Friday, June 5, 2020

অলসতা আত্ম উন্নয়নের অন্তরায় : ইসলামী দৃষ্টিকোণ


 
প্রফেসর ড সৈয়দ মাকসুদুর রহমান

 ভূমিকা :
মুমিনের জীবনে অলসতা করার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই এ কাজটি সকল মূমিনকে অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। তার সকল কাজ গুরুত্ব ও প্রয়োজন বুঝে কাজ ভাগকরতে হবে(M=MUST BE DONE S=SUPER BE DONE C=CAN BE DONE )নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে কাজ করতে হবে । আজকের জন্য কাজ করুন। অবচেতন মনে যেসব অভ্যাসকে গ্রহণ করতে হবে। শুরু করতে হবে খুবই সহজে। আরবি ভাষায় সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া হয়েছে -
الكسل في الشرع: هو التغافل عن كل واجب فرضه الله تبارك وتعالى على الإنسان. كالكسل عن أداء الفرائض، كالصلوات الخمس أو الصوم أو الجهاد، وكالكسل عن كل عمل نافع يضمن للإنسان حياة كريمة ويعفه ويصونه عن المسألة.
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا خُذُوا حِذْرَكُمْ فَانْفِرُوا ثُبَاتٍ أَوِ انْفِرُوا جَمِيعًا -
"হে ঈমানদারগণ ! নিজেদের অস্ত্র তুলে নাও এবং পূর্ণ সতর্কতার সাথে পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে পড়।" (৪:৭১) সূরার ৭২ ও ৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَإِنَّ مِنْكُمْ لَمَنْ لَيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُمْ مُصِيبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُنْ مَعَهُمْ شَهِيدًا - وَلَئِنْ أَصَابَكُمْ فَضْلٌ مِنَ اللَّهِ لَيَقُولَنَّ كَأَنْ لَمْ تَكُنْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ مَوَدَّةٌ يَا لَيْتَنِي كُنْتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا
"তোমাদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ রয়েছে যাদের চিত্ত দুর্বল এবং অন্যদের মনোবল দুর্বল করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাও অনেক। তোমাদের উপর কোন বিপদ আসলে তারা বলবে,আল্লাহ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তাদের সঙ্গে যাইনি৷" (৪:৭২)

"পক্ষান্তরে তোমাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অনুগ্রহ আসলে তারা বলতে শুরু করবে হায়! আমি যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম তাহলে আমিও সফলতা লাভ করতাম।" (৪:৭৩)

অলসতা এর পরিচয়
 এর দ্বারা বোঝা যায় যে, কর্মবিমূখতা। নিষ্ক্রিয় অথবা কর্মবিমূখ কিংবা উদ্যমহীন ব্যক্তিকে অলস বলা হয়। আলসেমি নিজের ও সমাজের অবক্ষয় ডেকে আনে। অলসতা একটি জাতির উন্নতির পথে হুমকিস্বরূপ। বিপরীত শব্দঃ পরিশ্রমী, উদ্যোগী, সক্রিয় স্থিরতা অর্থেও অলস শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়। "কাকফাটা গরমের এই অলস মধ্যদুপুরে একগ্লাস ঠান্ডা বেলের শরবত যেন অমৃতের মতো লাগে।" আরবি ভাষায়-
الكسل أو عدم الإبلاء (بالإنجليزية: Laziness)‏ هو النفور من المجهود أو بذل الشغل على الرغم من وجود القدرة البدنية عليه، ويُعد الكسل صفة ازدرائية، يوصف بها الشخص ذو النمط الكسول أو المحب للراحة
হাদীসে অলসতা থেকে মূক্ত থাকতে বলা হয়েছে -
 سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَكْرَهُ أَنْ يَقُولَ : إنِّي كَسْلاَنُ
 ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে শুনেছি, তিনি কাউকে আমি অলস একথা বলতে পসন্দ করতেন না। (মুসান্নাফ ইবনি আবী শাইবা) হাদীসে এসেছে-
عن أبي هريرة رضي الله عنه : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( التثاؤب من الشيطان فإذا تثاءب أحدكم فليرده ما استطاع فإن أحدكم إذا قال ها ضحك الشيطان ) .أخرجه البخاري.
অলসতা থেকে দুরে থাকতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূআ করতে বলেছেন,  যেমন-
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال : كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يتعوذ يقول ( اللهم إني أعوذ بك من الكسل وأعوذ بك من الجبن وأعوذ بك من الهرم وأعوذ بك من البخل ) أخرجه البخاري
ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন,
ويتولد من طول الأمل الكسل عن الطاعة والتسويف بالتوبة
দীর্ঘ আশা ইবাদতে অলসতা তৈরি ও তাওবার ক্ষেত্রে গড়িমসি তৈরি করে। (ফাতহুল বারী ১১/২৩৭)

জীবন সম্পর্কে অতিরিক্ত আশা করে অলস বসে থাকার সুযোগ নেই। আমার ধারণা আমি হায়াত অনেক পাব আর শেষ জীবনে তাওবা করে নিব!  এটা মূলত আশা নয়, বরং আত্ম প্রতারণা । সুতরাং এজাতীয় অন্যায়-আশা, যা আমাদের আমল ও তাওবা থেকে বিমুখ করে দিচ্ছে, তা এখনই বর্জন করা উচিত । রাসূলুল্লাহ্‌ বলেছেন,
حديث أبي هريرة أن رسول الله ﷺ قال:بادروا بالأعمال سبعا، هل تنتظرون إلا فقرا منسيا، أو غنى مطغيا، أو مرضا مفسدا، أو هرما مفندا، أو موتا مجهزا، أو الدجال فشر غائب ينتظر، أو الساعة فالساعة أدهى وأمر
সাতটি বিষয়ের পূর্বে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদেরকে সবকিছু ভুলিয়ে দেবে? না ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদেরকে দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? না সেই বার্ধক্যের, যা তোমাদেরকে অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্যে অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? না কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত কিনা সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত? (তিরমিযি ২৩০৬ যুহদ অধ্যায়)

সৎ আমল কিংবা তাওবা করার চিন্তা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা করা  উচিত।  এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن أبي ذَرٍّ جُنْدُبِ بْنِ جُنَادةَ، وأبي عبْدِالرَّحْمنِ مُعاذِ بْنِ جبلٍ رضيَ اللَّه عنهما، عنْ رسولِ اللَّهِ ﷺ، قَالَ: اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحسنةَ تَمْحُهَا، وخَالقِ النَّاسَ بخُلُقٍ حَسَنٍ رواهُ التِّرْمذيُّ وقال: حديثٌ حسنٌ
 আজকের সৎ আমল এবং আজকের তাওবাহ আজকেই করতে হবে। আগামীকালের অপেক্ষায় রেখে দেয়া যাবে না কিছুতেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ,
وَ سَارِعُوْۤا اِلٰی مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَ
অর্থ :তোমরা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান ১৩৩)

অনেক ক্ষেত্রে অলসতার অন্যতম কারণ থাকে উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব। এ ক্ষেত্রে নিজেকে জাগাতে আপনি  সালেহীনদের জীবনী, তাঁদের সফলতার গল্প, তাঁদের বাণী পড়ুন, জানুন । অলসতা দূর করতে খুব বেশি কাজে লাগবে এগুলো। এর দ্বারা অন্তত উৎসাহ পাবে।  এ ব্যাপারে একটা উক্তি দেখা যায় -
حسبك أَن أقواما موتى تحيى القلوب بذكرهم ، وأن أقواما أحياء تقسو القلوب برؤيتهم
তোমার জন্য এটা জানা যথেষ্ট যে, কিছু মৃত মনীষী এমন আছেন যে, তাঁদের আলোচনা করলেও অন্তর জীবিত হয় এবং কিছু জীবিত মানুষ এমন আছে যে, তাদেরকে দেখলেও অন্তর শক্ত হয়ে যায়। (তারিখু দামিশক, খণ্ড- ১০, পৃষ্ঠা, ২১৪)

যাঁরা আপনার চাইতে বেশি উদ্যমী এবং আমলে অগ্রসর তাঁদেরকে দেখুন। বিশেষত আল্লাহওয়ালাদের চেহারা দেখুন, তাঁদের মজলিসে বসুন, তাঁদের কথা শুনুন এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা সঞ্চয় করুন।  আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা তাওবা ১১৯)
জাফর ইবন সুলাইমান রহ. বলেন,
كنت إذا وجدت من قلبي قسوة غدوت فنظرت إلى وجه محمد بن واسع –وهو تلميذ الإمام الحسن البصري وكان من كبار العباد والصالحين
আমি যখন আমার অন্তরে আল্লাহবিমুখতা অনুভব করতাম তখন মুহাম্মদ ইবন ওয়াসি রহ.-এর চেহারা দেখতাম, যিনি ছিলেন হাসান বসরি রহ.-এর শাগরিদ এবং অনেক বড় আবিদ ও নেককার । (নুযহাতুল ফুযালা, পৃষ্ঠা- ৬৩৮)

নিজেকেই নিজে শাসন করতে হবে। যখন অলসতা ভর করে ঠিক তখন নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে হবে । এটা আমাদের সৎ আমল করতে উদ্বুদ্ধ করবে। যদি আমরা ভাবি যে, অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা এগুলো তো শয়তানের সৃষ্ট, ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। সুতরাং আমি কেন শয়তানের শিকারে পরিণত হয়ে ব্যর্থদের কাতারে শামিল হব। তখন ইস্তেগফার করা উচিৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
فعن أبي هريرة قال: قال رسول الله ﷺ: المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف وفي كل خير، احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجز، وإن أصابك شيء فلا تقل لو أني فعلت كان كذا وكذا، ولكن قل: قدر الله، وما شاء فعل؛ فإن لو تفتح عمل الشيطان، رواه مسلم
আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে অধিক উত্তম ও প্রিয়। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। (মুসলিম ৪৮২২)

আধুনিক এ সময়ে মানুষের অবসর সময়গুলোর সঙ্গী হয়ে থাকে সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন এ ছাড়া আরও অনেক কিছু । এসবের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। অন্যথায় এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে গোটা জাতির জীবনে। বিশেষত এগুলো যেন রাতের ঘুম কেড়ে নিতে না পারে, সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে । তাহলে সৎ আমলে মন বসবে না। এর প্রভাবে অলসতাও হার মানবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
- وعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ   قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ، وقَالَ: حَسَنٌ.
অর্থ :একজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণতার একটি লক্ষণ হল যে, তার জন্য জরুরী নয় এমন কাজ সে ত্যাগ করে। (তিরমিযী, হাদীস নং ২২৩৯)

যত কষ্টই হোক, ফজরের নামাযের প্রতি যত্নবান হোন। কেননা অলসতার কারণে ফজরের নামায না পড়তে পারলে এটাই হবে সারাদিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অন্যান্য অলসতার সূচনা। , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللَّهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَإِلاَّ أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ
অর্থ :যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারী, হাদীস নং ১১৪২)

ফজরের পরে ঘুম বর্জন করুন। কেননা এটাও অলসতা ও উদ্যমহীনতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। সুতরাং এই সময়ে না ঘুমিয়ে নামায আদায় করে তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার ও তেলাওয়াত শুরু করে দিন। এমনটি করতে পারলে রাসূলুল্লাহ্‌ এর দোয়া পাবেন এবং আপনার সারদিনের কাজে অলসতা কেটে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দূআ শিক্ষা দিয়েছেন,
 قال رسول الله صلى الله عليه و سلم: اللهم بارك لأمتي في بكورها ـ فمتى يبدأ وقت البكور ومتى ينتهي
 হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন। (তিরমিযি, হাদীস নং ১২১২)

অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য হাদিসে যে সব দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে, সেগুলো পড়ুন। যেমন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ ، وَالبُخْلِ وَالجُبْنِ ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারী, হাদীস নং ২৮৯৩)
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ- اَللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا – اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ! আপনি আমার মনে তাকওয়ার অনুভূতি দান করুন, আমার মনকে পবিত্র করুন।  আপনিই তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী। আপনিই তো হৃদয়ের মালিক, অভিভাবক ও বন্ধু। হে আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় চাই এমন ইলম থেকে যে ইলম কোনো উপকার দেয় না, এমন হৃদয় থেকে যে হৃদয় বিনম্র হয় না, এমন আত্মা থেকে যে আত্মা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে যে দোয়া কবূল হয় না। (মুসলিম, হাদীস  নং ২৭২২)

উপসংহার :
উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারছি যে একজন ব্যক্তির অলসতার জন্য নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ধ্বংস করে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সকল উন্নয়ন। সর্বোপরি মুমিনে হিসেবে তার ঈমান ও আকীদাহ শেষ করে দিতে পারে। এ জন্য অলসতা ছেড়ে কর্মমূখী সকলের জন্য অপরিহার্য। শুধু এতটুকু বলতে পারি
 كل دقيقه من اعمارنا انفاس لاتعود فلتكن لأنفاك حلاوة الاستغفار في كل حين
আল্লাহ তাআলার আমাদের তাওফীক দান করুন, আমীন।


লেখক:
প্রফেসর ড সৈয়দ মাকসুদুর রহমান,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া বাংলাদেশে


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here