।। প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান।।
সারসংক্ষেপ
মনোবৃত্তি শব্দ বিশেষ্য পদ মনের ক্রিয়া, স্মরণ, চিন্তন বিচার সংকল্প ইত্যাদি; চিত্তবৃত্তি, মনের ভাব। মনোবৃত্তিঅনুসরণ একটা জঘন্যতম অপরাধ। স্বাভাবিকভাবে অনুধাবন করলে বুঝা যায় এ রোগের কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষেধক আবিষ্কার হযনি। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যাবে এ রোগের চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এ ব্যাধি যেখানে লক্ষ্য করা যায় সেখানে সামগ্রিক বিপর্যয় ঘটে। যদি আত্মার অনুসরণ ইলমের সাথে সম্পর্কিত হয় তবে সে অহংকারী হয়ে যায়। আর যদি জুহূদ এর সাথে হয় তাহলে সে প্রদর্শনকারী হয়। আর যদি আহকাম সম্পর্কিত হয় তবে সে জালিম হয়। যদি ইবাদতের সাথে সম্পর্কিত হয় তবে সে বিদআতী হয়। এই জন্য কোনভাবেই মনোবিত্তির অনুসরণ করা উচিত নয়।
ভূমিকা
মনোবৃত্তি
অথবা আত্মা বা নফস মহান আল্লাহর এক বিস্ময়কর ও রহস্যময় সৃষ্টি। মানব জন্মের
সাথে তার রূহ বা আত্মা কিভাবে দেহে সংযুক্ত হয় বা প্রবেশ করে তা আল্লাহ তা’আলা বর্ণনা
করছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ
وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ
وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর কাছেই রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান, তিনি বৃষ্টি
বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা মাতৃগর্ভে আছে। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কি অর্জন
করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عبدالرحمن عبدالله بن مسعودٍ رضي الله عنه قال: حدثنا رسول الله صلى
الله عليه وسلم وهو الصادق المصدوق: ((إن أحدكم يجمع خلقه في بطن أمه أربعين يومًا
- نطفة - ثم يكون علقةً مثل ذلك، ثم يكون
مضغةً مثل ذلك، ثم يرسل إليه الملك فينفخ فيه الروح، ويؤمر بأربع كلماتٍ: بكَتْبِ
رزقه وأجله وعمله، وشقي أو سعيدٌ، فوالذي لا إله غيره إن أحدكم ليعمل بعمل أهل
الجنة حتى ما يكون بينه وبينها إلا ذراعٌ، فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل أهل النار
فيدخلها، وإن أحدكم ليعمل بعمل أهل النار حتى ما يكون بينه وبينها إلا ذراعٌ،
فيسبق عليه الكتاب، فيعمل بعمل أهل الجنة فيدخلها))؛ رواه البخاري ومسلم.
আত্মা দেহকে সঞ্জীবিত করে তোলে এবং দেহে গতি সঞ্চার
করে। অন্য দিকে দেহ ছাড়া আত্মার স্বরূপ অনুভূত হয় না বা জানা যায় না। দেহ-মন একীভূত
হয়ে থাকলেও এদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই- আত্মা মুক্ত স্বাধীন স্বতন্ত্র এবং স্বীয়
বৈশিষ্ট্যে মহীয়ান। দেহ ছাড়াও আত্মা থাকতে পারে- তবে আত্মা ছাড়া দেহ অচল নির্জীব
এবং নিরেট জড় পদার্থ মাত্র। মুলত আত্মা আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টির এক নিআমত। এ আত্মা
যখন পরিচ্ছন্ন হবে তখন তার সমস্ত দেহ পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। আর যদি এখানে কোন বিপর্যয়
হয় তাহলে সমস্ত দেহ অপরিচ্ছন্ন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করেন,
عن النعمان بن بشير رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله
عليه وسلم يقول: ((ألا وإن في الجسد مضغة إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد
الجسد كله، ألا وهي القلب))؛ متفق عليه
আল্লাহ
তা’আলা ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ
شُهَدَاء لِلّهِ وَلَوْ عَلَى أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالأَقْرَبِينَ
إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقَيرًا فَاللّهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلاَ تَتَّبِعُواْ
الْهَوَى أَن تَعْدِلُواْ وَإِن تَلْوُواْ أَوْ تُعْرِضُواْ فَإِنَّ اللّهَ كَانَ
بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
অর্থ :হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্ব জনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত। [ সুরা নিসা ৪:১৩৫ ]
আত্মা এর পরিচয় (The identity of the self)
আত্মা শব্দট
বিশেষ্য পদ এর অর্থ জীবাত্মা, পরমাত্মা; ব্রহ্মআত্মা । এখানে আরবি ভাষায় তা হলো-
معنى الهوى الهوى في اللغة: هو الميل والعدول والنزوع إلى ما تهواه
النفس، يعني: متابعة النفس على ما تهواه، لا على الكتاب والسنة. ... والهوى في
الاصطلاح: هو الميل عن الحق، وعن طريق السنة، ويشمل هوى الاعتقاد، وهوى العمل،
وهوى الشبهات والشهوات، كلها أهواء
is the tendency, moderation, and a tendency to
what the soul desires, meaning: to pursue the soul for what it likes, not to
the Qur’an and Sunnah. ...
উদ্দেশ্য করা হয়েছে। কোন জীবের অংশ যা কোন শরীর
নয়। দেহ যখন জীবিত থাকে, তখন এর ভেতরে একটি আত্মা থাকে। আর মৃত্যুর সময় আত্মা দেহ থেকে
বেরিয়ে যায়। এখানে মনের আশা আকাঙ্ক্ষা বিষয়ে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
।that somewhere within the body, in a special
locality, there was a ‘vital spirit’ or 'vital force', which animated the whole
bodily frame, such as the engine in a factory moves the machinery in it.
الاتباع: هو اتباع الشرع، اتباع ما جاء به الرسول ﷺ من الأوامر
والنواهي، يقال له: اتباع؛
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ
تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء قَلِيلاً مَّا تَذَكَّرُونَ
অর্থ :তোমরা
অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে
বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। [ সুরা আরাফ ৭:৩ ] আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ
إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَوَاتِ
وَالأَرْضِ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ
وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ
وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ [الأعراف:
অর্থ :বলে দাও, হে মানব মন্ডলী।
তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব।
একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা
সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস
রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে
পার। [ সুরা আরাফ ৭:১৫৮ ]আরবি ভাষায় ইত্তেবাউল হওয়া শাব্দিক অর্থ ব্যাখা করা হয়েছে
তা হলো -
الهوى في اللغة: هو الميل والعدول والنزوع إلى ما تهواه النفس، يعني: متابعة النفس على ما تهواه، لا على الكتاب والسنة. والهوى في الاصطلاح: هو الميل عن الحق، وعن طريق السنة، ويشمل هوى الاعتقاد، وهوى العمل، وهوى الشبهات والشهوات، كلها أهواء
আত্মার অনুসরণ
দ্বারা উদ্দেশ্য (Purpose by following the Spirit)
এখানে আত্মার অনুসরণ বা অনুসরণ বলতে বোঝানো হয়েছে
এমন কাজ করা যে কাজ শরীআত অনুমোদ করে না। মনে যা ইচ্ছা করে তাই করে। কোন বিধান ও শৃংঙ্খলা
মানেনা।
إن اتباع الهوى ـ وهو "ما تميل إليه النفس مما لم يبحه
الشرع" ،خلاف مقصود الشرع ؛ لأن "المقصد الشرعي من وضع الشريعة إخراج
المكلَّف عن داعية هواه ؛ حتى يكون عبداً لله اختياراً، كما هو عبد لله اضطراراً
"মানুষের সব ক্রিয়াকাণ্ডের মূলে রয়েছে মন বা আত্মার সক্রিয়
ভূমিকা। শরীর বা দেহ আত্মার নির্দেশ পালনের পালন করে থাকে। আত্মার হুকুম তামিল করার
জন্য সে সদা প্রস্তুত থাকে। মনে সুপ্রবৃত্তি মানুষকে ন্যায়, সৎ ও সঠিক পথ
নির্দেশ করে অন্য দিকে কুপ্রবৃত্তি মানুষকে অন্যায়, অসৎ ও বিপথে
পরিচালিত,করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ
إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ
আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন
মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার
পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু। [ সুরা ইউসুফ ১২:৫৩ ]‘
সমাজের
অধিকাংশ মানুষ সাধারণত নফস বা আত্মার গোলাম। মন যা চায় তাই করে। নফসের কামনা বাসনা
পূরণ করাই তাদের জীবনের একমাত্র সাধনা। এজন্য চেষ্টার কোন কমতি দেখা যায় না। বরং এ
বিষয়ে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দিধা করে না। । নফসের গোলামী পথভ্রষ্ট
হওয়ার একটি প্রধান উপায়। যারা আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুকুমের খেলাপ নিজেদের নফসের খেয়াল খুশিমত জীবন যাপন করে তাদের
চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট কেউ হতে পারে না। আল্লাহ
তা’আলা ইরশাদ করেন,
,قُلْ فَأْتُوا بِكِتَابٍ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ هُوَ أَهْدَى مِنْهُمَا
أَتَّبِعْهُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (49) فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ
فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنَ اتَّبَعَ
هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ
الظَّالِمِينَ (50)
(হে রাসূল তুমি ওদের) বলো- তোমরা সত্যবাদী হলে আল্লাহর নিকট হতে এক কিতাব আনয়ন করো; যা পথনির্দেশের দিক দিয়ে এই দুই (কিতাব অর্থাৎ তাওরাত ও কুরআন) হতে উৎকৃষ্টতর হবে, (যদি পারো তাহলে) আমি সেই কিতাব অনুসরণ করবো।” (২৮:৪৯)
মনোবৃত্তি অনূসরণ করার মৌলিক কারণ সমূহ (Basic reasons to follow the attitude)
১. দুর্নীতির
কারণ (The reason for corruption)
মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ যে কোন নিষিদ্ধ বস্তুর
উপর। এ ক্ষেত্রে তাকে নিমন্ত্রণ করা সম্ভব শুধুমাত্র বিধান ও শাসন দ্বারা। অন্যদিকে
আল্লাহ তা’আলা একান্ত অনুগ্রহ দ্বারা। সুতরাং মনোবৃত্তি তাকে অপরাধের দিকে
ধাবিত করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন.
وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ
وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ ۚ بَلْ أَتَيْنَاهُم بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَن
ذِكْرِهِم مُّعْرِضُونَ
আর যদি সত্য তাদের কামনা-বাসনার অনুগামী হত, তবে আসমানসমূহ, যমীন ও এতদোভয়ের মধ্যস্থিত সব কিছু বিপর্যস্ত হয়ে যেত; বরং আমি তাদেরকে দিয়েছি তাদের উপদেশবাণী (কুরআন)। অথচ তারা তাদের উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
২. সঠিক পথ
থেকে বিভ্রান্তির কারণ (Causes confusion from
the right path)
নিজের আত্মার অনুসরণ করার কারনে সে সঠিক পথটি হারিয়ে
ফেলে যার কারণে সে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَـكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى
الأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ
يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ذَّلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُواْ
بِآيَاتِنَا فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থ :অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে
৩. চিন্তার
বৈপরিত্বের কারণ (The reason for the contrast of thought)
চিন্তার বৈপরিত্বের কারণ সে আত্মার অনুসরণ করে যার
জন্য সে আল্লাহ তা’আলার করুনা থেকে দূরে সরে যায়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন
,وَإِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ
ابْتِغَاءَ رَحْمَةٍ مِّن رَّبِّكَ تَرْجُوهَا فَقُل لَّهُمْ قَوْلًا مَّيْسُورًا
অর্থ :এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায়
অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে
নম্রভাবে কথা বল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন.
رواه حذيفة، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : «تُعرض الفتن على القلوب كالحصير عودًا عودًا، فأي قلب أشربها نكت فيه نكتة سوداء، وأي قلب أنكرها نكت فيه نكتة بيضاء حتى تصير على قلبين على أبيض مثل الصفا، فلا تضره فتنة ما دامت السماوات والأرض، والأخر أسود مُربادًّا كالكوز مجخيًا لا يعرف معروفًا ولا ينكر منكرًا إلا ما أُشرب من هواه» (رواه مسلم
৪. মতানৈক্যর কারনে (Reasons for disagreement)
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ وَمَا اخْتَلَفَ
الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِنْ
بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ وَمَنْ يَكْفُرْ بِآَيَاتِ
اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ (19) فَإِنْ حَاجُّوكَ فَقُلْ أَسْلَمْتُ
وَجْهِيَ لِلَّهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِ وَقُلْ لِلَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ
وَالْأُمِّيِّينَ أَأَسْلَمْتُمْ فَإِنْ أَسْلَمُوا فَقَدِ اهْتَدَوْا وَإِنْ
تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ
"নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। যাদেরকে ধর্মগ্রন্থসমূহ দেয়া হয়েছে তাদের কাছে জ্ঞান বা কোরআনের আসার পর তারা শত্রুতা ও হিংসা ছাড়া অন্য কোন কারণে এর সত্যতার ব্যাপারে মতভেদ করেনি। যে আল্লাহর নির্দশনগুলো অবিশ্বাস করে তার মনে রাখা উচিত আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।" (৩:১৯)
"হে নবী! যদি তারা আপনার সাথে ঝগড়া-বিবাদ করতে চায় তবে আপনি বলুন আমি ও আমার অনুসারীরা আল্লাহর কাছে আমাদের মাথা সমর্পন করেছি এবং যাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে এবং যারা নিরক্ষর মুশরিক,তাদেরকে বলুন তোমরাও কি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করেছ? এরপর যদি তারা আত্মসমর্পণ করে তাহলে নিশ্চয়ই সুপথ পাবে আর যদি অস্বীকার করে তাহলে শুধু বাণী পৌঁছে দেয়াই আপনার দায়িত্ব। আল্লাহ নিজেই তার বান্দাদের অবস্থা লক্ষ্য করেন।" (৩:২০)
৫. মিথ্যার
প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাওয়া (Being attracted to lies)
মানুষ তার মনোবৃত্তি অনুসরণ করার জন্য অধিক মাত্রায়
মিথ্যার প্রতি ঝুকে পড়ে। অবশেষে এই মিথ্যা তাকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ
عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ
غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
অর্থ :তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে
আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন এবং তিনি
তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তার চোখের উপর স্থাপন করেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর
পর কে তাকে হিদায়াত করবে? তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا
يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنَ اتَّبَعَ
هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ
الظَّالِمِينَ
অর্থ, :“(হে রাসূল) অতঃপর
ওরা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবে ওরা কেবল নিজেদের
খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে। আল্লাহর পথ-নির্দেশ অমান্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশির
অনুসরণ করে তার অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ
প্রদর্শন করেন না।” (২৮:৫০) রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى البِرِّ، وَإِنَّ البِرَّ يَهْدِي إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يَكُونَ صِدِّيقًا. وَإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الفُجُورِ، وَإِنَّ الفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا
৬. অহংকার করে
আত্মার অনুসরণ করা (To follow the soul with
pride)
আত্মার অনুসরণ করলে সব চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার
করে তার অহংকার। আর অহংকার কোন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا
فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ
তারা অন্যায় ও অহংকার করে নিদর্শনাবলীকে প্রত্যাখ্যান
করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখুন, অনর্থকারীদের
পরিণাম কেমন হয়েছিল?
سَأَصْرِفُ عَنْ آيَاتِيَ الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَإِن يَرَوْاْ كُلَّ آيَةٍ
لاَّ يُؤْمِنُواْ بِهَا وَإِن يَرَوْاْ سَبِيلَ الرُّشْدِ لاَ يَتَّخِذُوهُ
سَبِيلاً وَإِن يَرَوْاْ سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلاً ذَلِكَ
بِأَنَّهُمْ كَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا وَكَانُواْ عَنْهَا غَافِلِينَ
আমি আমার নিদর্শনসমূহ হতে তাদেরকে ফিরিয়ে রাখি, যারা পৃথিবীতে
অন্যায়ভাবে গর্ব করে। যদি তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে ফেলে, তবুও তা বিশ্বাস
করবে না। আর যদি হেদায়েতের পথ দেখে, তবে সে পথ গ্রহণ করে না। অথচ
গোমরাহীর পথ দেখলে তাই গ্রহণ করে নেয়। এর কারণ, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে
মিথ্যা বলে মনে করেছে এবং তা থেকে বেখবর রয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন.
وقال صلى الله عليه وسلم "لا يدخل الجنة من كان في قلبه حبة
خردل من كبر" أخرجه مسلم
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
যার অন্তরে সামান্যতম অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
أنه يورث الكبر والعجب فيزري بصاحبه أمام الآخرين، لا سيما أهل الصدق والعدل، ويكون مستثقلاً عندهم ممقوتًا في نفوسهم لما يرونه فيه من المخالفة للحق والتكبر عن اتباعه وإعجاب صاحبه برأيه وهواه
৭. সত্য গ্রহণ
না করার মানসিকতা (The
mentality of not accepting the truth
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُم
بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ
اللَّهِ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ
بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ
অর্থ :হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি
করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর
অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর
পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাবদিবসকে
ভূলে যায়।
قول علي بن أبي طالب – رضي الله عنه - : «إن أخوف ما أخاف عليكم اثنتان : طول الأمل، واتباع الهوى، فأما طول الأمل فينسي الآخرة، وأما اتباع الهوى فيصد عن الحق» . وقال شيخ الإسلام – رحمه الله - : «وما أكثر ما تفعل النفوس ما تهواه ظانة أنها تفعله طاعة لله» (مجموع الفتاوى) .
৮. আত্মার প্রতি
জুলুম করা(Oppress the soul)
أنه سبب في ظلم العبد لنفسه ولغيره، فيظلم نفسه بارتكابه ما حرم الله وإعراضه عما أمر الله به، ويظلم غيره بالبغي والعدوان في أقواله وأفعاله
৯.সম্মানিতকে
অপমান করার জন্য (To insult the honorable)
একমাত্র আত্মার অনুসরণ করা ব্যক্তি সম্মানিত মানুষকে
অসম্মান করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آَدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ
وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ
مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا
“আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। তাদের স্থলভাগে ও সমুদ্রে
চলাচলের জন্য বাহন দান করেছি। তাদের ভালো ও পবিত্র জীবনোপকরণ দান করেছি এবং আমার সৃষ্টির
বেশিরভাগের উপর তাদের শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দান করেছি।” (১৭:৭০) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
عن ميمون بن أبي شبيب أن عائشة
رضي الله عنها مرّ بها سائل فأعطته كِسرة، ومرّ بها رجل عليه ثياب وهيئة فأقعدته
فأكل، فقيل لها في ذلك، فقالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (أنزلوا الناس
منازلهم) رواه أبو داود في سننه
মানুষের অবস্থান অনুযায়ী মর্যাদা দিতে বলা হয়েছে
হাদীসে।
أنه يضعف الإرادة والعزيمة ويخذل عن طلب المعالي، ويجعل صاحبه في
عداد أهل الجهل والخذلان ويحجبه عن منازل أهل الشرف والعرفان
১০. বিদআত প্রতিষ্ঠিা
করার কারনে (Due to the establishment of bidat)
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ
الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللّهِ بِهِ
وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا
أَكَلَ السَّبُعُ إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن
تَسْتَقْسِمُواْ بِالأَزْلاَمِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ
كَفَرُواْ مِن دِينِكُمْ فَلاَ تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ
لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ
دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ فَإِنَّ
اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু
আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে
মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিং এর আঘাতে
মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ।
যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়।
এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয়
করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি
আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন
গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীল। (সুরা মায়েদা
৫:৩)
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ فَإِن
تَوَلَّوا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُم مَّا حُمِّلْتُمْ وَإِن
تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ
বলুনঃ আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর।
অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর
ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে।
রসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌছে দেয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন,
وردَ عن رسول الله -صلى الله
عليه وسلم- عدد من الأحاديث التي يحذِّر فيها من شرِّ البدع ومحدثات الأمور، فقد
أجمع العلماء على تحريم البدعة لكنهم اختلفوا أحيانًا في بعض الأمور التي اعتبرها
البعضُ من البدع، وآخرون لم يعدُّوها من البدع ولم يعتمدوا فقط على حديث كل بدعة
ضلالة إنّما استندوا إلى غيره من الأحاديث النبوية، وممّا وردَ من أحاديث عن
البدعة ما يأتي: ورد في صحيحي البخاري ومسلم ما روته السيدة عائشة -رضي الله عنها-
أنَّ رسولَ الله -صلى الله عليه وسلم- قال: "من أحدث في أمرنا هذا ما ليس
فيه، فهو رد". وردَ عن جابر بن عبدالله أنَّ رسول الله -صلى الله عليه وسلم-
قال: "أما بعدُ فإنَّ أصدقَ الحديثِ كتابُ اللهِ، وإنَّ أفضلَ الهديِ هديُ
محمدٍ، وشرَّ الأمورِ مُحدثاتُها، وكلَّ مُحدَثةٍ بدعةٌ، وكلَّ بدعةٍ ضلالةٌ، وكلَّ
ضلالةٍ في النَّارِ أتتْكم الساعةُ بغتةً، بُعِثتُ أنا والساعةُ هكذا، صبحَتْكم
الساعةُ ومستْكم، أنا أولى بكلِّ مؤمنٍ من نفسِه، من ترك مالًا فلأهلِه، ومن ترك
دَيْنًا أو ضَياعًا فإليَّ وعليَّ، وأنا وليُّ المؤمنين" وغيرها من الأحاديث التي تؤكدُ تحريم البدع
ومحدثات الأمور التي تؤدي إلى الضلال
এ সকল হাদীসে বিদআত ফিদ দীন গোমরাহ বলা হয়েছে।
আত্মার অনুসরণ
করার কুফল (The
evil of following the soul )
ক) তার কোন জিম্মাদার নেই। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
أَرَءَيۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَـٰهَهُ ۥ هَوَٮٰهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ
عَلَيۡهِ وَڪِيلا
অর্থ তুমি কি তাকে দেখনি, যে তার প্রবৃত্তিকে
নিজের ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে? তবুও কি তুমি তার যিম্মাদার?
খ) মুসলিম উম্মাহকে শত্রু হিসেবে চিন্তা করে।
খ) শরীআতের অনুসরণ না করে নিজের অনূসরণ করে।
গ) তার নিজের কোন প্রজ্ঞা ও ঈমান থাকে না।
ঘ) মুসলমান
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ
عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن
يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا
بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ
فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না
করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও
যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি
দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ
নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:১১
] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن أبي هريرة - رضي الله عنه -: أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم -
قال: «بحسب امرئ من الشر أن يحقر أخاه المسلم» . رواه مسلم
অর্থ :একজন ব্যক্তির মন্দ হওয়ার
জন্য এটিই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় করবে। একজন মুসলিমের ওপর আরেক মুসলিমের
রক্ত তথা জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম মর্যাদার বিষয়।’ (সহীহ মুসলিম)
চ) অজ্ঞতা বূদ্ধি পায়;
ছ) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ آَتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَقَفَّيْنَا مِنْ بَعْدِهِ
بِالرُّسُلِ وَآَتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ
بِرُوحِ الْقُدُسِ أَفَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولٌ بِمَا لَا تَهْوَى أَنْفُسُكُمُ
اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقًا كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقًا تَقْتُلُونَ
"অবশ্যই আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি। এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রসূল
পাঠিয়েছি। আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে সুস্পষ্ট মোজেযা দান করেছি এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে
তাকে শক্তিদান করেছি। অতঃপর যখনই কোন রসূল এমন নির্দেশ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে, যা তোমাদের
মনে ভাল লাগেনি, তখনই তোমরা অহংকার করেছ। শেষ পর্যন্ত তোমরা একদলকে মিথ্যাবাদী
বলেছ এবং একদলকে হত্যা করেছ।" (২: ৮৭) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন,
وقال علي رضي الله عنه: إن أخوف ما أتخوف عليكم اثنتان: طول الأمل، واتباع الهوى، فأما طول الأمل فينسي الآخرة، وأما اتباع الهوى فيصد عن الحق، ألا وإن الدنيا قد ولت مدبرة، والآخرة مقبلة، ولكل واحدة منهما بنون، فكونوا من أبناء الآخرة ولا تكونوا من أبناء الدنيا، فإن اليوم عمل ولا حساب، وغداً حساب ولا عمل(فضائل الصحابة لأحمد بن حنبل: (2/362).
জ. ভালো মন্দের পার্থক্য করতে পারে না।
ছ) বুদ্ধি,চর্চা স্থবির হয। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَمِنْهُمْ مَنْ يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ حَتَّىٰ إِذَا خَرَجُوا مِنْ عِنْدِكَ قَالُوا لِلَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مَاذَا قَالَ آنِفًا ۚ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ طَبَعَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءَهُمْ
অর্থ : তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে, অতঃপর যখন আপনার
কাছ থেকে বাইরে যায়, তখন যারা শিক্ষিত, তাদেরকে বলেঃ এইমাত্র তিনি
কি বললেন ? এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশীর
অনুসরণ করে।
জ) ধ্বংসের কারণ; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন,
عَن أَنَس رضي الله عنه أَن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ثلاث مهلكات: شح مطاع، وهوى متبع، وإعجاب المرء برأيه». أخرجه الطبراني في الأوسط، والبيهقي في الشعب، وصححه الألباني في السلسلة الصحيحة.
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, মানুষ আত্মার
অনুসরণ করে নিজের হিংসা, অহংকার ও ক্ষমতা ধর্ম নিয়ে মতানৈক্য এবং পার্থিব জীবনের লোভ
লালসার স্বীকার হয়। পরিশেষে তার দুনিয়া ও
আখিরাতে সকল অবস্থা হারিয়ে যায়। সে নিজের
ধ্বংস নিজই করে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে হিফাযত করূন।
قال الحسن البصري: "شرار
عباد الله الذين يتبعون شرار المسائل ؛ ليعموا بها عباد الله"
.The spark of the servants of Allah who follow the spark of issues, so that the servants of Allah will be blessed with it.”
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে এ কাজ করার তাওফীক দান করুন আমীন ।
লেখক:
প্রফেসর ড.
সৈয়দ মাকসুদুর রহমান
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়া
বাংলাদেশ।
0 coment rios:
You can comment here