Friday, June 5, 2020

এবারের সিয়াম সাধনার কতিপয় আকর্ষণীয় দিক ও আমার উপলব্ধি-পর্বঃ ২

 
।। হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী।।

প্রথম পর্ব পড়ার জন্য ক্লিক করুকন এখানে


পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর

এ মাসে পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করতে গিয়ে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমার পূর্ব থেকে চলে আসা উপলব্ধিগুলো আরো সুদৃঢ় হয়েছে

i) মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সব কিছু চাইতে হবে কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি শুধুমাত্র মহান আল্লাহর কাছে।

ii) মৃত্যু যেমন ভয়ের, তেমনি আশীর্বাদও বটে। জীবন সমস্যার সমাধান আপাতত মৃত্যুর মাধ্যমে হয়ে থাকে বলে মানুষ সাধারণত মনে করে। তাই বেশি বিপদে পড়লে অনেকে মৃত্যুকে ডাকে, কেউবা আত্মহত্যাও করে বসে। পরকালে ভয়াবহ বিভীষিকাময় অবস্থা দেখে মানুষ আল্লাহর কাছে মৃত্যু চাইবে। কিন্তু তখন আর দ্বিতীয় মৃত্যু দেয়া হবে না। তাই সব সময় মৃত্যু ও মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থায় সফলতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

iii) মহাবিশ্বের তথা সৃষ্ট জগতের প্রতিটি উপাদানের নিজস্ব ধর্ম রয়েছে। ধর্ম ছাড়া কোনো কিছুই চলে না, সবকিছুই অচল। যেমন বিদ্যুতের ধর্ম আছে, চুম্বকের ধর্ম আছে, পানির ধর্ম আছে। এসব ধর্ম না থাকলে বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ নয়, চুম্বক চুম্বক নয়, পানি পানি নয়। কোনো বস্তু স্বীয় ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেললে সেটা নিজের স্বকীয়তা ধরে রাখতে না পারায় অন্য বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়। এ স্বভাবজাত ধর্মই প্রকৃতি বা প্রকৃতির নিয়ম। এ প্রকৃতি বা প্রকৃতির নিয়মের স্রষ্টা ও মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। এতে অন্য কেউ শরিক নেই। অনুরূপ মানব জাতিরও ধর্ম আছে। মানবজাতিও নিজস্ব ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে না পারলে সৃষ্টির সেরা হয়েও তারা পশু কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে যায়। কাজেই শ্রেষ্ঠ মানুষে উন্নীত হতে হলে ধর্মকে আঁকড়ে ধরেই এগিয়ে যেতে হবে।

iv) পবিত্র কুরআন সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ। সকল ধর্মগ্রন্থের শিক্ষার সারসংক্ষেপ পবিত্র কুরআনে রয়েছে। কুরআন পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থসমূহের মৌলিক শিক্ষাসমূহের সত্যতা স্বীকার করে। পাশাপাশি ঐসব ধর্মগ্রন্থের ভিতরে মানুষের পক্ষ থেকে ঢুকিয়ে দেয়া ত্রুটিসমূহের প্রতিবাদ করে। সকল ধর্মে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। এসব ভবিষ্যদ্বাণীর সূত্র ধরে এগিয়ে গেলে আন্তঃধর্মীয় বিভেদ দূর করে একটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বঐক্য গড়ে তোলা যেতে পারে। আর এ একটিমাত্র পথেই বিশ্বকে বর্তমান হতাশা নিরাশা থেকে মুক্তি দিয়ে প্রগতি ও উন্নতির দিকে ধাবিত করা সম্ভব।

v) যে বিষয়ের চাহিদা বেশি তার নকলও বের হয় বেশি। ধর্ম হলো দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি, সফলতা ও অগ্রগতির মাধ্যম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় এটি। এ কারণে এরমধ্যে নকলও বেশি। ধর্মের কিছু সংখ্যক ধারক ধর্মকে মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ না করে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ারে পরিণত করেছে, অনেক অধার্মিকতা ও কুসংস্কারকে তারা ধর্মের নামে চালিয়ে দিয়েছে। তাই বিপুল সংখ্যক মানুষ এর প্রতিবাদে ধর্মবিমুখ হয়েছে, অনেকে নাস্তিকতার দিকে ধাবিত হয়েছে, অনেকে ধর্মকে আফিম বলে মন্তব্য করেছে, অনেকে ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়াকে মানবতা রক্ষার জন্য জরুরী মনে করেছে। সেজন্য নাস্তিক, ধর্মবিদ্বেষী ও ধর্মবিমুখ গোষ্ঠী তৈরির পেছনে তথাকথিত বহু (অজ্ঞ/নকল) ধর্মভীরু ও ধর্মগুরু দায়ী বলে পবিত্র কুরআনের গবেষণা থেকে জানা যায়।

vi) কিন্তু মনে রাখতে হবে মাথা ব্যথার জন্য ঔষধ খাওয়ার পরিবর্তে যেমন মাথা কেটে ফেলা যায় না, চোখের ছানির চিকিৎসার পরিবর্তে যেমন চোখ উপড়ে ফেলা যায় না, তেমনি কুসংস্কার ও অধার্মিকতা থেকে ধর্মকে উদ্ধার করার পরিবর্তে ধর্মকে উচ্ছেদ/নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা বিজ্ঞানসম্মত হতে পারে না। তাই ধর্মকে তার আসল রূপে দাঁড় করানো বর্তমান ঘুণেধরা নীতি-নৈতিকতা বর্জিত অধুনা সমাজের জন্য ততোটা জরুরী, যতোটা শ্বাসকষ্টের রোগীকে অক্সিজেন দেয়া জরুরী।

vii) বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মানব সভ্যতার যেসব ত্রুটিসমূহের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেছে, সেসব ত্রুটি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে অধঃপতিত মানুষ জাতিকে সভ্য মানুষের আসনে পুণআসীন করার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাথে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধকে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এর মতো লাগিয়ে দিতে হবে।

viii) সকল মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব পাপ-পঙ্কিলতা, অন্যায়-অপরাধ ও জঞ্জালের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে পড়েছে, সেসব থেকে স্বাভাবিকভাবে প্রচলিত পন্থায় বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই সম্মিলিতভাবে একটি শক্তিশালী ইতিবাচক ঝাঁকুনি দিয়ে জিরো পয়েন্টে পৌঁছার সিদ্ধান্ত নিতে হবে সকলকে। আর ঐ জিরো পয়েন্ট থেকে সকলের অংশগ্রহণে শুরু হবে মানবতার জয়গানের আনুষ্ঠানিক নতুন যাত্রা।
ix) হাজার-লাখো-কোটি পাপ-কালিমা থেকে মুক্ত হয়ে উক্ত জিরো পয়েন্টে পৌঁছার জন্য একটি জাতীয় দায়মুক্তি অনুষ্ঠানপালন ও নিজেদেরকে সংশোধন-প্রয়াসের অন্তর্ভুক্ত করার বিকল্প নেই। এ অনুষ্ঠানের রুপরেখা আমার শান্তির ডাক প্রগতির ডাক বই দুটোতে উপস্থাপন করেছি এবং অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়নের প্রতি আহবানের অনুমতি চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। এ অনুমতি আনার জন্য আসুন আমরা সবাই চেষ্টা চালাই।

(সমাপ্ত)

লেখকঃ
হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী,  
(জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)
সরকারি এস. সি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সুনামগঞ্জ।
মোবাইলঃ 01715 142715
ইমেইল: 
mashhudchowdhury@gmail.com
ইউটিউব চ্যানেল:
https://www.youtube.com/channel/UC8ZSiWdwj6NkC67WPd5I1sQ?view_as=subscriber 
শুভেচ্ছা টিভি - Shuveccha TV 
Facebook: 
Hafiz Md Mashhud Chowdhury
Facebook Page: 
হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী
Somewhereinblog.net: 
হাফিজ মোঃ মাশহুদ চৌধুরী  



শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here