।। মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী।।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারী।
দেশে দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জনজীবন এখন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। গোটা পৃথিবীর মানুষ
এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের
প্রাণহানি ঘটছে। এক কথায় পৃথিবীর মানুষ এখন করোনাযুদ্ধে এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে।
বিশ্বব্যাপি অসহায় মানুষের আর্তনাদে ক্রমশ আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে। করোনা ভাইরাস-
কোভিড- ১৯ প্রাদুর্ভাবে বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এই
মহামারীতে বিশ্ব পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমাদের দেশেও এর সংক্রমণ
প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
মরণব্যাধি এ ভাইরাসটি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান
শহরে উদ্ভব হয়। এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়নি। চীন সরকার ইতিমধ্যে
বিশ্বনবী সা. এর নসিহত মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন। গবেষকরা ধারণা করছেন, যদি এ ভাইরাস বিশ্বব্যাপি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তাহলে প্রায় ছয় কোটি মানুষের প্রাণহানি
ঘটতে পারে। তাই কেবল মাত্র চীন সরকারই নয় পৃথিবীর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও মহামারীর সয়লাব
ঠেকাতে মহানবী সা. এর উপদেশগুলোই বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিধি এবং নির্দেশনাবলী হিসেবে চিহিৃত
করেছে।
বোধ করি, ইসলাম বাস্তব
ভিত্তিক ও বিজ্ঞান সম্মত শ্বাশত ধর্ম। মানুষের জন্য যে সকল অনুশাসন মেনে চলা সহজতর
হবে সেভাবেই মহান আল্লাহ সুবহানা ওয়া তাআলা ইসলামের বিধি-বিধান নির্ণয় করে দিয়েছেন।
যুগ সন্ধিক্ষণে কিংবা কালপরিক্রমায় এই পৃথিবীতে অনেক মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এ
থেকে পরিত্রাণের জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদীসে মানুষকে অনেক সুষ্পষ্ট দিক নির্দেশনাও
দেয়া হয়েছে। আর এসব মহামারী মহান আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই আমাদের মধ্যে
নেমে আসে বলে কুরআন-হাদীস এর বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হয়। যাতে আমরা আরও সতর্ক হই এবং
একমাত্র তাঁর প্রতিই মুখাপেক্ষি হয়ে থাকি। অধিকন্তু এই সকল দূর্যোগ কিংবা মহামারী
আমাদের শিখিয়েছে মানুষ শিল্পে, শিক্ষায়, শক্তিতে, সমরাস্ত্রে, বিজ্ঞানে
ও প্রযুক্তিতে যতই উন্নতি লাভ করুক সবকিছু মহান আল্লাহ তায়লার অসীম কুদরতের সামনে তুচ্ছ
ও অতি নগণ্য। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন
সাত আকাশ এবং সেগুলোর অনুরূপ পৃথিবীও। তাদের উভয়ের মধ্যে তাঁর নির্দেশ সমূহ (সিদ্ধান্ত)
নেমে আসে, যাতে তারা বুঝতে পারে যে আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান
এবং জ্ঞানে আল্লাহ সব কিছু পরিবেষ্টন করে আছেন। (সুরা তালাক,
আয়াত : ১২)।
পাশাপাশী দূর্যোগকালীন মুহুর্তে একমাত্র মহাপরাক্রমশালী
সৃষ্টি কর্তার প্রতি ভরসা রেখে নিজেদের সতর্কাবস্থানে থাকারও সুষ্পষ্ট দিক-নির্দেশনা
দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করেছেন-‘ হে ঈমানদারগন! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো।’(সুরা নিসা-৭১) অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে ‘তুমি ইচ্ছে করে
ধ্বংসের দিকে নিজেকে ঠেলে দিওনা।’(সুরা আল বাক্বারা-১৯৫)
এতে প্রতিয়মান হয় যে, ইচ্ছে করে কিংবা নিজেদের খামখেয়ালীপনায় কেউ নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিলে
এর জন্য সে নিজেই দায়ী থাকবে। আর এটা অবশ্যই মহাপাপ হিসেবেও গন্য হবে। তাই এ থেকে পরিত্রাণ
পেতে মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে এর বর্ণনা দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন
ভাবে। এ সমস্ত আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে তা সহজেই অনুমেয় হয়ে যাবে। এছাড়া
এ বিষয়টি আমাদের জেনে রাখা উচিৎ যে- মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের সাধ্যাতীত এমন কোনো
কিছুই চাপিয়ে দেন না। অনেক মৃত্যু রয়েছে যা ইচ্ছে করেই মানুষ এর কবলে পড়ে। এর ব্যাখ্যায়
যদিও আত্মহননের কথাটি উল্লেযোগ্য তদুপরি সমকালীন দূর্যোগ কিংবা মহামারীকেও বুঝানো
যেতে পারে বলে শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাগণ মত দিয়েছেন। কেননা সতর্কতা এবং নির্দেশনা
উপেক্ষা করার কারণেই অনেকে এর কবলে পড়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-‘মানুষের সাধ্যাতীত কোন বুঝা চাপিয়ে দেয়ার
খোদা কিন্তু আমি নই।’ এর দ্বারা সরাসরি ইঙ্গিত করা হয়েছে সতর্কতার
প্রতি। পৃথিবীতে মানুষের ওপর যখনই যে ধরণের মহামারী কিংবা কঠিন পরীক্ষা এসেছে সবসময়
তা থেকে নিরাপদ ও সতর্ক থাকারই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বিশ্বের আধুনি চিকিৎসা
বিজ্ঞানও একই কথা বলছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে
বিজ্ঞানের দাবিও কুরআন-হাদীসের নির্দেশনার সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে। মানুষ মহামারী কিংবা
দূর্যোগ মোকাবেলায় সতর্ক ও সচেষ্ট হওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। মহান আল্লাহ তাআলা এমন
পরিস্থিতিতে মানবজাতিকে সতর্ক ও ধৈর্যশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন-‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই; মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে,
সম্পদ, জীবন, পণ্য,
ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্টার সাথে
চেষ্টা করে,তাদেরকে সুখবর দাও।’ [আল-বাক্বারাহ-১৫৫] একই ভাবে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-‘যারা
বিশ্বাস করেছ, শোনো: দৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করো এবং সালাতের
মাধ্যমে সাহায্য চাও। যারা ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে , আল্লাহ
তাআলা অবশ্যই তাদের সাথে আছেন। ’[সুরা বাক্বারাহ-১৫৩]
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার থেকে আমাদের
শেখার আছে অনেক কিছুই। প্রতিটি দেশ, সমাজ ও ব্যক্তি
নিজের মতো করে এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এ থেকে পরিত্রানের জন্য কিছু বিষয় রয়েছে
যা করনীয় এবং বর্জনীয় তা আমাদের অক্ষরে অক্ষরে পালন করা ছাড়া কোন উপায়ন্তর নেই। কেননা
এভাবে দুর্যোগ, মহামারী কিংবা দৃষ্টান্ত কালপরিক্রমায় পৃথিবীতে
এসেছে। তন্মধ্যে হযরত লুত (আ.) উম্মতের মধ্যে বিশেষ কারণে তাঁদের ওপর এক ভয়াবহ শাস্তি
আবর্তিত হয়েছিল। সে সময়কালে আল্লাহ তায়লা খোদ তাঁর নবী ও যাঁরা এ শাস্তির আওতাভুক্ত
নয় এসকল মানুষকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার
নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর কারণ ছিল একটাই তা হলো কিছু সংখ্যক মানুষদের ওপর শাস্তি স্বরুপ
দুর্যোগ নেমে এসেছিল ঠিকই। কিন্তু অন্যরা সতর্কাবস্থা এবং নির্দেশনা না মেনে চললে
তারাও ধ্বংসের মধ্যে পতিত হতে হবে এমন নির্দেশনা নবী লুত (আ.) কে পূর্বেই দেয়া হয়েছিল।
কুরআনে বর্ণিত এতদ আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম দুর্যোগ, মহামারী সব কিছুই আল্লাহ তায়লার পক্ষ থেকে এসে থাকে। আর তা একান্ত তাঁরই ইচ্ছায়।
তবে এ থেকে বেঁচে থাকার পথ, পন্থা অবলম্বনের শিক্ষাও ইসলামে বিদ্যমান
রয়েছে।
আমরা জানি ও বিশ্বাস করি মৃত্যু মানবজীবনের অনিবার্য
নিয়তি ও পরিণতি। সুতরাং জীবমাত্র মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এ সত্য অস্বীকার করার
সাধ্য কারও নেই। বলা যায়, একে ভয় পেয়ে কোন লাভ নেই, পরিত্রানেরও কোন উপায়ন্তর নেই। আর করোনাভাইরাস এই নির্মম সত্যকে আমাদের সামনে
আরও জীবন্ত, আরও অনিবার্য করে তুলেছে যে যেকোনো সময় এর সংক্রমণে
যে কারোর মৃত্যু হতে পারে। তাই মৃত্যুর জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকা উচিত। পবিত্র কোরআনে
বলা হয়েছে, ‘বলে দাও, তোমরা যে মৃত্যু থেকে
পলায়ন করো, সেই মৃত্যু তোমাদের সঙ্গে অবশ্যই সাক্ষাৎ করবে...
’(সুরা জুমুআ, আয়াত : ৮)।
করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার জন্য যেভাবে নিজেকে
গুটিয়ে রাখতে হয়, তেমনি সামাজিক অপরাধ যথা খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি এবং কুফর, শিরক,
বেদআতসহ পাপের ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।
অতীতে এর সর্বোত্তম নজির দেখা যায় আসহাবে কাহফের ঘটনায়। একদল যুবক নিজের ইমান ও বিশ্বাস
টিকিয়ে রাখার জন্য গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে এক দীর্ঘ ঘুমে তারা ৩০৯ বছর পার করেছেন।
বলা যায়, এটি ছিল দীর্ঘতম হোম কোয়ারেন্টাইন। তাদের ঘটনা নিয়ে
পবিত্র কোরআনে সুরা কাহাফ নামে একটি সুরা নাজিল হয়েছে।
দূর্যোগ কিংবা মহামারীতে একই ভাবে কোয়ারেন্টাইনে
রাখার নির্দেশনা আমরা মহানবী সা. এর বাণী থেকেও পেয়ে থাকি। তিনি ষ্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন-‘তোমার ওপর তোমার শরীরের অধিকার আছে।’ এর মানে হচ্ছে নিজেদের শরীরের যেহেতু অধিকার বিদ্যমান, তাই নিজেরা শরীরের হেফাজত করার তাগিদ নবী সা. সেই দেড় হাজার বছর পূর্বেই বলে
দিয়েছেন। একই বিষয়ে সহীহ বুখারির এক হাদীসে নবী সা. বলেছেন, ‘যে কোন মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ঘরে অবস্থান করে ধৈর্যশীল হয়ে এবং আতকিংত
না হয়ে সওয়াবের উদ্দেশ্যে ঘরে অবস্থান করে তবে তাঁকে শহিদের মর্যাদা প্রদান করা হবে।’ (বুখারী-৩৪৭৪)
বর্তমানে বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের
কারণে যে বৈশি^ক স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং
মহামারীর প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে লকডাউন পদ্ধতি গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে
তা যথাযথভাবে পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য। এ নিয়ে কোন ভাবেই খামখেয়ালীপনা করা চলবেনা।
এ প্রসঙ্গে মহানবী সা. দেড় হাজার বছর পূর্বেই মানবজাতির জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘যখন তোমরা শুনবে কোন এলাকায় মহামারী দেখা দিয়েছে
সেখানে তুমি প্রবেশ করবেনা। আর যেখানে তুমি আছ, সেখানে যদি মহামারী
দেখা দেয় তবে সেখান থেকে তুমি বের হবেনা’ (সহীহ বুখারী-৫৩৯৬)। একই ভাবে বর্তমানের আইসোলেশন পদ্ধতি সম্পর্কেও মহানবী সা.
নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-‘কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে যাতে সুস্থ
ব্যক্তির সাথে রাখা না হয়।’(বুখারী ও মুসলিম)
একইভাবে মসজিদে জামাত ও জুমার উপস্থিতিকে সীমিত
রাখার আদেশ শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক ও যথার্থ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। কেননা মহান আল্লাহ
তাআলা কুরআনুল কারীমে ইরাশাদ করেন, “তোমরা নিজেরা
নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম
দয়ালু।”(সূরা নিসা-২৯) আরও ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।” (সূরা বাকারা-১৯৫) আরও ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ,
তোমরা (শত্রুর সাথে লড়াইকালে) আত্মরক্ষার উপকরণ নিজেদের সাথে রাখো।” (সূরা নিসা-৭১)
এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারির একটি হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-একদিন
বজ্রপাতসহ প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল, দিনটি ছিল
জুমআর দিন। নবীজী সা. দূর্যোগকালীন সুষ্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন- ‘তোমাদের যার যার অবস্থানে থেকো, ঘরে অবস্থান করে নামাজ
আদায় করো, আজকের জুমআর নামাজে আসা থেকে বিরত থাকো।’ প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে সয়ং নবী সা. এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাই আজকের এই
সময়ে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মসজিদে গমন থেকে বিরত থাকাও শরীয়ত সম্মত যৌক্তিক এবং
ইসলামি বিধি সম্মত সিদ্ধান্তই বটে।
আমরা সব ধরনের আজাব বা ব্যাধি থেকে রক্ষা পাই সেজন্য
মহানবী সা. আমাদেরকে দোয়াও শিখিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অধিকহারে এই দোয়া পড়া উচিত
যে-
اَللَّهُمَّ
اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ
الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাছি
ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে
আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই।
আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ
الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল
আখলাক্বি ওয়াল আমালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ
(নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে
অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ-ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাই। (তিরমিজি)
বলাবাহুল্য যে, গোটা বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের দেশও বর্তমানে বেশ ঝুকিপূর্ণ
হয়ে ওঠেছে। বর্তমান চিত্র ভয়াবহরূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই এ ভাইরাস আমাদের দেশে মহামারির
আকার ধারণ করছে। খুব দ্রæততগতিতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্তদের
অনেকেই মৃত্যুবরণ করছেন। এ মুহূর্তে আল্লাহর কাছে দুআ এবং শরীয়তের আলোকে সতর্কতা অবলম্বন
ছাড়া বিকল্প নেই।
সতর্কতার জন্য সরকার ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ
করে, যে কোনো ধরনের বড়ো জমায়েতকে নিষেধ করেছে। লোক
সমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আদেশ দিয়েছে। জামাত
ও জুমার উপস্থিতিকে সীমিত রাখার আদেশ জারি করেছে। শরয়ী দৃষ্টিতে এসকল সতর্কতামূলক নির্দেশনা
সঠিক ও যথার্থ বলে মতামত দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম।
দেশ বরেণ্য আলেম আল্লামা আহমদ শফীর মতে-‘সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাকে মূল্যায়ন করা এবং তা উত্তমরূপে গ্রহণ ও পালন
করা মানবতার কল্যাণে আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। তবে সতর্কতা ও ব্যবস্থা গ্রহণই আমাদের
একমাত্র কাজ নয় বরং আমাদের কৃতপাপ ও সমূহ অন্যায় থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করতে হবে। ভবিষ্যতে সকল অপরাধ থেকে দূরে থাকার প্রতিজ্ঞা করে খালিছ দিলে তওবা করতে
হবে। ঘরে বসে দুআ,ইস্তেগফার ও নফল ইবাদাতে মাশগুল থাকতে হবে।
যেন আল্লাহ তাআলা অনতিবিলম্বে আমাদের থেকে এমহামারি তুলে নেন। নিরাপদে জীবন যাপন করার
তাওফীক দান করেন। আমাদেরকে ও সারা বিশ্বকে এ মহামারি থেকে পরিত্রাণ দেন।’
কুরআন হাদীস ভিত্তিক উপরোক্ত আলোচনা প্রেক্ষিতে
আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পারি যে-ইসলাম নিজের বা অন্যের ক্ষতির কারণ হওয়াকে সমর্থন
করে না; বরং নিষেধ করে। সর্তকতা ও সচেতনতা ইসলামের অন্যতম
বৈশিষ্ট্য। যে কোনো আশু-ক্ষতি থেকে সতর্ক থাকা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই
আসুন আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে অবস্থান করি, ইবাদত-বন্দেগী
ঘরে থেকেই করি। দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে সবাই সতর্ক হই, সুস্থ
থাকি।
০১৭১৬ ৯০০ ১৭৩
ইমেইল: hhalalenews@gmail.com
ইমেইল: hhalalenews@gmail.com
0 coment rios:
You can comment here