চলে গেলেন একজন সত্যিকারের দ্বায়ী ইলাল্লাহ, হাজী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের প্রধান ইমাম ও খতিব মাওলানা ক্কারী জমির উদ্দীন। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জিউ’ন। ১৩ জুন বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় নিজ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ১৪ জুন রোববার বাদ জোহর হাজী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে তাঁর নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
আশির দশক থেকে মাওলানা ক্কারী জমির উদ্দীনকে কাছে থেকে দেখেছি। নব্বই দশকে কুদরত উল্লাহ মার্কেটে যখন আমার অফিস ছিল, তখন প্রায় প্রতিদিন কিছু সময় একসাথে কাটাতাম। তিনি ছিলেন চির তরুণ ও চির সজীব একজন মানুষ। সৎ ও সাদা মনের প্রাণখোলা মানুষ। ছিলেন আমার ইমাম। আমাদের ইমাম। যার কেরাতে মুসল্লিদের প্রাণ জুড়ায়।
মহান আল্লাহর নির্দেশিত এবং প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত একজন খাটি মু'মিন ছিলেন ক্কারী জমির উদ্দীন। মানবতার সর্বোত্তম আদর্শকে অনুপম বর্ণনায় উপস্থাপন করতেন তিনি। অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বয়ান করতেন। প্রতিটি বিষয় কুরআন ও হাদীসের প্রকৃত শিক্ষার আলোকে অকাট্য যুক্তি প্রমাণ দ্বারা উপস্থাপন করতেন।
ক্কারী জমির উদ্দীন ছিলেন একজন স্পষ্টবাদী আলেম। হক কথা বলতেন আলিফের মত সোজা করে। নিজের মনের ভাব অন্যের মনে ভাবিত করার এক জাদুকরি প্রভাব ছিল তাঁর মাঝে। ভাষায় ও অচরণে ছিল অতুলনীয় নম্রতা ও ভদ্রতা। তাঁর সদাচরণ সমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল, দ্বীনী তরক্কী কিংবা দুনিয়াবী উন্নতির ক্ষেত্রে অধীনস্থ ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তা দেয়া, কাউকে তাচ্ছিল্য না করা, প্রত্যাখ্যান না করা, অক্ষমতা ও বুদ্ধিহীনতা ক্ষমা করা, ওজর কবুল করা ও ক্ষমা প্রার্থীকে ক্ষমা করা।
ক্কারী জমির উদ্দীন কোথাও আমন্ত্রিত হলে আখলাকে হাসানা সম্পর্কে ওয়াজ করতেন। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, অনাথ-অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, অসুস্থ-বিপদগ্রস্তের সেবা ও সহযোগিতার কথা সব সময় বলতেন। মানুষকে সব রকমের ক্ষতিকর চিন্তা, বিশ্বাস, কর্ম ও আচরণ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি আদায় করতেন।
ক্কারী জমির উদ্দীন ইসলামী শিক্ষার প্রচারকই ছিলেন না, নিজ জীবনে সে শিক্ষার বাস্তবায়নকারীও ছিলেন। মুসল্লিদের মধ্যে ইসলামী আদর্শ ও চেতনা জাগ্রত করা, আদর্শবান ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল তাঁর কাজ। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিতরণে তাঁর কোন অহংবোধ ছিলনা। ধর্মের আলোকে জীবন গড়ার প্রেরণা দিতেন। মনের ভেতর থেকে মানবতাবোধ জাগিয়ে তুলতেন।
ক্কারী জমির উদ্দীন স্বীয় কর্মের প্রতি নিষ্ঠা ও মুসল্লিদের প্রতি আন্তরিক ছিলেন। পারিবারিক, সামাজিক কিংবা ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে লোকজন তাঁর কাছে আসতেন। তিনি চমৎকার সুপরামর্শ দিতেন। মানুষের মাঝে সব রকম দ্বন্দ-সংঘাত নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণে বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দিতেন।
ক্কারী জমির উদ্দীন ইসলামী আদব ও আচরণ বিধির বৈশিষ্ট্য ও বিস্তৃতি সম্পর্কে আলোচনা করতেন। তিনি অবাধ্য ও উদ্ধত মানুষের সাথে উত্তম আচরণের পরামর্শ দিতেন। তিনি মনে করতেন, উত্তম আচরণের ফলে ঐ ব্যক্তি তার ঔদ্ধত্য থেকে ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ।
ক্কারী জমির উদ্দীনের মতো এমন মহৎপ্রাণ, নির্মোহ, নিরহংকার আলেমে দ্বীনের অভাব সহজে পুরণ হবার নয়। এমন মানুষের দীদারে এলাহী নসিব হোক। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
লেখক:
বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
লন্ডন প্রবাসী।
লেখক:
বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
লন্ডন প্রবাসী।
0 coment rios:
You can comment here