Monday, June 15, 2020

পিতা আল্লামা এটি এম ওলিউর রহমান রহ. এর দেখানো পথেই হাটঁছেন ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান- পঞ্চম পর্ব

পিতা আল্লামা এটি এম ওলিউর রহমান রহ. এর দেখানো পথেই হাটঁছেন ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান- 

পঞ্চম পর্ব

পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর

চুতুর্থ পর্ব দেখতে ক্লীক করুন এখানে

ইমদাদ বিন আফতাব: পরিবার গঠনের মূল কাঠামো হলো বিয়ে, বিয়ের জন্য ইসলামী শরীয়ত মোতাবিক প্রথমে পাত্র-পাত্রী নিবার্চন করতে হবে। আর এই নিবার্চন করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের ক্ষেত্রে শুধু স্ত্রী নির্বাচন করতে হবে নাকি একজন সন্তানের আর্দশ মা নিবার্চন করতে হবে এটা ভাবার বিষয়।

ইসলামী শরীয়াতের নির্দেশনা হচ্ছে-সৌন্দর্য্য ভালো বা সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন অথবা ইসলামী নির্দেশ পালনীয় হওয়া। স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে ইসলামী জ্ঞান আমল, চরিত্র, ইসলামী তাহজিব তামাদ্দুন, ধর্মীয় সংস্কৃতি বিরাজমান থাকলেই পরিবার হবে সুখি ও শান্তির নীড়। তবেই এই পরিবারে আল্লাহর রহমত আসতে থাকবে, সাংসারিক সংঘাত দূর হবে এবং রাব্বে কারিম তাদেরকে হেফাজত করবেন।

মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমানের (রহ.) স্বীয় দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তার সহধর্মীনি, জীবন যুদ্ধা স্ত্রী সম্পর্কে আলোকপাত না করলে মরহুমের জীবনী লেখা পূর্ণতা লাভ করবে না। তাই কিছু লিখতে চাই সেই বিদুষী মহিলার কথা, যে বিদুষী মহিলা মাওলানার সকল কাজকর্মে নেপথ্যে থেকে তার সকল কাজে ইন্ধন আর উৎসাহ যোগিয়েছেন।

১৯৪৮ ইং সালে মরহুম মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ. এর স্ত্রী মহিয়সী নারি রাবেয়া আক্তার সৎপুর দারুল হাদিস আলিয়া মাদ্রাসার  অন্যতম প্রতিষ্টাতা পিতা পীর মাওলানা গোলাম হাফিজ ও মাতা মাজেদা খাতুনের ঔরষে সৎপুর (পীরবাড়ী) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।

মহিয়সী নারি রাবেয়া আক্তার এর  শিক্ষা জীবন শুরু হয় পিতা/ চাচার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা থেকেই। তিনি সৎপুর আলিয়া মাদরাসায় লেখা পড়া শুরু করেন। তার প্রথম উস্তাদ ছিলেন মাওলানা গোলাম হোসাইন রহ. ও পীর গোলাম হাফিজ রহ.

১৯৬৮ সালে সিলেটের অন্যতম ইসলামী শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদ সৎপুর কামিল মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মরহুম গোলাম হাফিজ রহ. এর প্রথমা কন্যা তাছমিয়া রাবেয়া আক্তার এর সাথে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হন সিলেটের পরিচিত ব্যক্তিত্ব তরুন আলেমে দ্বীন সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী হযরত মাও: এ টি এম ওলিউর রহমান (রহ.)।

সংসার জীবনে পাঁচ সন্তান সন্তুতির জনক। প্রথম সন্তান ফাতেমা আখতার নার্গিস (সংসারীনি, লন্ডন প্রবাসী), দ্বিতীয় হিসেবে প্রথম ছেলে মাওলানা নুরুর রহমান (সংসারী লন্ডন প্রবাসী), তৃতীয় হিসেবে দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান (সংসারী), পঞ্চম এবং সর্ব কনিষ্ট সন্তান পীর ক্বারী মোঃ আমিনুর রহমান (সংসারী)।
পরিবার পৃথিবীতে মানুষের জীবনের সূচনা জন্মের মাধ্যমে এবং জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে মরণের হিমশীতল স্পর্শে। জন্ম-মৃত্যু মাঝের এই সময়টুকু মানুষ একাকী কাটাতে পারে না। সে বেড়ে ওঠে স্বাভাবিকভাবে পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে। তাই প্রত্যেকটি মানুষের জন্য পারিবারিক জীবন তার অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য।

মানব জীবনের সূচনালগ্ন থেকেই জগতে কোনো না কোনোভাবে পারিবারিক ব্যবস্থা চালু ছিল। অতীতের সব নবি-রাসুলদের জীবন ও সময়কালে পরিবার প্রথার সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার পরিবারের জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে পরওয়ার দিগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ করো এবং আমাদের বংশধরদের থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী, দয়ালু। (সুরা আল বাকারা, আয়াত: ১২৮)

আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাদের অন্যতম গুণ সুন্দর পারিবারিক জীবন কামনা। এ বিষয়ে কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো।(সুরা ফোরকান, আয়াত: ৭৪)

মরহুম মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ. যে পরিবার গঠন করেছিলেন সে পরিবারের বৈশিষ্ট ছিল শরীয়াত প্রবর্তিত সকল বৈশিষ্টের আলোকে গঠিত।

নম্র ব্যবহার পরিবার ও সমাজ গঠনের মূল শক্তি। যার সর্বোত্তম নমুনা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)। সমাজ জীবনে বসবাসসহ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা উন্নত মানবীয় গুণ। পারিবারিক জীবন যে শুধু ইহকালেই কল্যাণ বয়ে আনে তা নয়, পারিবারিক জীবন যে শুধু ইহকালেই সীমাবদ্ধ সেটাও নয়, সৎ ব্যক্তিদের জন্য এই পারিবারিক জীবন জান্নাতেও বর্তমান থাকবে।

পরস্পর আন্তরিকতা এবং ভালোবাসায় সুখকর হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন। এজন্য সেখানে একজন নেককার স্ত্রীর যথেষ্ট ভূমিকা থাকে। একজন সৎ ও নেককার স্ত্রী তার স্বামীর জন্য অনেক বড় নেয়ামত। এসব গুণাগুন বিদ্যমান ছিল মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমানের পারিবারিক জীবনে। কবি বলছেন-

নারী, তুমি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, অবনীর নীর,
যেন গোলাপে গঠিত ভিতর ও বাহির।

কত যত্ন করে অপূর্ব সুন্দর রুপে অনুপম গুণাবলীতে আল্লাহ নারীকে সৃষ্টি করেছেন পুরুষের সঙ্গীরুপে। নেককার নারী পরিবার, দেশ-জাতি সমগ্র বিশ্বের জন্যই অমূল্য সম্পদ ।


প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু করতে হলে তার একজন সহযোগীর প্রয়োজন হয়, ঠিক ব্যতিক্রম হয়নি মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান সাহেবর এর ক্ষেত্রেও।

এ পৃথিবীতে যা কল্যাণকর,
অর্ধেক তা করিয়েছে নারী
অর্ধেক তা নর।

কবির এ কথাটির পূর্ণ প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমানের জীবনে। তাঁর সহধর্মীনী জনাবা রাবেয়া আক্তার ছিলেন একজন শিক্ষিত বিদুষী মহিলা। পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়িয়েছেন। কাজ করেছেন মাওলানার প্রতিটি পদক্ষেপে সাহস ও শক্তির প্রেরণাদাত্রী রুপে।

তাছাড়া উভয়েই প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন ১৯৭২ সাল পর্যন্ত। অবশেষে শিক্ষকতা থেকে তারা অবসর গ্রহণ করেন। তাঁদের জীবনী পর্যালোচনা করলে সঙ্গত কারনেই দৃষ্ট হয় শিক্ষাদানে, শিক্ষার আলো বিতরণে যাপিত জীবন যাত্রা ব্যয়িত হয়েছে। শিক্ষা দরদী ও শিক্ষানুরাগী মরহুমা রাবেয়া আক্তার স্বীয় স্বামী মরহুম এ টি এম ওলিউর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মরহুম মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ. এর হাতেগড়া তেলিকোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মরহুমা রাবেয়া আক্তার অবৈতনিক শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে যখন বিদ্যালয়টি সরকারী হয় তখন স্ত্রী রাবেয়া আক্তার মাসের শেষে প্রাপ্ত নিজের বেতনের টাকাটা স্বামীর হাতে তুলে দিতেন তাদের গড়া প্রতিষ্ঠান এলাহাবাদ মাদরাসা পরিচালনার জন্য। এটা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার এক যুগান্তকারী ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী উদাহরণ।

কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত বৈশিষ্ট্য গুলো খোঁজে পাওয়া যায় মরহুম মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ. এর সাজানোর পারিবারিক জীবনে। শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণে যেমন মরহুম মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ. ছিলেন অগ্রগণ্য তেমন আরেক ধাপ এগিয়ে ছিলেন তাঁর জীবন সঙ্গী রাবেয়া আখতার।

দ্বিনী প্রতিষ্ঠান গড়তে রাবেয়া আক্তার স্বীয় স্বামীকে শুধু উৎসাহ আর উদ্দিপনা দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি বদান্যতার পরিচয় দিয়েছিলেন নিজের গহনা স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে। তার স্বামী মাওলানা এ.টি.এম.ওলিউর রহমান সাহেব কে নিজের গহনা বিক্রি করে দ্বীনি খেদমতের উৎসাহ দিয়ে এক নয় দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন ও পরিচালনা করেছেন।

মরহুম মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ. ও ছিলেন একজন শিক্ষক। স্বামী স্ত্রী দুইজন শিক্ষকতা করে যে বেতন পেতেন একজনের বেতন দিয়ে সংসার চালাতেন আর অপরজনের বেতন দিয়ে দ্বিনী প্রতিষ্ঠান এলাহাবাদ আলিম মাদরাসার উন্নয়ন ও শিক্ষকদের বেতন প্রদানের কাজে লাগাতেন।
এভাবেই মহিয়সী নারি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে নিজেকে উৎসর্গ করে আজ মানব হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।
মহিয়সী নারি রাবেয়া আক্তার তেলিকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতার পেশায় ছিলেন। ২০০১ইং সালে নিজেই সরকারী কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

আল্লামা এ.টি.এম.ওলিউর রহমান  ১২সেপ্টেম্বর ২০১৪ইং ইন্তেকালের পর এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা, সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন তাঁরই পত্নী শিক্ষা দরদী নারী রাবেয়া আক্তার। অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে মাদরাসাকে এগিয়ে নিয়ে যান। ইসলামের খেদমতে নিবেদিত এই মহীয়সী নারী ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ৬ জমাদিউল উলা ৭২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। (আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসীনী করুন এবং জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। তার সকল কাজকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন। আমিন)

মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ. তেলিকোনা গ্রামে দুটি প্রতিষ্ঠান করতে গ্রামের প্রতিটি স্তরের মানুষের সহযোগিতা লাভ করেন। এলাহাবাদে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন গ্রামের শিক্ষাদরদী ও শিক্ষানুরাগী মহান ব্যক্তিবর্গ।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুরব্বী  কেউ জীবিত আবার কেউ কেউ পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন মহান রবের সান্নিধ্যে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম না বললেই নয়। তারা হলেন- হাজি হুশিয়ার আলী রহ., মোঃ তমিজ উল্লাহ রহ., ইসকন্দার আলী রহ., আব্দুল লতিফ রহ., রুস্তম আলী রহ., হাজী আব্দুল আলী, আমিন উল্লাহ রহ.,  হাজী আব্দুর রাশিদ রহ., আব্দুল কাদির রহ., মাওলানা আব্দুস সালাম রহ, হাজী মছদ্দর আলী, হাজী জয়নুল্লাহ (মিরাশদার) হাজী তমিজ উল্লাহ রহ., হাজী আব্দুছ ছবুর, আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সহ গ্রামের আরও উল্লেখযোগ্য অনেক গুণীজন এবং গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন।

মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ. এলাকার মানুষের সহযোগিতায় এলাহাবাদ আলিম মাদরাসাকে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দানে সক্ষম হন। তাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম উল্লেখ করতেই হয়। যেমন- বিলেত প্রবাসী আলহাজ আব্দুন নুর মাস্টার রহ., সাজিদুর রহমান রহ. (পাকছিরি), আলহাজ আবুল হুসেন রহ. (নোয়াপাড়া), হাজী মখদ্দুছ আলী রহ. ছেরাগ আলী রহ. (বিলপার), জমসিদ আলী রহ. সহ আরো অনেক গুণী শিক্ষা দরদী ব্যক্তিবর্গ। মাদরাসার জন্য আলহাজ্ব আব্দুন নুর রহ. মাস্টার নিজ নামে এলাহাবাদ মাদরাসায় ৪০ হাত বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং নবীর বাগানে দান করেন।

একটি আলোর কণা পেলে
লক্ষ প্রদীপ জ্বলে,
একটি মানুষ, মানুষ হলে
বিশ্ব জগৎ টলে।

কবির এই কাব্য যে মানুষটিকে উজ্জীবিত করে অনুপ্রাণীত করে, ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অনন্য প্রত্যয়, শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণে রবের সন্তুষ্টি অর্জনের আবেগ যাকে শক্তি যোগায় তার নাম মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান। শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক সকল রকম কাজেই তাকে পাওয়া যেত, তার পদচারণায় মুখরিত হতো ভালো কাজের সকল অঙ্গন, কালের স্বাক্ষী সকল এলাকার জনসাধারণ, যেখানেই ভালো কাজ সেখানেই এটিএম ওলিউর রহমান ছুটে যেতেন।
মানুষের আপদে বিপদে সবসময়ই যথাসম্ভব কাছে থাকতেন তিনি, সাধ্যমত, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা সেবা, জরুরী খাদ্য সরবরাহ, আর্থিক সাহায্য, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ঈদ উপহার প্রদান, বন্যা, খরা, মহামারী সহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিজেকে মানুষের কল্যাণে উজার করে দিতেন মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান রহ.

মানুষের কল্যাণে কাজ করা মানুষেরই দায়িত্ব। তাই তো মাওলানা ওলিউর রহমান থেমে থাকেন নি। পৃথিবীতে মানব জীবনের মূল মিশনই হচ্ছে মানবতার কল্যাণের মাধ্যমে এক সৃষ্টিকর্তার সুন্তুষ্টি অর্জন, আর মানব জীবনের প্রত্যেকটি ভালো কাজ হচ্ছে ইবাদত, দুটি পাতার একটি কুড়ির দেশ শাহজাললের স্মৃতিবিজড়িত পূণ্যভূমি সিলেট, বিশ্বনাথের কৃতিসন্তান ইসলামী চিন্তার ধারক শিক্ষাবিদ মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আর রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট।
মরহুম ওলিউর রহমান ১৯৭০ সালে শেষ লগ্নে বুরাইয়া মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব মরহুম মাওলানা এরশাদ হোসেন রহ. এর ওপর অর্পন করে নিজের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত দুটি প্রতিষ্ঠান এলাহাদাবাদ আলিম মাদরাসা ও তেলিকোনা বিদ্যালয় উন্নতির মানে মনোনিবেস করেন।

মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান রহ. সাহেব তিনি সারা জীবন শিক্ষা ক্ষেত্রে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন মহানবি সা. এর আদর্শ। তার অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন। যারা মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান যাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অনুপ্রেরণায় বড় হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন তার মমতাময়ী মা তেরাবান বিবি রহ. বাবা মুশাররফ রহ., পিতামহ ফুরকান উল্লাহ রহ., ফুফু সুরমা বিবি রহ., চাচা ইসকান্দার রহ., বাল্য জীবনে থেকে শুরু করে কামিল পর্যন্ত ছায়ার মতো যিনি ছিলেন তিনি হলেন তার উস্তাদ অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম হোসাইন রহ. ও মুফতী মাওলনা মামছুল হক রহ.; যারা ছিলেন জীবন গঠনের প্রেরণার স্বপ্নের প্রাণ পুরুষ।

বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রিন্সিপাল ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, এলাহাবাদ আলিম মাদ্রাসা ও তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান তাঁর বড় ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মাওলানা মোহাম্মদ নুরুর রহমান, ২য় ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান বিলেতের কয়েকজন নিবেদিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে। ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্তরাজ্যে একটি ও বাংলাদেশে দুটি কমিটি রয়েছে।

ট্রাস্টের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী, গরিব-বিধবা মহিলা ও এতিম ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য প্রদানের পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহায়তা প্রদান করে আসছে।

প্রতি বছরে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এতিম, গরীব ও অসহায় লোকদের মাঝে নতুন পোষাক, কুরবানীর গোশত এবং নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়ে থাকে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নতকে সুদৃঢ় রাখতে ট্রাস্টের পক্ষ হতে গরীব ও মিসকিনদের খতনা দেওয়া হয়। বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্মহীন মানুষকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, গরীব-অসহায় মৃত ব্যক্তি কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা ও এতিম গরীব মেয়েদের বিয়েতে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা, বন্যা ও ঘুর্ণিঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গরীব এতিম এবং অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণসহ শীত বস্ত্র করা হয়।
এছাড়া ইতিমধ্যে ট্রাস্টের উদ্যোগে মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমানের রচিত ৩টি গ্রন্থ, তাঁর পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ নুরুর রহমান রচিত শিশু কিশোরদের জন্য যুক্তরাজ্যে আরবী ও ইংলিশ ভাষায় ২০টি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা ও তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্র-ছাত্রী, দরিদ্রদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টারী তৈরী করা হয়েছে।

এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে অল্প সময়ে ট্রাস্টটি দেশ-বিদেশের ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে, অর্জন করেছে সুধীজনদের প্রশংসা। ট্রাস্টের কার্যক্রম দেখে ইতোমধ্যে অনেক নিবেদিত ব্যক্তিবর্গ অনুপ্রাণিত হয়ে ট্রাস্টের সদস্য হয়েছেন।

মাওলানা এ টি এম ওলউর রহমান সাহেব প্রতিষ্ঠত দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তেলিকোনা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এলাহাবাদ আলীম মাদরাসাকে রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে এম.পি, মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী, কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিসারহ জেলা, উপজলো ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণরূপ ধারণ করেছেন।

বিলেতে অবস্থানরত বিভিন্ন পেশায় কর্মরত লোকজন ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গ আর্থিকভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানোর জন্য তাদের অগ্রনী ভূমিকা ছিল।

মাওলানা এটিম ওলিউর হমান সাহেবের জীবন থেমে থাকেনি, স্বীয় প্রতিভা ও দক্ষতাকে গ্রন্থাবলী রচনার মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল “কুরআন হাদীসের আলোকে সারা বিশ্বে একই তারিখে রেযা ও ঈদ” 
পাঠক মহলে বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং তার প্রেরণায় আর রহমান এডুকেশন ট্রাষ্ট কর্তৃক এবং তাঁর বড় পুত্র ইমাম মাওলানা এম নুরুর রহমান এর ১২ টি গ্রন্থ একাডেমিকমূলক সিলেবাস অনুযায়ী বৃটেনের মাদরাসাগুলোতে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান সাহেব ১৯৮৮ সালে প্রথম যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেটি ছিল মক্কাতুল মাকাররামাহ পবিত্র হজ পালন করেন, পরবর্তীতে বিলেত কয়েকবার সফর করেন।

মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান ৭ বছর বয়সে মাতা মরহুমা তেরাবান বিবিকে হারান। তার বাবা মরহুম মোশাররফ আলী রহ. ফুফু সুরমা বিবি রহ. পিতামত ফুরকান উল্লাহ রহ. চাচা ইসকন্দর আলী, ফুফু জুবায়দা রহ. এর নিকট লালিত পালিত হন।

নিজ গৃহে বাবার তত্বাবধানে স্থানীয় মক্তবে আল ‍কুরআন শিক্ষা শুরুর মাধ্যমে সৎপুর কামলি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ মরহুম মাওলানা গোলাম রহ. তত্ত্বাবধানে ১ম থেকে কামিল হাদীস ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বে সাথে উক্তীর্ণ হন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা আলিয়া মাদরাসা থেকে ফিকহ বিভাগে নানামহ মাওলানা মুফতি শামছুল হক বুরাইয়া রহ. এর প্রেরণায় মুফতি হিসেবে সনদ অর্জন করেন।

অন্যান্য উস্তাদগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মাওলানা রফিক আহমদ কানাইঘাট বাউরবাগী, মাওলানা ফাজিল আব্দুল্লাহ কানাইঘাট, মাওলানা আব্দুল মালিক, মাওলানা হাবিবুর রহমান মুহাদ্দিস রারাই, শাহ সুফি মাওলানা হাবিবুর রহমান রহ. দৌলতপুরী, মাওলানা মুফতি আমিনুল ইসলাম রহ. ঢাকা, মাওলানা ওজিউল্লাহ খান রহ. ঢাকা, মাওলানা আব্দুর রহমান কাশগরি রহ. প্রমুখ।

মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান প্রতিভা ও কর্মদক্ষতা দেখে চাচা শশুর ওস্তাদ অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম হোসেন রহ. এর বিশেষ নির্দেশে তৎকালীন সুনামগঞ্জ এর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম মৌলভী জাফর আলী রহ. ও মরহুম মাওলানা শামসুল হক নানা শশুর সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে বুরাইয়া কামিল মাদরাসার মুহতামিম এর দায়িত্ব নিয়ে ১৯৬৮ সালে বুরাইয়া কামিল মাদরাসার দাখিল ক্লাস দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। নিজ বিচক্ষণতা আর দক্ষতার পরিচয় দেখিয়ে ১৯৬৮ সালে বুরাইয়া কামিল মাদরাসাকে দাখিল স্বীকৃতি লাভ করাতে সক্ষম হন।
১লা জুলাই ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণকারী একজন নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি হিসেবে জীবন ব্যয়িত করে মাওলানা ওলিউর রহমান এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান রাব্বেকারীমের সান্নিধ্যে ১২ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে নিজ বাড়িতে। আল্লাহ তিনিকে জান্নাতবাসী করুন এ প্রার্থনা অবিরত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো যুগ থেকে যুগান্তরের পথে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সুনাগরিক তৈরীর মাধ্যমে এগিয়ে যাক নিরন্তর সফলতার সিঁড়ি বেয়ে এ প্রত্যাশা হৃদয়ে আজ।

মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান জীবনে কর্মের স্বীকৃতি সম্মাননা পেয়েছেন আর পেয়েছেন সামাজিক কাজের স্বীকৃতির সম্মাননা! মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান সমাজ ও শিক্ষা কল্যাণে স্বীয় অবদান সত্যি অন্য রকম, বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা ও দুর্যোগ মহামারীতে দান ও সহযোগীতা করা! ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প ছাড়াও পরিকল্পনা অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সহযোগিতা যা প্রয়োজন।

তার জীবনের উদ্দেশ্যেই ছিল আল্লাহ ও তার রাসূল প্রদত্ত বিধানের আদর্শে নিজেকে লালন করা, পালন ও পরিচালনা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা ও মানুষের পাশে থেকে ভালো কাজ করে জীবনকে উৎস্বর্গ করা! তাঁর জীবনের মূল ভিশন ও মিশন ছিল দ্বীনি শিক্ষার আলোতে এলাকাকে আলোকিত করা।

আলোকিত উজ্জীবিত অনুপ্রেরণার মানুষ মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান (রহ.) এর মতো একজন আলোকিত মানুষ। তিনি হাজারো মানুষের মাঝে আলো ছড়িয়ে আজ মানুষের হৃদয় বীণায় জাগরুক হয়ে আছেন। হয়ে আছেন  পরপারে অমর

মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান এর আদর্শ ও চিন্তায় উব্দধুদ্ধ হয়ে শিক্ষা ও সমাজ সেবায় সবাই এগিয়ে আসলে এভাবে এলাকা হবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত, সমাজে ফুটবে অসহায় দুর্গত মানুষের মুখে হাসি। দেশ হবে আলোয় আলোকিত, জ্বলমলো হবে মাতৃভূমি বাংলাদেশ, কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে হয়
অন্ধকারে জ্বালালে বাতি
হয়তো বাতি জ্বলবেনা,
তাই বলে তো
বসে থাকা চলবে না।

ভাবতে থাকি মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান মতো প্রতিটি গ্রামে গ্রামে যদি একজন করে মাওলানা এটিএম ওলিউর রহমান জন্ম হয়, তবে দেশ পরিণত হবে সোনার দেশে।
শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণে নিয়োজিত আল্লামা এটি এম ওলিউর রহমান রহ.  সবার প্রিয় একটি নাম। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় দ্বীনের জন্য মহান রাব্বে কারীমের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে কাজ করে গেছেন তিনি। সমাজে  ও মানবতার কল্যাণে অসহায় দরিদ্র মানুষের সহযোগীতা, অনাগ্রসর শিক্ষা বঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার মহান ব্রত নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করেছেন এ গুণি ব্যক্তি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট আমরা সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী সুহৃদয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এ মহান ব্যক্তির জন্য মহান মুনিবের দরবারে জান্নাতে উচ্চ মাকাম কামনা করি। আমীন।

লেখক :
নির্বাহী সম্পাদক,
মাসিক প্রান্তিক জনপদ।


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here