।। বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল।।
মানুষের সঙ্গে আমার আচার-ব্যবহার কেমন হতে হবে?
কী ধরনের আচার-ব্যবহার আমি মানুষের সঙ্গে করব এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের একটি সর্বজনীন মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছেন,
তা হচ্ছে মানুষের থেকে আমি যে ধরনের আচার-ব্যবহার কামনা করি, মানুষের সঙ্গে আমাকে ঠিক সে ধরনের ব্যবহার করতে হবে। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে আবু হুরায়রা! তুমি পরহেজগার হয়ে যাও। তাহলে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রার্থনাকারী হয়ে যাবে। তুমি স্বল্পে তুষ্ট হয়ে যাও,
তাহলে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ হয়ে যাবে। তুমি নিজের জন্য যা ভালোবাস অন্যের জন্যও তাই ভালোবাস, তাহলে তুমি প্রকৃত মুমিন হয়ে যাবে।’
(সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪২০৭)
আর যেহেতু আমি এটা পছন্দ করি না যে,
কেউ আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করুক, মিথ্যা বলুক,
প্রতারণা করুক। তাই আমাকেও মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, মিথ্যা বলা,
প্রতারণা ইত্যাদি সব নিন্দনীয় আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
নম্র-ভদ্র আচরণ
সবার সঙ্গে নম্র-ভদ্র আচরণ করতে হবে। কেননা আল্লাহ তায়া’লা অহংকারীকে ভালোবাসেন না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীদের।’ (সুরা আন-নিসা : ৩৬)
যাদের স্বভাব-চরিত্র নম্র ও কোমল,
তাদের মানুষ আন্তরিকভাবে ভালোবাসে। তাদের প্রতি মানুষ ধাবিত হয়। পক্ষান্তরে যাদের আচরণ রুক্ষ-কঠিন, তাদের থেকে মানুষ দূরে থাকে।
হাসিমুখে কথা বলা
সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে হবে। কেননা কেউ যদি তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন,
তাহলে তিনি একটি সদকার পুণ্য পান। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় প্রত্যেক পুণ্যের কাজই সদকা,
পুণ্যের কাজের মধ্য থেকে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে পানি ঢেলে দেওয়া, অর্থাৎ এসব কাজ দ্বারাও সদকার সওয়াব পাওয়া যায়।’
(তিরমিজি : ১৯৭০)
মানুষের সার্বিক জীবনে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নতের (কাজের) তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। কেননা হাসিমুখে কথা বলা দ্বারা পারস্পরিক দ্বন্ধ-কলহ, রেষারেষি ও মনোমালিন্য দূর হয়ে যায়। পারিবারিক, সামাজিক পরিমন্ডলকে সুন্দর ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে।
মানুষের সার্বিক জীবনে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নতের (কাজের) তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। কেননা হাসিমুখে কথা বলা দ্বারা পারস্পরিক দ্বন্ধ-কলহ, রেষারেষি ও মনোমালিন্য দূর হয়ে যায়। পারিবারিক, সামাজিক পরিমন্ডলকে সুন্দর ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে।
আগন্তুককে সাদর সম্ভাষণ
আগন্তুককে সাদর সম্ভাষণ করা দ্বারা মনের উদারতা ও মহত্ব প্রকাশ পায়,
অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা এতটুকু সৌজন্যতা প্রকাশ করতেও কুণ্ঠাবোধ করি, এটা সঙ্কীর্ণ মনের পরিচায়ক। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) রাষ্ট্রপ্রধান থাকা সত্বেও সাধারণ কেউ তাঁর কাছে গেলেও তিনি তাকে সাদর সম্ভাষণ জানাতেন। এ সম্পর্কে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে গমন করেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে তাকে বসতে দেন। সাহাবী চাদর হাতে নিয়ে নিজের বুক,
চেহারা ও চোখের সঙ্গে মিলান। অতঃপর তিনি তাতে চুমু খেয়ে বলেন,
আপনি আমাকে যেভাবে সম্মান করেছেন আল্লাহও আপনাকে সেভাবে সম্মান করুন। এরপর তিনি চাদরটি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পিঠে দিয়ে দেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার কাছে যদি জাতির কোনো সম্মানিত ব্যক্তি আসে তাহলে সে যেন তাকে সম্মান করে।’
(মুসতাদরাকে হাকিম : ৭৭৯১)
সামান্য উপকারেও অধিক কৃতজ্ঞতা
কেউ কাউকে কোনো কিছু দিয়ে কোনো দিন খুশি করতে পারে না,
যদি না তার মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ থাকে। মানুষের চাহিদার যেমন কোনো অন্ত নেই, তেমনি তার প্রাপ্তিরও কোনো শেষ নেই। তাই মানুষের কর্তব্য হচ্ছে,
কেউ তাকে কিছু দিলে কিংবা তার কোনো উপকার করলে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। রাসুল (সা.)-কে কেউ কোনো উপহার দিলে তিনি তা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতেন। অতি সামান্য বস্তু দিলেও রাসুলুল্লাহ (সা.) উপহার প্রদানকারীকে কৃতজ্ঞতায় সিক্ত করতেন।
বড়কে সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ
আমরা পারিবারিক,
সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনে যাদের সঙ্গে চলাফেরা,
ওঠাবসা করি, তারা হয় আমাদের চেয়ে বয়স,
শিক্ষাদীক্ষা ও পদমর্যাদায় বড়,
নয়তো ছোট, যদি বড় হন তাহলে ইসলাম তাদের সম্মান করার নির্দেশ দেয়। আর যদি ছোট হয় তাহলে স্নেহ করার নির্দেশ দেয়। রাসুল (সা.) ছোটদের স্নেহ করতেন। তিনি শিশুকে কোলে তুলে নিতেন। চুমু দিতেন। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘যে আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না, বড়দের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে না,
সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৯২০)
তর্কবিতর্ক এড়িয়ে চলুন
আমরা কারও সঙ্গে তর্কে বিজয়ী হতে পেরে নিজেদের জন্য গর্ব ও কৃতিত্বের বিষয় মনে করি। তাই অনেকেই তর্কের প্রতি খুবই আগ্রহী। এমনকি এটা তাদের নেশায় পরিণত হয়ে যায়। কয়েকজন একত্র হলে শুরু হয় তর্কবিতর্ক,
কখনও রাজনীতি, কখনও অন্য বিষয় নিয়ে। তবে যদিও ধর্মের স্বার্থে কিতাবিদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক কোনো ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে পড়ত,
তবুও মহান সৃষ্টিকর্তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাদের সঙ্গেও উত্তমপন্থায় বিতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কুরআনে এসেছে,
‘আপনি তাদের সঙ্গে উত্তমপন্থায় বিতর্ক করুন।’ (সুরা আন-নাহল : ১২৫)
অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার করুন
মানুষের মুখের কথা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি। সঠিকভাবে এর ব্যবহার করা জরুরি। অন্যথায় এটা মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। কেননা মানুষের মুখে উচ্চারিত প্রতিটি কথা মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে সংরক্ষিত হয়। তিনি বলেন : ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে।’
(সুরা ক্বাফ : ১৮)
সুতরাং জিহবা নিয়ন্ত্রণ করা ও সংযত কথাবার্তা বলা মানুষের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। এ জিহবাই মানুষকে ক্ষতির মধ্যে নিপতিত করে। জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পরকালে মুক্তি পাওয়া ও জান্নাতে যাওয়া সম্ভব হবে।
এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ আছ-ছাক্কাফী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি বললাম,
‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার দৃষ্টিতে আমার জন্য সর্বাধিক ভীতিকর বস্তু কোনটি? তিনি স্বীয় জিহবা ধরে বললেন,
এটি।’ (তিরমিজি : ২৪১০;
মিশকাত : ৪৮৪৩, সনদ সহীহ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন : ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু ও তার দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’
(বুখারী : ৬৪৭৪; মিশকাত : ৪৮১২)
অন্যত্র তিনি বলেন : ‘তোমরা নিজেদের পক্ষ থেকে আমার জন্য ছয়টি বিষয়ের জামিন হও,
আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হব।
(১) যখন তোমরা কথা বলবে,
তখন সত্য বলবে।
(২) যখন ওয়াদা করবে,
তা পূর্ণ করবে।
(৩) তোমাদের কাছে আমানত রাখলে,
তা আদায় করবে।
(৪) নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করবে।
(৫) স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং
(৬) স্বীয় হস্তকে (অন্যায় কাজ হতে) বিরত রাখবে।’
(আহমাদ, মিশকাত : ৪৮৭০,
সনদ হাসান)
জিহবা মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর শরীরের অন্যান্য অঙ্গ জিহবার অনুগামী হয়। যেমন হাদীসে এসেছে : আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) থেকে মারফ‚‘ হিসাবে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়া’লাকে ভয় করো। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য।’ (তিরমিজি : ২৪০৭,
মিশকাত : ৪৮৩৮; সহীহুল জামে‘
: ৩৫১, সনদ হাসান)
কথা বলার শিষ্টাচার
কথা বলার অনেক আদব বা শিষ্টাচার রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লিখিত হলো :
১. নম্রভাবে কথা বলা : নম্রভাবে কথা বলা বিশ্বাসী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। মহান সৃষ্টিকর্তা বলেন : ‘রহমান’ (দয়াময়)-এর বান্দা তারাই,
যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ লোকেরা (বাজে) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে ‘সালাম’। (সুরা আল-ফুরক্বান : ২৫/৬৩)
অন্যত্র তিনি বলেন : ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর,
তোমার আওয়াজ নিচু কর। নিশ্চয়ই সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।’ (সুরা লোকমান : ৩১/১৯)
২. সত্য কথা বলা : রাসুল (সা.) বলেন : ‘তোমরা সত্য গ্রহণ কর। সত্য নেকীর সঙ্গে রয়েছে। আর উভয়টি জান্নাতে যাবে। আর মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। মিথ্যা পাপের সঙ্গে রয়েছে। উভয়ই জাহান্নামে যাবে।’ (ইবনে হিব্বান,
আত-তারগীব ওযাত তারহীব : ৪১৮৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘তোমাদের উপরে আবশ্যিক হল সত্য কথা বলা। সততা কল্যাণের পথ দেখায় এবং কল্যাণ জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে স্রষ্টার খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেওয়া হয়। আর তোমরা মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাক। কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে মহান সৃষ্টিকর্তার খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেওয়া হয়।’ (বুখারী, মুসলিম : ২৬০৭; মিশকাত : ৪৬২৪)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘তোমাদের উপরে আবশ্যিক হল সত্য কথা বলা। সততা কল্যাণের পথ দেখায় এবং কল্যাণ জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে স্রষ্টার খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেওয়া হয়। আর তোমরা মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাক। কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে মহান সৃষ্টিকর্তার খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেওয়া হয়।’ (বুখারী, মুসলিম : ২৬০৭; মিশকাত : ৪৬২৪)
৩. উত্তম কথা বলা : উত্তম কথা বলতে হবে নতুবা চুপ থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন,
‘যে ব্যক্তি স্রষ্টা ও অনন্তকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’
(বুখারী : ৬০১৮-১৯; মুসলিম : ৪৭-৪৮;
মিশকাত : ৪২৪৩)
৪. ধীর-স্থিরভাবে স্পষ্ট করে কথা বলা : ধীরে-সুস্থে কথা বলতে হবে,
যাতে সবার বোধগম্য হয়। হাদীসে এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) এমনভাবে কথা বলতেন যে,
কোন গণনাকারী গুণতে চাইলে তাঁর কথাগুলো গণনা করতে পারত।’ (বুখারী : ৩৫৬৭;
মুসলিম : ২৪৯৩; মিশকাত : ৫৮১৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
তিনি বলেন : ‘তুমি অমুকের অবস্থা দেখে কি অবাক হও না? তিনি এসে আমার হুজুরার পাশে বসে আমাকে শুনিয়ে হাদীস বর্ণনা করেন। আমি তখন সালাতে ছিলাম। আমার সালাত শেষ হবার আগেই তিনি উঠে চলে যান। যদি আমি তাকে পেতাম তবে আমি অবশ্যই তাকে সতর্ক করে দিতাম যে,
রাসুলুল্লাহ (সা.) তোমাদের মত দ্রুততার সঙ্গে কথা বলতেন না।’
(বুখারী : ৩৫৬৮; মুসলিম : ২৪৯৩;
মিশকাত : ৫৮১৫)
৫. কথা ও কাজে মিল থাকা জরুরি : বিশ্বাসীদের কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন : ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা করো না।’
(সুরা সফ : ৬১/২)
নারীদের জন্য কথা বলার বিশেষ শিষ্টাচার
নারীদের জন্য পর-পুরুষের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে ভিন্ন নিয়ম রয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : ‘হে নবী পত্মিগণ! তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা বিশুদ্ধতা অবলম্বন কর,
তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বল না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।’
(সুরা আহযাব : ৩৩/৩২)
মহান সৃষ্টিকর্তা কোনো কোনো মনুষের মধ্যে এমন শক্তি দিয়েছেন যে,
তারা কথা বললে, মানুষ তা মোহমুগ্ধ হয়ে শোনে। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, একবার পূর্ব অঞ্চল (নজদ এলাকা) থেকে দু’জন লোক এল এবং দু’জনই ভাষণ দিল। লোকজন তাদের ভাষণে বিস্মিত হয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন,
‘কোন কোন ভাষণ অবশ্যই জাদুর মত।’ (বুখারী : ৫৭৬৭;
মিশকাত : ৪৭৩)
মিথ্যা বলার পরিণতি
মিথ্যা বলার পরিণতি সম্পর্কে হাদীসে এসেছে : বাহয ইবনে হাকিম (রহ.) তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে,
তার দাদা বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি,
‘সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক।’
(আবু দাউদ : ৪৯৯০; তিরমিজি : ২৩১৫;
মিশকাত : ৪৮৩৪; সহীহুল জামে‘
: ৭১৩৬, সনদ হাসান)
সত্য বলার পুরস্কার
সততা ও সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। এর জন্য অনন্তকালে মহাপুরস্কার রয়েছে। নবী (সা.) বলেন,
‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল, যে তর্ক পরিহার করে সত্য হলেও। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল,
যে মিথ্যা পরিহার করে ঠাট্টা করে হলেও এবং আরও একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে।’
(আবু দাউদ : ৪৮০০;
বায়হাকী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪১৭৯)
সত্য বললে সৃষ্টিকর্তা ও নবীর ভালোবাসা লাভ করা যায়। আব্দুর রহমান ইবনু হারিছ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমরা একদা নবী (সা.)-এর নিকটে ছিলাম। তিনি অজুর পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তাতে হাত ডুবালেন এবং অজু করলেন। আমরা তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁর নিকট থেকে অঞ্জলী ভরে অজুর পানি নিলাম। তিনি বললেন, তোমরা এ কাজ করতে উৎসাহিত হলে কেন? আমরা বললাম, এটা হলো স্রষ্টা ও তাঁর নবীর ভালোবাসা। তিনি আরো বললেন, ‘তোমরা যদি চাও যে, স্রষ্টা ও তাঁর নবী তোমাদেরকে ভালোবাসবেন তাহলে তোমাদের নিকট আমানত রাখা হলে, তা প্রদান করবে এবং কথা বললে, সত্য বলবে। আর তোমাদের প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ কর।’ (তাবারানী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪১৮০)
সত্য বললে সৃষ্টিকর্তা ও নবীর ভালোবাসা লাভ করা যায়। আব্দুর রহমান ইবনু হারিছ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমরা একদা নবী (সা.)-এর নিকটে ছিলাম। তিনি অজুর পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তাতে হাত ডুবালেন এবং অজু করলেন। আমরা তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁর নিকট থেকে অঞ্জলী ভরে অজুর পানি নিলাম। তিনি বললেন, তোমরা এ কাজ করতে উৎসাহিত হলে কেন? আমরা বললাম, এটা হলো স্রষ্টা ও তাঁর নবীর ভালোবাসা। তিনি আরো বললেন, ‘তোমরা যদি চাও যে, স্রষ্টা ও তাঁর নবী তোমাদেরকে ভালোবাসবেন তাহলে তোমাদের নিকট আমানত রাখা হলে, তা প্রদান করবে এবং কথা বললে, সত্য বলবে। আর তোমাদের প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ কর।’ (তাবারানী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪১৮০)
বেশি কথা বলার পরিণতি
প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বললে বেশি ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ভুল মানুষের জন্য মন্দ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। নবী (সা.) বলেন,
‘নিশ্চয়ই মানুষ কখনও স্রষ্টার সন্তুষ্টির কোনো কথা বলে অথচ সে কথা সম্পর্কে তার জ্ঞান নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা সৃষ্টিকর্তা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার মানুষ কখনও স্রষ্টার অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই,
অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (বুখারী : ৬৪৭৮;
মুসলিম : ২৪৯৩; মিশকাত : ৫৮১৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
‘মানুষ এমন কথা বলে, যার ফলে সে জাহান্নামের এত দূরে নিক্ষিপ্ত হয় যা পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের মধ্যস্থিত ব্যবধানের চেয়ে অধিক।’
(মুসলিম : ২৯৮৮)
অনর্থক কথা বলা নিষিদ্ধ
অপ্রয়োজনে অধিক কথা বলা বা বাচালতা পরিহার করা বিশ্বাসীদের জন্য জরুরি। কেননা এটা সৃষ্টিকর্তার অসন্তোষের কারণ।
রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘সৃষ্টিকর্তা তোমাদের উপর মাতাদের অবাধ্যতা,
কন্যাদের জীবন্ত প্রোথিতকরণ, কৃপণতা ও ভিক্ষাবৃত্তি হারাম করেছেন। আর তোমাদের জন্য বৃথা তর্ক-বিতর্ক,
অধিক জিজ্ঞাসাবাদ ও সম্পদ বিনষ্টকরণ মাকরূহ করেছেন।’
(বুখারী : ১৪৭৭; ৫৯৭৫; মুসলিম : ৫৯৩; মিশকাত : ৪৯১৫)
অন্যত্র তিনি বলেন : ‘নিশ্চয়ই স্রষ্টা তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। যে তিনটি কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন তা হল-
১. যখন তোমরা সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করো এবং তাঁর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করো না।
২. তাঁর বিধানকে সম্মিলিতভাবে দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধর আর বিচ্ছিন্ন হও না এবং
৩. তিনি যাকে তোমাদের কাজের নেতা হিসেবে নির্বাচন করেন,
তার জন্য তোমরা পরস্পরে কল্যাণ কামনা করো। আর তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন যে তিনটি কাজে তা হচ্ছে-
১. অপ্রয়োজনীয় কথা বললে,
২. সম্পদ নষ্ট করলে এবং
৩. অনর্থক বেশি প্রশ্ন করলে।
(আহমাদ : ৮৭৮৫;
ইবনে হিব্বান : ৩৩৮৮)
পরিশেষে বলব, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসব ভাচুর্য়াল অ্যাসাইনমেন্টগুলোর চর্চা করতে পারি। একই সঙ্গে মার্জিত, নম্র ও নিম্নস্বরে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। একই সঙ্গে অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা পরিত্যাগ করতে হবে। আর যার মধ্যে স্রষ্টার সন্তুষ্টি আছে এমন কথা বলতে হবে এবং যাতে সৃষ্টিকর্তার অসন্তুষ্টি রয়েছে তা ত্যাগ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সফলতা দান করুন।
প্রাবন্ধিক, প্রকাশক ও সংগঠক
0 coment rios:
You can comment here