পরিবার হচ্ছে মানব সমাজের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জিন্দেগীর বহু শরয়ী বিধানের বিচরণক্ষেত্র হচ্ছে পারিবারিক জিন্দেগী। সঠিক ইসলামী পরিবার গঠনের উপরই মূলত নির্ভর করে আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের জিন্দেগীর কামিয়াবীর সিংহভাগ। পারিবারিক জিন্দেগীর বীজ বপন হয় বিয়ে-শাদীর মাধ্যমে। আর এরই মাধ্যমে একজন নারী ও একজন পুরুষ তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করে।
পরিবারের মুল ভিত্তি দাম্পত্য জীবনকে যদি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গঠন করা যায়, তাহলে সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে বিস্তৃত বর্ধিত পরিবারকেও ইসলামের আলোকে গঠন করা সহজ হবে। আর যদি দাম্পত্য জীবনে গলদ ঢুকে যায় এবং ইসলামী আদর্শের কমতি হয়ে যায়, তাহলে বর্ধিত পরিবারের ইসলামীকরণ কঠিন হয়ে যাবে।
মাওলানা ওলিউর রহমান রহ. এর পরিবার ছিল একটি আদর্শ ইসলামী পরিবার। জন্মভূমি এলাহাবাদ (তেলিকোনা) রহমান মনজিল ইসলামাবাদ, বিশ্বনাথ, সিলেট। ইমাম মাওলানা এম নুরুর রহমানের বড় বোন ফাতিমা আখতার নার্গিস, স্বামী: আলহাজ্ব আবুল কাসিম, তার রয়েছে ১১টি সন্তান, বাড়ী, দেওকলস, বিশ্বনাথ , সিলেট।
ইমাম মাওলানা এম নুরুর রহমানের ছোট ভাই: মাও:সিদ্দিকুর রহমান এক মেয়রে জনক এবং ছোট বোন: নাজমা আখতার রায়হানা, তার স্বামী: হাফিজ মুহিবুর রহমান, তারা ৫ সন্তানের জনক, বাড়ি: দেওকলস, বিশ্বনাথ , সিলেট। ইমাম মাওলানা এম নুরুর রহমানের কনিষ্ট ভাই: পীর আমিনুর রহমান, ২ সন্তানের জনক। মাওলানা ওলিউর রহমান রেখে গেছেন গুণ বংশধর ও অসংখ্য গুনগ্রাহী।
মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান রহ. ও তার পরিবারের নামের সাথে প্রতিষ্ঠান বা মাদরাসা শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাদরাসা আরবী শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বিদ্যালয়। সাধারণত মাদ্রাসার শিক্ষাকে ধর্মীয় শিক্ষার সাথে তুলনা করা হয়। কেননা এখানে ধর্ম ও ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে বেশী আলোচনা হয়। যেখানে ইসলামি শিক্ষা দেওয়া হয়। যাহা চরিত্র গঠন করার মুল হাতিয়ার। তাই এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা এই শিক্ষা শুধুই জ্ঞানর প্রসারতা এনে দেয়না ,পাশাপাশি উন্নত চরিত্র গঠন করতেও বেশ ভূমিকা রাখে।
মাদরাসা মূলত মুসলমানদের অধ্যয়ন-গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাধারণ অর্থে মাদ্রাসা হচ্ছে আরবি ভাষা ও ইসলামি বিষয়ে অধ্যয়নের প্রতিষ্ঠান।
এগুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন হেতু সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের এলাহাবাদ (তেলিকোনা) আলিম মাদ্রাসায় সরকারি বরাদ্দকৃত চার তলা ভবন নির্মাণের জন্য ৩৪ শতক ভূমিদান করেছেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা ওলিউর রহমানের পরিবার।
বিশ্বনাথ সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে তেলিকোনা আলিম মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মখলিছুর রহমান, তেলিকোনা গ্রামের মুরব্বি নুরুল হোসেন, শাহ তোফাজ্জুল হোসেন ভান্ডারী, নূর উদ্দিন প্রমুখের উপস্থিতিতে দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে ৪০ চল্লিশ লক্ষ টাকা সমমূল্যের ভূমি দান করেন মরহুম মাওলানা ওলিউর রহমানের সহধর্মিনী রাবেয়া আক্তার, পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী মাওলানা নূরুর রহমান, মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, পীর আমিনুর রহমান, কন্যা ফাতেমা আক্তার নার্গিস ও নাজমা আক্তার রায়হানা।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’-সূরা আলাক : ১-২
আল্লাহ তাআলার আদেশে মানুষ যেমন লাভ করেছে জীবনের আলো তেমনি আল্লাহরই নিকট থেকে সে লাভ করেছে ইলমের নূর। ইলমের মাধ্যমে মানুষ নবজন্ম লাভ করে। আল্লাহর মারিফত যখন মানুষের মধ্যে আসে তখনই সে প্রকৃত মানুষ হয়।
শিক্ষাকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, শিক্ষা মৌলিকভাবে দুই প্রকার: জাগতিক শিক্ষা ও দ্বীনী শিক্ষা। মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির জ্ঞান হচ্ছে দ্বিনী শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল সূত্র ওহী।
দ্বিনী শিক্ষা তথা মাদরাসা শিক্ষার প্রতি ছিল ওলিউর রহমান রহ. এর পুরো পরিবারের আলাদা একটা ঝুক আলাদা একটা আবেগ। যখন কোন মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্টানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় তখন দ্বীন ইসলামের খেদমতের ভিত্তি স্থাপন করা হয়।
মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান রহ. ছাত্র জীবন থেকেই ছিলেন একজন পরোপকারী, সমাজসেবী, দানশীল ও শিক্ষানুরযাগী ব্যক্তিত্ব, অসহায় দরিদ্র মানুষের যে কোনো বিপদ আপদে তিনি পাশে দাড়ানোসহ তাদের শান্ত্বনা দিয়ে ভালো কাজে উৎসাহিত করতেন। গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সাধ্যমত সহযোগিতা করেন। বিভিন্ন শিক্ষা, প্রতিষ্ঠানের উন্নতি অগ্রগতির সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। এলাকার মানসম্মত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সেখান মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন দেখেন। তার স্বপ্নের ফসল এলাহাবাদ আলিম মাদরাসা ও তোলিকোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিশ্বনাথ উপজেলার তেলিকোনা এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সরকারী অর্থায়নে ৪র্থ তলা ফাউন্ডেশনের নতুন একাডেমীক ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্টানের প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট -২ আসনের সংসদ সদস্য জনাব মোকাব্বির খান এমপি।
উপস্থিত ছিলেন- এলাহাবাদ আলিম মাদ্রাসার স্বনামধন্য প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু তাহের মোঃ হোসাইন ও মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের শিক্ষক আলতাবুর রহমান, সৎপুর কামিল মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, খাজাঞ্চি ইউনিয়নের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান পীর মোঃ লিয়াকত হোসাইন, বর্তমান চেয়ারম্যান তালুকদার মোঃ গিয়াস উদ্দিন, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার সু-যোগ্য সন্তান যুক্তরাজ্য প্রবাসি মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, মাদ্রাসার সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক এটি এম নুরুদ্দিন, আরবী প্রভাষক মাওলানা হরমুজ আলী, শারিরীক শিক্ষক ইশাদ উল্লাহ, তেলিকোনা গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বী ফকির শাহ তোফাজ্জুল হোসেন ভান্ডারী প্রমুখ।
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আবুল ফজল, মাওলানা রহমত উল্লাহ, (বড় হুজুর), মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা সালেহ আহমদ ,মাওলানা মিজানুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মোমিন, ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান, ক্বারী ওলীউর রহমান, মৌলভী সাইদুর রহমান হাউসা, পীরজাদা মৌলভী আবুল লেইছ সৎপুরী, হাফিজ মৌলভী মুহিবুর রহমান দেওকলস হাফিজিয়া মাদরাসা, মাও. মুহাম্মদ আল-মাসুম মাধবপুরী,
তেলিকোনা গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বি হাজী বাদশা মিয়া, সৌদি আরব প্রবাসী হাজী নুরুল হোসেন, হাজী আখলিছ হোসেন, মোঃ চান মিয়া, ফকির পীর সামসুল ইসলাম তোতা মিয়া, মৌলভী সুরুজ আলী, মোঃনুর মিয়া, আজিজুর রহমান (গাবরু) মোঃ জবেদ আলী, আছকির মিয়া, ময়না মিয়া, সমছুল ইসলাম, সফিক উদ্দিন, মাওলানা আবুল বশর, তরুন সমাজ সেবক মোঃ রাজুক আহমদ রাজু , মোঃ খোয়াজ আলী, নোয়াব আলী, সিরাজ মিয়া, মেম্বার, আমির উদ্দিন মেম্বার, আমিনুর রহমান চুনু, মাসুদ আহমদ, ফারক মহরির, শাহ মোঃ গোলাম কিবরিয়া জিয়া, আবুল কালাম, ছমরু মিয়া, মুজাহিদ আলী, সাহাব উদ্দিন, হাফিজ কয়েছ আহমদ, ফরিদ মিয়া, ধন মিয়া উদিয়মান তরুন সমাজের কর্নধার আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট এর সেক্রেটারী এম. মাসুদ আহমদ, আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট সহ সভাপতি. মাও: এম. এ. মালিক, হাফিজ মাও: কাজল বাদশা, এম. মওছুফ আহমদ, এম. ছালেক আহমেদ সিলেট, হাজী জমির উদ্দীন, এম. মসউদ আহমদ মুফাসসির, এম. মাহফুজুর রহমান.ইসলাম উদ্দীন প্রমুখ।
মাদরাসার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার অসংখ্য সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন-NTVর রিপোর্টার সাংবাদিক এম.মিলাদ আহমদ, এম.নুর উদ্দীন, এম. কয়েছ আহমেদ , অশিত বাবু প্রমুখ। এছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পত্রিকার অসংখ্য সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
মাও: এ. টি. এম. ওলিউর রহমান রহ. ভাই হাজী তৈয়বুর রহমান রহ:, হাজী হাবিবুর রহমান রহ. ও বোন: জাহানরা বেগম এবং অধ্যাপক মাওলানা মুখলিছুর রহমান।
পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে অধ্যাপক মাও মুখলিছুর রহমান সর্ব কনিষ্ট। তিনি ১৯৯১ সালে এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে দাখিল, ১৯৯৩ সালে সৎপুর কামিল মাদরাসা থেকে আলিম, ১৯৯৫ সালে বুরাইয়া কামিল মাদরাসা থেকে ফাজিল এবং ১৯৯৭ সালে একই মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন।
অধ্যাপক মাও মুখলিছুর রহমান ১৯৯৭ ইং সালে বড় ভাই আল্লামা এ.টি .এম.ওলিউর রহমান রহ: প্রতিষ্টিত মাদারাসায় সহকারী সুপার হিসাবে নিয়োগ হন। পরবর্তীতে মাদরাসা আলিম হওয়ার পরে এখন উপাধ্যক্ষ হিসাবে মাদরাসায় দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন। তার অনেক ছাত্র-ছাত্রী দেশ-বিদেশে কর্মরত আছেন।
এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার ইসলামাবাদ, বিশ্বনাথ, সিলেট। প্রতিষ্টাতা: আল্লামা এ.টি.এম.ওলিউর রহমান রহ.। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ হওয়ার পর মাদরাসার স্বপ্ন দ্রষ্টা ও প্রতিষ্টাতা হিসেবে তৎকালীন সময়ে মুহতামিম এর দায়িত্ব পালন করেন আল্লামা এ.টি.এম.ওলিউর রহমান রহ:
১৯৭০ সালে মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান নিজ জন্মভূমি তেলিকোনা গ্রামে প্রথম যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হলো তেলিকোনা ফুরকানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা।
হিফজ বিভাগে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকারী উস্তাদগণ হলেন: ১৯৭১-১৯৭৪ইং হাফিজ আব্দুল হান্নান (মিজার গাঁও ), ১৯৭৪-১৯৭৫ইং হাফিজ মাও:আবদুস সুবহান (হিফজ বিভাগ (কানাইঘাটী), ১৯৭৫-১৯৮২ইং হাফিজ মাহমুদ (জকিগঞ্জী), ১৯৮২-১৯৮৯ইং হাফিজ শামছুল হক (কানাইঘাটী), ১৯৮৯-১৯৯১ইং হাফিজ ইয়াহইয়া (সৎপুরী), ১৯৯১-১৯৯২ইং হাফিজ ছামির আলী (ভুলাগনজ),
মাওলানা ওলিউর রহমান ১৯৭০ সালে যে তেলিকোনো ফুরকানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা শুরু করেছিলেন সেটির সাথে তিনি ইবতেদায়ী শাখাও শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে হিফজ শাখা ও ইবতেদায়ী শাখার সমন্বয়ে তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার নাম রাখেন “জামেয়া-ই-ইসলামিয়া তেলিকোনা মাদরাসা।
এ “জামেয়া-ই-ইসলামিয়া তেলিকোনা মাদরাসাকেই তিনি দাখিল পর্যায়ে উন্নিত করেন। ১৯৭৪ সাল থেকেই তিনি এ মাদরাসাকে দাখিল এর বোর্ড স্বীকৃতি লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৮১ সালে সিলেটের এক বরেণ্য শিক্ষাবিদ মাওলানা কাজী শাহেদ আলী মাদরাসায় যোগদান করলে তার সহযোগিতায় ১৯৮৪ সালে দাখিল পর্যন্ত অনুমোদন ও এম.পিওভোক্ত হয়ে যায়। পুরণ হয় মাওলানার হৃদয়ে লালিত বহুদিনের স্বপ্ন।
১৯৭০ সাল থেকে জামেয়া-ই-ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং মাদরাসাটিকে সরকারী এমপিওভোক্ত হিসেবে সফলতা অর্জনের জন্য যারা শ্রম দিয়ে গেছেন মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান রহ. তাদের কৃতজ্ঞ ও আল্লাহর নিকট উত্তম জাজা কামনা করেন।
মাওলানার ঐকান্তিক সহযোগিতায় যারা মাদরাসার সুপার পদে দায়িত্ব পালন করেন তাদের মধ্যে দায়িত্ব প্রাপ্ত সুপার হলেন- মাওলানা মোঃ কমর উদ্দিন, মাওলানা আবু তায়্যিব সৎপুরী, মাওলানা কাজী শাহেদ আলী সুনামগঞ্জী, আর্শাদ আলী পর্তাবপুরী, ১৯৭৫-১৯৮৫ইং মাও: শাহেদ আলী (সুনামগঞ্জী), ১৯৮৫-১৯৮৯ইং মাও: আরশাদ আলী (প্রতাপপুরী) সিলেট, ১৯৮৯ ইং থেকে ১৯৯১ মাওলানা সিরাজুল হক ছাতকী, ১৯৯১ ইং থেকে ১৯৯২ মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী মুন্সিগাও, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ছিলেন মাস্টার আব্দুল করিম জামালপুরী, ১৯৯৪ ইং থেকে ১৯৯৫ ইং মাওলানা রহমত উল্লাহ বড় হুজুর সুনামগঞ্জী, ১৯৯৫ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবু তাহির মোহাম্মদ হুসাইন।
মাওলানা এ.টি. এম. ওলিউর রহমান ১৯৯০ সালে দারুল ক্বেরাত এলাহাবাদ শুরু করেন। পরবর্তীতে ইত্তেহাদুল কুররা বাংলাদেশ এর অনুমোদনে নাজিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্বারী মুজিবুর রহমান। দারুল কেরাত পরিচালনায় এরপর বিভিন্ন সময় যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হলেন- ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সালে নাজিমের দায়িত্ব পালন করেন মৌলভী ক্বারী মুজিবুর রহমান, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সালে নাজিমের দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা মিজান আহমেদ, ১৯৯৫ ইং থেকে ১৯৯৯ ইং সালের বিভিন্ন সময়ে নাজিমের দায়িত্ব পালন করেন ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান, মাওলানা আলিম উদ্দীন, কে. এম. আজমল হুসেন বুলবুল। ১৯৯৯ ইং সাল থেকে আদ্যবধি নাজিমের দায়িত্ব পালন করে আসছেন এলাহাবাদ আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাওলানা মুখলিছুর রহমান।
১৯৭০ সালে মেয়েদের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিজ বাড়িতে তার পিতা মরহুম মোশররফ আলী রহ. এর নামানুসারে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন- “মোশাররফিয়া এইডেড বিদ্যালয়।” তার সহধর্মিনী রাবেয়া আখতার প্রথম মহিলা শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন।
১৯৭০ সালে মেয়েদের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিজ বাড়িতে তার পিতা মরহুম মোশররফ আলী রহ. এর নামানুসারে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন- “মোশাররফিয়া এইডেড বিদ্যালয়।” তার সহধর্মিনী রাবেয়া আখতার প্রথম মহিলা শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন।
মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান রহ. ১৯৭১ সালে উস্তাদ মাওলানা গোলাম হোসাইন রহ. পরামর্শক্রমে মোশাররফিয়া এইডেড বালিকা বিদ্যালয় এর নাম পরিবর্তন করে তেলিকোনার বিশিষ্ট দানশীল ব্যক্তি রমহুম তমিজ উল্লাহ রহ. ভূমি দান করলে তিনি সেখানে অবৈতনিক প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৭২ সালে শিক্ষা বিভাগের নির্দেশে মোশাররফিয়া এইডেড বালিকা বিদ্যালয় ও তেলিকোনা অবৈতনিক প্রাইমারী স্কুল দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকাসহ তেলিকোনা প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে একিভূত হয়।
১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যবধি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা কাজী আবু তাহীর মোঃ হোসাইন, ১লা জুলাই ২০০২ সালে মাদরাসাটি আলিম ক্লাস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই প্রতিষ্ঠানেই মাওলানা এ,টিএম ওলিউর রহমানের ছোট ভাই মাওলানা মোহাম্মদ মখলিছুর রহমান ২০০২ সাল থেকে অদ্যবধি উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন।
মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান ২০০২ সালে মাদরাসার নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন “এলাহাবাদ আলিম মাদরাসা।” আর এ নামেই বর্তমানে মাদরাসাটি বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে স্বীকৃতি লাভ করে শিক্ষা বিতরণে অবদান রেখে যাচ্ছে।
এলাকার ধনী গরিব হত দারিদ্র দেশ বিদেশের সাবার সহযোগীতায় আল্লামা. এ.টি.এম.ওলিউর রহমান প্রতিষ্টা করেন: এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, ইসলামাবাদ ,বিশ্বনাথ, সিলেট। এবং যারা ছিলেন আজীবন সদস্য তারা হলেন- এক কালিন দশ হাজার টাকা বা অনুদান আছেন এমন যারা হলেন- জনাব মাওঃ হাবিবুররহমান-দৌলতপুর, জনাব মাষ্টার আব্দুন নুর –আলীনগর, জনাব হাজী আব্দুল আহাদ –আলীনগর, জনাব হজী আব্দুর রব –আলীনগর, জনাব মাওঃ এ. টি. এম. ওলীউর রহমান –তেলিকোনা, জনাব তমিজ উল্লাহ –তেলিকোনা, জনাব হাজী আব্দুর রশীদ –তেলিকোনা, জনাব রাবেয়া আখতার –তেলিকোনা, জনার হাজী আব্দুস সবর –তেলিকোনা, জনাব হাজী রুশন আলী –কুরিখলা, জনাব নুরুন নাহার –আলমপুর, জনাব মৌঃ আব্দুল হান্নান –চানপুর, জনাব হারুন আহমদ- বুরাইয়া, জনাব রফিকুর রহমান- বুরাইয়া, জনাব রফিকুল হক –ঘাসিগাঁও, জনাব হাজী সুনাফর আলী- প্রয়াগমহল, জনাব হাজী আবুল লেইছ- সৎপুর, জনাব মোঃ আবুল কাশেম –দেওকলস, জনাব সামশুল হক-(কাজী মঞ্জিল) বিশ্বনাথ, জনাব কুতুব আলী –সিংরাওইল, জনাব রফিক মিয়া শীন্মতপুর, জনাব আব্দুল খালিক –কান্দিগ্রাম, জনাব জসসিদ আলী -পালের চক।
আলোচনার প্রান্তটিকায় এসে বলতে পারি যে, যে স্থানে ইলমে দ্বীন কুরআন-সুন্নাহ, তাফসীর, উসূলে তাফসীর, উসূলে হাদীস, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, ফাসাহাত-বালাগাত, নাহু সরফ প্রভৃতি শিক্ষা দেয়া হয়, তাকেই মাদরাসাহ বলা হয়। ‘‘মাদ্রাসা’’ শব্দটি বাংলাদেশসহ সারাপৃথিবীতে বহুল আলোচিত ও বহুল পরিচিতি।
যে জাতি মত শিক্ষিত, সে জাতি ততই উন্নত ও সভ্য। তবে হতে হবে সুশিক্ষিত। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার আলোই দেশ ও জাতির সফলতার চাবিকাঠি ও পথনির্দেশক।
শিক্ষা মানুষকে প্রদান করে সাহায্য ও মর্যাদা। শিক্ষা-দীক্ষা মানুষকে উন্নত থেকে উন্নততর জাতিতে পরিণত করে। মহান আল্লাহ শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানার্জেনের প্রতি পবিত্র কুরআনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন এবং বিশ্ব মানবতাকে করেছেন উৎসাহিত। ‘‘(হে রসূল সাঃ) আপনি বলুন- যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কী সমান হতে পারে?’’ ৩৯:৯
বস্তুতঃ মহান আল্লাহ এখানে মূর্খদের ওপর জ্ঞানীদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে, যা সর্বজনস্বীকৃত। মূলত মহান আল্লাহ ওপরোক্ত আয়াতে মানবজাতির শিক্ষার প্রতি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। সৃষ্টি করতে চেয়েছেন বিদ্যার প্রতি অনুরাগ।
বস্তুতঃ এইদিকেই ইঙ্গিত দিয়ে সর্বপ্রথম অবতীর্ণ করেছিলেন আল্লাহ তায়ালা ‘ইকরা'... অর্থাৎ পড়ুন। এ স্থানে পড়ার গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পড়াশুনাইতো একমাত্র সবকিছু জানাশুনার মাধ্যম।
তবে নিশ্চয়ই দীনি শিক্ষা এবং মাদরাসা শিক্ষাই হলো অগ্রাধিকার। সকল মুসলমানদের উপর সর্বপ্রম দীনি ইলম কুরআন-হাদীস শিক্ষা করা অতীব দরকার।
ইতিহাস বেত্তাগণের একটি অংশ এ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন যে, ঐতিহাসিক পর্বতের গুহায় “ইকরা” প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) কুরআনিক জ্ঞানের যে সুমহান ধারা লাভ করেছিলেন, তারই শিক্ষা- চর্চা অব্যাহত রাখার নিমিত্তে আকরাম ইবনে আবুল আকরাম-এর সাফা পাহাড়ের নিকটস্থ গৃহে এ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র তথা মাদরাসার শিক্ষার সূত্রপাত ঘটেছিল।
সেই শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখতেই মূলত মাওলানা এ.টি.এম ওলিউর রহমান ও তার পরিবার কাজ করে যাচ্ছে। আল্লাহ যেন এ খেদমতকে কবুল করে দুনিয়া আখেরাতের জীবনকে উজালা করে দেন। আমিন।
চলবে ---
লেখক :
নির্বাহী সম্পাদক,
মাসিক প্রান্তিক জনপদ।
0 coment rios:
You can comment here