়াবহ ধারণা! অসভ্য অথচ দ্বীনদার!! এটা কীভাবে সম্ভব? এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। 
সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস  আছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 
فمن أحب أن يزحزح عن النار و يدخل الجنة فلتأته منيته وهو يؤمن بالله واليوم الآخر و ليأت إلى الناس الذي يحب أن يؤتى إليه.
প্রকূত পক্ষে যে ব্যক্তি চায়, আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে। আর মানুষের সাথে তেমন আচরণ করে যেমন আচরণ পেতে সে পছন্দ করে।’
এখানে কিছু বিষয় লক্ষণীয়। 
এক: সকল দ্বীনদারী ও পরহেযগারীর মূল উদ্দেশ্য, জান্নাত লাভ করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া। তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম   ওয়াসাল্লাম বলেন, জাহান্নাম  থেকে বাঁচা ও জান্নাত লাভ করা দুটি জিনিসের উপর নির্ভর করে। একটি হল আল্লাহ তাআলার প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখা। 

দুই: মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করা। তো পারস্পরিক উত্তম আচরণকে আল্লাহর রাসূল জাহান্নাম  থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম সাব্যসত্ম করেছেন। বোঝা গেল, আদাবুল মুআশারা বা পারস্পরিক আচরণবিধি দ্বীনের একটি অংশ। এটি দ্বীনদারী ও তাকওয়া পরহেযগারীর অন্তর্ভুক্ত। আলী রাদি আল্লাহ তা’আলা আনহু বর্ণিত,

قال علي بن أبي طالب رضي الله عنه : التقوى هي الخوف من الجليل ، والعمل بالتنزيل ، والقناعة بالقليل ، والإستعداد ليوم الرحيل.
 এটি নিছক ব্যক্তিগত ভদ্রতার বিষয় নয়, দ্বীনের বিষয়। এ ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারে না। পরিপূর্ণ দ্বীনদার হতে পারে না।

 লক্ষণীয় বিষয় এই যে, মানুষের সাথে এমন আচরণ করা যে আচরণ মানুষের কাছ থেকে পেতে সে পছন্দ করে। একটি মাত্র বাক্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবহার করেছেন, যাতে ‘আদাবুল মুআশারা’ এর সব কিছু এসে গেছে। মানুষের সাথে সুন্দর আচরণের যত ক্ষেত্র হতে পারে এবং যত রূপ হতে পারে, তেমনি অসুন্দর আচরণ থেকে বেঁচে থাকার যত ক্ষেত্র ও রূপ হতে পারে সবকিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই এক বাক্যে এসে গেছে। তদ্রূপ যে মূলনীতি মনে রাখা দ্বারা কোন ক্ষেত্রে কী আচরণ বাঞ্ছনীয় তা সহজভাবে উপলব্ধি করা যায় তাও এই বাক্যে এসে গেছে।
كان الرسول -صلى الله عليه وسلم- أفضل الناس خلقا، وقد حثّنا على الأخلاق الحسنة، وبُعث -صلى الله عليه وسلم- ليتمم مكارم الأخلاق، فقد كانت في الجاهلية أخلاق كريمة، وأتى -عليه الصلاة والسلام- ليتممها ويصلح ما فسد منها، وسُئلت عائشة -رضي الله عنها- عن خلق الرسول -عليه الصلاة والسلام- فقالت: (كان خلقه القرآن) أي أنه عمل بأخلاق القرآن وتمثل بآدابه، وقد مدحه الله -تعالى

উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারছি এই যে  সব বিষয়ের আদব ও আচরণবিধি উল্লেখ করেন- এভাবে করলে সুন্দর হবে, ওভাবে করলে অসুন্দর হবে, এভাবে করলে মানুষ শান্তি পাবে, ওভাবে করলে কষ্ট পাবে,

 قالَ حس البصري رحمه الله رحمة واسعة من لم يتأدب مع الله فوق الأرض أدبّه الله تحت الأرض
এই যে একেকটি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা- এ সবই এ হাদীসের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক রূপ। ইমাম বুখারী রাহ. এর কিতাব আছে ‘আল আদাবুল মুফরাদ। সুতরাং আচরণ পারস্পরিক সুন্দর হলে তাকওয়া  অর্জন করা সম্ভব। আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এবং সামাজিক আচরণ ভালো করতে পারি তাহলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন আমীন ।

লেখক:
প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান, 
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া বাংলাদেশে

শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here